বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির শীর্ষ খাত হবে বিপিও

আহমাদুল হক ববি : যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকে অন্যতম পূর্বশর্ত হিসাবে ধরা যেতে পারে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের খাতগুলোর শীর্ষে রয়েছে তৈরি পোশাক শিল্প। বর্তমানে অন্তত ৬ হাজার কারখানায় প্রায় ৪০ লাখ মানুষ কাজ করে। এই খাত থেকে বছরে আয় হয় ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এখানে ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এই আয় ৫০ বিলিয়নে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে।

দ্বিতীয় অবস্থানে রেমিট্যান্স। এই খাত থেকে প্রতি বছর আসছে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর এই দুটি খাতের বাইরে যে শিল্প খাতটি অচিরেই বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে তালিকার উপরের দিকে অবস্থান নিতে পারে সেটি হলো বিপিও। একটু ভেঙ্গে বললে বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং। অর্থাৎ দেশ বা বিদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানের কাজ তৃতীয় কোনো পক্ষকে দিয়ে করিয়ে নেয়া।
বিশ্বব্যাপী ক্রমশ জনপ্রিয় হতে থাকা এই ইন্ডাস্ট্রির বয়স খুব বেশি না হলেও এর অগ্রসরতা চোখ ধাঁধানো। বাংলাদেশও বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দ্রুত অগ্রসরমান এবং আকর্ষক বাজার হিসাবে ইতোমধ্যে স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছে। দেশেও এর গ্রহণযোগ্যতা যেমন বাড়ছে তেমনি উন্মোচিত হচ্ছে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত।

তুলনামূলক আলোচনায় প্রাসঙ্গিকভাবেই তৈরি পোশাক শিল্পের সঙ্গে বিপিও চলে আসে অনায়াসে। আসলে অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের প্রয়োজন সবার। বিশ্ববাসীর পোশাকের প্রয়োজন ফুরাবে না কোনদিন। আর তা মেটাতে গেলে বাংলাদেশের মতো সস্তা শ্রমের দেশগুলোর ওপরেই নির্ভর করতে হবে। তাই বাংলাদেশ এই খাতে বর্তমানে যে অবস্থায় আছে তার থেকে ভালো করার সুযোগ থেকেই যাচ্ছে। আরও আশা জাগায় বিশ্বের অর্থনৈতিক মোড়ল বিশ্বব্যাঙের পূর্বাভাষে। তারা বলছে, আগামী এক দশকে চীনের অন্তত ৪ হাজার তৈরি পোশাক কারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তর হবে।

Techshohor Youtube

BACCO P

তৈরি পোশাক শিল্প বস্তুত একটি শ্রমঘন শিল্প। এখানে শ্রমিকদের ধৈর্য, টিকে থাকার ক্ষমতা, শৃঙ্খলার সঙ্গে বিশেষভাবে প্রয়োজন কাণ্ডজ্ঞান আর অর্জিত দক্ষতাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর ক্ষমতা। এই খাত থেকে আমাদের আয় মোটা দাগে সস্তা শ্রম বিক্রি করে। এখানে ভ্যালু এডিশন থেকে অর্জিত অর্থের পরিমাণ নেই বললেই চলে। মোট আয়ের আবার একটা বড় অংশ প্রতি বছরই ড্রেন আউট হয়ে যায় অভিবাসীর মধ্য ও উচ্চ পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা, কর্মী এবং বিশেষজ্ঞদের পেছনে।

এই পরিস্থিতির সমান্তরালে দাঁড়িয়ে যে খাতটি কিছু উদ্যোগী আর দূরদর্শী মানুষের নিভৃত যত্নে বেড়ে উঠছে সেটি হলো বিপিও। অমিত সম্ভাবনাময় এই খাতের ক্রমবর্ধমান সাফল্য নিশ্চিত করতে প্রয়োজন কেবল অবকাঠামোগত সহায়তা, নীতিগত সমর্থন, শুল্ক মওকুফ, সাজ-সরঞ্জামের সুলভতা ও কর হ্রাস আর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা।

এখানে আরও একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত ও ক্রমোন্নয়নের বিশ্বের চাহিদার স্বরূপও দ্রুত বদলে যায়। আমাদের দেশীয় নীতিনির্ধারকদের এক্ষেত্রে ফ্লেক্সিবল হতে হবে বাংলাদেশের বাজার সুরক্ষিত রাখতে। ব্যবসাবন্ধব নীতিমালা প্রনয়ণের সঙ্গে যেকোনো পরিস্থিতির প্রয়োজনে নীতিমালাকে সহায়ক করতে দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার করতে হবে।

banner1

একটু বলে রাখা ভাল আমাদের দেশে আউটসোর্সিং বলতে মূলত ফ্রিল্যান্সাররা যে কাজটি করে থাকে সেটাকেই বোঝানো হয়। যেগুলো অবশ্যই প্রশংসার। তবে এই আউটসোর্সিং এখন অন্য পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। ধারন করেছে শিল্পখাতের রূপ। অসংখ্য তরুণ-তরুণী এই খাতে নিজেদের মেধা ও মননের উপস্থানায় নিয়মিতভাবে কাজ করে চলেছেন। এক্ষেত্রে বর্তমানে এগিয়ে রয়েছে ফিলিপাইন, ভারত, মিশরের মতো দেশ। পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা নিজেদের অবস্থা সুদৃঢ় করার চেষ্টা করে চলেছে। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কার অগ্রযাত্রা প্রশংসার দাবী রাখে। আন্তর্জাতিক আউটসোর্সিং মার্কেটে নতুন ব্যবসার পাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতকে ইতোমধ্যে ছাড়িয়ে গেছে ফিলিপাইন। বিভিন্ন দেশ নতুন এই সম্ভবনাকে কাজে লাগানোর জন্য বেসরকারি এবং সরকারি পর্যায়ে নানাবিধ সুবিধা-প্যাকেজ নিয়ে প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে।

বাংলাদেশও এই সম্ভবনাকে কাজে লাগিয়ে সাফল্যের নতুন সোপান রচনার চেষ্টা করছে। অন্যান্য খাতের মতো এই খাতের সূচনা ও অগ্রযাত্রা বেসরকারি উদ্যোগে । তবে নিশ্চিত, স্থায়ী এবং টেকসই সাফল্য অর্জনে সরকারি সহায়তার কোনো বিকল্প নেই। বলতেই হয় বর্তমানে এই খাত নিয়ে সরকার যথেষ্ট আন্তরিক এবং সক্রিয়। উপরন্তু আমাদের কর্মীদের আত্মবিশ্বাস এবং কর্মদক্ষতায় বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই বিশ্বের অন্যতম এমার্জিং মার্কেটের স্বীকৃতি আদায়ের পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এক্ষেত্রে একটু খতিয়ে দেখা যেতে পারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কিভাবে দেখছে বাংলাদেশকে।

গোল্ডম্যান স্যাকস ব্রিক-এর (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন) সমপর্যায়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আর বিনিয়োগ গন্তব্য হিসাবে সম্ভাবনাময় ১১টি দেশের (নেক্সট ইভেলেন) তালিকায় রেখেছে বাংলাদেশকে। ভিয়েতনাম, কাজাখাস্থান, কেনিয়া, নাইজেরিয়া আর বাংলাদেশ- জেপি মরগ্যান এই পাঁচ দেশকে অর্থনৈতিক সম্ভবনার দৃষ্টিকোণ থেকে বলছে ফ্রন্টটিয়ার ফাইভ। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম অর্থনৈতিকভাবে সক্রিয় জনসংখ্যার দেশ। ইউরোপিয়ান কমিশন বিশ্বের ২০টি শীর্ষ আউটসোর্সিং ডেস্টিনেশনের অন্যতম হিসাবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিশ্বব্যাঙ্কের হিসাবে বিনিয়োগ সুরক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশ রয়েছে সপ্তদশ স্থানে। আর গার্টনার রিপোর্টে বাংলাদেশকে ধরা হয়েছে বিশ্বের ৩০টি শীর্ষ আউটসোর্সিং ডেস্টিনেশনের অনতম হিসাবে।

ঠিক এই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে নতুন শিল্প খাত হিসাবে বাংলাদেশের সামনে রয়েছে দিগন্তপ্রসারী সম্ভবনা। বাজারও বিশাল। আনট্যাপড বা আনএক্সপ্লোরড রয়ে গেছে সিংহভাগ। এই বাজার দুই ধরণের। দেশীয় বাজার বা অনশোর মার্কেট। আর বিদেশের বাজার বা অফশোর মার্কেট। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশের বাজার ধরার ক্ষেত্রে আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা অবশ্যই প্রণিধানযোগ্য। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল না হওয়া পর্যন্ত এই সমস্যা থেকেই যাবে। তবে দেশীয় বাজার ধরার ক্ষেত্রে কোন বাধাই বলতে গেলে নেই।
দেশে আউটসোর্সিং শিল্পের প্রধান দুটো ভোক্তা হতে পারে সরকার এবং ব্যাংকিং খাত। উভয়েরই ব্যাক অফিসের যাবতীয় কাজ আউটসোর্স করা সম্ভব। সেটা পরিস্থিতি এবং বাজার বাস্তবতায় এখন সময়ের দাবি বললে বাড়িয়ে বলা হয় না।

বিশেষত সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের যে স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজে হাত দিয়েছে তাতে এসব প্রতিষ্ঠান এবং কার্যক্রমকে ডিজিটালাইজেশেনর আওতায় আনতে প্রচুর কাজ করতে হবে। সরকারি অবকাঠামো কাজে লাগিয়ে তা সম্পন্ন করা যে কেবল প্রচুর সময়ের ব্যাপার তা নয় বরং ব্যয়সাপেক্ষও বটে। যেটা বাস্তবসম্মতও নয়। এই অবস্থায় আউটসোর্সিং হতে পারে সঠিক এবং সময়োপযোগী সমাধান। একইভাবে ব্যাংকও তাদের ব্যাক অফিসের নানা ধরণের প্রচুর কাজ তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে করিয়ে নিতে পারে।

সরকার কিংবা ব্যাংকিং খাত আউটসোর্স করলে ব্যয় সংকোচন হবে। প্রসাশনিক ও উৎপাদন ব্যয় নিয়ন্ত্রণে থাকবে। জনবল এবং বেতন কমবে। এই অর্থ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানিক উন্নয়ন, বিশেষজ্ঞ সেবাগ্রহণ ইত্যাদিতে ব্যয় করার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানকে আরও দক্ষ করে তোলার অবকাশ পাবে। অন্যদিকে আউটসোর্সিংয়ের ফলে গ্রাহকসেবা নিশ্চিত হবে। গ্রাহক সন্তুষ্টি প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাদের উত্তরোত্তর আস্থাবান করবে।

banner4

সরকারি বা বেসরকারি কাজ তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে করানো মানে কর্মসংস্থান হ্রাস বা সংকোচন। এই আশঙ্কাও অমূলক নয়। এক্ষেত্রে জনমনে একটা নেতিবাচক মনোভাবের জন্ম হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। কারণ মানুষ সরকারি চাকরীর প্রতি আলাদা আকর্ষণ বোধ করে থাকে। পাশাপাশি চাকরির বাজারে ব্যাংকিং খাতেরও রয়েছে আলাদা গ্রহণযোগ্যতা।

ঠিক এই ক্রান্তিতে দাঁড়িয়ে আউটসোর্সিং খাতকে একটা চ্যালেঞ্জ মোকবিলা করতেই হবে। সেটা যথেষ্ট ইতিবাচকভাবেই করা সম্ভব। করণ একদিকে যখন কর্মসংস্থান হ্রাস পাচ্ছে অন্যদিকে তখন খুলে যাচ্ছে কর্মসংস্থানের বিপুল বাজার। যেখানে ইনসেনটিভ প্যাকেজও আকর্ষণীয়। এমনকি পড়াশনা চালিয়েও এই কাজ পেশাদারভাবে করা সম্ভব। অন্যদিকে ইন্ডাস্ট্রি যত বিস্তৃত হবে, দক্ষ জনবলের চাহিদা ততই বাড়বে। এজন্য সরকারি এবং বেসরকারিভাবে এর প্রচার খুবই জরুরি।

বাংলাদেশের যেমন বাজার আনএক্সপ্লোরড আছে তেমনি জনবলও। আউটসোর্সিং খাত এই প্রজন্মকে কাজে লাগাতে পারে। এর মধ্যে দিয়ে তারা যেমন স্বনির্ভর হয়ে উঠবে তেমনি দেশীয় অর্থনীতিতে তাদের উপার্জন নতুন আবর্তের সৃষ্টি করে প্রবৃদ্ধিকে বেগবান করবে।
আউটসোর্সিং বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী ২০২১ সালে এই খাতে থেকে আয় হবে ১ বিলিয়িন ডলার। একই সময়ে এই খাতে কর্মসংস্থান হবে অন্তত ২ লাখ মানুষের।

এখানে আবারও একটু তৈরি পোশাক শিল্পের সঙ্গে তুলনা করতেই হয়। অবকাঠামো সব শিল্পের জন্যই প্রয়োজন। তবে তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য বেশ কিছু পূর্বশর্ত রয়েছে। রপ্তানীর জন্য বন্দর, উৎপাদন স্থল থেকে বন্দরের দূরত্ব ইত্যাদি নানা বিষয়। এমনকি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি না হলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তৈরি পোশাক শিল্পের বিস্তার সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতি সন্দহাতীতভাবেই ডিসেন্ট্রালাইজেশনের অন্তরায় রয়েছে।

ঠিক এই বাস্তবতায় আউটসোর্সিং শিল্প লক্ষ যোজন অগ্রসর। প্রয়োজনীয় ইন্টারনেট কানেকশন থাকলে দেশের যেকোনো প্রান্তে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সুবিধা নিয়ে এই শিল্পস্থাপন সম্ভব। এর জন্য বাড়তি কোনো কিছুরই দরকার হবে না। এমনকি উৎপাদিত পণ্য রপ্তানির জন্য স্থানান্তরেরও প্রয়োজন পড়বে না। উপরন্তু এখানকার কর্মীদের পড়াশুনাও বাধাগ্রস্থ হবে না। আশার কথা, কাজ এবং পড়াশুনা চালিয়ে নিতে পারবে সমান্তরালে। তাতে উপরি লাভ হলো ঐ পরিবারকে সন্তানের পড়াশুনার ব্যয়ভার নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না। বড় অর্থে ইতিবাচক বিষয় হলো রাজধানীর উপর জনসংখ্যার চাপ হ্রাসের পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতি সচল হবে। এতে করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলও উন্নয়নে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। এখানে আরও একটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য যে তৈরি পোশাক শিল্পে বিদেশীদের পেছনে দেশের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় হয়ে যায়। এই খাতে সেই সম্ভাবনা নেই তা নয়। তবে তার পরিমাণ খুবই কম।

car_bacco

এখন একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। এই খাতে যারা কাজ করতে আসবে তাদের বেতন-ভাতা কেমন হবে। কতোটা আকর্ষক হবে। বর্তমানে এই খাতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সদ্য শুরু করছে এমন একজন কল এজেন্ট সর্বনিম্ন ১০ থেকে ২৫ হাজার টাকা মাসিক বেতন পেয়ে থাকেন। এরপর তাঁর মেধা, দক্ষতা, সিনিয়রিটি, অভিজ্ঞতা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে বেতন ক্রমান্নয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকবে।

এখানে ছেলে এবং মেয়েরা সমান্তরালে কাজ করতে পারে। বাংলাদেশের ছেলেমেয়েদের মেধা বিশ্ববিদিত। এই খাতটিও মূলত মেধানির্ভর। বিশেষত সফটওয়্যার আর গ্রাফিক ডিজাইন সংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের ছেলেমেয়েদের সৃজনদক্ষতা প্রশ্নাতীত। এটা সন্দেহাতীতভাবে বাংলাদেশের আউটসোর্সিং খাতের জন্য একটা বিশাল সহায়ক শক্তি।

এই খাতের উন্নয়নে আমরা অগ্রসর প্রতিবেশী বা দূর প্রতিবেশীরও সহায়তা নিতে পারি। যেকোনো খাতেই ট্রেনিংয়ের বিকল্প নেই। সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন এবং সংযোজন প্রয়োজন হবে এই খাতের জন্য তৈরি জনশক্তি নিশ্চিত করতে। আন্তর্জাতিক এই খাতের জন্য ইংরেজি জানা ছেলেমেয়ে আবশ্যক। একই সঙ্গে বাংলা জানাটাও একান্ত জরুরি। দেশীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে সরকারি কাজ করতে গেলে বাংলার বিকল্প নেই। তখন বাংলা ভাষা জানা, টাইপ করতে পারাটাই হবে প্রধান পূর্বশর্ত। তাই এই শিল্পখাতে আগ্রহীদের উচিত হবে দুই ভাষাতেই নিজেকে সমানভাবে রপ্ত ও দক্ষ করে তোলা।

বাংলাদেশে যখন দিন আমেরিকায় তখন রাত। আবার লাতিন আমেরিকা, ইউরোপ এমনকি দূরপ্রাচ্যের সঙ্গেও আমাদের সময় পার্থক্য বিদ্যমান। এসব মাথায় রেখেইতো এই শিল্পকে এগোতে হবে। কাজ চলবে সারা দিনরাত। যাকে বলে রাউন্ড দ্য ক্লক। ছেলেমেয়েরা বেঁধে দেয়া সময়েই কাজে যোগ দেবে, কাজ শেষে ঘরে ফিরবে। এদের জন্য প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা, প্রশাসনিক সহায়তা, সুরক্ষা ও নিরাপত্তা। সবচেয়ে বেশি লাগবে রাতে অফিসে আসা-যাওয়ার জন্য শতভাগ নিরাপত্তার পরিবেশ। লক্ষ্য রাখতে হবে কোনোভাবেই তারা যেন হয়রানীর শিকার না হয়। বিশেষ পরিবহন সুবিধা আর শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী সহায়তাও একান্ত আবশ্যক।
যেকোনো উদ্যোগকে সাফল্যের সোপান দিতে সবার সহায়তার বিকল্প নেই।

বৈশ্বিক বাজার এবং পরিস্থিতির বাস্তবতায় বাংলাদেশের আউটসোর্সিং খাতকে এগিয়ে নিতে হলে সব স্টেক হোল্ডারদের আন্তরিক এবং ঐকান্তিক অংশগ্রহণ চাই। তাহলেই নিশ্চিত হবে কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন। বাংলাদেশ হয়ে উঠতে পারবে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ও আকর্ষক আউটসোর্সিং গন্তব্য। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে পিছে ফেলে দিতে পারবে অন্যসব শিল্প খাতকে।

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং।

*

*

আরও পড়ুন