![]() |
টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : শাওমি ক্যামেরা বানায় এমন তথ্য সাধারণের সবার খুব বেশি জানা নেই। সবাই মূলত এ ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন নিয়েই মাতামাতি করে বেশি। এরই মাঝে অন্যান্য ডিভাইসও বানাচ্ছে চীনা অ্যাপল খ্যাত কোম্পানিটি।
এরই অংশ হিসেবে অ্যাকশন ক্যামেরা গো-প্রো’র প্রথম সফল স্বল্পমূল্যের প্রতিদ্বন্দ্বী তৈরি করে শাওমির ওয়াই-আই টেকনোলজিস বেশ সাড়া ফেলেছে। সেই ক্যামেরাটির নতুন সংস্করণ ওয়াই-আই ফোরকে বাজারে এসেছে বেশ কিছুদিন আগে।
সর্বশেষ আপডেটের পর সেটি গো-প্রো’র তুলনায় কতটুকু সুবিধা করতে পেরেছে সেটাই এখন দেখার বিষয়। নতুন এ অ্যাকশন ক্যামেরার ফিচারগুলোর পাশাপাশি ভালো মন্দের বিচার বিশ্লেষণ থাকছে এ রিভিউতে।
এক নজরে শাওমি ওয়াই-আই ফোরকে
ডিজাইন
ক্ষুদ্রাকৃতির এ ক্যামেরার ডিজাইন বেশ সাধারণ। সামনে একটু পাশে রয়েছে এর লেন্স, ওপরে শাটার বাটন, পেছনের পুরোটা জুড়ে টাচ স্ক্রিন। ডান পাশে রয়েছে চার্জিং পোর্ট ও মাইক্রো এসডি স্লট ও নিচে স্ক্রু মাউন্ট ও ব্যাটারি ডোর।
বেশ শক্তপোক্ত প্লাস্টিকে তৈরি ম্যাট ব্ল্যাক ক্যামেরাটি হাতে নিলেই বোঝা যাবে এটি টুকটাক আঘাতও অনায়াসে সহ্য করে নিতে পারবে, এটি বলে দিতে হবে না।
ক্যামেরার বাটনটি কিছুটা অদ্ভুত স্থানে দেওয়ার ফলে ছবি তুলতে একটু অন্যরকম লাগবে। তবে সেটা অভ্যাসের ব্যাপার। ডিজাইনের মূল সমস্যা বলা যেতে পারে, ক্যামেরাটি পানি-নিরোধক নয়।
তাই পানির নিচে বা ভেজা অবস্থায় ব্যবহারের জন্য ওয়াটার প্রুফ কেস কেনা বাধ্যতামূলক।
ব্যবহার
ক্যামেরাটির মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বলা যেতে পারে গো-প্রো হিরো৪। অ্যাকশন ক্যামেরার মূল আকর্ষণ বলতে যা বোঝায় সেটির প্রায় সবকিছুই ওয়াই-আই ৪কে ক্যামেরাটিতে করা যাবে। তবে দামের দিক থেকে গো-প্রো’র চাইতে এটি অনেক কম।
চলার পথে ভিডিও ধারণ, দ্রুত ঘটে যাওয়া ঘটনার স্লো-মোশন ভিডিও করাসহ সাধারণ ক্যামেরা যেখানে অচল – যেমন হেলমেট মাথায় থাকলে বা সাঁতার কাটার সময় – সেসব স্থানে ভিডিও করার জন্য ক্যামেরাটি অদ্বিতীয়।
টাচ স্ক্রিনের মাধ্যমে সহজেই ক্যামেরাটির প্রায় সব ফিচার ব্যবহার করা গেলেও ফোনের অ্যাপের সঙ্গে সংযুক্ত না করে আসলে এটির সম্পূর্ণ মজা পাওয়া যাবে না।
ওয়াই-ফাই বা ব্লুটুথের মাধ্যমে ফোনের সঙ্গে একবার পেয়ারিং করার পর ফোন থেকেই সবটুকু নিয়ন্ত্রণ করে নেওয়া যাবে। তখন ক্যামেরাটি মনোপড, হেলমেট মাউন্ট, ইত্যাদির সঙ্গে জুড়ে অনেক ভিন্ন অবস্থানের ভিডিও ও চিত্র ধারণ করা সম্ভব হবে।
পারফরমেন্স
ক্যামেরার মূল পরিচয় নির্ভর করে ছবি ও ভিডিওর মানের উপর। সেদিক থেকে ওয়াই-আই ৪কে অনেক বেশি এগিয়ে রয়েছে। স্ট্যাবিলাইজেশন থাকার ফলে প্রতিটি ফুটেজেই কাঁপুনি নেই বললেই চলে। অ্যাকশন ক্যামেরার জন্য যা খুবই গুরত্বপূর্ণ।
গো-প্রো হিরো৪-এর তূলনায় এ ক্যামেরায় ধারণ করা সব ফুটেজের ডিটেইলস তূলনামূলক কম। কন্ট্রাস্টের ঘাটতিও কিছুটা বেশি। তবে তূলনামূলকভাবে অন্ধকারেও কম নয়েজ পাওয়া গিয়েছে।
মূলত ভিডিওর জন্য তৈরি ক্যামেরাটি স্থিরচিত্র ধারণেও বেশ এগিয়ে রয়েছে। যারা সেলফি তুলতে ভালবাসেন তাদের কাছে ক্যামেরাটি ব্যবহারের পর বেশিরভাগ ফোনের ক্যামেরাই অপ্রতুল মনে হবে। শুধু সেলফি তোলার জন্য ক্যামেরাটি কেনার কোনোও মানে নেই।
এদিক থেকেও গো-প্রো’র পরিবর্তনযোগ্য ভিউইং অ্যাঙ্গেল আরও ভালো কাজ করে।
ফোরকে ছাড়াও ১০৮০পি ৬০এফপিএস ভিডিও মোডটি অ্যাকশন ভিডিও ধারণের জন্য বেশ কাজের। ২৪ এফপিএস মোড না থাকায় সিনেম্যাটিক ফুটেজ পাওয়া কিছুটা দুষ্কর।অবশ্য স্লো-মোশন মোডগুলো বেশ কাজের।
তবে গো-প্রো’র মতো ওয়াইড-অ্যাঙ্গেল মোড বদলের সুযোগ না থাকায় সাবজেক্টের ওপর ফোকাস আনা বেশ কষ্টকর।
এসব শুনে মনে হবার কোনও কারণ নেই যে, ক্যামেরাটি খারাপ। গো প্রো হিরো৪ যেখানে ৪০ হাজার টাকার ওপরে বিক্রি হয়ে থাকে, সেখানে এটির ৭০ শতাংশ পারফরমেন্সের ক্যামেরা ২৪ হাজার টাকায় খুবই ভালো।
ব্যাটারি লাইফ
গো-প্রো হিরো৪ এক চার্জে টানা ৩৮ মিনিট ভিডিও ধারণ করতে সক্ষম। সেখানে ওয়াই-আই ফোরকে সহজেই ৪৮ মিনিট ভিডিও ধারণ করতে পারে। এদিক থেকে ক্যামেরাটি বেশ এগিয়ে রয়েছে।
এর বিপরীতে গো-প্রো’র মতো এটির ব্যাটারি সহজে পাওয়া না যাওয়ায় দুটি-তিনটি ব্যাটারি অতিরিক্ত রাখলে চার্জ নিয়ে সমস্যাই পড়তে হবে না। কেননা এটিতে আলাদা চার্জ করার সুবিধাটি ঠিক নেই।
অ্যাপ
অ্যাকশন ক্যামেরার মূল বলা যেতে পারে এর অ্যাপ। এ দিক থেকে অনান্য চীনা প্রস্তুতকারদের চেয়ে ওয়াই-আই বেশ এগিয়ে রয়েছে।
ক্যামেরাটিতে ডুয়াল ব্যান্ড ওয়াই-ফাই থাকায় পেয়ারিং করতে কোনও দেরি হবে না। ভিডিও ধারণ করার পর সেটি ফোনে নিতেও খুবই কম সময় লাগবে।
অ্যাপটিতে যদিও এডিটিং বা শেয়ারিংয়ের সুবিধা গো-প্রো’র চাইতে বেশ কম। ফলে সেদিক থেকে কিছুটা মার্কস কাটা যাবেই।
পরিশেষ
সবদিক বিবেচনায় নিয়ে বলা যেতে পারে, অ্যাকশন ক্যামেরার রাজা গো-প্রো’র চীনা সংস্করণ এ ক্যামেরা। তবে হ্যা, মূল্য বিচারে এটিকে বাদ দিয়ে গো-প্রো কেনার কথা কোনও ভাবেই বলা যাবে না।
যেখানে ২৪ থেকে ২৫ হাজার টাকায় ওয়াই-আই ফোরকে কেনা যাবে, সেখানে মাত্র ৩০ শতাংশ বেশি ফিচারের জন্য ৪০ হাজারের বেশি টাকা ব্যয় করার কথা বলা খুবই কষ্টকর।
মূল্য : শুধু ক্যামেরা ও মনোপড ২৪ থেকে ২৫ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
এক নজরে ভালো
এক নজরে খারাপ
এ রিভিউ তৈরি করেছেন টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর এস. এম. তাহমিদ