![]() |
ইমরান হোসেন মিলন, টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : বিশ্বের অন্যান্য দেশ যখন শিশুদের কোডিং বা প্রোগ্রামিং নিয়ে ৫০ বছরের সাফল্য উদযাপন করছে, তখন দেশে তার কোনো আয়োজন নেই।
যদিও দু-একটি সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান শিশুদের প্রোগ্রামিং শেখাতে একেবারেই প্রাথমিক কিছু কাজ শুরু করেছে, তবে সেটি এখনো বলার মতো অবস্থায় পৌঁছাতে পারেনি। সেদিক থেকে দেখতে গেলে শিশুদের জন্য প্রোগ্রামিং শুরু হওয়ার ৫০ বছর পর এসে দেশের অগ্রগতি শুন্যের কোটায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভিভাবকদের সচেতন করে যদি শিশুদের প্রোগ্রামিংয়ে আগ্রহী না করা যায় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে প্রযুক্তি খাতে উদ্ভাবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
সোমবার বিশ্বব্যাপী শিশুদের প্রোগ্রামিং শেখানোর ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে ইন্টারনেট জায়ান্ট ও প্রযুক্তি জায়ান্টরা শিশুদের নিয়ে আয়োজন করছে নানা অনুষ্ঠান। ইন্টারনেট জায়ান্ট গুগল প্রথমবারের মতো ডুডল করে বাচ্চাদের প্রোগ্রামিংকে বিশ্বব্যাপী আরো জনপ্রিয় করতে কাজ করার কথা বলেছে।
‘দেশে শিশুদের প্রোগ্রামিং নিয়ে এখনো কেউ সেই অর্থে কাজ শুরু করেনি। যাতে করে শিশুরা প্রোগ্রামিং শিখতে পারে। এই বিষয়ে এখনো কারো যেন কোনো নজরই নেই, বলছিলেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সভাপতি মোস্তাফা জব্বার।
তার ভাষায়, দেশে প্রোগ্রামিং নিয়ে আয়োজন করলেই নজর থাকে মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের দিকে। কিন্তু কেউ ভেবেই দেখেন না যে, শিশুদের নিয়ে কাজ করা যায়। আর ভাবেন না বলেই দেশে এখনো বাচ্চাদের প্রোগ্রামিং নিয়ে বলার মতো কিছু নেই।
তবে বেসিস ইতোমধ্যে শিশুদের প্রোগ্রামিংয়ে হাতেখড়ি দেওয়ার জন্য সংগঠনটির অধীন বিআইটিএম এর আওতায় একটি প্রকল্প চালু করেছে। যাতে শিশুদের স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিং শেখানো হবে।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাচ্চাদের প্রোগ্রামিংয়ে আগ্রহী করতে আমরা স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিং চালু করেছি। যেখানে প্রথম ধাপে শিক্ষকদের প্রোগ্রামিং সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হচ্ছে কর্মশালা করে। যেখানে সাতটি স্কুলের শিক্ষকদের নিয়ে কর্মশালা করা হয়েছে। আরও তিনটি স্কুলের শিক্ষকদের নিয়ে ১৬ ডিসেম্বরের পর কর্মশালা করা হবে।
এটাকে একেবারেই ক্ষুদ্র একটি প্রয়াস বলে উল্লেখ করেন বাংলাংদেশ কম্পিউটার সমিতির সাবেক এই সভাপতি।
এর আগে দেশে স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিং হিসেবে ‘কোডিং ফর কিডস’ আয়োজন করেছিল মাইক্রোসফট। বেসিস সফটএক্সপোতে সেই আয়োজনে চার শতাধিক বাচ্চা অংশ নিয়েছিল।
পরে এসব বাচ্চাদের মধ্য থেকে বেশ কয়েকটি ব্যাচ করে মাইক্রোসফট তাদের অফিসে স্ক্যাচ প্রোগ্রামিং আয়োজন করে। সেখানে ১০টি করে স্ক্র্যাচ দিয়েছিল মাইক্রোসফট। যেসব বাচ্চারা সেগুলো সফলভাবে শেষ করতে পেরেছে তাদের প্রত্যেককে একটি করে স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিং করা যায় এমন মোবাইল ফোন দিয়েছে মাইক্রোসফট। মাইক্রোসফট শিশুদের নিয়ে এমনি বেশ কয়েকটি ব্যাচ করে শিশুদের প্রোগ্রামিং শিখিয়েছে।
মাইক্রোসফটের সেই প্রোগ্রামিং আয়োজনে মতিঝিল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জাহরান কাওছার ও আহনাফ কাওছারকে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন তাদের বাবা মোহাম্মদ কাওছার উদ্দিন।
টেকশহরডকটমকে তিনি বলেন, বাচ্চারা কতটুকু শিখেছে তা আমি বড় করে দেখি না। শেখার জন্য কতটুকু আগ্রহ জন্মেছে সেটাই বড় যা এখন বাচ্চাদের মধ্যে দেখতে পাই। এমন আয়োজন অবশ্যই হওয়া উচিত বলেও জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের সহ-সভাপতি লাফিফা জামাল টেকশহরডটকমকে বলেন, বাচ্চারা যা শেখে সেটা একেবারেই তাদের মস্তিষ্কে গেঁথে থাকে। ফলে প্রোগ্রামিং যদি তাদের শেখানো যায় পরে আরও ভালো করতে পারে।
তবে এই উদ্যোগ যতোটা না কোনো সংগঠন, সংস্থা বা সরকার নিতে পারে তার চেয়ে বেশি সচেষ্ট থাকতে হবে অভিভাবকদের। কারণ তারা চাইলে শিশুরা আনন্দ নিয়ে প্রোগ্রামিং শিখতে পারে। এখন আমাদের জোর দিতে হবে নিজেদের ভাষা, ইংরেজি ভাষা এবং প্রোগ্রামিং ভাষার উপর, বলেন লাফিফা জামাল।
কম্পিউটার প্রোগ্রামার এবং ডিকোড ল্যাবের প্রধান নির্বাহী সোহাগ মিয়া বলেন, দেশে শিশুদের প্রোগ্রামিং নিয়ে কিছু চোখে পড়ে না। যেটা খুব জরুরি। আশার কথা হলো একাডেমিক বইগুলোতে কিছু বিষয় যোগ করা হচ্ছে যাতে বাচ্চারা ভীত না হয়ে প্রোগ্রামিংয়ে আগ্রহী হয়।
দেশে প্রোগ্রামিং নিয়ে নানা সময়ে নানা আয়োজন হয়েছে। বিশেষ করে হাইস্কুল প্রোগ্রামিংয়ে জোর দিয়েছে সরকার। এজন্য প্রতিবছর ন্যাশনাল হাইস্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা আয়োজন করছে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ।
এছাড়াও দীর্ঘদিন থেকে প্রোগ্রামিংয়ে মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন)। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান টেকশহরডটকমকে জানান, তারা প্রোগ্রামিং নিয়ে কাজ করলেও শিশুদের প্রোগ্রামিং নিয়ে এখনো কাজ শুরু করেননি। তারা বেশি জোর দেন মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রামিংয়ে। মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিডিওএসএন সারা বছরই কোনো না কোনো আয়োজন করে থাকে।
তবে প্রোগ্রামিংয়ে দেশের শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি হয়েছে গত কয়েক বছরে অনেক। বিশেষ করে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রোগ্রামিং এসিএম আন্তর্জাতিক কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় (এসিএম আইসিপিসি) বাংলাদেশ প্রতিবারই অংশ নিচ্ছে। আর এর ফলে বিশ্বববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রোগ্রামিংয়ে আগ্রহ বেড়েছে শিক্ষার্থীদের।