![]() |
টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : বিখ্যাত স্মার্টফোন ব্র্যান্ড নকিয়ার নির্মাতা এইচএমডি গ্লোবাল নিয়ে এসেছে স্বল্পমূল্যের অ্যান্ড্রয়েড ফোন, নকিয়া ২।
নকিয়া প্রেমীদের অনেকেই এমন একটি ফোনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, যা হবে টেকসই এবং ব্যাটারি লাইফে কোনো কার্পণ্য থাকবে না। তাই বলে কি নকিয়া ২ এর এ দুটি ফিচার ছাড়া আর কিছুই নেই? দেখে নেয়া যাক।
এক নজরে নকিয়া ২
ডিজাইন
অ্য়ালুমিনিয়াম ফ্রেম, গ্লাস ও প্লাস্টিকে তৈরি নকিয়া ২ ডিভাইসটি চমকপ্রদ। সামনের ডিসপ্লে বেজেলবিহীন না হলেও, বেজেলের অবস্থান, নকিয়া লোগো ও সেলফি ক্যামেরার অবস্থান দৃষ্টিনন্দন। তবে পেছনের পলিকার্বনেট প্লাস্টিক ও তার মাঝে বসানো ক্য়ামেরা ফোনটির বাজেট মূল্যের কথাই মনে করিয়ে দেয়।
ডান পাশে পাওয়ার ও ভলিউম বাটন, বাম পাশে সিম স্লট, ওপরে হেডফোন জ্যাক ও নিচে মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট সমৃদ্ধ ডিভাইসটির স্পিকার রয়েছে পেছনে। অ্যালুমিনিয়াম বাম্পারের ফলে ডিভাইসটির ডিজাইন বাজেট থেকে বেরিয়ে অল্পবিস্তর মাঝারি বাজেটের ফোনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
ডিসপ্লে
বিশাল ফ্যাবলেটের যুগে ৫ ইঞ্চি ডিসপ্লের ফোন অনেকের কাছেই ছোট মনে হতে পারে। তবে ৭২০পিক্সেল রেজুলেশনের ডিসপ্লের জন্য এর চাইতে বড় সাইজ বেমানান। ডিসপ্লেটির কালার, ব্রাইটনেস বা কন্ট্রাস্ট-সবকিছুই সাধারণ মানের। একই মূল্যের অন্য়ান্য ফোনের চেয়ে কোনও দিক থেকেই উন্নতমানের নয়।
তবে সরাসরি রোদে ব্যবহার করার সমস্যা নেই, যা অনেক বাজেট ফোনেরই বিশাল সমস্যা। ধরে নেয়া যেতে পারে মূলত ব্যাটারি বাঁচাতেই এইচএমডি গ্লোবাল ৭২০পিক্সেল ৫ ইঞ্চি ডিসপ্লে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পারফরমেন্স
পারফরমেন্সের ব্যাপারে হতাশা ছাড়া আর কোনও শব্দ ব্যবহার করা সম্ভব নয়। মোবাইল দুনিয়া ২০১৪ সাল থেকেই ৬৪বিট পথে হাঁটছে, সেখানে ২০১৭তে এসে ৩২বিট, কর্টেক্স এ৭ প্রসেসরসমৃদ্ধ ফোন বাজারে আনা একবারেই স্বল্প বুদ্ধির পরিচয় দেয়।
কর্টেক্স এ৭ কোয়াডকোর প্রসেসরটি দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে নিতে পারবে, হালকা থেকে মাঝারি গেইমিং সামলে নিতে পারলেও ভারী কোনও কাজই করতে পারবে না। বিশেষ করে নুগ্যাটের ডুয়াল উইন্ডোতে দুটি অ্যাপ চালাতে গেলে ল্য়াগ চোখে পড়বেই।
র্যামের পরিমাণেও কার্পণ্য রয়েছে। আজকাল স্মার্টওয়াচেও ১ জিবি র্যাম ব্যবহার করা হচ্ছে, সেখানে নকিয়া ২ এর মূল্যের কোনও ডিভাইসই ১ জিবি র্যামের নয়। সাধারণ কাজ ছাড়া বড়সড় এইচডি ভিডিও চালাতে গেলেও র্যামের স্বল্পতা ভোগাবে। মাল্টিটাস্কিং করার সময় পেছনে অল্পতেই সব অ্যাপ বন্ধ হয়ে যাবে।
জিপিউটি খারাপ নয়, গেইম খেলার জন্য বেশ কাজের। তবে একদম সর্বাধুনিক গেইম খেলার জন্য অপ্রতুল।
সব মিলিয়ে পারফরমেন্সে হতাশ করেছে নকিয়া ২।
ক্যামেরা
নকিয়া ৩ ও নোকিয়া ৫ এর ক্যামেরা অসাধারণ নয়, তবে সেসব ক্যামেরার সমস্যাগুলো দেখে নকিয়া ২ তে তার অনেক কিছুই শুধরে নেয়া হয়েছে। মূল্যের তুলনায় ব্যাক ক্যামেরা যথেষ্ট ভালো, তবে স্ট্যাবিলাইজেশন না থাকায় হাতের কাঁপুনি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
ছবির ডিটেইল কালার ও কনট্রাস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার জন্য যথেষ্ট। তবে ৮ মেগাপিক্সেল এখনকার যুগে যথেষ্ট নয়, তা মাথায় রাখতে হবে। অন্ধকারে পারফরমেন্স ভাল নয়, তবে তা আশ্চর্য নয়।
সেলফি ক্যামেরাটিও মূল ক্যামেরার মতই, অসাধারণ নয় তবে কাজ চালানোর মত।
ব্যাটারি লাইফ
কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ২১২ এর মত স্বল্পশক্তির প্রসেসর, খুবই হালকা অপারেটিং সিস্টেম ও ৪১০০ এমএএইচ ধারণক্ষমতার বিশাল ব্যাটারি নকিয়া ২কে করেছে ব্যাটারি লাইফের রাজা। অনেকের কাছেই এরূপ ব্যাটারি লাইফ বাকি সব সীমাবদ্ধতা মেনে নেয়ার জন্য যথেষ্ট।
নকিয়া দাবি করেছে, অন্তত দুই দিন ফোনটি এক চার্জে ব্যবহার করা যাবে, ফোনটির পারফরমেন্সও সেরকমই দেখিয়েছে। তবে ফাস্ট চার্জ না থাকায় বিশাল ব্যাটারিটি চার্জ হতে বেশ সময় নেবে।
পরিশেষ
একমাত্র ব্যাটারি লাইফ ও তৈরির মান ছাড়া, এই মূল্যে চীনা নির্মাতাদের ফোনগুলো নকিয়াকে ছাড়িয়ে গেছে প্রায় সব দিক থেকেই। তবে অনেকের কাছে লম্বা ব্যাটারি লাইফ সমৃদ্ধ শক্তপোক্ত ব্রান্ডের হ্যান্ডসেটটি আর সকল ফোনের চেয়ে ভালো লাগতে পারে, সেক্ষেত্রে নকিয়া ২ এর কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।
এক নজরে ভালো
এক নজরে খারাপ
মূল্য
ফোনটি ৯ হাজার ৬০০ টাকায় বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।
রিভিউটি তৈরি করেছেন টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর এস এম তাহমিদ