![]() |
এস. এম. তাহমিদ, টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : মটো জি সিরিজের মাধ্যমে প্রথম থেকেই মাঝারি মূল্যে ভাল ফোন ব্যবহারকারীদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছে বদলে যাওয়া মটরোলা। এর আগে মটো জি৪ প্লাস ফোনটি মূল্য অনুসারে সবচাইতো ভাল ক্যামেরা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কাজেও তার প্রমাণ রাখতে পারায় সবার কাছে ফোনটির গ্রহণযোগ্যতাও বেড়ে গেছে।
সেই ধারাবাহিকতা এ সিরিজের নতুন ফোন মটো জি৫ প্লাস রাখতে পেরেছে কিনা- দেখা যাক।
এক নজরে মটো জি৫ প্লাস
ডিজাইন
লেনোভো মটোরোলাকে কিনে নেয়ার পর তারা মটো জি৪ তৈরি করলেও এবারই প্রথম জি-সিরিজের ডিজাইনে বিশাল রকমের পরিবর্তন এনেছে। প্লাস্টিকের বদলে এবার পুরো ফোনটিই তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যালুমিনিয়াম।
এতে ফোনটির চেহারায় কিছুটা বনেদিপনা এসেছে। গত বছরের জি৪+ এর তুলনায় এবারের স্ক্রিনের সাইজ ০.৩ ইঞ্চি কমানো হয়েছে – যা অনেকের কাছেই ভালো নাও লাগতে পারে।
এর বাইরে ডিজাইনের মূল সমস্যা বলা যেতে পারে ফোনটির বেজেল। চলতি বছর বাজারে আসা অন্য ফোনের তুলনায় ডিসপ্লের চারপাশে এত খালি জায়গা থাকাটা বেমানান।
ফোনটির সামনে ডিসপ্লের ঠিক উপরে ও নিচে বেশ বড় আকৃতির বেজেল রয়েছে। যদিও তা আইফোনের চেয়ে বেশি নয়। ডিসপ্লের ওপরে মটো লোগো ও তার উপরে ইয়ারপিস ও সেলফি ক্যামেরা অবস্থিত।
নিচে হোম বাটন ও ফিংগারপ্রিন্ট রিডার রয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে বাস্তবে হোম বাটন থাকলেও ব্যাক ও মেন্যু ক্যাপাসিটিভ কি দেওয়া হয়নি ফোনটিতে। এ নিয়ে পরে বিস্তারিত লেখা হয়েছে।
ফোনটির চারপাশের বাম্পারটি বেশ চকচকে পলিশে দেয়ায় ডিভাইসটির চেহারা কিছুটা পুরাতন ডিজাইনের মনে হতে পারে। সেটি তেমন বড় ধরনের সমস্যা নয়।
জি৫+ এর ডান পাশে রয়েছে পাওয়ার কি ও ভলিউম বাটন। উপরে রয়েছে সিম ও মেমরিকার্ড ট্রে, বাম পাশের পুরোটাই খালি ও নিচে রয়েছে হেডফোন জ্যাক, স্পিকার, মাইক্রোফোন ও মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট।
পেছনে ক্যামেরাটির চারপাশে বিশাল একটি চক্রাকার বর্ডার রয়েছে। এতে টেবিলে রাখলে ফোনটি কোনোভাবেই সমানভাবে বসবে না। ক্যামেরার এ ডিজাইন এর আগে মটো জেড সিরিজে দেখা গেলেও এক্ষেত্রে একেবারেই বেমানান বলা যেতে পারে।
হয়ত লেনোভো চাইছে, মটো সিরিজের ফোনগুলোর এ ক্যামেরা বাম্পই মূল ডিজাইন সিগনেচার হোক। এর ঠিক নিচে রয়েছে মটোরোলা লোগো। এছাড়া আর কিছু নেই।
সব মিলিয়ে, বেশ শক্তপোক্ত ও ভারি ফোনটি যে কারোর কাছেই বেশ মানসম্পন্ন মনে হবে। বিল্ড কোয়ালিটির দিক থেকে কোনও খুঁত নেই। এরপরও ডিজাইনে বেশ কিছু প্রশ্ন রয়ে গেছে।
ডিসপ্লে
৫.২ ইঞ্চি ফুল এইচডি আইপিএস এলসিডি ডিসপ্লে ব্যবহার করে অসংখ্য ফোন ইতোমধ্যে বাজারে এসেছে। তাই নতুন করে ডিসপ্লে নিয়ে বলার তেমন কিছু আসলে নেই। ৪২৪ পিপিআই ঘনত্বের এ স্ক্রিন বরাবরের মতই মাঝারি মূল্যের ফোনের মাঝে একেবারে প্রথম সারির।
আইপিএস প্রযুক্তির ফলে ভিউইং অ্যাঙ্গেল, কন্ট্রাস্ট ও কালার ডেপথে কোনও ঘাটতি নেই। ব্রাইটনেস কিছুটা বেশি হলে সরাসরি রোদে ব্যবহারের সময় আরও সুবিধা পাওয়া যেত।
আগের সাধারণ গ্লাসের পরিবর্তে ফোনটির সামনে গোরিলা গ্লাস থ্রি ব্যবহারের ফলে সাধারণ ব্যবহারে স্ক্রাচ পরার সম্ভাবনা নেই একেবারেই। যদিও মেটাল বিল্ড থাকলেও হাত থেকে পরে ফেটে যাওয়ার কিছুটা সম্ভাবনা রয়েছে।
পারফরমেন্স
স্ন্যাপড্রাগন ৬২৫ প্রসেসরচালিত ফোনটি মাঝারি পারফরমেন্সে চলতে সক্ষম। আট কোরের সবগুলোই কর্টেক্স এ৫৩ হওয়ায় সিঙ্গেল থ্রেড পারফরমেন্স তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম।
আজকাল সর্বনিম্ন পারফরমেন্সের কোরগুলোও দৈনন্দিন কাজের জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী হওয়ায় গেমিং ও ভার ফটো এডিটের কাজ ছাড়া সকল প্রোগ্রামই দ্রুত লোড কাজ করে।
এ ফোনে গেইমের ডিটেইল কিছুটা কম পাওয়া যেতে পারে। সেটি তেমন সমস্যা নয়। আট কোর থাকায় মাল্টি-থ্রেড পারফরমেন্সে প্রসেসরটি বেশ পুষিয়ে নিয়েছে। ফলে মাল্টি-টাস্কিং, সুইচিং ও ওয়েব ব্রাউজিংয়ে কোনও ঘাটতি নেই।
অ্যাড্রিনো ৫০৬ জিপিউটিও বলা যেতে পারে মাঝারি পারফরমেন্সের। থ্রিডি মার্ক অনুযায়ী এটি সাধারন হাই গ্রাফিক্সের সব গেইম সুন্দরভাবে চালাতে সক্ষম। তবে অসাধারণ পারফরমেন্স আশা করা ভুল হবে। যদিও ১০৮০পি ডিসপ্লেতে অন্য সবকিছুই ল্যাগ ছাড়া দেখাতে সক্ষম এ জিপিউটি।
র্যামের অভাব ২০১৭ সালের মাঝারি মানের ফোনে থাকা উচিৎ নয়। সে দিক থেকে ২ গিগাবাইট সংস্করণে সেটি সমস্যা হিসেবে দেখা দিতে পারে। ৩ বা ৪ গিগাবাইট সংস্করণের ফোনে মাল্টি-টাস্কিং নিয়ে কোনও সমস্যা দেখা যায়নি।
সব মিলিয়ে মাঝারি পারফরমেন্সের ফোনটি ব্যবহারকারীকে ঝামেলায় না ফেললেও অসাধারণ কোনও পারফরমেন্সও দেখাতে পারবে না।
সাউন্ড কোয়ালিটি
সাউন্ড কোয়ালিটিতে বেশ হতাশ করেছে ফোনটি। ভলিউম কিংবা সুচারু সাউন্ড – সবদিক থেকেই বেশ জৌলুশহীন মনে হয়েছে। স্পিকারের সাউন্ডও একেবারই রিংটোন শোনা ছাড়া আর কোনও কাজে ব্যবহার করার মতো নয়।
সম্প্রতি নতুন একটি আপডেটে সাউন্ড কোয়ালিটি অনেকটাই ঠিক করা হয়েছে। এর পরও হেডফোন ব্যবহারকারীরা এটিকে বলছেন যথেষ্ট নয়। সব মিলিয়ে বলা যেতে পারে সংগীতপ্রেমিদের জন্য ফোনটি যুতসই নয়।
ক্যামেরা
মটো জি৪+ মাঝারি মূল্যে ফ্ল্যাগশিপ ক্যামেরা দিয়ে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল। মটো জি৫+ সেটি বজায় রেখেছে। f/1.7 অ্যাপার্চার সমৃদ্ধ ক্যামেরা অনেক ফ্ল্যাগশিপেও আজকাল দেখা যায় না। অথচ এ ফোনে মটোরোলা সেটি ব্যবহার করেছে।
এতে করে কম আলোতেও প্রতিটি ছবিতেই খুব কম নয়েজ দেখা গিয়েছে। মূলত প্রফেশনাল মোডে সঠিকভাবে সবকিছু সেট করে তোলা ছবিগুলো মানের দিক থেকে ফ্ল্যাগশিপ ফোনের কাছাকাছিই চলে গিয়েছে।
অন্যদিকে ক্যামেরাটির প্রফেশনাল মোডটি যতটা ভাল, অটো মোডটি ততটা নয়। কিছু সময় ফোকাসিং নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। এইচডিআর মোড অন না করা থাকলে কালার ব্যালেন্সের ঘাটতি রয়েই গিয়েছে বেশ অনেকটা।
এগুলো তেমন বড় সমস্যা নয়। ধরে নেয়া যেতে পারে, ভবিষ্যতের আপডেটে সেটি শুধরে নেওয়া হবে।
ফ্রন্ট ক্যামেরার মান বলা যেতে পারে মাঝারি। সেলফিপাগলদের জন্য ফোনটি সঠিক না হলেও সাধারণ সবার জন্য যথেষ্ট ভাল।
ভিডিওর মান নিয়ে তেমন কিছু বলার নেই। মাঝারি মূল্যের আর কোনও ফোনে তেমন ৪কে ভিডিও ধারণের অপশন দেখা যায় না। সেখানে মটো জি৫+ ভাল মানের ৪কে ভিডিও ধারণ করতে সক্ষম। সেক্ষেত্রে অন্তত ৬৪ গিগাবাইট সংস্করণটি ব্যবহার করাই উত্তম।
ব্যাটারি লাইফ
ব্যাটারি লাইফ পুরোটাই নির্ভর করে ব্যবহারকারীর ওপর। সর্বোচ্চ ব্রাইটনেসে ও সাধারণ ব্যবহারে টানা ছয় ঘন্টা স্ক্রিন অন পাওয়া গেছে।
সব মিলিয়ে ১৮ ঘন্টা ব্যবহারের পর ফোনটির চার্জ শেষ হয়ে যায়। সঙ্গে কুইক চার্জ থাকার ফলে ফোনটি শূন্য থেকে ফুল হতে সময় নেয় মাত্র দেড় ঘন্টা। তাই ব্যাটারি লাইফ নিয়ে তেমন কোনও সমস্যা দেখা যাওয়ার কথা নয়।
পরিশেষ
অডিও কোয়ালিটি ও অদ্ভুতুরে হোম বাটন জেসচার নেভিগেশন ছাড়া সব দিক থেকেই মটো জি৫+ ফোনটি খুবই ভালো। যারা মাঝারি মূল্যে সবচাইতে ভালো ক্যামেরা ফোন খুঁজছেন, তারা নির্দ্বিধায় ফোনটি কিনে ফেলতে পারেন।
তবে হ্যাঁ, শুধু ক্যামেরাই যাদের লক্ষ্য নয় – তারা কিন্তু একই পারফরমেন্সের ফোন আরও কম মূল্যে চীনা নির্মাতাদের কাছ থেকে পাবেন। একই দামে অবশ্য আরও ভালো পারফরমেন্সের ফোন বাজারে রয়েছে।
আগে বলা হতো, মটোরোলার কোয়ালিটি আরও ভাল; কিন্তু এখন সেই ফোন তৈরি করছে লেনোভোই। তাই আগের সেই ভ্যালুও আজ আর নেই। এ জন্য ক্যামেরা ও সফটওয়্যার আপডেট ছাড়া আর কোনও কারণ নেই জি৫+ কেনার। কিছু ভালো কিছু খারাপ- সিদ্ধান্ত নেওয়াটা জটিলই হয়ে গেল, তাই না।
মূল্য
গ্রে মার্কেটে ফোনটি ২৫,০০০ থেকে শুরু করে ২৭,০০০ টাকায় পাওয়া গেলেও ওয়ারেন্টি পাওয়া যাবে না। অফিসিয়াল চ্যানেলে পরিবেশকদের মাধ্যমে এটি দেশে বাজারজাত হয় না।
এক নজরে ভালো
এক নজরে খারাপ