প্লেস্টোরের জন্য অ্যাপ নির্মাণে জরুরি পাঁচ বিষয়

মোশাররফ রুবেল, অ্যাপ ডেভেলপার, অতিথি লেখক :  বর্তমানে ফ্রিল্যান্স অ্যাপ ডেভেলপারদের কাছে জনপ্রিয় এক বিষয় হল গুগল প্লেস্টোরে অ্যাপ সাবমিট। বলাই বাহুল্য, অন্যান্য স্টোরের চেয়ে প্লেস্টোরই বেশি জনপ্রিয়। ডেভেলপার মাত্রই এখানে অ্যাপ সাবমিট করার জন্য মুখিয়ে থাকেন। কিন্তু এক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা মানতেই হবে, নয়ত অ্যাকাউন্টই বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

অ্যাপ আইডিয়া নিয়ে পরিকল্পনা থেকে শুরু করে ইউজারের হাতে তা যাওয়া পর্যন্ত অনেক জরুরি কাজ করতে হয় ডেভেলপারদের। এসব এড়িয়ে গিয়ে সফল অ্যাপ নির্মাণ সম্ভবই নয়।

গুগল প্লেস্টোর টার্গেট করে অ্যাপ নির্মাণ ও সাবমিট করার ক্ষেত্রে অনেক ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে। এর মধ্যে জরুরি পাঁচ বিষয় হল-

Techshohor Youtube

অ্যাপ আইডিয়ার ছক : আইডিয়া পাওয়ার পরই অ্যাপ ডেভেলপ শুরু করেন ডেভেলপাররা। তবে এই ক্ষেত্রে আইডিয়া পাকাপোক্ত না করে কাজে নেমে যাওয়াটা ভুল। সেজন্য আইডিয়া পাকাপোক্ত করেই তবে অ্যাপটির ফিচার, ইউজার এক্সপেরিয়েন্স(ইউএক্স), সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে ছক তৈরি করতে হবে। যদি তা না করা হয় তবে কাজ শুরুর পর নানান ভুল সামনে চলে আসবে। এতে ডেভেলপমেন্ট প্রক্রিয়া শুরুর পর কোডিং ফরম্যাটে পরিবর্তন আনতে হবে, যা সময় নষ্ট করে থাকে। সেজন্য আইডিয়া নিয়ে গবেষণা করে তবেই অন্যান্য পদক্ষেপ ঠিক করতে হবে।

Android-App-Developers_zps639bf662

টার্গেট ইউজার : আইডিয়া ঠিক করার পর ডেভেলপারকে ঠিক করতে হবে তার ইউজার কারা। যাদের জন্য অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপ করা হবে তাদের সম্পর্কে ডেভেলপারের ধারণা থাকতে হবে। যেমন, কোন ডেভেলপার যদি বাংলা অ্যাপ বানান তাহলে তার টার্গেট ইউজার হচ্ছেন বাংলা ভাষাভাষীরা। সেজন্য তাদের স্বভাব ও চাহিদা খেয়াল রেখে ফিচার ঠিক করতে হবে।

আবার ডেভেলপার যদি ধর্ম সম্পর্কিত কোন অ্যাপ ডেভেলপ করেন তাহলে ওই ধর্মের অনুসারীদের প্রয়োজনীয় নানান বিষয় মাথায় রেখে অ্যাপ ডেভেলপ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, টার্গেট ইউজার এমনভাবে নিতে হবে যেন অ্যাপটি একপক্ষের জন্য ভালো ও অপরপক্ষের জন্য খুবই খারাপ এমনটা না হয়।

ডেভেলপার যদি শিশুদের জন্য কোন অ্যাপ ডেভেলপ করেন তাহলে তার খেয়াল রাখতে হবে অ্যাপের কন্টেন্টের মান, লেখার সাইজ, লেআউটের রং যেন শিশুরা সহজেই ধরতে পারে। টার্গেট ইউজার ঠিক হয়ে গেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে।

ডেভেলপমেন্ট প্রক্রিয়া : অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের জটিল ধাপগুলোর একটা ডেভেলপমেন্ট প্রক্রিয়া। সাধারণত এখানে যে ভুলটা বেশি হয় তা হল সঠিক ডিজাইন না থাকা, কোডের জন্য গ্রাফ না থাকা, কোড সাজানো না থাকা, কোড যথার্থ কমেন্টিং না করা। এই প্রক্রিয়ায় প্রচুর ভুল হয়, ফলে লম্বা সময় লেগে যায়।

Android-App-Development1

এক্ষেত্রে যে জরুরি ব্যাপারগুলো খেয়াল রাখতে হবে তা হচ্ছে শুরুতেই অ্যাপের কোডের ছক করে ফেলা। একটা পেইজে কি কি থাকবে, কোন বাটনে ক্লিক হলে কি কাজ করবে, কোন কোন পেইজে নিয়ে যাবে, সেটা অন্য কিছুর উপর নির্ভরশীল কিনা যা আবার পরিবর্তন করা লাগতে পারে এসব ছকে নিয়ে আসতে হবে।

কোডের মধ্যে প্রর্যাপ্ত পরিমাণ কমেন্টিং করা জরুরি। শুরুতে কোড লাইন কম থাকবে, কিন্তু সময়ের সাথে তা বেড়ে পরিমাণে অনেক হয়ে যাবে। এতে কমেন্ট ছাড়া কোন কিছু বুঝতে ডেভেলপারের নিজেরই কষ্ট হবে। তাই প্রাথমিক ডেভেলপমেন্ট প্রসেসেই কমেন্ট করে করে আগানো উচিত।

প্লেস্টোরে সাবমিট : অনেকের ধারণা, অ্যাপ বানিয়ে প্লেস্টোরে সাবমিট করে দিলেই হল। কিন্তু না! সাবমিটের সময় অনেকগুলো ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে। যেমন, অ্যাপের আইকন যাতে পরিচ্ছন্ন , সুন্দর ও রুচিশীল হয়। ইউজার প্রথমেই আপনার অ্যাপের আইকনের দিকে তাকাবে, এই জন্য আইকন থেকেই ভালো মনোযোগ তৈরি করতে হবে। অ্যাপের নাম যেন সংক্ষেপে অ্যাপের কাজ বর্ণনা করে সেইদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া, প্লেস্টোরে অ্যাপের কভার ছবি, ভিডিও ও স্ক্রিনশট যেন সুন্দর ও সাবলীল হয়। আর হ্যাঁ, চোখে লাগার মতো কোনো ভুল তথ্য দেওয়া যাবে না। বিশেষ করে, বানান ভুল অবশ্যই পরিহার করতে হবে।

ইউজার ফিডব্যাক : উপরের চারটি জরুরি বিষয় ছাড়া আরও একটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয় হল ইউজার ফিডব্যাক, এই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ইউজার যখন অ্যাপ নিয়ে রিভিউ দিবে সেখানে তার মন্তব্যের উত্তর দিতে হবে। ইউজার নেতিবাচক কিছু বললেও আক্রমণ করা যাবে না। আর ইউজার কি কি চাচ্ছে তা পরবর্তী সংস্করণে যুক্ত করতে হবে। ইউজার অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করার জন্য ধন্যবাদ দিতে হবে। অনেক ডেভেলপার এই জরুরি বিষয়টা এড়িয়ে যান, এটা ঠিক না।

rubel

*

*

আরও পড়ুন