![]() |
টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : জেডটিই ফোনগুলো শাওমি বা ওয়ানপ্লাসের মত সবার কাছে আজও পৌঁছাতে পারেনি। তাই বলে এই নয়, ফোনগুলোর মাঝে তেমন নতুনত্ব নেই। মোটা দাগে সব চলনসই ফিচারের পাশাপাশি এ ব্র্যান্ড অডিও ও ক্যামেরার দিকে বিশেষ জোর দিয়েছে।
চলুন জেডটিইর নুবিয়া সিরিজের জেড১১ ফোনের বিস্তারিত দেখা যাক।
এক নজরে জেডটিই নুবিয়া জেড১১
• ডুয়াল সিম
• ৫.৫ ইঞ্চি, ১৯২০x১০৮০পি রেজুলেশনের আইপিএস এলসিডি ডিসপ্লে, গোরিলা গ্লাস ৩
• কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮২০, দুটি ২.১৫ ও দুটি ১.৬ গিগাহার্জ গতির ক্রাইয়ো কোর মিলিয়ে কোয়াডকোর প্রসেসর
• অ্যাড্রিনো ৫৩০ জিপিউ
• ৪ অথবা ৬ গিগাবাইট র্যাম
• ৬৪ গিগাবাইট রম, মাইক্রোএসডি কার্ড স্লট
• অ্যান্ড্রয়েড ৬.০.১ মার্শম্যালো অপারেটিং সিস্টেম
• ১৬ মেগাপিক্সেল, f/2.0 অ্যাপার্চার লেন্সের ফেইজ ডিটেকশন অটোফোকাস সমৃদ্ধ অপ্টিক্যালভাবে স্ট্যাবিলাইজ করা ব্যাক ক্যামেরা, আলোর জন্য ডুয়াল টোন ডুয়াল এলইডি ফ্ল্যাশ
• ৮ মেগাপিক্সেল, f/2.4 অ্যাপার্চারের ফ্রন্ট ক্যামেরা
• ২১৬০পি (৪কে), ৩০ এফপিএস ভিডিও, ফ্রন্ট ক্যামেরার মাধ্যমে ১০৮০পি ভিডিও করা যাবে
• ৮০২.১১ এসি ডুয়ালব্যান্ড ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ ৪.২, জিপিএস
• এনএফসি, ইনফ্রারেড পোর্ট
• ইউএসবি টাইপ সি পোর্ট, ৩.৫ মিলিমিটার হেডফোন জ্যাক
• ৩০০০ মিলি-অ্যাম্পেয়ার আওয়ার ধারণক্ষমতার ব্যাটারি, কোয়ালকম কুইক চার্জ ৩.০
ডিজাইন
এ ফোনের ডিজাইন কিছুটা গতানুগতিক। তবে এ ব্যাপারে বলা যেতে পারে পেছনে প্যানেল ও সামনে টাচস্ক্রিনকে আর কত নতুন ভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব। তবে কিছু ডিটেইলের ছোঁয়া অনেকেরই নজর কাড়বে।
সামনে কার্ভ ডিসপ্লে না থাকলেও ২.৫ডি কার্ভ গ্লাস ও পোলারাইজারের ব্যবহারের ফলে ডিসপ্লেটি হালকা একটু কার্ভ মনে হবে। এ ছাড়া সামনের পুরো প্যানেলটিই বিশেষত্বহীন, মাঝের ডিসপ্লের ওপরে রয়েছে ইয়ারপিস, তার পাশে ফ্রন্ট ক্যামেরা।
শুধু জেডটিইর নিজস্ব ডিজাইনের চক্রাকার ক্যাপাসিটিভ হোম বাটন ছাড়া আর কোনও ব্র্যান্ডিং বা ফিচার সামনে নেই।
পেছনের প্যানেলের ডিজাইনটিও কিছুটা একঘেয়ে। অ্যালুমিনিয়ামের বডির মাঝে রয়েছে ফিংগারপ্রিন্ট সেন্সর, ওপরের বাম কোনায় ক্যামেরা ও ফ্ল্যাশ এবং নিচে মাঝ বরাবর রয়েছে নুবিয়া ব্র্যান্ডিং।
ওপরের ও নিচের অ্যান্টেনা ব্যান্ডের সঙ্গের অংশটি প্লাস্টিকে তৈরি। ফোনটির ডান পাশে রয়েছে ভলিউম কি ও পাওয়ার বাটন, বামে সিম ও মেমরি কার্ড ট্রে, ওপরে হেডফোন জ্যাক, ইনফ্রারেড পোর্ট এবং নিচে স্পিকার, মাইক্রোফোন ও ইউএসবি টাইপ-সি পোর্ট।
সব মিলিয়ে ফোনটি দেখতে বেশ ভালো। তৈরির মানেও ঘাটতি নেই – শুধু ডিজাইন নিয়ে মনের মধ্যে খটকা থাকবে কম বেশি সবার মধ্যেই।
ডিসপ্লে
৫.৫ ইঞ্চি ফুলএইচডি আইপিএস এলসিডি ডিসপ্লেটি পিক্সেল ঘনত্বে খুব এগিয়ে না থাকলেও, কালার অ্যাকুরেসির দিকে এটি বেশ এগিয়ে।
ডেল্টা ই ২০০০-এর ব্যাতিচার মাত্র ৪। অল্প কিছু পরিমাণ নিলচে আভা ছাড়া প্রায় প্রতিটি রঙই ডিসপ্লেটিতে সুন্দরভাবে ফুটে উঠবে।
অবশ্য কালার অ্যাকুরেসি ভালো হওয়াই শেষ কথা নয়, ডিসপ্লের ঔজ্জ্বল্য কম হওয়ায় অনেক সময়ই ফোনটি বাইরে ব্যবহারে সমস্যা দেখা যায় – এক্ষেত্রে সমস্যাটি একেবারেই নেই। ৫১৮ নিট ব্রাইটনেসের প্যানেলটি সরাসরি রোদেও সহজে ব্যবহার করা যাবে।
কন্ট্রাসট ও পোলারাইজারের ব্যবহারে বেজেল প্রায় অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার ফলে ফোনটির ডিসপ্লেটি আর দশটি প্যানলের চাইতে অনেক গুণে এগিয়ে রয়েছে।
পারফরমেন্স
স্ন্যাপড্রাগন ৮২০ প্রসেসর সমৃদ্ধ প্রতিটি ফোনই অসাধারণ পারফরমেন্স দেখাতে সক্ষম। এটিও ব্যতিক্রম নয়। অক্টাকোর প্রসেসরের যুগে কোয়াডকোর কিছুটা কম মনে হলেও, শক্তিশালী ক্রাইও কোর থাকার ফলে এটি অনায়েসে সিঙ্গেল কোর ও মাল্টিকোরের ওপর চাপ ফেলা সকল অ্যাপ্লিশেকনই দ্রুততার সঙ্গে চালাতে সক্ষম।
গিকবেঞ্চ অনুসারে, স্ন্যাপড্রাগন ৮২০ একমাত্র পিছিয়ে রয়েছে ৮৩৫ এর থেকে। তাও শুধু মাল্টিকোর প্রসেসিংয়ের ক্ষেত্রে।
অ্যাড্রিনো ৫৩০ জিপিউটিও ৫৪০-এর চাইতে পিছিয়ে রয়েছে। ফলে সকল গেইম ফোনটিতে হাই সেটিংসে অনায়াসে খেলা যাবে। ফ্ল্যাগশিপ ফোন সাধারণত দীর্ঘদিন পর্যন্ত সবকিছুই দ্রুততার সঙ্গে করতে সক্ষম থাকে। এতে করে গেমিং নিয়ে অন্তত দু’ থেকে তিন বছর চিন্তা করার প্রয়োজন নেই।
ডিসপ্লেতে ১০৮০পি রেজুলেশন ব্যবহারের ফলে জিপিউটির ওপর কোনও চাপ পড়েনি। পারফরমেন্সও আরও ভালো পাওয়া গিয়েছে।
র্যামের ঘাটতি কোনও ভ্যারিয়েন্টেই নেই। ৪ গিগাবাইট র্যাম আজও ফ্ল্যাগশিপে দেয়া হচ্ছে। ৬ গিগা বলা যেতে পারে অতিরিক্ত। মাল্টি টাস্কিং ও টাস্ক সুইচিংয়ে কোনও ল্যাগ বা ক্র্যাশ দেখা যায়নি।
সব মিলিয়ে, একটি ২০১৬ সালের ফ্ল্যাগশিপের কাছে যেটুকু পারফরমেন্স আশা করা যায় তার পুরোটিই পাওয়া গিয়েছে নুবিয়া জেড১১ এর কাছে।
অডিও কোয়ালিটি
নুবিয়া জেড১১ এর শব্দের মানের দিকে কোম্পানিটি বেশ নজর দিয়েছে। ২৪ বিট হাই রেজুলেশন অডিও সাপোর্ট করার মত সাউন্ড চিপ ও ভালো ড্যাক ব্যবহার করায় হেডফোন ও স্পিকার – দুটিতেই জোরালো ও স্পষ্ট মিউজিক শোনা যাবে।
তবে ডুয়াল স্পিকার না থাকায় গান মূলত হেডফোনেই শুনতে হবে। ফোনটি ডলবি অ্যাটমোস সার্টিফাইড। এতে ডলবির প্রযুক্তিতে মাস্টার করা সকল গানই হেডফোনে প্রায় নিখুঁত প্লেব্যাক হবে।
ক্যামেরা
সনির আইএমএক্স ২৯৮ সেন্সরটি ব্যাক ক্যামেরা হিসেবে এ ফোনে ব্যবহার করেছে জেডটিই। সেন্সরটি বেশ অনেক ফোনেই আজ পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়েছে। ওয়ানপ্লাস থ্রি ও থ্রিটিতেও একই সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে। এ কারণে ক্যামেরার মান নিয়ে কোনও সন্দেহ করার প্রয়াস নেই।
জেডটিই ক্যামেরাটিতে f/2.0 অ্যাপার্চারের লেন্স যুক্ত করেছে, সঙ্গে রয়েছে থ্রি-ডি নয়েজ রিডাকশন, ডিপ ট্রেঞ্চ আইসোলেশন ও লোকাল টোন ম্যাপিং। এ ছাড়া ওআইএস ও পিডিএফ রয়েছেই।
হার্ডওয়্যারের এতসব ফিচার সঠিকভাবে ব্যবহারের জন্য সফটওয়্যারেও রয়েছে প্রচুর ফিচার। ফুল ম্যানুয়াল মোড, ইলেক্ট্রনিক শাটারের মাধ্যমে দীর্ঘ এক্সপোজারের ছবি তোলার সুবিধা, মাল্টি এক্সপোজার এমন প্রচুর বিশেষ মোড রয়েছে ক্যামেরা অ্যাপটিতে।
ফলাফলস্বরূপ ফোনটির সকল ছবিরই শার্পনেস, ডিটেইল, ডাইনামিক রেঞ্জ ও কালার ব্যালেন্স একেবারে নিখুঁতের কাছাকাছি।
তবে লো লাইটে ক্যামেরার নয়েজ রিডাকশন বেশ কিছুটা ডিটেইল নষ্ট করে ফেলায় একেবারে সেরা ক্যামেরা একে বলা যাবে না। এর পরও ডিটেইল যথেষ্ট। ফ্রন্ট ক্যামেরার ডিটেইল কিছুটা কম। মূলত f/2.4 অ্যাপার্চারের লেন্স ব্যবহারের ফলে লো লাইটে কিছুটা নয়েজ দেখা গিয়েছে।
সেলফির জন্যও ফোনটি বিশেষভাবে তৈরি করা হয়নি।
স্টিল ক্যামেরার ভালো পারফরমেন্স ভিডিওতেও দেখা গিয়েছে, মাঝে মাঝে অল্পবিস্তর ওভার এক্সপোজার ছাড়া প্রতিটি মোডেই ডিটেইলসমৃদ্ধ ভিডিও পাওয়া গিয়েছে।
ফোরকে রেজুলেশনেও ফোনটির ক্যামেরায় একটিও ফ্রেম ড্রপ না করে ৩০ এফপিএস-এ ভিডিও ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে, যা কম কথা নয়।
সব মিলিয়ে, শুধু ক্যামেরার জন্যও ফোনটি কেনা যেতে পারে।
ব্যাটারি লাইফ
স্ন্যাপড্রাগন ৮২০ ও ৩০০০ এমএএইচ ধারণক্ষমতার ব্যাটারির যুগলটি মন্দ নয়। অন্তত ছয় ঘন্টা স্ক্রিন অন টাইম ও দুই দিন পর্যন্ত টানা ব্যাকআপ পাওয়া যাবে সহজেই। একই সঙ্গে কোয়ালকম কুইকচার্জ থাকার ফলে ব্যাটারি খালি হয়ে গেলেও ৫০% চার্জ হয়ে যাবে ৩০-৪০ মিনিটেই।
পরিশিষ্ট
নুবিয়া জেড১১ ফোনটির মূল সমস্যা হচ্ছে মূল্য। প্রায় একই মূল্যে বাজারে রয়েছে এলজি জি৫ ও ওয়ানপ্লাস থ্রি-টি। অল্প একটু বাড়িয়ে কিনলে জেডটিই-এর অ্যাক্সন ৭ রয়েছে – যার ডিসপ্লে ও স্পিকার দুটোই এর চাইতে ভালো। তবে ক্যামেরায় পিছিয়ে রয়েছে।
এখন বাজারে গ্যালাক্সি এস ৭ও প্রায় একই মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে। সব মিলিয়ে, নুবিয়া জেড১১ ক্যামেরা ও সঙ্গীতপ্রেমীদের ছাড়া বাকি সবাইকে তেমন কাছে টানতে পারবে কিনা, সন্দেহ রয়েই যাচ্ছে।
মূল্য : ফোনটি বাজারে ৩৩ থেকে ৪০ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে
এক নজরে ভাল
এক নজরে খারাপ
রিভিউটি করেছেন টেক শহর ডটকমের কনটেন্ট কাউন্সিলর এস.এম. তাহমিদ