![]() |
টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর: রাশিয়া ও ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধে সী ড্রোন বা সামুদ্রিক ড্রোনের ব্যবহার ক্রমে বাড়ছে। যুদ্ধের সময় গতানুগতিক ড্রোনের ব্যবহার বড় ধরনের প্রভাব ফেললেও প্রযুক্তির এই নতুন রূপও ক্রমে গতি পাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে এই সী ড্রোন নৌযুদ্ধের ভবিষ্যতকেই পাল্টে দিবে।
সী ড্রোন কি?
সী ড্রোন মূলত ছোট আকৃতির মনুষ্যবিহীন জাহাজ। এটি সমুদ্রের ওপর বা নিচ থেকে পরিচালনা করা যায়। ড্রোনগুলো বর্ণনা করতে ড্রোন বোট, ড্রোন শিপ এবং আনক্রু সারফেস ভেসেল (ইউএসভি) বিভিন্ন টার্ম ব্যবহার করা হয়। সমুদ্রের ড্রোনগুলো বিভিন্ন আকার ও আকৃতিতে পাওয়া যায়। পরিবেশ পর্যবেক্ষণসহ নানাকাজে এসব ড্রোন ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন সামরিক কাজেও এসব ড্রোন ব্যবহার করা হয়; যেমন- মাইন পরিস্কার করা, নজরদারি করা অথবা শত্রুর জাহাজের মতো নিশানার কাছকাছি বিস্ফোরণও ঘটাতে পারে এসব ড্রোন। পানির ওপর থেকে ড্রোনটি পরিচালনা করার সুযোগ থাকায় ইউক্রেন সম্প্রতি তলোকা টিএলকে-১৫০ নামে একটি সী ড্রোনের প্রটোটাইপ উন্মোচন করেছে।
সী ড্রোন কিভাবে কাজ করে ও এগুলোর দাম কেমন?
সাধারন সী ড্রোনগুলোর মধ্যে অর্ন্তনির্মিত বিস্ফোরক ও ক্যামেরাসহ কিছু ফিচার রয়েছে। এই ক্যামেরার সাহায্যে ড্রোনটি নিয়ন্ত্রনকারী ছবি দেখতে পায়। ড্রোনটি যখন উন্মোচন করা হয় তখন দীর্ঘ-সীমার টার্গেটগুলো প্রি-প্রোগ্রাম করা হয়ে থাকে। গবেষনা প্রতিষ্ঠান রুসির গবেষক সিদ্ধার্থ কুশাল বলেছেন, ড্রোনগুলো অনেকদূর থেকে একজন নিয়ন্ত্রন করে থাকে।
ইউক্রেনের কিছু কিছু সী ড্রোন সাধারন মানুষের দেয়া আর্থিক সহায়তা থেকে তৈরি করা হয়েছে। এগুলো ‘অফ দ্য শেলফ’ উপাদান থেকে তৈরি করা হয়েছে; যা সাধারনত সামরিক নয় বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে তৈরি ড্রোনে ব্যবহার করা হয়।
তবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের কাছে কতগুলো সী ড্রোন রয়েছে তা এখনো পরিস্কার নয়। এগুলোর দাম সম্পর্কেও জানা যায় নি। তবে ইউক্রেন সরকারের প্রকাশ করা একটি ড্রোনের দাম দুই লাখ ৫০ হাজার ডলার দেখা গিয়েছে। এটি কিছু কিছু দূরপাল্লার ক্ষেপনাস্ত্রের চেয়েও সস্তা। সী ড্রোনগুলো খুব সহজেই ব্যবহার করা যায় এবং এরজন্য পুরোপুরি প্রশিক্ষিত ক্রুর প্রয়োজন পড়ে না।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে এসব সী ড্রোন ব্যবহার হয়েছে কি?
বিবিসির অনুসন্ধানে দেখা গিয়েছে সেভাস্টোপল এবং নভোরসিয়স্ক বন্দরে নৌঘাঁটিতে থাকা সামরিক জাহাজগুলোকে নিশানা করে সী ড্রোনের মাধ্যমে কমপক্ষে ১৩ বার হামলা করেছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের এক সামরিক সূত্র জানিয়েছে জুলাইয়ে ক্রেচ ব্রিজেও সী ড্রোন ব্যবহার করে হামলা করা হয়েছে।
যুদ্ধে সী-ড্রোনের প্রভাব কি?
মোটামুটি অনেক কম খরচেই সী ড্রোন ব্যবহার করতে পারছে ইউক্রেন; যা নৌযুদ্ধের ক্ষেত্রে একটি নতুন যুগের সূচনা হিসেবে দেখা যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন যুদ্ধের এই কৌশল রাশিয়ার জন্য ক্রমে ঝুঁকি হয়ে উঠছে। নৌজাহাজের তুলনায় সী ড্রোনগুলো সহজে রাডারে ধরা পড়ে না। কারণ এসব ড্রোন খুবই কম শব্দ করে। নওরেজিয়ান ইনস্টিটিউট অব ডিফেন্স স্টাডিজের অধ্যাপক কাতারজিনা জিস্ক বলেছেন, ইউক্রেনের যেহেতু উল্লেখযোগ্য নৌবাহিনী নেই তাই এর ড্রোনগুলো কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়ার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রন নিয়ে নেয়া প্রতিহত করবে।
২০২২ সালের অক্টোবরে রাশিয়ার সেভাস্টপুলের নৌঘাঁটিতে সমুদ্র ও আকাশ উভয় ড্রোনের মাধ্যমে হামলা করে ইউক্রেন। ইতিহাসে প্রথম এ ধরনের ঘটনা ঘটলো। এই হামলায় কমপক্ষে রাশিয়ার তিনটি জাহাজ ধ্বংস হয়। স্যাটেলাইট এবং অন্যান্য ওপেন সোর্স ইমেজ বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান জিওকনফার্মড বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এ হামলার পর থেকে নৌঘাঁটির চারপাশে নিরাপত্তা আরো মজবুত করেছে রাশিয়া। সেপ্টেম্বরে সেভাস্টপুলে আরেকটি হামলায় ২৪ ব্যক্তি আহত হন।
তবে সী ড্রোনের কিছু কিছু অসুবিধাও রয়েছে। অনবোর্ড সেন্সরগুলোর সংকীর্ণ ছবি আসতে পারে। ফলে গন্তব্যের তথ্য অথবা ছদ্মবেশি জাহাজের চিহ্ন ছাড়া নিশানাগুলোকে ট্র্যাক করা কঠিন হবে। এই অনবোর্ড ক্যামেরা রয়েছে তাদেরও নিয়ন্ত্রকের সাথে একটি নিশানার সরাসরি যোগাযোগের প্রয়োজন হয়। ফলে ভিডিও পরিচালনার ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হলেই পুরো মিশন ভেস্তে যেতে পারে। অধ্যাপক জিস্ক বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত এটি বৈপ্লবিক পর্যায়ে কিছু ঘটে নি। আমরা এখনো পরীক্ষামূলক পর্বে রয়েছি।’
বিবিসি/আরএপি