![]() |
শাহরিয়ার হৃদয়, টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : আইপ্যাড এয়ার নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। টেকরাডার বা সিনেটের মতো বিভিন্ন প্রযুক্তি বিষয়ক শীর্ষ ম্যাগাজিন রীতিমতো ঘোষণা দিয়েছিলো বিশ্বের সবচেয়ে ‘পারফেক্ট’ ট্যাব আইপ্যাড এয়ার। কিন্তু সেই ‘পারফেক্ট’ ট্যাবকেও ছাড়িয়ে গেছে অ্যাপলের নতুন আইপ্যড এয়ার ২।
শুধু আগের চেয়ে ‘স্লিম’ ও ‘হালকা’ হওয়ার কারণেই নয়, ডিজাইন ও ইঞ্জিনিয়ারিং এর দিক থেকেও এয়ার ২ কে বলা হচ্ছে অদ্ভুত ক্রস-সেকশন।
ডিজাইন
অ্যাপলের যে কোনো ডিভাইসই ডিজাইনের দিক দিয়ে হয় সবচেয়ে প্রিমিয়াম এবং আগের ডিভাইসের তুলনায় হয় হালকাপাতলা। স্লিম হওয়ার দিক থেকে এয়ার ২ মাইলফলক স্পর্শ করেছে বলা যায়। এটি মাত্র ৬.১ মিলিমিটার পুরু, অর্থাৎ একটি পাতলা ম্যাগাজিন বা পেন্সিলের চেয়েও চিকন!
আইপ্যাডটি তৈরি করা হয়েছে সলিড মেটাল ও গ্লাস দিয়ে। এর ফিনিশিংকে চোখ বন্ধ করে সবচেয়ে নিখুঁত বলা যায়। স্লিম রাখার জন্য সাইলেন্সার সুইচটি সরানো হয়েছে প্যাডের ডানপাশ থেকে। এছাড়া এর ওজন মাত্র ৪৩৭ গ্রাম।
ডিসপ্লে
আইপ্যাড বা আইফোনের ডিসপ্লেকে বরাবর ‘পিক্সেল-পারফেক্ট’ বলা হয়। পারফেকশন ছাড়াও এয়ার ২ এর ডিসপ্লে আগের চেয়ে উন্নত করা হয়েছে। ৯.৭ ইঞ্চি রেটিনা ডিসপ্লের রেজুল্যুশন ২০৪৮*১৫৩৬ পিক্সেল।
স্ক্রিনের ওপর যে অলিওফোবিক কোটিং রয়েছে তা আলোর প্রতিফলন রোধ করবে। এছাড়া স্ক্রিনকে আরও ‘জীবন্ত’ দেখানোর জন্য স্ক্রিনের সাথে উপরের গ্লাস লেমিনেট করে বসানো হয়েছে।
কানেক্টিভিটি
কানেক্টিভিটির দিক থেকে আইপ্যাড এয়ার ২ কে বরং আইওএস ৮-ও বলা যায়, তবে এটি অনেক বেশি একটি আপগ্রেড। ওয়াইফাই থেকে শুরু করে সিম সাপোর্টেড পর্যন্ত বেশ কিছু ভার্সন আছে এর।
সিম সাপোর্টেড ভার্সনে আছে থ্রিজি ও ফোরজি। এছাড়া সবগুলোতে ডুয়াল ব্যান্ড ওয়াইফাই, এ-জিপিএস, হটস্পট ও ব্লুটুথ ৪.০ আছে। সাধারণ স্মার্ট সেন্সরগুলোর পাশাপাশি রয়েছে ব্যারোমিটার যা বায়ুচাপ মাপতে পারে।
কানেক্টিভিটির সবচেয়ে বড় আপগ্রেড হলো প্রথমবারের মতো আইপ্যাডের হোম বাটনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর। এর মানে দাঁড়াচ্ছে অ্যাপলের টাচ আইডি যোগ করা হয়েছে এতে।
এর সাথে অ্যাপল পে সম্পৃক্ত, যার মাধ্যম এক ক্লিকে শপিং থেকে শুরু করে যে কোনো অনলাইন ট্রানজ্যাকশন করা যাবে। আমাদের দেশের জন্য অবশ্য এই ফিচারটি প্রযোজ্য নেই, কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য খুবই ইতিবাচক।
ক্যামেরা
আইপ্যাডের ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে এয়ার ২ তে। ৮ মেগাপিক্সেলের প্রধান ক্যামেরার সাথে আছে প্রচুর ফিচার। এছাড়া সামনে ১.২ মেগাপিক্সেল ফেসটাইম ফ্রন্ট ক্যামেরা তো রয়েছেই।
কনফিগারেশন
এতে অ্যাপল এ৮এক্স চিপসেট ব্যবহার করা হয়েছে, আছে ট্রিপল কোরের প্রসেসরের ক্লকরেট ১.৫ গিগাহার্জ। দুই জিবি র্যারমের গ্রাফিক্স প্রসেসর এ৮এক্সের সাথে সংযুক্ত। এছাড়াও ১৬ থেকে শুরু করে ১২৮ জিবি পর্যন্ত এর মেমোরি ভার্সন পাওয়া যাবে।
পারফর্ম্যান্স
আইফোন বা আইপ্যাডে পারফর্ম্যান্স নিয়ে কোনো অভিযোগ শোনা যায়নি। পারফর্ম্যান্সের দিক থেকে বাজারের অন্য সবার চেয়ে কয়েক ধাপ এগিয়ে থাকবে অ্যাপল, এটা জানা কথা। এয়ার ২ বেলায়ও তাই।
আগের আইপ্যাড এয়ার থেকে এটি ৪০% বেশি দ্রুতগতির। কোর পারফর্ম্যান্স বা গ্রাফিক্যাল পারফর্ম্যান্স—কোনোদিক দিয়ে যেন একে হারানোর কেউ নেই।
আর আইওএস ৮.১ এই পারফর্ম্যান্সকে আরও আরও গতিশীল করেছে। আইওএসে এতদিন মাল্টিটাস্কিংয়ে কিছুটা সমস্যা ছিলো, কিন্তু আইওএস ৮.১-এ সে সমস্যা অনেকটাই দূর হয়েছে। এই সুবিধার আবার পুরোটাই নেয়া যাবে এয়ার ২ দিয়ে।
মডার্ন কমব্যাট, অ্যাসফল্ট ইত্যাদি হাই গ্রাফিক্সের গেইমের কোয়ালিটি দেখার অন্য ট্যাবের গ্রাফিক্স পানসে লাগতে পারে।
এ ছাড়া যারা ট্যাবের ভিডিও বা ফটো এডিটিং করে, তারাও যে কোনো ভারী কাজ বিন্দুমাত্র ল্যাগ ছাড়া শেষ করতে পারবেন। এক কথায়, এর চেয়ে ভালো পারফরর্ম্যান্স সম্ভবত সম্ভবই নয়।
ব্যাটারি
মোটামুটি ব্যবহারে ১০ ঘণ্টা ব্যাকআপ দেবে এই ব্যাটারি। এটি অন্যদের ছাড়িয়ে না গেলেও কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট।
মূল্য
৪৯৯ ডলার থেকে আইপ্যড এয়ার ২ এর ১৬ জিবি ভার্সনের দাম শুরু হয়েছে।
এক নজরে ভালো
– স্লিক, স্লিম, হালকা, প্রিমিয়াম ডিজাইন
– তুলনাহীন ডিসপ্লে, তুলনাহীন পারফর্ম্যান্স
– টাচ আইডি, উন্নত আইসাইট ক্যামেরা
এক নজরে খারাপ
– ভলিউম সাইলেন্সার নেই
– অনেক বেশি স্লিম হওয়ায় হাত ফসকে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে