কোডিংয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে কোডার্সট্রাস্ট

কোডিংকে বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে কোডার্সট্রাস্ট। ডেনমার্কভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা জান কায়ো ফাইবিগ তরুনদের স্বাবলম্বী করে তুলতে তাদের উদ্যোগের কথা শুনিয়েছেন। উঠে এসেছে কোডার্সট্রাস্টের বিভিন্ন দিকও। সাক্ষাৎকার নিয়েছে ফখরুদ্দিন মেহেদী।

মেধাবী শিক্ষার্থীদের কোডিংয়ে উৎসাহী করার লক্ষ্যে গড়ে তোলা হয়েছে কোর্ডাসট্রাস্ট। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের আরও ১৫ দেশে কাজ করছে বেসরকারি এ উন্নয়ন সংস্থা। তথ্যপ্রযুক্তিকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে তরুনদের স্বাবলম্বী করতে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।

নতুনদের বিশেষ করে আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা দেশের শিক্ষার্থীদের কোডিং প্রশিক্ষণ দিতে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। ঋণ দিয়ে সহায়তা করছে তাদের। নির্বাচিতদের ছয় মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর কাজ পেতেও সহায়তা করে কোডার্সট্রাস্ট। আর আয়ের অর্থ থেকে কিস্তিতে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হয়।

Techshohor Youtube

10425157_1005214956171244_8272963047717906586_n

বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সারদের কোডিংয়ে পারদর্শী করার মাধ্যমে আয় বাড়ানোর পথ তৈরি করতে সহায়তা করতে কাজ শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে এদেশে অফিস নিয়ে কাজ শুরু করেছে। কান্ট্রি ডিরেক্টরসহ ১৫ জন কর্মী কাজ করছেন কার্যক্রম এগিয়ে নিতে।

ডেনিশ সেনা কর্মকর্তা ফার্ডিনান্ড কেজিরুল্ফের ইরাকে যুদ্ধ পরবর্তী পুনবার্সন কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা থেকে জন্ম নেয় কোডার্সট্রাস্ট। সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে কাজ করেছিলেন ইন্টারনেট ও ই-লার্নিং নিয়ে। এরপর সেই অভিজ্ঞতা থেকে তথ্যপ্রযুক্তিতে কিছু করার উদ্যোগ নেন। এরই ফলশ্রুতিতে শুরু হয় কোডার্সট্রাস্ট। তিনি বর্তমানে এটির প্রধান নির্বাহী হিসাবে কাজ করছেন।

কেজিরুল্ফের সঙ্গে এ উদ্যোগের জড়িত সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে রয়েছে জান কায়ো ফাইবিগ ও এসার স্মিথ। বর্তমানে কায়ো ফাইবিগ চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার হিসাবে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত রয়েছেন এটির কার্যক্রম পরিচালনার সঙ্গে। বাংলাদেশও কার্যক্রমের অনেক কিছু দেখভাল করছেন তিনি।

সম্প্রতি টেকশহরডটকমের সঙ্গে কোডার্সট্রাস্টের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন ফাইবিগ। এতে বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা ও পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন দিক উঠে এসেছে।

টেক শহর : কোডার্সট্রাস্ট সম্পর্কে বলুন?

জান কায়ো ফাইবিগ : গ্রামীণ ব্যাংক ও ডেনমার্কের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ডানিডার অর্থায়নে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করেছে কোডার্সট্রাস্ট। এর আওতায় ছাত্র-ছাত্রীদের ৬ মাসের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ইউজার ইন্টারফেস, ইউজার এক্সপেরিয়েন্স, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ইংরেজি ভাষা শেখানো এবং ফ্রিল্যান্সিং দক্ষতাসহ বাস্তব জীবনে কাজে আসে এমন কিছু শেখানো হবে। সবার জন্য প্রশিক্ষক (মেন্টর) থাকবেন। যারা লার্নিং সেন্টারে এসে ক্লাস করতে পারবেন না, তাদের জন্য অনলাইনে কোর্স করার উপায় থাকবে।10450751_10152558018999673_4145215421869471033_n

 

ট্রেইনিং শেষে কাজ পেতে সহযোগিতা থেকে শুরু করে কাজ করতেও সহযোগিতা করবে কোডার্সট্রাস্ট। প্রশিক্ষণকালে ছাত্রছাত্রীদের থাকা খাওয়া এবং এর সমস্ত খরচ বহন করবে কোডার্সট্রাস্ট। প্রশিক্ষণ দেওয়ার ছয় মাস পর যখন তারা আয় করা শুরু করবে তখন তারা টাকা শোধ করবে। যেসব আগ্রহী ছাত্র ছাত্রী এতে অংশগ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন করবে তাদের অনলাইন টেস্ট এবং সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে নির্বাচন করে তাদেরকে প্রশিক্ষণের সুযোগ দেওয়া হবে।

মূলত আইটিখাতে এবং অর্থনৈতিক খাতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে তরুণ তরুণীদের স্বাবলম্বী করতেই কাজ করছে কোডার ট্রাস্ট।

টেক শহর : কতটি দেশে কোডার্সট্রাস্ট্রের কর্মসূচি চলছে?

জান কায়ো ফাইবিগ : বর্তমানে আমরা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ফোকাস করছি। কেননা এখানে ৫ লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। এ সংখ্যা বিশ্বে তৃতীয়।

বাংলাদেশ ছাড়াও আমরা আরও ১৫টি দেশে কাজ করছি। আরও বিভিন্ন দেশ কোডার্সট্রাস্ট নিয়ে কাজ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে।

টেক শহর : বাংলাদেশ নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা কি?

জান কায়ো ফাইবিগ : বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির অনেক সম্ভবনা রয়েছে। আমরা আগামী তিন বছরে ১ লাখ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করতে চাই। অন্যান্য দেশে তিন বছরে ১ লাখ শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিতে সমস্যা হলেও এখাতে তা এক বছরেই সম্ভব। কেননা এখানে অসংখ্য মেধাবী তরুণ রয়েছেন, যাদের শেখার প্রতি আগ্রহও প্রবল। আমি সত্যি তাদের দেখে অভিভূত।

code-of-hour

গত কয়েক দিনে আমি ২ হাজারেরও বেশি তরুণের সঙ্গে ফেইসবুকে বন্ধু হয়েছি এবং তারা সবাই কোডিং শিখতে চায়।

আমরা আপাতত ঢাকায় কাজ করছি। কিছুদিনের মধ্যে চট্টগ্রাম এবং সিলেটে কার্যক্রম বিস্তৃত করা হবে। এর পর ক্রমান্বয়ে দেশের ৬৪টি জেলার শিক্ষার্থীদের কাছে আমরা পৌঁছাতে চাই। বিশেষ করে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো নিয়ে আমাদের বিশেষ পরিকল্পনা আছে।

টেক শহর : প্রশিক্ষণের পর শিক্ষার্থীরা কতোটা সুফল পাবে বলে আপনি মনে করেন?

জান কায়ো ফাইবিগ : এখানকার বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সার এসইও এবং ডটিা এন্টির কাজ করে। যারা পারিশ্রমিক হিসাবে ঘন্টায় দুই ডলারের মতো আয় করে। কিন্তু পিএইচপির মতো প্রোগ্রামগুলোর  কাজ জানলে তারা ঘন্টায় ১০-১৫ ডলার আয় করতে পারবেন।

এদেশে অনেক মেধাবী রয়েছেন। মূলত তাদের ভালো গাইডলাইন ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।  কোডার্সট্রাস্ট ৩ থেকে ৬ মাসেই শিক্ষার্থীদের সেই দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করবে।

টেক শহর : কারা প্রশিক্ষণ দেবে?

জান কায়ো ফাইবিগ : এ দেশের কোডিং নিয়ে কাজ করেন এমন শীর্ষস্থানীয় মেন্টররা শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেবে। আমাদের টিম নিয়মিত তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে। বাংলাদেশে কোডার্সট্রাস্ট্রের টিমে বর্তমানে ১৪ জন কর্মকর্তা কাজ করছেন।

টেক শহর : ঋণ পাবার বিষয়টি সম্পর্কে বলুন?

জান কায়ো ফাইবিগ : প্রথমে একজন শিক্ষার্থীকে আবেদন করতে হবে। এরপর আমরা তাদের বাছাই করব। বাছাইকৃতরা ছয় মাস ঋণ পাবেন। আমরা এমন শিক্ষার্থী চাই যারা প্রকৃত অর্থেই শিখতে আসবে। কিন্তু যারা টাকার জন্য এখানে আসবে তারা কোনো না কোনভাবে ড্রপআউট হবে।

10557347_938801719479707_4472664127727095741_n

ঋণ পরিশোধের ব্যাপারেও আমরা শিক্ষার্থীদের কোনো প্রকারের চাপ দেব না। সপ্তম মাস থেকে তারা যখন আয় করা শুরু করবেন, তখন থেকে তারা ঋণ পরিশোধ করতে শুরু করবেন। আমাদের কার্যক্রমের ধাপগুলো হলো, ফান্ডিং-লার্নিং-আর্নিং-রিপেইং।

টেক শহর : কোডার্সট্রাস্টের কার্যক্রম ছড়িয়ে দিতে আপনাদের পরিকল্পনা কি?

জান কায়ো ফাইবিগ : দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে অনেক সাড়া মিলেছে। ইতিমধ্যে ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সঙ্গে অংশীদারিত্বেরভিত্তিতে কাজ করছি। সেখানে আমাদের একটি লার্নিং সেন্টার আছে, যাতে ২০০ জন শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ পাবে।

দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের কার্যক্রম চালু করার অফার আসছে। আপাতত আমরা ঢাকা এবং চট্টগ্রামের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অংশীদারিত্বেরভিত্তিতে কাজ করব। পরে দেশের বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হব।

টেক শহর : কোডার্সট্রাস্ট্র বাংলাদেশর অর্থনৈতিক উন্নয়নে কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আপনি মনে করেন?

জান কায়ো ফাইবিগ : বাংলাদেশে কমপক্ষে ৪ কোটি মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে। আর এ থেকে মুক্তির জন্য প্রয়োজন একটি ল্যাপটপ ও যোগাযোগ করার মতো ইংরেজী ভাষা জানা।

কোডার্সট্রাস্ট একজন শিক্ষর্থীকে নিজেদের উদ্যোগে সপ্তম মাসে থেকে আয় করার উপযোগী করে গড়ে তুলবে এবং মার্কেটপ্লেসে কাজ পাইয়ে দিতেও সাহায্য করবে।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন শেষ করতে একজন শিক্ষার্থীর ছয় বছরেরও বেশি সময় লেগে যায়। এরপর সরকারি বা বেসরকারি একটা চাকরি খুঁজতে তাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এসব দিক বিবেচনা করে বলতে পারি কোডার্সট্রাস্ট এদেশের তরুনদের কাজ পেতে সহায়তা করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।

টেক শহর : কোডার্সট্রাস্টের ফান্ড আসে কোথা থেকে?

জান কায়ো ফাইবিগ : সারাবিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি পর্যায়ের দাতাদের কাছ থেকে কোডার্সট্রাস্টের ফান্ড সংগ্রহ করা হয়।

*

*

আরও পড়ুন