![]() |
সফটওয়্যার নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করলেও সফটওয়্যার প্রকৌশলী আর হওয়া হয়নি। শেষ পর্যন্ত হয়েছেন পুরোদস্তুর উদ্যোক্তা। ই-কমার্সে সেবার হাত বাড়িয়েছেন সবার জন্য। দিচ্ছেন ঋণ যাচাই-বাছাইয়ে সহায়তা। বিস্তারিত জানাচ্ছেন ইমরান হোসেন মিলন।
সফটওয়্যারের জাদুকরি মোহ তাকে টানত অনেক আগে থেকেই। এ নিয়ে কাজের আগ্রহ তৈরি হয় ২০০০ সালের দিকে। ইচ্ছে ছিল বন্ধুদের নিয়ে একটা সফটওয়্যার কোম্পানি দাঁড় করানোর। সেই লক্ষ্যে কাজও শুরু করেন মাহবুব। তবে শেষ পর্যন্ত সফটওয়্যার নিয়ে মজে থাকা হয়নি তরুণ এ উদ্যোক্তার।
অনেক চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে ও দেশ-বিদেশ ঘুরে শেষে এখন হয়েছেন উদ্যোক্তা। সফটওয়্যারের প্রতি নেশা থাকলেও কাজ করেন ই-কমার্সে। স্মার্টকম্পেয়ার ডটকম নামের উদ্যোগের মাধ্যমে ঋণ নিতে আগ্রহী ব্যক্তিদের ঋণ পেতে সহায়তা দিয়ে থাকেন।
পুরো নাম মাহবুব ই ইলাহী। ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম থেকে কম্পিউটার প্রকৌশলে স্নাতক শেষ করে এখন ঢাকার ইন্ডিপেডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে (আইইউবি)সফটওয়্যার প্রকৌশলে মাস্টার্স করছেন।
নিজের উদ্যোগ সম্পর্কে বলার আগে তরুণ এ উদ্যোক্তা সফটওয়্যার নিয়ে তার ভালোবাসার কথা জানাতে ভোলেননি। কৌতুহল ও শখের বশে সফটওয়্যার নিয়ে ঘাটাঘাটি করার পর শখের বশেই বন্ধুরা মিলে বেশ কিছু সফটওয়্যার তৈরিও করেন।
মাহবুবের ভাষায়, শখের সঙ্গে এক পর্যায়ে আর আর্থিক সঙ্গতিতে কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না। এ কারণে তারা সফটওয়্যার বিক্রির সিদ্ধান্ত নিলেও অভিজ্ঞতার অভাবে সেখানে সুবিধা করতে পারেননি।
মাহবুব বলেন, ওই সময়টায় আমরা হতাশ হয়ে অন্য কাজে যোগ দিই। ফলে সফটওয়্যার কোম্পানি করার চিন্তা সাময়িক বন্ধ থাকে। তবে মাহবুব হাল ছাড়েন না।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে ঢাকায় আসেন মাহবুব। বন্ধুরাও আসেন। এবার একটি কোম্পানির সঙ্গে শুরু করেন সফটওয়্যার তৈরির কাজ। তবে বিধিবাম। এখানেও সুবিধা না হওয়ায় দেড় বছরের মাথায় কাজটি ছেড়ে দেন। পরে চাকরি নিয়ে চলে যান মালয়েশিয়া। সেখানে কাজ করেন আই-মানি সার্ভিস নামের একটি কোম্পানিতে।
ছয় মাস পর দেশে ফিরে মাহবুব মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতায় নিজে কিছু করার চিন্তা করেন। তিনি বলেন, সেই কোম্পানি ব্যাংক ঋণ নিতে আগ্রহী গ্রাহকদের নানারকম তথ্য দিয়ে সঠিক উপায়ে সেই ঋণ পাইয়ে দিতে সহায়তা করে। দেশেও এমন কিছু করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে থাকেন তিনি।
নিজের উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে প্রশিক্ষণের জন্য ভর্তি হন ফাউন্ডার ইন্সটিটিউটে। তার মতে, এ ইন্সটিটিউটও তাকে এগিয়ে নিতে পথ দেখায়। একই সঙ্গে কোর্স শেষে উদ্ভাবনী আইডিয়ার জন্য তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে বিশ্বখ্যাত কোম্পানি ফেনক্স বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের বিনিয়োগও লাভ করেন।
স্মার্টকম্পেয়ারের সেবাগুলো
স্মার্টকম্পেয়ার পরামর্শমূলক সেবা দিয়ে থাকে। ব্যাংক থেকে বিভিন্ন ধরনের ঋণ, কার ও হোম ঋণ নিতে গ্রাহকদের সহায়তা করে। আগ্রহী গ্রাহকের ঋণের শর্ত, মাসিক কিস্তিসহ আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো বিনামূল্যে জানাতে সহায়তা করে এ প্রতিষ্ঠানটি।
পরিধি
অনলাইনভিত্তিক হওয়ায় কাজের পরিধিও অনেক বিস্তৃত। দেশের যে কোনো স্থান থেকে যে কেউ স্মার্টকম্পেয়ারের সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।
কর্মী সংখ্যা
স্মার্ট কম্পেয়ারে এখন আট জন কাজ করছেন। প্রধান নির্বাহী হিসেবে আছেন মাহবুব। কাজের পরিধির সঙ্গে কর্মীও বাড়ছে বলে জানান তরুণ এ উদ্যোক্তা।
প্রচারণা
প্রচারণার বিষয়টি তেমন একটা হয়নি স্মার্ট কম্পেয়ারের। নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করেছেন ফেব্রুয়ারিতে। মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক ব্যবহার করেই প্রচারণা বাড়িয়েছেন। আর গ্রাহকরাই তাদের হয়ে প্রচারণার বড় কাজটি করে দিচ্ছে বলে জানান মাহবুব।
সম্ভাবনা
নিজের উদ্যোগ নিয়ে আশাবাদী এ তরুণ জানান, দেশে এ ধরনের উদ্যোগ আর নেই। মূলতব্যাংকের কর্মীরা এখন এ ধরনের সেবা দিয়ে থাকে। ওয়েবসাইটগুলোতও কিছু তথ্য দেওয়া থাকে। তবে সেখানে খুব বেশি গোছালো তথ্য থাকে না।
অন্যদিকে স্মার্টকম্পেয়ারে একেবারে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তথ্য যাচাইয়ের কাজ করে থাকে। গ্রাহকরা খুব সহজেই এখানে তথ্য ইনপুট করতে পারবেন। তাই তাদের সেবাকে সেরা না বললেও সর্বোচ্চ সুবিধার বলে দাবি করেন মাহবুব।
নতুনদের জন্য পরামর্শ
নতুন যারা ই-কমার্সভিত্তিক উদ্যোক্তা হওয়ার কথা ভাবছেন তাদের জন্য মাহবুবের খুব সোজাসাপ্টা কথা, ‘অবশ্যই বাজার বুঝতে হবে। বুঝতে হবে আমি নিজে কি করতে যাচ্ছি? তারপর কাজে নামতে হবে। না বুঝে ও বাজার গবেষণা না করে এ ধরনের কাজে না নামাই ভালো’।
যোগাযোগ
স্মার্টকম্পেয়ারের (http://www.smartkompare.com/) ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারবেন।অথবা ব্যক্তিগতভাবে কথা বলতে যেতে হবে নিচের ঠিকানায়-
হাউজ ৫৭/এ, সুইটি ৩ ডব্লিউ, রোড ৪/এ, ধানমণ্ডি, ঢাকা।