টেলিটক এগুতে না পারার কারণ আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা

মোস্তাফা জব্বার, ফাইল ছবি

আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী হিসেবে এবারের মতো দায়িত্বের শেষ দিকে মোস্তাফা জব্বার। প্রায় ৫ বছর আগে যখন দ্বিতীয়বারের মতো মন্ত্রীর দায়িত্বে আসেন ওইদিনই টেকশহরের মুখোমুখিতে নতুন লক্ষ্য ও পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। সময় পেরিয়ে আবারও টেকশহরের মুখোমুখি মোস্তাফা জব্বার, কতখানি বাস্তবায়িত হলো তাঁর সেই লক্ষ্য-পরিকল্পনা, না পারাই বা কী থাকলো ?

সাক্ষাতকার নিয়েছেন আল-আমীন দেওয়ান। দ্বিতীয় পর্ব :

টেকশহর : টেলিটক কী দুর্বল মোবাইল অপারেটরই থেকে যাবে ?

Techshohor Youtube

মোস্তাফা জব্বার : এই জায়গাটায় আমি এখনও দুর্বল রয়েছি, এই টেলিটকের নেটওয়ার্ক। আমার পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, সরকারি কোম্পানির জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হচ্ছে সরকারি ব্যবস্থাপনাটা হচ্ছে আমলাতান্ত্রিক। ফলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যত দ্রুত মুভ করে, যত ফাস্ট তার রেজাল্ট আনতে পারে এটা সরকারি প্রতিষ্ঠান পারে না।

কিছু অবাক করার মতো উদাহরণ রয়েছে এখানে। যেমন, ২০১৭ সালের টেলিটকের জন্য ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের লোন আসছে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে। অথচ সেই লোনের কোনো প্রজেক্টই বানানো হয়নি ২০২৩ সাল পর্যন্ত। অথচ আমার ফাইজি প্রকল্প একনেক হতে ফেরত আসছে আমার বৈদেশিক মুদ্রা নেই বলে। অথচ ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার পরে রয়েছে। এখনও পর্যন্ত যারা লোন দেয়ার তারা পেছনে পেছনে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর আমাদের লোকজন ডিপিপি বানাতে পারেনি।

আরও একটি চাইনিজ কোম্পানি, তারাও বিলিয়ন ডলার নিয়ে বসে আছে। কিন্তু এটাকে যে কার্যকর করবে সেই জায়গাটায় যেতে পারে না। এই অবস্থার মধ্যে দিয়ে চলছে। এই যে অক্ষমতা বা স্থবিরতা যদি দূর না করা যায় তাহলে এগুবে কীভাবে ?

টেকশহর : তাহলে কী টেলিটককে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে?

মোস্তাফা জব্বার : টেলিটকের ক্ষেত্রে একটা পথ খুঁজে বের করা হয়েছে। বিষয়টি এখনও প্রকাশযোগ্য হয়নি। আশাকরছি, মাসখানেকের মধ্যে একটা আউটপুট পাওয়া যাবে। এরপর বলা যাবে, কতটুকু গতিতে কতটুকু এগুবে।

টেলিটকের কার্যালয়

টেকশহর : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হওয়ার পর অনেকক্ষেত্রেই এর অপব্যবহার দেখেছি আমরা। এখন আইনের অনেকগুলো ধারায় সংশোধনী এনে সাইবার নিরাপত্তা অ্যাক্ট হচ্ছে। শুরুতে এই আইন সাইবার নিরাপত্তা আইন নামেই ছিল, তারপর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হলো-যে প্রক্রিয়ায় আপনি ওতপ্রোতভাবে ছিলেন। এখন এই পরিবর্তন কী অপব্যবহার রুখবে ?

মোস্তাফা জব্বার : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যেটা এটা সাইবার নিরাপত্তা আইন ছিল। আমরা যখন আন্দোলন করছি ডিজিটাল করবো তখন এখানে সাইবার বলে কিছু থাকে না, কারণ সাইবার দিয়ে ডিজিটালের পুরোটা কাভার করা হয় না। সাইবার বলার মানে হচ্ছে ইন্টারনেট বেইজ বিষয়গুলো কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা তো শুধুমাত্র ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল না। আমার যে জায়গাটা দরকার ছিল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সেটা কাভার করেছিলাম।

আমার স্পষ্ট মনে আছে, আমরা ঢাকার বাইরে অবস্থান করে-থেকে, ওয়ার্কশপ করে সেখানে সকল পক্ষকে একমত করে তারপর আইনটি করা হয়েছিল। আইনের সমস্ত কিছুই এমন কী সংসদীয় কমিটির যে সভা হয়েছে সেখানেও সাংবাদিকরা পর্যন্ত ছিলেন। এখন যে বিষয়টা দাঁড়িয়েছে সেটা হলো, একটা আইন প্রণীত হলো এরপর যখন এটি প্রয়োগ হলো তখন সমস্যা তৈরি হলো। সরকার কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কারও বিরুদ্ধে অপপ্রয়োগ করেনি। এখন আমি যদি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে একটি মানহানির মামলা করি তার দায় সরকারের উপর কেন যাবে, এটির যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই।

আমি মনে করি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন লাগবেই। ডিজিটাল দুনিয়াতে এমন একটি আইন ছাড়া কোনোভাবেই চলা সম্ভব নয়। এটা যে নামেই আখ্যায়িত হোক না কেনো এটি লাগবে। তবে সাইবার নিরাপত্তা আইন করে প্রকৃতপক্ষে এর পরিধিটা যে আকারে চিন্তা করছি তারচেয়ে ছোট হয়ে গেল।

টেকশহর : অপারেটরদের কাছে রাষ্ট্রের নানা পাওনা আদায়ে আপনাকে বেশ কঠিন ভূমিকায় দেখেছি আমরা। এখানে পদ্ধতিগত কোনো পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ আছে কিনা, যে দেনা-পাওনা সবপক্ষেই হালনাগাদ থাকবে ?

মোস্তাফা জব্বার : এই কাজ করা হচ্ছে। তবে এখানে এটি স্পষ্ট যে, রাষ্ট্রের প্রাপ্য যদি কেউ না দেয় সেটা জঘন্য অন্যায় । আমাদের অপারেটরদের কাছে এই যে টাকা আদায় করা, এগুলো কী-অডিটের পাওনা, লেট ফি নানারকম পাওনা। এগুলো তো প্রাপ্য টাকা, এমন তো না যে, তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।

আমরা প্রাপ্য টাকাই আদায় করেছি। ভবিষ্যতে আরও কঠোর হবো যেন, এক পয়সাও ফাঁকি দেয়ার সুযোগ না থাকে।

মোস্তাফা জব্বার ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি মন্ত্রী হিসেবে প্রথম শপথ নেন। ৩ জানুয়ারি ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান এবং ওই বছরের ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত মন্ত্রী হিসেবে তিনি প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মত ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন।  

*

*

আরও পড়ুন