![]() |
এস এম তাহমিদ, টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : রেডমি সিরিজে বরাবরই স্বল্পমূল্যে সবচাইতে বেশি ফিচারের ফোন তৈরির চেষ্টায় থাকে শাওমি। এর মধ্যে সর্বশেষ রেডমি নোট ৪ ব্যতিক্রম নয়। এ ফোনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট শ্রেণীর ক্রেতাদের ধরে রাখার চেষ্টা থাকে চীনের অ্যাপল খ্যাত এ কোম্পানির।
রেডমি নোট ৩ ও নোট ৩ প্রো-এর বিপুল জনপ্রিয়তার পর এ সিরিজের নতুন ফোনে আগের চেয়ে বাড়তি কিছু রয়েছে কি-না তা জানাতে এ রিভিউ।
বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ শেষে সংক্ষেপে বলা যায়, নতুন মডেলটি নোট ৩-কে ছাড়িয়ে গেলেও অনেক ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। তবে দামের তুলনায় সমস্যাগুলো খুব বড় কিছু নয়; বরং এ দামে নামি ব্র্যান্ডের সব মিড রেঞ্জ ফোনের চাইতে অনেক বেশি কিছুই মিলবে।
এক নজরে রেডমি নোট ৪
স্পেসিফিকেশন লিস্ট দেখে প্রথমেই মাথায় আসবে শাওমি ফিচার যোগ করার সময় কিছুই বাদ রাখেনি; বিশেষত ১০ কোরের প্রসেসরটি নজরকাড়া। তবে স্পেসিফিকেশনই সব কথার শেষ কথা নয়।
ডিজাইন
রেডমি নোট ৪ ফোনটির মূল আকর্ষণের একটি হলো এর সম্পূর্ণ মেটাল বডি। বলা হচ্ছে, প্রায় ৩০ ধাপ পেরিয়ে একেকটি রেডমি নোট ৪-এর বডি তৈরি করা হয়। ঝকঝকে পলিশ করা মেটাল বডি, চ্যামফার করা এজগুলোর ফলে কোনও ভাবেই বাজেট ফোনের তালিকায় এটিকে ফেলা যাবে না।
সামনে ২.৫ডি বাঁকানো গ্লাস ব্যবহারের ফলে ফোনটি ৫.৫ ইঞ্চি স্ক্রিনের হয়েও সহজেই ব্যবহারযোগ্য।
ফোনটির ডান পাশে ভলিউম ও পাওয়ার বাটন ও বাম পাশে সিম ট্রে রয়েছে। সিম ট্রেটির বিশেষত্ব হচ্ছে এক সাথে দুটি সিম বা একটি সিম ও একটি মাইক্রো এসডি কার্ড ব্যবহার করা যাবে।
নিচে রয়েছে মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট, স্পিকার ও মাইক্রোফোন। ওপরে রয়েছে হেডফোন জ্যাক ও ইনফ্রারেড পোর্ট।
পেছনে ক্যামেরা ও ফ্ল্যাশের ঠিক নিচেই রয়েছে ফিংগারপ্রিন্ট সেন্সরটি। সামনে রয়েছে স্পিকার, সেলফি ক্যামেরা, নোটিফিকেশন এলইডি, প্রক্সিমিটি সেন্সর, ৫.৫ ইঞ্চি স্ক্রিন ও ক্যাপাসিটিভ বাটনগুলো।
পারফরমেন্স
এ ফোনের মিডিয়াটেক হেলিও এক্স২০ চিপসেটে ব্যবহার করা হয়েছে ১০টি কোর। এর মাঝে রয়েছে দুটি কর্টেক্স এ৭২ কোর, চারটি দ্রুতগতির কর্টেক্স এ৫৩ কোর ও বাকি চারটি কম গতির কর্টেক্স এ৫৩ কোর।
মূলত দুটি কর্টেক্স এ৭২ কোর ব্যবহারের ফলে প্রসেসরটি বেশ দ্রুত কাজ করতে সক্ষম, যা গিকবেঞ্চ ৪ স্কোর থেকেই দেখা যাচ্ছে।
সুধু প্রসেসরেই নয়, সব মিলিয়েই দেখা যাচ্ছে চিপসেটটি বিগত বছরের বেশ কিছু ফ্ল্যাগশিপ ফোনগুলোকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে সক্ষম।
তবে বরাবরের মতই, মিডিয়াটেক ফোনটিতে মাঝারি মানের জিপিউ ব্যবহার করা হয়েছে ফলে গ্রাফিক্সের দিক থেকে এটি ফ্ল্যাগশিপ ফোনের কাছে যেতে পারেনি।
তবে বেঞ্চমার্কের স্কোর সব সময় সত্যিকার ব্যবহারের পারফরমেন্সের কথা সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারে না। দৈনন্দিন ব্যবহার, গেমিং, ব্রাউজ করা বা মুভি দেখার জন্য ফোনটি খুবই দ্রুত কাজ করে। ফলে মনেই হবে না যে এটি কোনওভাবেই একটি বাজেট ফোন।
ডিসপ্লে
টাচ-স্ক্রিন ডিভাইসের প্রাণকেন্দ্র তার ডিসপ্লে। এটি খারাপ হলে ব্যবহারের মজাই নষ্ট হয়ে যায়। কিউএইচডি, ফোরকে বা তারও বেশি পিক্সেল সমৃদ্ধ স্ক্রিনের কথা শুনতে শুনতে আজ ১০৮০পি ডিসপ্লে মনে হতে পারে খুবই সাধারণ; কিন্ত পিক্সেলই একটি ডিসপ্লের শেষ কথা নয়।
এর আগের রেডমি নোট ৩-এ ব্যবহার করা ডিসপ্লের কন্ট্রাস্ট কম – এমন সমালোচনার পর এবার শাওমি যতদূর সম্ভব কন্ট্রাস্ট বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। এর ফলাফল একটি সুন্দর (১১০০:১) হাই-কন্ট্রাস্ট ডিসপ্লে পাওয়া গেছে ফোনটিতে।
এটির কালার ব্যালেন্সও প্রায় সকল ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইসের কাছাকাছি – ফলে এটি মুভি দেখা, বা গেইম খেলার সময় একটুও লো কোয়ালিটির বলে মনে হবে না।
ডিসপ্লেটি ৪৫০নিট পর্যন্ত ব্রাইটনেস বাড়াতে সক্ষম – ফলে রোদের মাঝেও ব্যবহারে কোনও সমস্যা হবে না।
ক্যামেরা
রেডমি নোট ৩-এর ক্যামেরা নিয়ে ব্যবহারকারীদের মাঝে কিছুটা অসন্তোষ থাকার পরও দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে রেডমি নোট ৪-এর ক্ষেত্রেও ক্যামেরার কোয়ালিটি অসাধারণ হয়ে ওঠেনি। তবে বরাবরের মতই একই মূল্যের নামি-দামি ব্র্যান্ডের ফোনের তুলনায় এটির ক্যামেরা কোয়ালিটি বেশ ভালো।
রেডমি নোট ৪-এর ক্যামেরাতে লেজার অটোফোকাস না থাকায় ফোকাসে বেশ দেরি হয়। এর পরও দেখা গেছে ছবিগুলোর ডিটেলস বেশ কম। তবে ক্যামেরার শার্পনেস বাড়ালে সেটি আবার অতিরিক্ত রূপ ধারণ করে থাকে।
হোয়াইট ব্যালেন্স ও কালারেও কিছু সমস্যা দেখা গেলেও মাত্রাতিরিক্ত নয়। তবে ম্যাক্রো বা কাছ থেকে তোলা ছবির ক্ষেত্রে বেশ ভাল পরিমাণ ডিটেইলস দেখা গিয়েছে। এতে সাধারন পোর্ট্রেট বা সাবজেক্টের ছবি যথেষ্ট ভালভাবেই তোলা যাবে।
কম আলোতে অবশ্য ক্যামেরাটি আশাতীত ভাল ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছে, যদিও তা কোনওভাবেই অসাধারণ নয়।
সেলফি ক্যামেরার ক্ষেত্রে ভাল ডিটেইলের ছবি তোলা গেলেও কন্ট্রাস্টে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে।
ভিডিওর ক্ষেত্রেও প্রায় একই ব্যাপার দেখা গেছে – ফুল রেজুলেশনেও অনেক বেশি ডিটেইল দেখা যায়নি এবং সেলফি ক্যামেরাতে মাত্র ৭২০পি ভিডিও ক্যাপচার সুবিধাটি নোট৩-এর ১০৮০পি-এর তুলনায় বেশ কম।
অডিও
স্পেসিফিকেশনের ক্ষেত্রে ২৪বিট ১৯২কিলোহার্জ অডিও দেখে ফোনটির কাছে খুবই ভাল কোয়ালিটির মিউজিক আশা করা হলেও বাস্তবে সাউন্ড কোয়ালিটি বেশ আশাহত করবে।
সাউন্ডের ক্ষেত্রে কোনও বড় ধরণের সমস্যা নেই; কিন্তু তাই বলে খুব অসাধারণ কোনও কোয়ালিটি দেখা যায়নি। উল্টো সমস্যা হিসেবে হেডফোনে বেশ কম ভলিউমের সাউন্ড মনে হবে। ফলে অডিও কোয়ালিটির ক্ষেত্রে এটিকে মাঝারি মানের বাইরে কিছু বলার অবকাশ নেই।
ব্যাটারি লাইফ
ব্যাটারি লাইফের ক্ষেত্রেও বেশ হতাশ করেছে ফোনটি। ৪১০০ মিলিঅ্যাম্প-আওয়ার ধারণ ক্ষমতার ব্যাটারির তূলনায় এটির ব্যাকআপ বেশ কম। মাত্র ৫-৬ ঘন্টা স্ক্রিন অন টাইম ব্যাকআপ দিতে সক্ষম।
অন্যান্য সব পরীক্ষাতেই দেখা গেছে ফোনটি রেডমি নোট ৩ প্রো-এর তুলনায় কম ব্যাটারি ব্যাকআপ দিতে সক্ষম। তবে ব্যাটারি লাইফ কোনওভাবেই খারাপ বলা যাবে না।
এরপরও এটি গ্যালাক্সি এস৭ এর চাইতে বেশি – তবে ৪১০০ মিলিআম্পায়ার ক্যাপাসিটির তুলনায় বেশ কম। ব্যাটারি চার্জ করার ক্ষেত্রে বিশেষ ফাস্ট চার্জের ব্যাবস্থা না থাকলেও ফুল চার্জ হতে সময় নেবে দুই ঘন্টা।
মূল্য
ফোনটির ৬৪ গিগাবাইট সংস্করণটি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে ১৫ হাজার টাকার মাঝেই।
সবশেষে বলা যায়, কেনার সময় ৬৪ গিগাবাইট মডেলটি না কিনলে র্যামের অপ্রতুলতা দেখা দিতে পারে। তবে যারা মূলত গান শোনা ও ক্যামেরার জন্য ফোনটি কিনতে চাচ্ছেন তাদের জন্য ফোনটি পুরোপুরি উপযোগী নয়।
এক নজরে ভাল
এক নজরে খারাপ