![]() |
আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী হিসেবে এবারের মতো দায়িত্বের শেষ দিকে মোস্তাফা জব্বার। প্রায় ৫ বছর আগে যখন দ্বিতীয়বারের মতো মন্ত্রীর দায়িত্বে আসেন ওইদিনই টেকশহরের মুখোমুখিতে নতুন লক্ষ্য ও পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। সময় পেরিয়ে আবারও টেকশহরের মুখোমুখি মোস্তাফা জব্বার, কতখানি বাস্তবায়িত হলো তাঁর সেই লক্ষ্য-পরিকল্পনা, না পারাই বা কী থাকলো ?
সাক্ষাতকার নিয়েছেন আল-আমীন দেওয়ান। প্রথম পর্ব :
টেকশহর : মন্ত্রীত্বে এসে আপনার কোন কাজগুলোকে সাফল্যের তালিকায় রাখবেন ?
মোস্তাফা জব্বার : ডিজিটাল বাংলাদেশ বা স্মার্ট বাংলাদেশ দুটিরই মেরুদণ্ড হলো কানেক্টিভিটি। এই কানেক্টিভিটিকে একটা সিস্টেমেটিক ওয়েতে আনা, সকলের দোরগোড়ায় পৌঁছানো, এই জায়গাটা আমার কাছে সবচেয়ে বড় সাফল্যের মনে হয়। এটা আমি এখন গর্ব করে বলতে পারি, বাংলাদেশের কোনো অঞ্চল নাই যেখানে ফাইবার অপটিক যায়নি। এছাড়া দেশের পুরোটাই, ৯৮ শতাংশ ফোরজি নেটওয়ার্কে আছে।
আমি মন্ত্রীত্বের দায়িত্ব নেয়ার পর, প্রথম বছর ২০১৮ সালে আইসিটি ডিভিশনে অনেক সময় দিয়েছি। আমার নিজের কাছে মনে হয়, তখন আইসিটি ডিভিশনের প্রতি বেশি ঝুঁকে যাওয়ার কারণে টেলিযোগাযোগ বিভাগে যতটা নজর দেয়ার দরকার ছিল সেটা হয়ে উঠেনি। যেটা আমি ২০১৯ সালের মে মাসের পরে টেলিযোগাযোগ বিভাগে পুরো মনযোগ দিতে পেরেছি। যার ফলে আজ এই খাতে ব্যাপক রূপান্তর হয়েছে। একটু খেয়াল করলেই মনে হবে, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের একদেশ-একরেট হতে মোবাইল ডেটা প্যাকেজ পর্যন্ত-কোথায় মনযোগী হয়নি ?
বিশাল কর্মযজ্ঞের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বললে, বাংলাদেশকে স্মার্টফোন তথা প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদকের দেশের তালিকায় নাম লেখানো। যেখানে আমরা আগে ছিলাম শুধুমাত্র আমদানিকারক দেশ। এখন আমরা তা রপ্তানিকারক দেশ। এছাড়া বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, ফোরজির কথা বললামই, ইন্টারনেটের ভ্যাট প্রত্যাহার, ৭৭২টি দূর্গম এলাকায় ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ড সেবা সম্প্রসারণের পদক্ষেপ গ্রহণ, বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মেইল প্রসেসিং ও লজেস্টিক সার্ভিস সেন্টার নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন, ডাক বিভাগে ডাক সেবার পুনর্গঠন ও পুনর্বিন্যাসে উদ্যোগ, টেলিটককে শক্তিশালী করার চেষ্টা, ডাক ভবন ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ ভবন নির্মাণ, টেলিফোন শিল্প সংস্থা আধুনিকায়ন, মোবাইল অপারেটরদের কোয়ালিটি অব সার্ভিস, কলরেটের সমন্বয়, সাইবার মনিটরিং প্রকল্প, তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের উদ্যোগ, খাতওয়ারী নীতিসহায়তা নিশ্চিত করা- এমন অসংখ্য কার্যক্রম, বলা যায় কোথায় হাত দেইনি আমরা !
টেকশহর : এখনও কী কাজ করতে পারেননি বা অসম্পূর্ণ রেখে যাচ্ছেন ?
মোস্তাফা জব্বার : আমি কানেক্টিভিটিতেই আরও কাজ করতে চাই। রাস্তা বানানোই আমার প্রধান কাজ, গাড়ি বানানো আমার কাজ না। এই কানেক্টিভিটির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ হচ্ছে, পুরো দেশে ফাইভজি নেটওয়ার্ক ছড়াতে পারা, প্রত্যেকটি বাড়িতে বাড়িতে ফাইভজি নেটওয়ার্ক যেন যায়। মানুষের যে প্রয়োজনটা এখন, সেটা যে টেলিকম সিস্টেম আছে তা মিট করতে পারছে না। এটা মিনিমাম ফাইভজি পরে তিন-চার বছরের মধ্যে যা সিক্সজিতে চলে যাবে।
ফাইভজি কেন ? এটাও বলি কারণ অনেকের মনে হতে পারে এতো হাইস্পিড ইন্টারনেটে কী হবে ! কিন্তু আমি অবজার্ব করেছি আমাদের দেশের মানুষের প্রতি মুহূর্তে ইন্টানেট লাগে ও গতি লাগে যেখানে তারা নানা ধরণের কাজ করে। পাশাপাশি ফাইভজি রিলেটেড ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলা, ফাইভজির জন্য অ্যাফোর্টেবল ডিভাইসও নিয়ে আসার কাজ রয়েছে।
মোট কথা, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে স্মার্ট হাইওয়ে লাগবেই।
টেকশহর : আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কী প্রার্থী হবেন ?
মোস্তাফা জব্বার : আমাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করবো এই ধারণার মধ্যে রাখেননি। আমাকে যদি প্রধানমন্ত্রী বলেন, হ্যা আপনি নির্বাচন করবেন তাহলে নির্বাচন করবো। আমার এলাকাতে আমার যে পরিমাণ উপস্থিতি আছে, সে অনুপাতে নির্বাচন করলে ডেফিনেটলি জিতে আসবো।
২০০৫ সালে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন ইলেকশন করেন কিন্তু ২০০৬ এ তো আর ইলেকশন হলো না। আমি তখন বলেছিলাম, আমার ইলেকশন করার চেয়ে জরুরি কাজ যেটা সেটা হচ্ছে, আপনার ইলেকশন করা এবং আমি সে কাজটিই করেছি, ওনার ইলেকশন করেছি।
আমি এটা খুব ভালো করে বুঝি, প্রধানমন্ত্রী যদি মনে করেন আমার ইলেকশন করা দরকার এবং আমাকে ডেকে বলেন যে হ্যা, আপনি ইলেকশন করেন তাহলে আমি নিয়শ্চই ইলেকশন করবো।
আমার মনে আছে, তিনি যখন ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসলেন তখন আমার জন্য একটা সুযোগ আসলো, যে ওনাকে আমি কম্পিউটার বিষয়ে খুব সহজে বোঝাতে পারি এবং কম্পিউটার বিষয়ক কিছু কাজ করা যায় কিনা। সেটার একটা কারণও ছিলো যে, ১৯৯৬ সালের ওনার নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে ডিজিটাইজড করতে পেরেছিলাম।
তিনি পারিবারিকভাবেই তথ্যপ্রযুক্তি দিকে ঝোঁকা ছিলেন। তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় যখন নৈনিতালে পড়ে তখন আমার সেগুনবাগিচা অফিসে এসে দেখে গেছে যে, আমার ম্যাকিন্টোস দিয়ে কী কাজ করি, কীভাবে মেরামত করি, কীভাবে চালাই। এটা আর কোনো রাজনীতিবিদের স্বজন তো দূরের কথা, কেউ কখনও এ বিষয়ে ভাবেনি।
এরপর আমরা ১৯৯৬ এ যখন দাবি তুললাম, কম্পিউটারের উপর হতে ভ্যাট-ট্যাক্স তুলতে হবে ওনার পরিবারের সজীব ওয়াজেদ জয়ও এটা সমর্থন করলো।
২০০১ এর পরে তিনি যখন বিরোধী দলের নেত্রী যখন তখন আমি ওনার মিডিয়া টিমে কাজ করতাম। মিডিয়া টিম আমার কাছে স্মরণীয় সময়। পরবর্তীতে আবুল মাল আবদুল মুহিত মিডিয়া টিমের প্রধান ছিলেন, এইচ টি ইমাম, নূহ উল আলম লেনিন ছিলেন। এখন পর্যন্ত কোনো নির্বাচনী ইশতেহারকে যদি বলা হয় সেরা, তাহলে বলতে হবে ২০০৮ এ যে ইশতেহার প্রকাশ করা হয়েছিল সেটা। সেখানে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক একটা অধ্যায় আছে সেটার সমস্ত কিছু দেখেছি আমি। সেগুলো স্মরণীয় সব ইতিহাস । মনে পরে, ২০০৭ সালের ২৬ মার্চ ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণা সম্পর্কে প্রথম নিবন্ধ লিখি এবং ২০০৮ সালের ৬ আগস্ট বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার লিপিবদ্ধ হয়।
২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণাকালে ২০২১ সালে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে পরিচিত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নির্বাচনী ইশতেহার লেখার সময় ৬ ডিসেম্বর এই ঘোষণাটি ইশতেহারে যুক্ত করি। সেটি ১১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের নির্বাহী পরিষদে অনুমোদিত হয় ও তার পরদিন প্রধানমন্ত্রী সেই ইশতেহারটি ঘোষণা করেন। আর ৭ এপ্রিল ২০২২ ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের তৃতীয় সভায় ঘোষণা করা হয় যে, ২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে পরিচিত করাই নয়, এই সময়ে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশের এতটা পথ আসা সম্ভব ছিল না। শেখ হাসিনার সেই অঙ্গীকারটুকু আছে বলেই আজ যথাসময়ে বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ হতে পেরেছে।
মোস্তাফা জব্বার ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি মন্ত্রী হিসেবে প্রথম শপথ নেন। ৩ জানুয়ারি ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান এবং ওই বছরের ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত মন্ত্রী হিসেবে তিনি প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মত ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন।