ফেয়ার অ্যান্ড লাভলির সঙ্গে নারী দিবস উদযাপন নিয়ে বেসিসে বিতর্ক

টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : নারীদের কাজ উদযাপন ও তাদের সম্মাননা জানাতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বেসিস। তবে এ আয়োজনে রঙ ফর্সা করার ক্রিম ফেয়ার অ্যান্ড লাভলির সম্পৃক্ততা নিয়ে বির্তক তৈরি হয়েছে।

কর্মক্ষেত্রে নারীদের অবস্থানকে তুলে ধরাই যেখানে এ আয়ােজনের মূল উদ্দেশ্য, সেখানে নারীদের রঙকে পুঁজি করে তৈরি পণ্য ফেয়ার অ্যান্ড লাভলির পৃষ্ঠপোষকতা মোটেও সম্মানজনক নয় বলে মন্তব্য সফটওয়্যার রপ্তানিকারকদের সংগঠন বেসিসের অনেক সদস্যের।

তাদের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে আয়োজিত এ ভালো উদ্যোগে বিশ্বজুড়ে সমালোচিত এ ব্র্যান্ডকে যুক্ত করে আত্মপ্রত্যয়ী নারীদের খাটো করা হয়েছে। তাদের মতে এ আয়োজনে কালিমা ছড়িয়েছে এটি।

Techshohor Youtube

বিতর্ক সম্পর্কে বেসিস উইমেন ফোরামের আহবায়ক ফারহানা এ রহমান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি টেকশহরডটকমকে বলেন, ‘আমি নিজেও ফিল করি এই জায়গাটায় অনেক বিতর্ক আছে। ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী বর্ণবৈষম্য বা যে জিনিসটা তারা হাইলাইট করে।’

এটা ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী ফাউন্ডেশনের সঙ্গে করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘ যখন তারা কাজ করতে চাইল আমরা শুধু আইসিটি ইন্ডাস্ট্রিকে নিয়ে কাজ করতে চাইনি। আমাদের কাছে এটা মেয়েদের এক জায়গায় করার সুযোগ।’

বেসিসের এই সহ-সভাপতি বলেন, ‘নারী দিবস বলে আসলে আমরা একটি দিনকে ধার্য্য করেছি আসলে সব দিবসই তো নারীদের । আমরা আন্তর্জাতিক নারী দিবসই সেলিব্রেট করবো। এটা কেউ ৫ তারিখে করেছে কেউ ৭ তারিখে করেছে এটা পুরো উইক ধরেই প্রোগ্রাম চলছে ।

‘আমরা শুধু মেয়েদেরকে বলিনি, আমরা ছেলে মেয়ে সবাইকে বলেছি। আমি যখন এই ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছি তখন আলাদা করে কোনো নারী ফোরাম ছিল? আমরা কিন্তু ইক্যুয়াল প্লাটফর্মেই কমপিট করে এসেছি। মেয়েদের এনকারেজ করার জন্য আমরা উইমেন ফোরাম করছি সেটা ঠিক কিন্তু আল্টিমেটলি মেয়েদেরকে জেনারেল প্লাটফর্মেই কমপিট করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে  ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট এর অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এছাড়া টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমকে দাওয়াত করা হলেও তিনি আসছেন না সূত্রে জানা গেছে।

womansday-basis-techshohor

বেসিস ও ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি ফাউন্ডেশন যৌথভাবে বুধবার ‘সেলিব্রেটিং ওমেন অ্যাট ওয়ার্ক’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তুর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সেলিব্রেটি হলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় এ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে।

আমন্ত্রণপত্রে জানানো হয়, ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি ফাউন্ডেশন ও বেসিস উইমেন ফোরাম যৌথভাবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে এ আয়োজন করেছে।

এতে থাকবে নেটওয়ার্কিং, আলোচনা, নারী পেশাজীবিদের স্বীকৃতি প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

সদস্যদের অভিযোগ, বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বর্ণবৈষম্য ও নারীর প্রতি অসম্মানের অভিযোগে ‘বিতর্কিত’ ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি। এ পণ্যের নামে প্রতিষ্ঠিত ফাউন্ডেশনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ‍উদযাপনের অনুষ্ঠান আয়োজন করে স্বাবলম্বী নারীদের হেয় করা হয়েছে।

ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি ব্যবহারে ফর্সা হবে এবং তা জীবন বদলে দেবে বলে প্রচার করা হয়। দেশে ও বিদেশে এ ব্র্যান্ডের এমন বিজ্ঞাপন ব্যাপক বিতর্কিত। বিষয়টি নারীদের জন্য অসম্মানজনক হিসেবে সমালোচিত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে ‘আনফেয়ার অ্যান্ড লাভলি’ ক্যাম্পেইনও হয়েছে।

আত্মবিশ্বাসের জন্য ফর্সা হওয়া আর ফর্সা হলে আত্মনির্ভরশীল হতে পারা-ফেয়ার অ্যান্ড লাভলির বিজ্ঞাপনের এমন থিম প্রচারকে নারীদের যোগ্যতা ও দক্ষতাকে অবমূল্যায়ন ও অসস্মান করার অভিযোগ রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরি গায়েন ডয়েচে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ বিজ্ঞাপন নিয়ে বলেছেন, ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি যেভাবে মেয়েদের ফর্সা করার কথা বলা হচ্ছে। এটি বৈজ্ঞানিকভাবেও অস্বীকৃত, ঠিক না। দ্বিতীয়ত রং ফর্সাকরী পণ্যে ব্যবহারে অনেক ধরণের ত্বকের সমস্যায় নারীরা পড়ছেন। আরেকটি জায়গা ভংয়কর ক্ষতিকর দিক। এই কালো পাত্রীটিকে রং ফর্সা করার উপদেশ দেয়া তার ত্বককে ঘৃণার প্রতি প্ররোচনা দেয়া। এটা একেবারেই মৌলিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলে মনে করি এবং এ জায়গাটাতে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।’

‘বর্ণবাদ যদি ঘৃণ্য এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হয় দক্ষিণ আফ্রিকায় তাহলে আমাদের দেশে কেনো এটা হবে না। কারণ এই বিজ্ঞাপনের মধ্য হতে কালো রঙকে চার সপ্তাহে, আট সপ্তাহে, ১২ সপ্তাহে, ২ মাসের মধ্যে ফর্সা করতে বলা-এটা বর্ণবাদ।’

আল-আমীন দেওয়ান

*

*

আরও পড়ুন