![]() |
ছেলেবেলার স্বপ্ন, একদিন নিজের একটা ল্যাব হবে। হয়েছেও তাই, প্রেনিউরল্যাব। আর এর মাধ্যমে স্বপ্নপূরণ হয়েছে এক তরুন উদ্যোক্তার। নিজের প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি এখন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন হাজারও তরুণকে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন ফখরুদ্দিন মেহেদী।
দেশের অনলাইন কমিউনিটিতে পরিচিত নাম প্রেনিউরল্যা ব। তরুনদের হাতে কলমে প্রযুক্তির নতুন সব শাখার সঙ্গে পরিচিতি করাতে এর জুড়ি নেই। অথচ শুরুর সময়টা মসৃণ ছিল না। একক প্রচেষ্টায় এটিকে গড়ে তুলেছেন আরিফ নিজামী নামের এক তরুন প্রকৌশলী।
অর্থ, মেধা, ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশের প্রযুক্তি খাতে অবদান রাখতে গড়ে তুলেছেন এ উদ্যোগ। অনেক তরুন প্রযুক্তিবিদ গড়ে তোলার পেছনে রয়েছে এটির অসামান্য অবদান।
‘টেক ফর সোশ্যাল গুড’ শ্লোগান নিয়ে ২০১৩ সালে তরুন এ উদ্যোগের একক প্রচেষ্টায় শুরু হয় এটির পথ চলা। সমাজ উন্নয়নের জন্য প্রযুক্তি ও ইনোভেশনকে কাজে লাগানোর চিন্তা থেকেই শুরু হয় ল্যাবের অগ্রযাত্রা।
প্রেনিউরল্যাব মূলত উদ্ভাবন সম্পর্কিত বিভিন্ন কাজ করে থাকে। বিভিন্ন প্রযুক্তি বিষয়ক ইভেন্ট আয়োজন যেমন হ্যাকাথন, স্টার্টআপ বিষয়ক কার্যক্রমের মাধ্যমে উদ্ভাবনে উৎসাহ দিতে কাজ করে এ ল্যাব। সম্প্রতি গুগল টেক উইম্যানের সঙ্গেও জড়িত ছিল প্রতিষ্ঠানটি।
ন্যাশনাল অ্যাপ অ্যাওয়ার্ড, ন্যাশনাল হ্যাকাথন, ইনোভেশন এক্সট্রিম, স্টার্টআপ কাপের মতো আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত প্রেনিউরল্যাব। এগুলোর মাধ্যমে বেশ সাড়া জাগিয়েছে নতুন এ উদ্যোগটি।
তরুণদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তর করাই এ উদ্যোগের উদ্দেশ্য বলে জানান তরুন এ উদ্যোমী প্রকৌশলী। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ইভেন্টে বিনামূল্যে ও অর্থের বিনিময়ে পেশাদার কর্মশালাও পরিচালনা করে।
আরিফ নিজামীর জন্ম পুরান ঢাকায়। ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার সময়ই নতুন কিছু করার স্বপ্নে বিভোর থাকতেন তিনি। সেই চিন্তার বাস্তব পরিণতি পেয়েছে প্রেনিউরল্যাব।
তরুন এ উদ্যোক্তা একই সঙ্গে অনুপ্রেরণাদায়ী এক বক্তাও। প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার পাশাপাশি তিনি কাজ করছেন গুগল ডেভেলপার গ্রুপের ম্যানেজার এবং গুগল বাসের কমিউনিটি অ্যাংগেজমেন্ট কনসালটেন্ট হিসেবে।
শিক্ষাজীবন থেকেই মাইক্রোসফট স্টুডেন্ট পার্টনারস, মজিলা ফায়ারফক্স, বাংলাবুট, স্টার্টআপ গ্রিন্ড বাংলাদেশ, বনলতা ইউএক্স ডিজাইনসহ বিভিন্ন কমিউনিটির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
এক সময় প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট টেক টিউনসে নিয়মিত লেখা এবং এ খাতের বড় উদ্যোক্তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার কাজও করেছেন।
যেভাবে শুরু
২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন কমিউনিটির সঙ্গে কাজ শুরু করেন আরিফ। তিনি বলেন, “মানুষের সমস্যা আর বেঁচে থাকার লড়াই দেখে কিছু করার তাগিদ অনুভব করি। এই চিন্তা থেকে সমাজের সমস্যা নিয়ে কাজ করে এমন বিভিন্ন এনজিওগুলোর কাজ পর্যবেক্ষণ শুরু করি।” স্মৃতিচারণ করে বলে চলেন তিনি, “তাতে আমার নজরে আসে এসব এনজিওগুলোর বেশিরভাগই তাদের তহবিল ঠিকঠাক মতো খরচ করতে পারে না। এসব প্রতিষ্ঠানের মডেলকে সোশ্যাল বিজনেস মডেলে রূপান্তরিত করে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠা করি প্রেনিউরল্যাব।”
প্রতিবন্ধকতা
আরও অনেকের মতো তরুন এ উদ্যোক্তাও পদে পদে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখী হয়েছেন। পারিবারিক চাপ ও নিজস্ব উদ্যোগের চেয়ে চাকরিতেই বেশি সফলতা আসবে এমন প্রচলিত ভাবনার বিষয়গুলো এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে কাজ করে। সঙ্গে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যয়, টিম ধরে রাখাসহ প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনার আরও অনেক বিষয়।
আরিফ নিজামী জানান, তিনিও এগুলোর মুখোমুখি হয়েছেন। এমন ক্ষেত্রে সফলদের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়ার তাগিদ দেন তিনি।
বর্তমান অবস্থা
কাজের ধরন ভিন্ন হওয়ায় অন্যান্য কোম্পানির মতো প্রেনিউরল্যাবের আয়ের নির্দিষ্ট উৎস নেই। তবে সম্প্রতি ল্যাবের একটি ডিজিটাল শাখা খোলা হয়েছে। এতে অ্যাপ তৈরি, ওয়েবসাইট তৈরি ও ডিজাইন, সোশ্যাল মিডিয়া ও ই-কমার্সকেন্দ্রিক কাজ করে আয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে।
মাত্র দেড় বছরে প্রেনিউরল্যাব বড় বড় অনেক কাজ করেছে। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ওপেন স্ট্রিট ম্যাপ ও কোডারস্ট্রাস্টের সহযোগিতায় আইটি শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
দেশে ইনোভেশন এক্সট্রিম, ন্যাশনাল হ্যাকাথন, ইউমেন টেকমেকার্স, হ্যাক স্প্রিন্ট, ডিজিবাজ ইত্যাদির আয়োজক হিসেবেও কাজ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রেনিউরল্যাবে বর্তমানে সাত জন ফুলটাইম কাজ করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ইভেন্টের সময় কাজ করার জন্য প্রতিষ্ঠানটির ১৫০ জনেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক দল রয়েছে।
প্রচারণা
আলাদা করে প্রচার-প্রচারণা চালানো হয় না। তবে ভাল কাজকেই উত্তম প্রচারণা মনে করেন আরিফ।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা
উদ্ভাবন নিয়ে অনেক কাজ করতে চান আরিফ। যার মাধ্যমে দেশে প্রযিুক্তিবিদ তৈরি হবে। তরুনদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হবে প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে। সৃষ্টিশীল উদ্ভাবন বের হয়ে আসবে আর গড়ে উঠবে আরও নতুন সব উদ্যোগ।
আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে একটি উদ্ভাবনী স্কুল করারও পরিকল্পনা করেছেন তরুন এ উদ্যোক্তা। এ ছাড়া মে মাসে প্রেনিউরল্যাব ‘কখন ডটকম’ নামের আরও এক উদ্যোগ চালুর কাজ প্রায় শেষ করে এনেছেন বলে জানান তিনি।
নতুনদের জন্য পরামর্শ
আরিফ বলেন, নিজের হাতে একটা কোম্পানি গড়ে তোলা অনেক কঠিন। তবে প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি, পরিকল্পনা আর নতুন আইডিয়া থাকলে স্বপ্ন বাস্তবায়ন সময়ের ব্যাপার মাত্র। লক্ষ্য ঠিক রেখে কাজ করে গেলে জয় আসবেই।