![]() |
ফেইসবুকের ব্যপ্তি এখন শুধু বন্ধু মহল বা সামাজিক নেটওয়ার্কের মধ্যে থেমে নেই। ব্যবসা-বাণিজ্যেও এটিকে যে সফলভাবে ব্যবহার করা যায় সেটির চমৎকার উদাহরণ ভাইপার। প্রতিষ্ঠানটির ব্যতিক্রমী উদ্যোগের গল্প জানাচ্ছেন তুহিন মাহমুদ
বর্তমানে দেশের ই-বাণিজ্যে ভাইপার বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত তরুন উদ্যোক্তারা দেখিয়েছেন সফলভাবে ফেইসবুকের বিকল্প ব্যবহারের উপায়। জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যমটির বহুমুখী ব্যবহারের মধ্য দিয়ে এটিকে পণ্য কেনাবেচার মাধ্যমে পরিণত করেছে। খুব স্বল্প সময়ে সফলতার কাতারে নাম লেখানো প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া।
চামড়াজাত পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ভাইপার দেখিয়েছে ব্যবসার জন্য আউটলেট বা ওয়েবসাইট না থাকলেও চলে। এ জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন অসম্ভবকে সম্ভব করার অদম্য চেষ্টা ও একাগ্রতা। ঠিক তেমনটাই করে দেখিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা এস এম মোস্তাফিজুর রাহমান বায়েজীদ। তিনি দেখিয়েছেন, হাজার টাকা থেকে কিভাবে ব্যবসা কোটি টাকায় উন্নীত করা যায়। তাও সেটি সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেইসবুক ব্যবহার করে।
শুরুটা যেভাবে
২০১১ সালের শেষের দিকে নিজের প্রয়োজন মেটাতে চামড়াজাত পণ্যের ব্যবসায় নামেন এআইইউবি থেকে বিবিএ ও এমবিএ করা বায়েজীদ। বাজার থেকে না কিনে সরাসরি কারখানায় অর্ডার দিয়ে পণ্য কিনে সেটি পরিচিতজনদের কাছে বিক্রি করতেন। এসব পণ্যের তালিকায় ছিল মানিব্যাগ, বেল্ট, ব্যাগ ইত্যাদি। ভালো সাড়া পেলেও মূলধন কম হওয়ায় প্রচারণার মাধ্যমে হিসাবে বেছে নিলেন ফেইসবুককে। প্রথমে ফেইসবুক প্রোফাইলের মাধ্যমে পণ্যের প্রচার চালাতে থাকেন। সাড়াও পান ভালো। পরবর্তীতে ‘ভাইপার’ ও ‘ভাইপার লেদার’ নামে দুইটি ফেইসবুক পেইজের মাধ্যমে তিনি প্রচারণা চালাতে শুরু করেন।
পথ থমকে গেল কিছুটা
ভালো সাড়া পেয়ে নিত্যনতুন আইটেম যোগ করছেন বায়েজীদ। চাহিদানুযায়ী পণ্যে নানারকম বৈচিত্র্য আনলেন। ভাইপারের স্লোগান ‘সেন্স অব কোয়ালিটি’র মতোই তিনি কোয়ালিটির দিকে বেশি নজর দিলেন। অবশেষে রাজধানীর শাহজাদপুরে ২ জন লোক নিয়ে নিজের একটি ছোট কারখানা দেন। কিন্তু কারিগরি জ্ঞান না থাকার কারণে তিন মাস পর কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে। কিছুটা থমকে গেলেন তিনি।
তবে থেমে থাকেনি স্বপ্ন
প্রথম কারখানাটি বন্ধ হয়ে গেলেও থেমে থাকেনি বায়েজীদের স্বপ্ন। নিজে থেকেই বিভিন্ন কারখানায় গিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে থাকেন। সেখানকার কর্মচারীদের সাথে কথা বলতেন, সরাসরি পণ্য তৈরি দেখতেন। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর এসব কাজের ধরণ দেখে নিজেকে অনেকটা ঝালিয়ে নেন তিনি।
অবশেষে আবারও কারখানা তৈরির পদক্ষেপ। প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে গত বছরের শেষের দিকে নতুন একটি কারখানা দেন। বর্তমানে এতে ৪ জন কর্মচারী রয়েছে। এখানে ভাইপার ব্র্যান্ডের পাশাপাশি অন্য ব্র্যান্ডের পণ্যও তৈরি করা হচ্ছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে বেল্ট, ওয়ালেট, কী ওয়ালেট, টাইম ওয়ালেট, কী রিং, পাসপোর্ট, ওয়ালেট/কাভার, কার্ড হোল্ডার। সবমিলিয়ে প্রায় ৩০টি আইটেম রয়েছে। রয়েছে চামড়ার জুতাও। বায়েজীদ জানান, বর্তমানে ১৬টি ডিজাইনের জুতা তৈরি করা হচ্ছে। এগুলো তিনটি লোকাল ব্র্যান্ডের নামে তৈরি ও বিক্রি হচ্ছে। শীতকে সামনে রেখে চামড়ার হাতমোজা তৈরি হচ্ছে। আর এসবই ফেইসবুকের মাধ্যমে জানান দেওয়া হচ্ছে।
আগামীতে ভাইপার ক্যাজুয়াল এবং ফরম্যাল শার্ট, জিনস, শর্টস আইটেম ও টি-শার্ট আনার পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানান ভাইপার সিইও।
বিদেশেও ছড়িয়ে গেছে ভাইপার
ফেইসবুক পেইজের মাধ্যমে নিজে পণ্য বিক্রির পাশাপাশি দেশের নয়টি ই-কমার্স ওয়েবসাইট ভাইপারের পণ্য বিক্রি করছে। শুধু দেশেই যে প্রতিষ্ঠানটির পণ্য বিক্রি হচ্ছে এমনটা নয়। মালয়েশিয়া, দুবাই, ইতালিসহ বেশ কয়েকটি দেশে রপ্তানি হচ্ছে ভাইপার পণ্য। লোকাল বায়ারের মাধ্যমে এসব পণ্য সরবরাহ করছেন বায়েজীদ।
দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্র্যান্ড তৈরির স্বপ্ন
ব্যবসায়িক সফলতা আসলেও বায়েজীদের স্বপ্ন এখানেই থেমে নেই। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের মতোই ভাইপারকে দেখতে চান তিনি। হাজারও মানুষের কর্মসংস্থান করতে চান। শিগগির লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করবে ভাইপার। বিশ্বজুড়ে তার কোম্পানির পণ্য ছড়িয়ে যাবে এমনই প্রত্যাশা তার।
বায়েজীদ বলেন, ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক অভিজ্ঞতার থেকেও বাস্তব প্রশিক্ষণ জরুরী। ইচ্ছা, একাগ্রতা থাকলে অল্প পুঁজি নিয়েও ব্যবসায় সফলতা অর্জন করা যায়। এক্ষেত্রে সরকার, ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা থাকলে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়।