![]() |
পোষা প্রাণী নিয়ে কাজ করেও সফল হওয়ার উদাহরণ কুকুরবিড়াল ডটঅর্গ। ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগের পেছনে রয়েছেন একজন শিক্ষার্থী। এটি শুধু স্বচ্ছলতাই দেয়নি, অনুপ্রেরণাও যুগিয়েছে এগিয়ে যাওয়ার। এ উদ্যোগের আদ্যোপান্ত জানাচ্ছেন তুহিন মাহমুদ
ঢাকার ছেলে খালিদ ফারহান। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসা প্রশাসনের তৃতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। নিজের পোষা প্রাণী বিড়ালের পোশাক, খাবারের প্রয়োজনবোধ থেকেই এ ব্যবসার সূত্র মাথায় আসে। এরই ধারাবাহিকতায় তৈরি করেন কুকুরবিড়াল ডটঅর্গ নামের একটি বিশেষায়িত ই-কমার্স সাইট।
যদিও ব্যবসার শুরুটা হয়েছিল ফেইসবুক পেইজের মাধ্যমে। ভিন্নধর্মী এ উদ্যোগ ফারহানকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। মাসে অর্ধলক্ষাধিক টাকা আয়ের পথও বাতলে দিয়েছে তার তৈরি দেশের প্রথম অনলাইন পেট স্টোর- ‘কুকুরবিড়াল ডটঅর্গ’।
উদ্যোগের শুরু
বেশ আগে থেকে নিজের বিড়াল থাকার কারণে যারা বাসা বাড়িতে কুকুর ও বিড়াল পোষেন তাদের সঙ্গে বেশ জানাশোনা ছিলো ফারহানের। বিভিন্ন সময় এসব প্রাণীর খাবারসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ হতো। কোথায় পাওয়া যায়, দর কত ইত্যাদি নিয়ে কথা বলতেন।
এ ছাড়া দেশে প্রতি ঘন্টায় ৬০ থেকে ৮০টি পোষা কুকুর ও বিড়াল মারা যায় যথাযথ সেবার অভাবে। এ কারণে পোষা প্রাণীর জন্য সহজে সেবার দেওয়ার চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে এ তরুনের।
বাসায় বসে কিভাবে অন্যদের সাহায্য করা যায় ও যাবতীয় সামগ্রী এক জায়গায় পাওয়া যেতে পারে এমন ভাবনা কাজ করে তার মধ্যে। এ পরিকল্পনা থেকেই ২০১৩ সালের মে মাসে বোনের বানানো জামা ও এক বন্ধুর তৈরি জিনিস নিয়ে ফেইসবুকে ‘পেট অ্যাক্সেসরিজ’ নামের একটি পেইজ খোলেন।
প্রথমদিকে ছিল কিছু টিশার্ট, কলার ও সামান্য কিছু পণ্য। কয়েকদিনের মধ্যে বেশ সাড়া পান। যা তার অনলাইন এ বিপণন কার্যক্রমকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে উৎসাহিত করে। এবারের শুরু হয় তার কুকুরবিড়াল ডটঅর্গ নামের ই-কমার্স সাইট খোলার কার্যক্রম।
এগিয়ে চলা
ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগের শুরু থেকেই ভালো সাড়া পান সদ্য কিশোর পার করা এ তরুন। এরপর ক্রেতাদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে পণ্যের পরিমান বাড়াতে থাকেন। বর্তমানে অর্ধশতাধিক ক্যাটাগরির পণ্য রয়েছে কুকুরবিড়াল ডটঅর্গে।
শুরু থেকে গ্রাহক পেয়ে যাওয়ায় এগিয়ে যেতে খুব একটা কষ্ট হয়নি ফারহানের। ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতি ধাপে বন্ধুদের সহায়তাও তাকে এগিয়ে দিয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রথমদিকে ভয়ে ভয়ে বিভিন্ন অ্যাক্সেসরিজ আমদানি করেও দেখলেন সেটি সহজে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। এরপর থেকে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য তৈরির পাশাপাশি নতুন পণ্য আমদানিও করছেন। এমনকি আগ্রহীদের বিনামূল্যে কুকুর ও বিড়াল সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছেন কুকুরবিড়াল ডটঅর্গের পক্ষ থেকে।
বর্তমান অবস্থা
বিশেষায়িত পণ্য হওয়ায় ও প্রতিযোগী কম থাকায় বর্তমান অবস্থানে আসছে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি ফারহানের। পোষা প্রাণী লালনপালনকারীদের প্রায় বেশিরভাগই কুকুরবিড়াল ডটঅর্গ ও খালিদ ফারহানকে চেনেন।
প্রথমদিকে মাসে দুই/তিন হাজার টাকার বেশি পণ্য বিক্রি না হলেও এখন প্রতি মাসেই অন্তত অর্ধলক্ষাধিক টাকার পোশাক ও অ্যাক্সেসরিজ বিক্রি হচ্ছে। ফোন, ফেইসবুক পেইজ, মেইল এবং ওয়েবসাইটে নিয়মিত আগ্রহী ক্রেতাদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এখন শুধু সামনে এগিয়ে চলা।
বড় প্রতিবন্ধকতা : বিরূপ মনোভাব
দেশে এখনও কুকুর ও বিড়াল পোষাকে খুব বেশি উৎসাহিত করা হয় না। অনেকেই এটিকে বাকা চোখে দেখেন। তাই অনেকেই তার এ উদ্যোগ দেখে নাক সিটকান।
একবার এক দর্জিকে বিড়ালের জামা বানানোর একটি ইউটিউব ভিডিও দেখান ফারহান। সেই ব্যক্তি তাকে অন্য গ্রহের প্রাণী হিসেবে ভেবেছিল। এ ধরনের মনোভাব ব্যবসার অন্তরায় বলে মনে করেন তিনি। এ ছাড়া পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রায়ই নানা সমস্যায় পড়তে হয়। তারপরেও এগিয়ে যেতে চান তিনি।
প্রচারণা
কুকুরবিড়াল ডটঅর্গের প্রচারণায় প্রধান ভরসা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাইটগুলো এবং ওয়েবসাইট। মূল প্রচারণা হয় ফেইসবুক থেকে। কখনও বিজ্ঞাপন কিংবা কখনও ইনোভেটিভ আইডিয়ার মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হয়।
এ ছাড়া তারা ‘পেটএডপশন’কে প্রোমোট করেন বলে বিনামূল্যে কুকুর বা বিড়াল গ্রহীতারা তাদের পক্ষে প্রত্যক্ষ প্রচারণার কাজটিও করে দেন। তারা নিজেরো যেমন কুকুরবিড়াল ডটঅর্গ থেকে পোষা প্রাণীর জন্য পোশাক ও অ্যাক্সেসরিজ কেনেন তেমনি অন্যদেরও এ সাইটের খোঁজখবর জানান।
এ ছাড়া ‘চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব’ গ্রুপের উদ্যোগে আয়োজিত উদ্যোক্তা হাটে অংশ নেয় সাইটটি। সেখান থেকেও ভালো ফিডব্যাক পেয়েছেন ফারহান।
লক্ষ্য পেট এডপশন সেন্টার গড়ে তোলা
আপাতত কুকুরবিড়াল ডটঅর্গের কোনো কার্যালয় বা শোরুম নেই। বাসা থেকেই কার্যক্রম চালান ফারহান। তবে চলতি বছরে ঢাকাতে একটি কার্যালয় খোলার পরিকল্পনা আছে তার। এ উদ্যোগের মাধ্যমে পোষা প্রাণী লালন পালনকারীদের সেবা দেওয়ার পাশাপাশি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে একটি ভালো মানের ‘পেট এডপশন’ কেন্দ্র গড়ে তোলার লক্ষ্য রয়েছে তার।
এ কেন্দ্র থেকে আগ্রহীরা বিনামূল্যে একটি কুকুর কিংবা বিড়াল নিয়ে যেতে পারবেন। আগ্রহীদের টাকা খরচ করে কোনো মার্কেট থেকে কিনতে হবে না। একই সঙ্গে আগামীতে দেশের সবচেয়ে বড় পেট স্টোর তৈরি করতে চান ফারহান।
নতুনদের জন্য পরামর্শ
কুকুর বা বিড়াল আর দশটা সাধারণ পণ্যের মতো নয়। তাই এ ব্যবসায় আসার আগে অবশ্যই পেট রিলেটেড একটি ভাল নেটওয়ার্কিং থাকতে হবে বলে মনে করেন ফারহান। তার মতে, বিড়াল ও কুকুর পোষার বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকা উচিত। পুরো ব্যাপারটাতে ব্যবসার চেয়ে সেবাকে বড় করে দেখতে হবে। হতে হবে ইনফর্মাল ও ফ্রেন্ডলি।
যোগাযোগ
ফেইসবুক পেইজ : https://www.facebook.com/meawghew
ওয়েবসাইট : http://www.kukurbiral.org/
ইমেইল : [email protected]
সেলফোন : 01670049138