![]() |
টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : কর অব্যাহতির আওতা হতে ই-কমার্স খাতকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে হতাশ হয়ে পড়ছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। তারা মনে করছেন এর ফলে দেশীয় উদ্যোগগুলো হুমকির মুখে পড়বে।
২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে অর্থ আইনে পূর্বের কর অব্যাহতির আওতায় থাকা ‘ই-কমার্স ও অনলাইন শপিং’কে তুলে নেয়া হয়েছে। খাতটি আগে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতির মধ্যে ছিল।
আয়কর অর্ডিন্যান্সের ৩৬ এর ষষ্ঠ সিডিউলের সংশোধনে ৩৩তম প্যারার ‘ই-কমার্স, অনলাইন শপিং, ডকুমেন্ট কনভারসন, ইমেজিং ও আর্কাইভিং’ খাতগুলো তুলে নেয়ার ফলে এগুলো আর কর অব্যাহতির মধ্যে থাকছে না।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি শামীম আহসান টেকশহরডটকমকে বলেন, ‘বর্তমান বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তিখাতে বরাদ্দ বাড়নো ভাল খবর। কিন্তু ই-কমার্স খাতকে কর অব্যাহতি হতে তুলে নেয়াটা খাতটির বর্তমান প্রেক্ষাপটে যৌক্তিক নয়।’
এফবিসিসিআইয়ের এই পরিচালক জানান, ‘ই-কমার্স খাত এখনও লাভজনক ইন্ডাস্ট্রি হয়নি । এই খাতে বেশির ভাগ উদ্যোক্তাই বয়সে তরুণ এবং ‘ফার্স্ট জেনারেশন’ উদ্যোক্তা যারা নিজস্ব তহবিল থেকে এই ব্যবসায় বিনিয়োগ করছে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত খাত কর অব্যাহতি পেয়ে যেভাবে বিকশিত হচ্ছিল ঠিক এই সুবিধা তুলে নেয়ার কারণে সেই বিকশিত হওয়াটা বাধাগ্রস্থ হবে।’
বেসিস বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় জানায়, ‘ই-কমার্স ও অনলাইন শপিং এর উপর ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর অব্যহতি থাকা সত্ত্বেও প্রস্তাবিত বাজেটে এ সুবিধা তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে তথ্যপ্রযুক্তির সম্ভাবনাময় এ খাতটি আয়করের আওতায় চলে এসেছে। ই-কমার্স এবং অনলাইন শপিং এর উপর কর অব্যাহতি পূনর্বহাল এর জোর দাবি জানানো হচ্ছে।’
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর সভাপতি রাজীব আহমেদ টেকশহরডটকমকে বলেন, ‘ই-কমার্স খাতকে করের আওতায় নিয়ে আসা অযৌক্তিক। এই খাতটি এখনও লাভজনক নয়। দেশের তরুণরা নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে খাতটিকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন। খাতটিকে এখন করের আওতায় নিয়ে আসলে যাত্রার শুরুতেই হুমকির মুখে পড়বে । ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি ও ভ্যাট মওকুফের সুবিধা নিয়ে অনেকেই খাতটিতে ব্যবসা শুরু করেছেন। এখন ঘোষিত সময়ের আগেই এই সুবিধা প্রত্যাহারে তারাও ক্ষতির মুখে পড়বেন।’
বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে ই-ক্যাব।
দেশের সুপরিচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বাগডুম ডটকমের সিইও সৈয়দা কামরুন আহমেদ টেকশহরডটকমকে বলেন, ‘দেশের ই-কমার্স সাইটগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতামূলক দামে ক্রেতাদের কাছে পণ্য বিক্রি করা। যেহেতু দেশে এখনো ই-কমার্সের জন্য পণ্য পরিবহন এবং অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম পুরোপুরি তৈরি হয়নি তাই প্রতিটি ই-কমার্স সাইটকে বড় অংকের ভর্তুকি দিতে হয়।’
‘সরকারের পূর্বের কর অব্যাহতি ও ভ্যাট মওকুফের সুবিধায় খাতটি ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিল। এ খাতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ তৈরী হচ্ছিল। দেশে এ খাতে বেশ কিছু বিনিয়োগও হয়েছে। এখন ২০২৪ সালের যে কর অব্যাহতির ঘোষণা জেনে যারা খাতটিতে বিনিয়োগ করেছে তারা স্বাভাবিকভাবেই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।’
কামরুন আহমেদন জানান, ‘ই-কমার্সের বাজার তৈরিতেই উদ্যোক্তাদের বড় বিনিয়োগ চলে যায়। বাজার বিকশিত করে তারপর সেখানে ব্যবসা। এখানে তো লাভই হয় না আর যা হয় তা প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে ফের বিনিয়োগ করতে হয়’।
চালডাল ডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ওয়াসিম আলীম টেকশহরডটকমকে বলেন, ‘দেশের ই-কমার্স উদ্যোগগুলো লাভজনক নয়। সরকার এখান হতে কিছু পাবে না। শুধু খাতটিতে অস্থিরতা তৈরী হবে। সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধায় বিকাশমান বাজারটিতে বিনিয়োগকারীদের যে আগ্রহ তৈরী হচ্ছে তাতে ভাটা পড়বে।’
পারমিদা ডটকমের সিইও আবু দারদা টেকশহরডটকমকে বলেন, ‘এমনিতেই লোকসান হচ্ছে। কখনও কখনও লাভ হলেও তা পূর্বের লোকসান টানতেই চলে যায়। তারপরও উদ্যোগ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী লাভের আশায়। এখন যদি এখানে কর দিতে হয় তাহলে তো আর পারবো না।’
উল্লেখ্য, গত অর্থ-বছরের বাজেট ঘোষণায় ই-কমার্সকে প্রথমবারের মতো সুনির্দিষ্ট করে ভ্যাটের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। সেখানে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ই-কমার্সে মূল্য সংযোজন করের (ভ্যাট) হার ৪ শতাংশ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছিলো। পরে সেই ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়।
বেসিসের হিসাবে বর্তমানে প্রতি বছর যে পরিমান ই-কমার্স বা অনলাইন লেনদেন হচ্ছে তা বছরে ১০০ কোটি টাকার বেশি নয়।
আল-আমীন দেওয়ান
আরও পড়ুন: