![]() |
আল-আমীন দেওয়ান, টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : প্রথমে ২০১৫ সালের আগস্টে ঘোষণা এলো ১৬ ডিসেম্বর ইন্টারন্যাশনালাইজড ডোমেইন নেইমে (আইডিএন) বাংলার(ডটবাংলা) উদ্বোধন করা হবে। পরে ১৭ নভেম্বর বিটিআরসির সঙ্গে এক বৈঠকে টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম জানালেন, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন শুরুর কারণে ১৬ ডিসেম্বরের পরিবর্তে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এটি উদ্বোধন হবে।
এর পর ৬ জানুয়ারি সচিবালয়ে সরকারের দুই বছরে টেলিযোগাযোগ বিভাগের অর্জন ও ভবিষৎত পরিকল্পনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তারানা আবারও বললেন, মাতৃভাষার প্রতি মর্যাদা জানিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ডোমেইন ডটবাংলার উদ্বোধন হচ্ছে।
কিন্তু পারলেন না তারানা। রোববার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসেও তা চালু হচ্ছে না। বাংলাদেশের পক্ষে করণীয় সব প্রক্রিয়া ও প্রস্তুতি শেষ করার পরও আন্তর্জাতিক ডোমেইন ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইন্টারনেট করপোরেশন ফর অ্যাসাইন্ড নেইমস অ্যান্ড নাম্বারস (আইক্যান) এর অনুমোদন মেলেনি। সংস্থাটির বোর্ড সভা না হওয়ায় অনুমোদনের জন্য বিষয়টি আজও ঝুলে আছে।
বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম ফখরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী শনিবার টেকশহরডটকমকে জানান, ‘২১ ফেব্রুয়ারি ডটবাংলা উদ্বোধন আর হচ্ছে না।’
আরও পড়ুন: ডটবাংলা চালুর অনুমোদন মেলেনি এখনও
কান্ট্রি কোড টপ-লেভেল এই ডোমেইন হিসেবে বাংলাদেশের জন্য ডটবাংলার বরাদ্দ থাকলেও ডোমেইন ম্যানেজার হিসেবে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডকে (বিটিসিএল) আজও অনুমোদন দেয়নি আইক্যান। তাদের ওয়েবসাইটে রুট জোন ডাটাবেইজে স্পন্সরিং অর্গানাইজেশনে ঝুলে আছে ‘নট অ্যাসাইন’ স্ট্যাটাস।
বিটিসিএল এমডি বলেন, ‘ডোমেইন ম্যানেজার হিসেবে সকল কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। আমরা আইক্যানের কাছে আবেদন করে রেখেছি। এছাড়া এটি চালু করতে বাংলাদেশের পক্ষে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। কিন্তু এখন সংস্থাটির বোর্ড সভায় এটি অনুমোদনের অপেক্ষা করা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই।’
ফখরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী জানান, ‘আমরা চেষ্টা করেছিলাম বোর্ড সভার অপেক্ষা না করে এখন কোনোভাবে অনুমোদন নেয়া যায় কি না। কিন্ত আইক্যান জানিয়েছে তা সম্ভব নয়।’
এদিকে ডোমেইন নেইম চালুর মূল সোর্স বিশ্বের ১৩ টি টপ লেভেল ডিএনএস সার্ভারে ডটবাংলা ডোমেইন সংরক্ষণের ছাড়পত্রও দেয়নি সংস্থাটি।
তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার টেকশহরডটকমকে বলেন, ডটবাংলা চালুর জন্য দায়িত্বপ্রাপ্তদের প্রতি অনুরোধ বাংলা ভাষার প্রতি এভাবে অবহেলা করবেন না। বছরের বছর এভাবে বিষয় ফেলে রাখা যায় না। যারা এর সঙ্গে জড়িতে তাদের প্রত্যেকের এ জন্য দায় রয়েছে।
এদিকে ডোমেইন ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সরকারি সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক অপারেটরস গ্রুপের (বিডিনগ) সহযোগিতায় বিটিসিএল প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সংগ্রহ, সার্ভার স্থাপন, বিভিন্ন কারিগরি প্রক্রিয়া ও ডোমেইন বিক্রির নীতিমালা চূড়ান্ত করে রেখেছে।
এর আগে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও বিটিসিএলের মধ্যে ডটবাংলার দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা ছিল।
২০১৫ সালের জুনে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ডমস্টিক নেটওয়ার্কিং কো-অর্ডিনেশন কমিটির (ডিএনসিসি) সভায় বিটিসিএলকে ডটবাংলার দায়িত্ব দেয়া হয়।
ইন্টারনেট যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বিডিনগ বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান সুমন আহমেদ সাবির টেকশহরডটকমকে জানান, বাংলাদেশের দিকের কাজ শেষ। এখন আইক্যানের কাজ। সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের কমার্স ডিপার্টমেন্ট থেকে এখনও ছাড়পত্র পায়নি আইক্যান। তাই ডটবাংলাকে টপ লেভেল ডিএনএস সার্ভারগুলোতে লিপিবদ্ধ করতে অনুমোদন দেয়া হয়নি।
তিনি বলেন, এখন শুধু অনুমোদনটাই মূল বিষয়। অনুমোদনের পর এটি চালু করতে যেসব কারিগরি প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয় তা সব মিলিয়ে দুই দিনের কাজ।
আইক্যানের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক অপারেটরস গ্রুপের (বিডিনগ) সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম পাপ্পু।
তিনি টেকশহরডটকমকে জানান, আইক্যান এখন ডটবাংলার রুট জোন অ্যাসাইন করেনি। সার্ভার কনফিগারেশনসহ বিটিসিএলের সব কাজ শেষ। এখন আইক্যানকে রুট জোন ডেলিগেশন করতে হবে। বিটিসিএল ইতোমধ্যে বিস্তারিত আবেদন পাঠিয়ে রেখেছে।
পাপ্পু বলেন, ডটবাংলার জন্য পিসিএইচ ব্যাকআপ করে দিয়েছি আমরা। যাতে কোনো কারণে বিটিসিএলের সার্ভার ডাউন থাকলে ডটবাংলার নেটওয়ার্ক বিঘ্নিত না হয়।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে ইন্টারন্যাশনালাইজড ডোমেইন নেইমে (আইডিএন) লেখার ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পায় বাংলাদেশ।
২০১০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক ডোমেইন হিসেবে ‘ডটবাংলা’ কার্যকর করতে আইক্যান এর কাছে আবেদন করেছিল।
বাংলাদেশের আবেদনের পর সংস্থাটি বাংলা ভাষাকে মূল্যায়ন করে। এরপর ইন্টারনেট অ্যাসাইনড নাম্বারস অথোরিটির (আইএএনএ) অনুমোদনও মেলে।
এর পর এই ডটবাংলার দায়িত্ব কে নেবে সে বিষয়ে আইডিএনের কাছে আবেদন করে তা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াটি অবশিষ্ট ছিলো। কিন্তু ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তই নেয়া হয়নি।
আরও পড়ুন: