![]() |
তুসিন আহমেদ, টেক শহর কন্টেন্ট কাউন্সিলর : পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা আকার, রঙ ও ওজন ভেদে পণ্য আলাদা করতে পারে এমন একটি রোবট বানিয়েছেন। এটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে মাত্র ১০ হাজার টাকা।
‘ক্যামেলিয়ন অটোমেটিক প্যাকেজিং রোবট’-নামের এ ডিভাইস নিয়ে ওই বিভাগের শিক্ষার্থী রাফসান উদ্দিন তার সহপাঠীরা এসেছেন আইসিটি এক্সপোতে। উদ্ভাবনী জোনে তাদের এ উদ্ভাবন নিয়ে বেশ আগ্রহও দেখা গেল অনেকের মাঝে।
এমনই নানা উদ্ভাবনী প্রকল্প নিয়ে বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে বুধবার শুরু হওয়া আইসিটি এক্সপো ২০১৭-এ হাজির হয়েছিলেন তরুন সব আইডিয়াবাজরা। ছোটখাট থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে প্রযুক্তি কিভাবে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে তা উঠে এসেছে তাদের উদ্ভাবনে।
এ প্রদর্শনীর ইনোভেশন জোনে অনেক ভিড়ের মধ্যে বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের জানার আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো।
কথা হলো মিরপুর বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীয় শিক্ষার্থী হাসান মেহেদীর সঙ্গে। বিদেশি প্রযুক্তির ওপর নির্ভর না করে নিজেরাও যে অনেক কিছু করা সম্ভব তা দেখে তিনি বেশ পুলকিত। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে নিজেও কিছু করতে চান বলে জানান তিনি।
বিভারাইন ভেহিকেল ট্র্যাকিং সিস্টেম
দেশে নৌ দুর্ঘটনায় প্রতিবছর ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। নৌযানগুলোতে ধারণ ক্ষমতার বেশি মানুষ ওঠার ফলেই দুর্ঘটনা ঘটে বেশি। নৌযানের মধ্যে সংঘর্ষের কারণেও অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। এসব সমস্যা সমাধানে কাজ করছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) কম্পিউটার বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরুস হোসেন। এক্সপোতে তিনি তার প্রকল্পটি তুলে ধরছেন।
ইমরুলের প্রকল্পটির আওতায় নৌযানে লাগানো থাকবে লোড সেন্সর, যা প্রতিনিয়ত নৌযানের ওজন পরিমাপ করবে। নৌযানটি ওভারলোডেড হলে তা নোটিফিকেশনের মাধ্যমে সতর্কবার্তা দেখাবে। ফলে খুব সহজেই চালক অবস্থা বুঝতে পারবেন।
নোটিফিকেশন পেতে নৌযানে স্থাপন করা হবে একটি ডিসপ্লে প্যানেল।
এ ছাড়া যাত্রীদের জন্য রয়েছে মোবাইল নির্ভর অ্যাপ্লিকেশন, যেটির মাধ্যমে জানা যাবে নৌযানটির ওভারলোডের তথ্য।
যাত্রীরা কোন স্থানে যাবেন, যেতে কতক্ষণ লাগবে এবং নৌযানের গতিও জানা যাবে অ্যাপটির মাধ্যমে। এ সিস্টেম থেকে আবহাওয়ার আগাম সতর্কবার্তা পাওয়া যাবে। ফলে ঝড়ের সম্ভাবনা থাকলে আগেভাগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।
ইমরুল জানান, কোনো নৌযানে দুর্ঘটনা ঘটলেও তা নোটিফিকেশনের মাধ্যমে অন্য নৌযান ও উদ্ধারকারী দল জানতে পারবে। গুগল ম্যাপের মাধ্যমে নৌযানটির অবস্থান দেখে দ্রুতই উদ্ধারকারী দল পাঠানো যাবে।
এ বিভারাইন ভেহিকেল ট্র্যাকিং সিস্টেমটির জন্য খরচ হবে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা।
মাছ চাষের উপযুক্ত পুকুর সম্পর্কে জানাবে অ্যাকুয়াটিক রোভার
পুকুর মাছ চাষের জন্য উপযুক্ত কিনা তা সঠিকভাবে জানতে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে। তবে অ্যাকুয়াটিক রোভার রোবট পুকুরে নামিয়ে দেওয়া হয় তাহলে স্মার্টফোনে থাকা অ্যাপেই জানা যাবে অনেক তথ্য।
রোবটটি পুকুরে ঘুরে ঘুরে ব্যবহারকারীকে জানাবে মাছ চাষের জন্য সেটি উপযোগী কিনা।রোবটটি রিমোটের মাধ্যমে চলবে আর তথ্য জানাবে মোবাইলের অ্যাপের মাধ্যমে।
অ্যাকুয়াটিক রোভারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে ইনোভেশন জোনে উপস্থিত হয়েছিল বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল তরুণ। এ প্রকল্প দলের সদস্যরা হলেন আনাস শাহাব, রাহতুল আমিন অনন্ত ও জাহান আলী সোহান।
অনন্ত জানান, অ্যাকুয়াটিক রোভারের মাধ্যমে পুকুরের তাপমাত্রা, ডিজলভ অক্সিজেন লেভেল, পিএইচ লেভেল জানা যাবে। অর্থাৎ এটি মাছ চাষের উপযুক্ত কিনা তা জানা যাবে।
রোবটটি থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে, পানিতে কোনো উপাদানের ঘাটতি থাকলে তাও জানিয়ে দেবে অ্যাপটি। এ ছাড়া মাছ চাষের জন্য পানিতে সমস্যা থাকলেও সেটি জানিয়ে দেবে।
অনন্ত আরও জানান, থিসিসের কাজ হিসেবে তারা রোবটটি তৈরি করেছেন। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। তবে বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করলে খরচ ৭-৮ হাজার টাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা যাবে।
পায়ের সহায়ক যন্ত্র
ফুট ড্রপ কিংবা অনেক সময় নিউরো জনিত রোগের কারণে পায়ে সমস্যা দেখা দেয়। এ রোগের কারণে চলতে ফিরতে কষ্ট হয়। পা দিয়ে হাঁটার প্রক্রিয়াটি দুটি ধাপে সম্পূর্ণ হয়। প্রথম ধাপটি হলো স্ট্যান ফেস ও পরের ধাপটি হলো সুইন ফেস।
সুইন ফেস ধাপে পা উপরের দিকে তুলে সামনে ফেলতে হয়। এটি ফুট ড্রপের রোগীরা করতে পারেন না। এ কারণে তাদের খুঁড়িয়ে হাঁটতে হয় কিংবা স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারেন না।
এই সমস্যা সমাধানে কাজ করছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) চার শিক্ষার্থীদের একটি দল। এ দলে কাজ করেছেন মোহম্মদ মামুনুর ইসলাম, হুমায়ন কবির, রেশাদ ইবনে মুবিন ও ইশান।
পায়ের সহায়ক যন্ত্রের ডিভাইসটি ফুট ড্রপ রোগীদের পায়ে লাগানো হয়ে থাকে। এটি হাঁটতে গেলে পায়ের পাতা তোলার সময় যতটুকু উপরে তুলতে হবে সেটি করতে সাহায্য করে। এরপর নিচে নামাতে হলে আগে ঠিক যতটুকু পা উপরে তোলা হয়েছে, ততটুকু নিচে নামাতে সাহায্যে করবে। ফলে এর সাহায্যে স্বাভাবিকভাবেই হাঁটা চলা করা যাবে।
মামুনুর ইসলাম জানান, ডিভাইসটি তৈরি করতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। তবে বাণিজ্যিকভাবে এটি উৎপাদন করা গেলে আট হাজার টাকায় নির্মাণ করা সম্ভব হবে।
আবর্জনা থেকে গ্যাস ও সার তৈরি
বাসা বাড়ির ময়লা আবর্জনা থেকে বায়োগ্যাস তৈরির অনেক প্রযুক্তি আছে। গ্যাস উৎপাদনের পর বেঁচে যাওয়া বর্জ্যগুলো সার হিসেবে ব্যবহারও করা হয়।
খাজিদা আক্তার অনেকদিন ধরেই ভাবছিলেন কিভাবে বাসা বাড়িতে জমা আবর্জনা ও বর্জ্যকে কাজে লাগানো যায়। সেই ভাবনা থেকেই বন্ধুদের সঙ্গে মিলে তৈরি করেছেন ‘স্বয়ংক্রিয় পোর্টেবল বায়োপ্লান্ট প্রকল্প’।
এ দলে রয়েছেন মোহাম্মদ শামীম, আসফসানা মৃদুলা, প্রিয়াঙ্কা রানী। তারা সবাই ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (আইএসটি) ইলেকট্রিনিক্স ও কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী।
খাজিদা জানান, বাণিজ্যিকভাবে মাত্র সাড়ে ১৫ হাজার টাকায় এ বায়োপ্লান্ট তৈরি করা যাবে। এতে এক কেজি আবর্জনা থেকে আড়াইশ’ গ্রাম গ্যাস উৎপাদন সম্ভব হবে।
বাসায় ১৫ কেজির একটি প্লান্ট স্থাপন করলে ৪ দিনে তা ৩ কেজি গ্যাস উৎপাদন করতে সক্ষম এবং মাস শেষে দুই সিলিন্ডার গ্যাস উৎপাদন করা যাবে।
এ ছাড়া এক মাসে এ প্লান্ট থেকে ১২০ কেজির মতো সার তৈরি হবে, যার বাজার মূল্য প্রায় ১ হাজার ৫০০ টাকা।
পরিবেশবান্ধব এ বায়োপ্লান্ট ব্যবহারকারীরা অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হবেন।