![]() |
টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : ইন্টারনেটে অপরাধীদের সনাক্তকরণে এখনও সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। অপরাধীরা আসল আইপি ব্যবহার করে না। তাই প্রায়ই তাদের অনুসরণ করা যায় না। তবে খুব শীঘ্রই এদের ধরতে ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবসহ ইন্টারনেট সেফটি সলিউশন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে।
বর্তমানে সাইবার অপরাধীদের ধরতে, ভুক্তভোগীদের প্রতিকার দিতে দেশে উপযোগী আইন রয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্বশীলতা ও আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করছে।
শনিবার বিকালে রাজধানীর রেডিসন হোটেলের ‘নিরাপদ ইন্টারনেট’ শিরোনামে গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন আলোচকরা।
বৈঠকে আলোচক প্যানেলে অংশ নেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, বিটিআরসি মহাপরিচালক (সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগ) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. এমদাদ উল বারী, কম্পিউটার বিজ্ঞানের শিক্ষক ও গবেষক ড. নোভা আহমেদ এবং জাতিসংঘ শিশু তহবিলের বিভাগীয় প্রধান (যোগাযোগ, প্রচার ও প্রচারণা) সীমা ইসলাম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদীর সঞ্চালনায় এ গোলটেবিলে ইন্টারনেট দুনিয়ায় নিরাপদ থাকা, নিরাপত্তা ঝুঁকি, সমস্যার সমাধানের উপায়, বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যত করণীয় বিষয়ে আলোচনা হয়।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, সাইবার নিরাপত্তায় সব ধরণের পদক্ষেপ সরকার নিচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে প্রয়োজনীয় কোন জায়গাই আমরা বিনিয়োগ করতে পিছপা হবো না। বিনিয়োগ কোন বিষয় নয়। আমরা এখন আইসিটি বেইজড ইকোনমিতে প্রবেশ করছি। বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকে ষষ্ঠ মৌলিক চাহিদা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
সাইবার নিরাপত্তায় সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকটি বিভাগ থেকে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে জানিয়ে পলক বলেন, আমরা ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব করছি। এই ল্যাবে অপরাধীদের চিহ্নিত করতে সব উপায়ই থাকবে।
তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগে বিভিন্ন সাইবার অপরাধ, হয়রানির অভিযোগ নেয়া ও সমাধান বা প্রতিকারের উপায় জানতে সার্বক্ষণিক কল সেন্টার রয়েছে। এই কল সেন্টারে গত এক বছরে ১২ হাজার অভিযোগ নেয়া হয়েছে। যে অভিযোগের ৮০ ভাগেরই সঠিক সমাধান দেয়া হয়েছে বলে আলোচনায় উল্লেখ করেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী।
তারানা হালিম বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ অপরাধ করার পর তার বিষয়ে ওই সোশ্যাল মিডিয়াগুলো ঠিকমতো সহযোগিতা করে না। আমাদের অভিযোগ তারা আমলে নেয় না। আর নিলেও তা দিনের পর দিন ফেলে রাখে। কারণ তাদের সাথে আমাদের কোন চুক্তি নেই কিংবা তাদের কোন অফিসও বাংলাদেশে নেই।
তবে খুব শীঘ্রই ইন্টারনেটে নজরদারি, ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক উস্কানিমূলক বিভিন্ন কনটেন্ট বন্ধ বা সরিয়ে ফেলাসহ ফিল্টারিং ব্যবস্থা ও অপরাধীদের ধরতে ইন্টারনেট সেফটি সলিউশন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে বলে জানান এই প্রতিমন্ত্রী।
ইন্টারনেটে সকলকে সচেতন থাকার আহবান জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, আমরা অনেকেই নেতিবাচক ব্যবহারকারীদের সঙ্গে কিছু কিছু কমেন্টও করে ফেলি এবং খুব সহজেই বিশ্বাস করে ফেলি। তবে তার আগে যেন আমরা পদ্ধতি যাচাই করি, যাচাই করে কমেন্ট করি। কারণ এর ভিত্তিতে অনেক বড় বড় জঙ্গিবাদী ঘটনা ঘটে যেতে পারে। ঘটতে পারে সম্মানহানির ঘটনাও।
বেনজীর আহমেদ বলেন, অপরাধীদের শাস্তির জন্য এবং নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য সময়োপোযোগী আইন রয়েছে। আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর কাছে কেউ অভিযোগ করলে অবশ্যই তিনি প্রতিকার পাবেন। সাইবার অপরাধগুলোর ক্ষেত্রে হয়তো একটু সময় লাগে তবে অভিযোগকারী প্রতিকার পাবেন।
ইন্টারনেটে অপরাধীদের অনেক সময় সনাক্ত করা যায় না উল্লেখ করে র্যাবের এই মহাপরিচালক বলেন, দেশে আইপি রয়েছে ৯ লাখ আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫ কোটি। আর এ থেকেই অনুমান করা যায় সমস্যার বিষয়ে।
ইন্টারনেটে অপরাধীদের সনাক্তকরণে বর্তমান সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. এমদাদ উল বারী বলেন, অপরাধীরা আসল আইপি ব্যরহার করে না। ফলে তাদের ট্র্যাক করা মুশকিল হয়ে পরে।
তিনি বলেন, আমরা ইন্টারনেট প্রটোকলের যে ভার্সনটা ব্যবহার করি সেটি আইপিভি (ইন্টারনেট প্রটোকল ভার্সন) ফোর। এর সীমাবদ্ধতার কারণে আমাদের দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর একটি বড় অংশ কোনো আসল আইপি ব্যবহার করেন না। তাদেরকে একটি আসল আইপি থেকে অনেকগুলো প্রাইভেট আইপি তৈরি করে দেওয়া হয়। সমস্যা হয় দেশের ভেতরে আমরা রিয়েল আইপি পর্যন্ত ট্র্যাক করতে পারি, প্রাইভেট পর্যন্ত যেতে পারি না।
তবে দেশের নিরাপদ ইন্টারনেট ভূবন তৈরি করা এবং ব্যবহারকারীর সুরক্ষায় সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকটি দপ্তর বা সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টার উপর জোর দেন এই কর্মকর্তা।
নোভা আহমেদ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া কোনো ছবি বা তথ্য অন্য কেউ ব্যবহার করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে কিনা তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করতে হবে। ইন্টারনেটে অনেকেই অনেক ভোগান্তিতে পড়েন। তবে এই সমস্যার সমাধান কীভাবে করবে? কার কাছে সমস্যা নিয়ে বলবে? কীভাবে বলবে তা ভেবে তারা চেপে যান।
আল-আমীন দেওয়ান