![]() |
সাইমুম সাদ, টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : সাত তরুণের ভাবনার ফসল অনলাইন পাঠশালা রেইনআর্ক ডটকম। রংধনুতে যেমন সব রংয়ের সমাবেশ থাকে, তেমনি এ ভার্চুয়াল পাঠশালায় শিক্ষার্থীদের জন্য থাকছে প্রয়োজনীয় সব টিউটোরিয়াল। নিজের প্রয়োজনে প্রকৌশলের সব শিক্ষার্থীর প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণের ঠিকানা হতে চায় এটি।
এমন পরিকল্পনা থেকেই দেশে ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ নিয়েছেন সাত প্রকৌশলী। নিজেদের চেষ্টায় গড়ে তুলছেন টিউটোরিয়ালভিত্তিক এ অনলাইন আর্কাইভ, যাকে তারা নাম দিয়েছেন পাঠশালা। আক্ষরিত অর্থেই যাতে জ্ঞানপিপাসুরা হাতে কলমে বিষয়টি বুঝতে পারেন সে চেষ্টাই চালাচ্ছেন তারা।
কেউ ক্লাস মিস করেছেন কিংবা কোনো পেশাজীবীর হঠাৎ নতুন একটি বিষয়ে জানা দরকার- এমন ক্ষেত্রে সবজান্তা শমসেরের ভূমিকায় যেতে চায় রেইনআর্ক ডটকম। সবাই যাতে তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়ের টিউটোরিয়াল খুঁজে পান এবং আস্থা ও নিশ্চিন্তভাবে তা ব্যবহার করতে পারেন এমন পরিকল্পনা নিয়েই এগিয়ে চলছে ভিত্তিপর্বের কাজ।
এখন এ ভার্চুয়াল পাঠশালায় সিভিল প্রকৌশল, কম্পিউটার প্রকৌশল, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স বিষয়ের টিউটোরিয়াল মিলবে। ভবিষ্যতে তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রকৌশলের সব বিষয়ের তথ্য রাখার পরিকল্পনার কথা জানান উদ্যোক্তারা। চাইলে যে কারও এখানে ভিডিও আপলোড করার সুযোগও রয়েছে।
টিউটোরিয়ালভিত্তিক অনলাইন এ শিক্ষা কেন্দ্র তৈরির ভাবনার একবারে গোড়ায় ছিলেন আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রভাষক গালিব মুক্তাদির। তিনি জানালেন শিক্ষার্থীদের সহায়তা করতে এ অনলাইন পাঠশালা গড়ে তোলার কথা। অনলাইনে পড়াশোনার বিষয়টিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অন্য ছয় সঙ্গী প্রকৌশলীর স্বপ্ন ও ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।
শুরুর গল্প
২০১২ সালে বুয়েট থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষ করেন গালিব। কাছের বন্ধুরা একে একে সবাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি জুটিয়ে নিয়েছেন। বন্ধুরাও তাকে তাগাদা দিচ্ছে, কিছু একটা চাকরি করার। কিন্তু বহুজাতিক কোম্পানির চাকরি কখনই টানেনি তাকে। সব সময় ভিন্ন কিছু করার চিন্তা করতেন তিনি।
দিন কয়েক পর গালিবের বোধোদয় হলো। ভাবলেন, সত্যিই একটা কিছু করা দরকার। তবে চাকরি নয়, শিক্ষার্থীদের সহায়তায় নতুন একটা আইডিয়া খুঁজে বের করার কাজে নেমে পড়লেন। হঠাৎ তার মাথায় এল শিক্ষার্থীরা ক্লাসের নোট অনেক সময় বুঝতে পারের না বা ক্লাস মিস করলে সেদিনের টিউটোরিয়ালটা আর মাথায় ঢোকে না।
এ প্রকৌশলী ভাবলেন, টিউটোরিয়ালগুলোকে ভিডিও আকারে একটা সাইটে সংগ্রহ করে রাখলে কেমন হয়? শিক্ষার্থীরা যখন ইচ্ছা অনলাইনে পড়াশোনা করতে পারবে। বনন্ধুদের সঙ্গে আইডিয়াটা শেয়ার করলেন।
সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেলেন মশিউর রহমান, নাইম হাসান ও সাজিদ-উল-আলম। কিন্তু সবাই সিভিলের শিক্ষার্থী বলে কারোরই প্রোগ্রামিং নিয়ে ধারাণ নেই। তাই প্রোগ্রামিং শিখতে প্রশিক্ষন কেন্দ্রে ভর্তি হলেন চারজন।
প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে পরিচয় হলো শামস সাদিক, মোশাহেদ আলম ও ইমতিয়াজ আহমেদের সঙ্গে। তারাও যোগ দিলেন স্বপ্নবাজদের দলে। সর্বসাকুল্যে টিমের সদস্য সাত। সবাই কাধে কাধ মিলিয়ে শুরু করলেন কর্মযজ্ঞ। এরই মধ্যে সাইটটির একটা নামও ঠিক করলেন। নাম দিলেন রেইনআর্ক ডটকম। নামের ব্যাখ্য শুরুতেই বলা হয়েছে।
দিন কয়েকের মাথায় মোহাম্মদ পুরের ইকবাল রোডে ছোট্ট একটা রুম ভাড়া নিলেন। সারা রাত জেগে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ওয়েবসাইটের কনটেন্ট তৈরি করেন তারা। সর্বশেষ ২০১৩ সালের মার্চের দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ওয়েবসাইটটি।
অ্যাকাউন্ট খুলবেন যেভাবে
প্রথমে ওয়েবসাইটে ঢুকতে হবে। এরপর সাইটের ডানপাশে অ্যাকাউন্ট খোলার অপশন আছে। সেখানে নাম ও ই-মেইল আইডি দিয়ে ওকে বাটনে ক্লিক করলেই ফিরতি মেইলে একটি কনফার্মেশন মেইল যাবে।
এতে পার্সওয়ার্ড থাকবে। এরপর লগনই করা যাবে। একইভাবে ফেইসবুক, টুইটার, গুগল প্লাস অ্যাকাউন্ট দিয়েও সরাসরি লগইন করা যাবে।
ভিডিও আপলোড করার উপায়
অনলাইন এ পাঠশালায় চাইলে যে কেউ গুণগত মানের লেকচার ক্যামরা দিয়ে ভিডিও করে আপলোড করতে পারেন। তবে সবচেয়ে সহজ উপায় হলো স্ক্রিন ক্যাপচার সফটওয়্যার ব্যবহার করা। এর মাধ্যমে কোন শিক্ষক স্ত্রিনের সামনে মাইক্রোফোনে টিউটোরিয়ালের কথাগুলো বলবেন সঙ্গে স্ত্রিনে প্রয়োজনীয় ছবি রাখবেন। স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুরো পক্রিয়া ভিডিও হবে। এরপর ঝটপট আপলোড করা যাবে।
ফেসটিউব
সামাজিক যোযাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের আদলেই সাইটিটি তৈরি। ব্যবহারকারীরা সহজেই তাদের যে কোনো প্রশ্ন বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে পারবেন। প্রত্যেকেরই একটি নির্দিষ্ট বন্ধু তালিকা থাকবে।
ফেইসবুকের মতোই হোমপেজে বন্ধুদের শেয়ার করা তথ্য দেখতে পাবেন। নিজের ভাললাগা-মন্দলাগা কমেন্টে জানাতে পারবেন। লাইক দিতে পারবেন। এমনকি ব্যবহারকারীরা একে অপরে ইনবক্সে যোগাযোগ করতে পারবেন।
কোনো তথ্য অসম্পূর্ণ কিংবা ভুল মনে হলে ভিডিওটির বিষযে রিপোর্ট করার ব্যবস্থা আছে। প্রয়োজনে পরীক্ষা করে ভিডিওটি সরিয়ে ফেলা হয়। অন্যদিকে ব্যবহারবকারীরা ইউটিউবের আদলে তাদের নিজস্ব লেকচার ভিডিও আকারে আপলোড করতে পারবেন। ভিডিওটি নিয়ে অন্যান্যদের মন্তব্যের সুযোগ আছে।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা
সহ-প্রতিষ্ঠাতা গালিব মুক্তাদির জানালেন, ভবিষ্যতে সাইটে রিসার্চের অপশন চালু করা হবে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয়ের ওপর রিসার্চ করতে পারেন। পাশাপাশি ভিডিওগুলো যাতে অন্তত একবার বিশেষজ্ঞ পরীক্ষা করে দেখবেন এতে ভুল রয়েছে কি না।
ব্যবহারকারীদের মন্তব্য
আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিলি ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ নাভিদ বলেন, ক্লাসে অনেক টিউটোরিয়াল বুঝতে অসুবিধা হতো। এরপর রেইনআর্কে একই বিষয়ের টিউটেোরিয়াল বারবার দেখে বিষয়টি আত্মস্থ করা সম্ভব হয়েছে।
তার মতো আরও অনেকের মতে, পরীক্ষার আগে হাতের নাগালে নোট পাওয়া যায়না। কিন্তু সাইটটি এ সমস্যার সমাধান করে দিয়েছে।
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী আবু সুফিয়ান রাব্বি জানালেন, তিনি নতুন ব্যবহারবারী। তবে অল্প কয়েকদিনের মধ্যে এটা তার খুব ভাল লেগেছে বলে জানান। সহজেই অনেক কঠিন বিষয় জানতে পারায় উপকার হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আরো পড়ুনঃ