![]() |
শাহরিয়ার হৃদয়, টেক শহর ডেস্ক : টেক জায়ান্ট অ্যাপলের নতুন আইপ্যাড অবশেষে উন্মোচন করা হয়েছে। বেশ কিছু দিন থেকেই এ নিয়ে বেশ আলোচনা চলছিল। পঞ্চম প্রজন্মের এ আইপ্যাডের নাম আইপ্যাড এয়ার। এর আগের সংস্করনের চেয়ে এটি ২০ ভাগ পাতলা, অর্থাৎ ০.৩ ইঞ্চি পুরু। ওজন ৪৬৯ গ্রাম।
আইপ্যাড এয়ারকে বর্তমানের বিশ্বের সবচেয়ে হালকা ট্যাবলেট বলে দাবি করেছে অ্যাপল। বুধবার সানফ্রান্সিসকোয় অ্যাপলের সর্বশেষ এ পণ্য উন্মোচন করেন প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং বিভাগের প্রধান ফিল শিলার। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে আইফোন ফাইভ এস ও ফাইভ সি বাজারে এনেছিল প্রযুক্তি বিশ্বের শীর্ষ কোম্পানিটি।
স্টিভ জবস মারা যাওয়ার পর অ্যাপল নতুনত্ব হারিয়ে ফেলছে বলে সমালোচনা চলছিল। এ মধ্যেই প্রধান নির্বাহী টিম কুক নতুন এসব পণ্য আনার ঘোষণা দেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তিনি খোঁচা দিয়ে বলেছেন, অ্যাপল নিজস্ব বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ন রেখে যাত্রা অব্যাহত রাখবে।
হালকা এ ট্যাবলেটে এতে ব্যবহার করা হয়েছে এ-৭ প্রসেসর, যা অ্যাপলের মতে আগের আইপ্যাডের চেয়ে আট গুণ দ্রুত গতির। স্ক্রিনের আকার রয়েছে আগের মতোই ৯.৭ ইঞ্চি। স্ক্রিনের চারপাশের কিনারা, অর্থাৎ বিজেল আগের চেয়ে বেশ সরু করা হয়েছে।
একই অনুষ্ঠানে আইপ্যাড এয়ারের পাশাপাশি নতুন আইপ্যাড মিনিরও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ৭.৯ ইঞ্চির নতুন মিনিতে যুক্ত করা হয়েছে রেটিনা ডিসপ্লে, যা ২০৪৮*১৫৩৬ পিক্সেলের রেজ্যুলুশন সাপোর্ট করে। উন্নত ডিসপ্লের পাশাপাশি দুটি আইপ্যাডেই ব্যবহার করা হয়েছে কোয়াড কোর গ্রাফিক্স প্রসেসর, যা গেইমসহ প্রতিটি অ্যাপ্লিকেশনের ইন্টারফেসে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
গুগলের তৈরি অ্যান্ড্রয়েড ট্যাবলেটগুলো যখন ট্যাবলেটের বাজারে ক্রমশ আধিপত্য বিস্তার করছে ঠিক তখনই অ্যাপল কর্তৃপক্ষ আইপ্যাড এয়ারের মতো নতুন পণ্যের পাশাপাশি আইপ্যাড মিনির ঘোষণা দিল। ছোট মাপের ট্যাবলেটের বাজারে আইপ্যাড মিনির শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে এখন আমাজন ঘোষণা দিয়েছে কিন্ডল ফায়ার এইচডিএক্স ও গুগল ঘোষণা দিয়েছে নেক্সাস ৭। এ দুটি ট্যাবলেটের ডিসপ্লে রেজুলেশন আইপ্যাড মিনির সমান।
আগামী ১ নভেম্বর থেকে বিশ্বের ৪২ দেশের বাজারে বিক্রি শুরু হবে আইপ্যাড এয়ার। ১৬ গিগাবাইটের ওয়াই-ফাই মডেলের দাম হবে ৪৯৯ ডলার এবং ৪জি সুবিধার ১৬ গিগাবাইট মডেলের দাম হবে ৬২৯ ডলার। আইপ্যাড মিনির দাম হবে ৩৯৯ ডলার।
আইপ্যাড এয়ারে ব্যবহার করা হয়েছে শক্তিশালী ৩২.৪ ওয়াট-আওয়ারের ব্যাটারি, যা দশ ঘণ্টা পর্যন্ত চার্জ রাখতে পারে। এ ছাড়া রয়েছে ৫ মেগাপিক্সেল আইসাইট ক্যামেরা। দুটি ট্যাবলেটেই আইওএস ৭ এর সর্বশেষ সংস্করণ রয়েছে।
তবে এমন আপগ্রেডে হতাশা প্রকাশ করেছেন প্রযুক্তিপ্রেমীরা। হতাশ টেকবোদ্ধারাও। তারা ধারণা করছিলেন, ক্রমবর্ধমান অ্যান্ড্রয়েড ট্যাবলেটের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য হয়তো অ্যাপল আইপ্যাড নিয়ে নতুন কোনো চমক দেখাবে। কিন্তু সে আশা তো পূরণ হয়ইনি, উল্টো আইফোনের নতুন সংস্করণগুলোর চেয়েও কম আপগ্রেড করা হয়েছে নতুন আইপ্যাডগুলোকে।
একই ইভেন্টে অ্যাপল তাদের নতুন ম্যাক অপারেটিং সিস্টেম ম্যাভেরিকও উন্মোচন করেছে। ওএস এক্স এর ব্যবহারকারীরা বিনামূল্যে এর আপগ্রেড পাবেন।
এ অনুষ্ঠানে দ্রুতগতির প্রসেসর, উন্নত গ্রাফিকস সুবিধা যুক্ত করে নতুন সংস্করণের ম্যাকবুক প্রো এবং ম্যাকবুক এয়ার বাজারে আনার ঘোষণা দিয়েছে অ্যাপল। বাজার বিশ্লেষকেরা ধারণা করেছিলেন, অনুষ্ঠানে আইটিভির ঘোষণা বা নতুন স্মার্টওয়াচের ঘোষণা আসতে পারে। কিন্তু এ ধরনের কোনো ঘোষণা আসেনি।
ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি গত জুলাই পর্যন্ত নয় মাসে শুধু আইপ্যাড থেকেই আয় করেছে প্রায় ২৬০০ কোটি ডলার, যাদের মুনাফার ১৯ শতাংশ। তবে সম্প্রতি আইপ্যাডের বিক্রি কমে যাওয়ায় এ খাত থেকে লাভের পরিমাণও কমে গেছে বলে অ্যাপলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
২০১২ সালে গার্টনারের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল, সে বছর মোট বিক্রি হওয়া ট্যাবলেটের ৫৩.৯ শতাংশ অ্যাপলের আইওএস চালিত। কিন্তু ২০১৪ সালের মধ্যেই গুগলের অ্যান্ড্রয়েড তাদের টপকে শীর্ষস্থান দখল করবে বলে সংস্থাটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছে।
-টেক শহর