![]() |
ফেইসবুকভিত্তিক পোশাক ও জুয়েলারি পণ্য বিক্রির ব্যবসায় এখন অনেকটাই এগিয়ে ‘ক্লজেট ডি তাটিয়ানা’। স্বউদ্যোগী এক তরুন উদ্যোক্তার স্বপ্ন বাস্তব রূপ পেয়েছে এর মাধ্যমে। অনলাইনকেন্দ্রিক এ উদ্যোগের কথা জানাচ্ছেন তুহিন মাহমুদ
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষার্থী তটিনী চাকমার ইচ্ছা ছিল ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়বেন। ভিন্ন বাস্তবতায় সেটি হয়ে ওঠেনি। তবে নিজের স্বপ্নপূরণে থেমে থাকেননি উদ্যোমী এ তরুন।
বাস্তবতা মেনে নিয়ে আইন নিয়ে পড়ছেন। তবে নিজের ইচ্ছাকে হারিয়ে যেতে দেননি। শুরু করেছেন অনলাইনে ফ্যাশনকেন্দ্রিক বাণিজ্য। পড়াশোনার পাশাপাশি সাফল্যও পেতে শুরু করেছেন।
উদ্যোগের হাতেখড়ি
ছোটবেলা থেকে নিজের পোশাকের ডিজাইনকে সবার থেকে আলাদা করার চেষ্টা করতেন। সচেতন থাকতেন যাতে কারও সঙ্গে মিলে না যায়। তাই পোশাকের কাটিং আয়ত্ব করতে থাকেন। নিজের ডিজাইনের পোশাক পরতেন। সারাক্ষণ মাথায় ঘুরত পোশাকের নতুন ডিজাইনের চিন্তা। এভাবেই আসে নিজের উদ্যোগের পরিকল্পনা।
২০১২ সালের দিকে অনলাইনভিত্তিক ফ্যাশন হাউজের পরিমান যেমন কম ছিল, তেমনি বর্তমানের মতো এতটা জনপ্রিয়তাও ছিল না। তখন বাজারে পাকিস্তানী ও ভারতীয় কাপড়ের প্রভাব ছিল বেশি। তাই গতানুগতিক কিছু না করে নিজের একটা ফ্যাশন ট্রেন্ড তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেন তটিনী চাকমা।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালের ১ জুলাই শুরু করেন ‘ক্লজেট ডি তাটিয়ানা’। ফেইসবুক পেইজের মাধ্যমে শুরু করেন এ ব্যবসা।
এগিয়ে চলা
শুরু থেকেই পণ্যের গুণগতমান ও ইউনিক ডিজাইনের জন্য তটিনী চাকমার পরিচিত বেশ কিছু নিয়মিত ক্রেতা তৈরি হয়েছিল। আস্তে আস্তে দেশের বাইরে থেকেও পোশাকের অর্ডার পেতে থাকায় প্রত্যেক মৌসুমে নতুন ডিজাইনের পোশাক আনা শুরু করেন।
মূলত বিভিন্ন উৎসব যেমন ঈদ, পূজা, পহেলা ফাল্গুন ও পহেলা বৈশাখ ছাড়াও বিভিন্ন ঋতুতে ‘ক্লজেট ডি তাটিয়ানা’তে নতুন ডিজাইনের পোশাকের কালেকশন আনা হয়।
এটি অনলাইনভিত্তিক ফ্যাশন হাউস হওয়ায় ক্রেতাদের জন্য আকর্ষনীয় ছবি দিয়ে পণ্যগুলো উপস্থাপন করতে শুরু করেন। এখন অনেক ভালো ও নামিদামী ফটোগ্রাফার নিয়ে কাজ কাজ করলেও, প্রথম দিকে তটিনীর ছোট বোনই ছিল ফটোগ্রাফার।
প্রথম থেকেই ভিন্ন আঙ্গিকে পণ্য উপস্থাপন করে ফেইসবুক পেইজে প্রচারনা চালাতেন। চেষ্টা থাকত আর দশটা ব্যবসায়িক পেইজ থেকে আলাদা রাখার। ফলে ক্রেতাদের কাছে দ্রুত গ্রহণযোগ্যতাও মেলে। তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়।
প্রত্যেক ফ্যাশন সচেতন মানুষ চায় নিজেকে অন্যের চেয়ে আকর্ষনীয়ভাবে তুলে ধরতে। তাই তারা নিজেদের সাজ-পোশাকের ক্ষেত্রে ইউনিক ডিজাইনকে প্রাধান্য দেয়।প্রত্যেকের ফ্যাশন ও পছন্দের মধ্যে পার্থক্য থাকায় তটিনী চাকমার কাছে ফ্যাশনের অর্থ হচ্ছে- পোশাকের মাধ্যমে একজনের ব্যক্তিত্ব ও সুন্দর রুচির প্রকাশ করা।
এ জন্য ট্রেন্ড ও ফ্যাশন সচেতন মানুষের পছন্দের দিকে লক্ষ্য রেখে প্রত্যেকটি ডিজাইন ইউনিক রাখার চেষ্টা করেছেন তটিনী। পোশাকের ডিজাইন ও কাটিংয়ে পাশ্চাত্য ও দেশীয় দুই ধারার প্রভাব থাকলেও মেটেরিয়েলের ক্ষেত্রে দেশিয় কাপড় ব্যবহারের দিকে জোর দেন তিনি। পোশাক ছাড়াও এখানে ক্রেতাদের চাহিদার জন্য কিছু ভিন্ন ডিজাইনের জুয়েলারি এবং পার্স রাখা হয়েছে।
ডিজাইন চুরি প্রধান প্রতিবন্ধকতা
অনেকেই এখন অনলাইন ব্যবসা করছে এবং কেউ কেউ প্রচুর পরিমানে অন্যের ডিজাইন চুরি করে বিক্রি করছে এমন অভিযোগ করেন তটিনী চাকমার। তিনি জানান, বেশিরভাগ সময় ডিজাইন চুরির বিষয় ক্রেতারা জানতে পারছে না এবং তারা বিভ্রান্ত হচ্ছে।
ক্লজেট ডি তাটিয়ানার প্রতিটি পণ্যের ডিজাইন তটিনীর নিজের করা। কিছু জুয়েলারি ছাড়া কোনো পণ্যই পাকিস্তান কিংবা ভারত থেকে আমদানি করা নয়। তাই নিজের করা ডিজাইন এবং পণ্যের ছবি যখন চুরি হয়, তখন তিনি কিছুটা সমস্যায় পড়ে যান। এসব প্রতিবন্ধকতাকেও পাশ কেটে এগিয়ে যাচ্ছে তার এ উদ্যোগ।
বর্তমান পেক্ষাপট
ক্রেতাদের বিভ্রান্তি দূর করতে বর্তমানে পেইজের প্রচারণার দিকে নজর দিয়েছেন তটিনী। ক্রেতাদের সুবিধার জন্য হোম ডেলিভারি সেবা চালু করেছেন। দেড় বছরের কিছুটা বেশি সময়ে ক্রেতাদের কাছ থেকে যে সাড়া পেয়েছেন তা অনেক উদ্যোক্তাই খুব কম পান বলে মনে করেন তিনি। সেক্ষেত্রে নিজেকে সফল হিসেবেই মনে করেন তিনি।
প্রচারণা
এখনও প্রচারণার জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়নি কিংবা নামী-দামী মডেল দিয়ে ফটোশুট করা হয়নি। মৌখিকভাবে প্রচারণার কাজ করছেন। তবে কিছুদিনের মধ্যে বিজ্ঞাপন দিয়ে ভালো করে প্রচারে নামার পরিকল্পনা আছে তটিনী চাকমার।
সেরার কাতারে যাবার স্বপ্ন
শিগগির শো-রুম খোলার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তরুন এ উদ্যোক্তা। এ কার্যক্রমে সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের যুক্ত করার উদ্যোগ নিতে চান তিনি। আগামীতে একটি নামী ফ্যাশন ব্র্যান্ড রূপে ‘ক্লজেট ডি তাটিয়ানাকে প্রতিষ্ঠিত চেষ্টা চালাতে চান তিনি।
বিদেশি সব নামী ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর মতো এটিও সমান জনপ্রিয়তা নিয়ে বিশ্ব ফ্যাশন জগতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে এমনটাই স্বপ্ন দেখেন এ তটিনী চাকমা।
নতুনদের জন্য পরামর্শ
নতুন যারা এই ব্যবসায় আসতে চান, তাদের অবশ্যই ডিজাইন এবং কাপড়ের মানের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সবসময় আলাদা কিছু করে এবং ভালো সার্ভিস দিয়ে ক্রেতাদের কাছে থেকে পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে হবে বলে পরামর্শ তটিনী চাকমার।
যোগাযোগ
ক্লজেট ডি তাটিয়ানা
ফোন নাম্বার : ০১৭৩২-৯২১১৮৭
ই-মেইল : [email protected]
ফেইসবুক পেইজ লিংক : https://www.facebook.com/ClosetDeTatiana.By.Tatini
ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট : https://www.facebook.com/closetde.tatiana
ফেইসবুক গ্রুপ : https://www.facebook.com/groups/closetdetatiana/