কুলারমাস্টারের নতুন প্রজন্মের কিবোর্ড : দাম শুনে ভড়কাবেন, কাজে নয়

টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : পিসির কিবোর্ড নিয়ে আমরা বেশিরভাগ সময়ই মাথা ঘামাই না। একটি হলেই চলবে, এমন ভাবনা থেকেই দোকানিরা যেটা দেন সেটাই নিয়ে ফেলি। তবে সস্তা কিবোর্ডের চাইতে আরও ভালো টাইপিং ও গেইমিংয়ের জন্য কিবোর্ড নির্বাচনের বিষয় উঠলে, কুলারমাস্টারের মাস্টারকিজ প্রো সিরিজের কথা উঠবেই।

সেই সিরিজের সর্বশেষ ও সবচাইতে বেশি ফিচারের কিবোর্ডটিতে কী পাওয়া যাচ্ছে এবং এর পারফরমেন্স কেমন তা দেখা যাক।

Techshohor Youtube

এক নজরে কুলারমাস্টার মাস্টারকিজ প্রো এল আরজিবি

  • ১০৪ কি বিশিষ্ট সম্পূর্ণ কিবোর্ড
  • চেরি এমএক্স ব্লু, ব্রাউন অথবা রেড সুইচ
  • তিন রঙের এলইডি ব্যাকলাইক, যা সংমিশ্রনের মাধ্যমে ১৬.৮ মিলিয়ন রঙ করা সম্ভব
  • এন-কি রোল-ওভার, কিবোর্ডের সবগুলো সুইচ একই সময় ব্যবহার করার সুযোগ
  • এবিএস প্লাস্টিক বডি ও কি ক্যাপ
  • মাইক্রো ইউএসবি সংযোগ, বদলযোগ্য ব্রেইডেড ক্যাবল
  • ম্যাক্রো, লাইটিং ইফেক্ট প্রোগ্রাম করার সুবিধা ও কিবোর্ডেই চারটি প্রোফাইল সেভ করার সুবিধা


ডিজাইন
গেইমিং কিবোর্ডের বেশ ঝলমলে ডিজাইন দেখে যারা বিরক্ত হয়ে গিয়েছেন, তাদের কাছে কুলারমাস্টারের প্রফেশনাল সিরিজটি বেশ ভালো লাগবে। অল্প বেজেলযুক্ত, বেশ উঁচু কি নিয়ে গঠিত চতুষ্কোন কিবোর্ডটিতে কোনও চটক নেই। বেজেল কমানোর ফলে কিবোর্ডটির আকৃতিও বেশ ছোট, সহজেই ছোটখাট ডেস্কে এ ফুল সাইজ কিবোর্ডটি মানিয়ে যাবে।

অবশ্য এরূপ ডিজাইনের বড় সমস্যা রিস্ট রেস্ট না থাকা। বড় হাত না হলে আলাদা রিস্ট রেস্ট ছাড়া দীর্ঘ সময় টাইপ করা বেশ কষ্টকর।

কিবোর্ডটির তৈরিতে উন্নতমানের এবিএস প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয়েছে। কি-গুলোর নীচে দেওয়া হয়েছে স্টিলের ব্যাকপ্লেট। ফলে এটি বেশ ভারী ও মজবুত। মেকানিক্যাল কিবোর্ড মানেই তাই। কি ক্যাপগুলো লেজার এচ করা, ডাবল-শট প্লাস্টিক নয়। তবে এ মূল্যে সেটি আশা করাও ভুল।

পছন্দ অনুযায়ী কিবোর্ডটিতে তিন ধরনের সুইচ পাওয়া যাবে – চেরি এমএক্স রেড, ব্রাউন অথবা ব্লু।

রেড সুইচটিতে ফিডব্যাক কম। কিছুটা মেমব্রেইন কিবোর্ডের মতো। এ কারণে আওয়াজও বেশ কম।

ব্রাউন সুইচে কিছুটা ফিডব্যাক রয়েছে। এটিও অল্প আওয়াজের। আর ব্লু সুইচের ফিডব্যাক সবচাইতে বেশি। এতে বেশ কি-চাপার শব্দ শোনা যাবে।

সাধারণত ধরে নেওয়া হয় চেরি রেড গেইমিং, ব্রাউন দৈনন্দিন ও ব্লু টাইপিংয়ের জন্য সবচাইতে ভালো।

কিবোর্ডটির কি-স্পেসিং ও ট্রাভেল খুবই সুন্দরভাবে দেওয়া হয়েছে। দ্রুত হাতের সঙ্গে মানিয়ে যায়। তবে যারা কিছুটা অন্যরকম স্পেসিং ও ট্রাভেল চান, তারা সহজেই কি-ক্যাপ বদলে নিতে পারবেন।

কিবোর্ডটির কানেকশন পোর্ট দেয়া হয়েছে তলদেশের মাঝখানে। পোর্টটি মাঝে হলেও, তার সরাসরি মাঝ দিয়ে বের না করে দুপাশ দিয়েও বের করা যাবে। ডেস্কে তারের জঞ্জাল কমাতে খুবই সহায়ক। সঙ্গে থাকা ব্রেইডেড ক্যাবলটি প্রায়ই চ্যানেল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে।  

সব মিলিয়ে, মাস্টারকিজ প্রো এল-এর ডিজাইন সবদিক থেকে নিখুঁত। শুধু বক্সে রিস্ট রেস্ট না থাকা ও ক্যাবল আটকে রাখার চ্যানেলটি আরও গভীর না হবার ফলে কিছু মার্কস কাটা গিয়েছে।

ব্যবহারিক সুবিধা
প্রচুর টাইপিং বা গেইমিংয়ের জন্য দ্রুত রেসপন্স ও এক সঙ্গে বেশ কিছু কি চাপার সুবিধা – উভয় দিক থেকেই কিবোর্ডটি বেশ কাজের। এতে বাড়তি যোগ করা হয়েছে মিডিয়া কি, ভলিউম কন্ট্রোল ও উইন্ডোজ কি বন্ধ রাখার সুবিধা।

সঙ্গে রয়েছে একটি কি প্রতিবার প্রেস করায় একবার, দু’বার থেকে এক প্রেসকে আটটি প্রেস হিসেবে দেখানোর সুবিধা। কিছু কিছু কাজ যা একটির পর একটি কি ধারাবাহিকভাবে চেপে করতে হয়। এমন ক্ষেত্রে এ ফিচার বেশ কাজের। কি প্রেস ম্যাক্রো প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে ধারাবাহিক কি প্রেস করার কাজ একটি বা দুটি কি প্রেসেই করা সম্ভব এ কিবোর্ডে।

অনেকসময় একেক প্রোগ্রাম বা গেইমের জন্য বিভিন্ন সেটিং প্রয়োজন হতে পারে। সেগুলো চারটি প্রোফাইলে প্রোগ্রাম করে সেইভ করে রাখারও সুবিধা রয়েছে এতে।

এগুলো তেমন নতুন কিছু নয় অবশ্য। তাই আসলে বলা যেতে পারে একটি আধুনিক কিবোর্ডের কাছে যা যা আশা করা যেতে পারে, ঠিক সেগুলোই রয়েছে এতে।

লাইটিং
মাস্টারকিজ কিবোর্ডগুলোর লাইটিং নিয়ন্ত্রণের জন্য নিজস্ব প্রসেসর রয়েছে। ফলে লাল, সবুজ ও নীল রঙয়ের ব্রাইটনেস, কোন কিগুলোর লাইট জ্বলবে ও কি রঙ দেখা যাবে, লাইটিং ইফেক্ট, সবকিছুই কোনও সফটওয়্যার ছাড়া সরাসরি কিবোর্ডেই প্রোগ্রাম করা যাবে।

সাধারণ ব্যাকলাইট ও রংধনু ইফেক্ট ছাড়াও বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন ইফেক্ট ফ্যাক্টরি থেকেই কিবোর্ডটিতে দেওয়া হয়েছে। যার মাঝে স্নেক গেইমটিও রেয়েছে। অ্যারো কি ব্যবহারে যা সরাসরি কিবোর্ডেই খেলা যাবে।

যারা আরও নিয়ন্ত্রণ চান, তাদের জন্য রয়েছে কুলারমাস্টার কন্ট্রোল প্যানেল। এর মাধ্যমে লাইটিং ও ম্যাক্রো প্রোফাইল সরাসরি এডিট করা যাবে।

এ ছাড়াও গানের সঙ্গে ব্যাকলাইট পরিবর্তন বা ব্যাকলাইটে সিস্টেম লোড দেখানোরও সুবিধা রয়েছে। এর থেকেও বেশি অপশনের জন্য সরাসরি কিবোর্ডটি প্রোগ্রাম করার জন্যও ডেভেলাপমেন্ট কিট ছেড়েছে কুলারমাস্টার।

পরিশেষ
কিবোর্ডটির মূল্য দেখে অনেকেই চোখ কপালে তুলতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে মেকানিক্যাল কিবোর্ডের সুবিধা পেতে হলে বেশ ভালো ব্যয় করতেই হবে। এর বিপরীতে যে টাইপিং ও গেইমিং অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে, তা অনেক ক্ষেত্রেই অতুলনীয়।

মূল্য : কিবোর্ডটি বাজারে সাড়ে ১২ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

এক নজরে ভাল

  • অসাধারণ টাইপিং ও গেইমিং অভিজ্ঞতা
  • বিল্ড কোয়ালিটি
  • লাইটিং ও নিয়ন্ত্রণ

এক নজরে খারাপ

  • রিস্ট রেস্ট নেই
  • পুরোটিই প্লাস্টিক
  • ক্যাবল ম্যানেজমেন্ট আরও ভালো হতে পার

রিভিউটি তৈরি করেছেন টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর এস.এম. তাহমিদ

*

*

আরও পড়ুন