![]() |
আল-আমীন দেওয়ান : গ্রামীণফোন ও রবিকে নতুন করে ৪০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিটিআরসি।
২ দশমিক ৬ গিগাহার্টজ ব্যান্ডের এই স্পেকট্রামের জন্য বছরখানেক আগে বিটিআরসির কাছে আবেদন করেছিল দুই অপারেটর। অবশেষে এই স্পেকট্রাম বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। ইতোমধ্যে তা ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।
৪০ মেগাহার্টজের মধ্যে জিপি ২০ এবং রবি ২০ মেগাহার্টজ পাবে। যার দাম ঠিক হয় ১৫ বছরের জন্য প্রতি মেগাহার্টজ ৬ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার।
আর এই ‘ডলার’ই এখন অপারেটর দুটির কাছে ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্পেকট্রামের দাম নির্ধারণে ’ডলারকে’ ভিত্তি ধরায় আপত্তি জিপি-রবির।
বিটিআরসি বলছে, ২০২২ সালের নিলামে যে মূল্য ছিল এখনও সেটিই ধরা হয়েছে। দাম পরিশোধের ক্ষেত্রে স্পেকট্রাম বরাদ্দের দিন ডলারের যে দর থাকবে সেই দামে বিনিময় হিসাব করে পরিশোধ করতে হবে।
বিটিআরসি তাদের এসব সিদ্ধান্তের বিষয়ে অপারেটর দুটির মতামত চাইছে।
বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ টেকশহর ডটকমকে বলেন, ‘গ্রামীণফোন ও রবিকে ২০ মেগাহার্টজ করে দেয়া হবে। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
‘তবে তারা যদি এখন মনে করে তারা ডেপ্লয় করতে পারবে না বা এখন এতো টাকা ইনভেস্ট করতে পারবে না-সেক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন রকম। তাই তাদের ওপিনিয়ন চাওনা হচ্ছে। তারা নিতে আপত্তি জানালে সেটা বাতিল করে দেয়া হবে।’ বলছিলেন তিনি।
ডলার ইস্যু প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিটিআরসির এই কমিশনার বলেন, আমরা সবসময় রাষ্ট্রের লাভ-উন্নয়নের বিষয়টি দেখবো। ডলার রেটে যদি টাকার অঙ্ক তাদের কাছে বেশি হয় তাহলে তারা ডলারে পরিশোধ করতে পারে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার টেকশহর ডটকমকে বলছেন, ‘তাদেরকে এই স্পেকট্রাম দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত আমরা ইতোমধ্যে নিয়েছি।’
ডলার ইস্যু বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ডলারের যে রেট সেটাই দিতে হবে। টাকায় দিতে হলে ডলার রেটে দেবে। আমাদের প্রাইস হচ্ছে ডলারে, এটা তো কমানো যায় না।‘
গ্রামীণফোনের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২২ সালের ডলারের রেটের সঙ্গে এখন পার্থক্য অনেক। তখন তারা ডলারের যে রেটে স্পেকট্রাম কিনেছিলেন এখন সেখানে ডলারের রেটে অনেক বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
আর রবির কর্মকর্তারা বলছেন, স্পেকট্রাম তো আমদানি করা পণ্য নয়। এর মূল্য নির্ধারণের ভিত্তি ডলার কেন হবে ?
এই ৪০ মেগাহাটর্জ স্পেকট্রাম বাংলাদেশ ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ লিমিটেডে (বিআইইএল) বরাদ্দ ছিলো। ২০২২ সালের স্পেকট্রাম নিলামের পর জুলাইয়ে তাদের বরাদ্দ বাতিল করা হয়। তখন জিপি ও রবি এই স্পেকট্রাম নিতে আগ্রহ দেখায় এবং আবেদন করে।
এরপর চলতি বছরের ১ আগস্ট টেলিযোগাযোগ বিভাগের সভায় অপারেটর দুটির আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার, ভাইস-চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদসহ টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও বিটিআরসির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিলেন।
জিপির ও রবিকে বরাদ্দ দিতে যাওয়া এই স্পেকট্রামের মেয়াদ থাকছে তাদের ফোরজি লাইসেন্সের মেয়াদ থাকা পর্যন্ত বা ২০৩৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তবে এর মধ্যে অতিরিক্ত সব পাওনা একসঙ্গে পরিশোধ করলে মেয়াদ ২০৩৭ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়বে।
বরাদ্দের পর শুরুতে ১০ শতাংশ দাম পরিশোধের পর বাকি অর্থ ৯টি সমান কিস্তিতে ২০৩৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে পরিশোধ করা যাবে। আর বার্ষিক স্পেকট্রাম চার্জ প্রথম বছরে দিতে হবে না, দ্বিতীয় বছর হতে নিয়মানুযায়ী পরিশোধ করতে হবে।
এরআগে ২০২২ সালের ৩১ মার্চে স্পেকট্রাম নিলামে গ্রামীণফোন ২ দশমিক ৬ গিগাহার্টজ ব্যান্ডে ৬০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম, রবিও ২ দশমিক ৬ গিগাহার্টজ ব্যান্ডে ৬০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম কিনেছিল।
নিলামে ২ দশমিক ৬ গিগাহার্টজে জিপি এবং রবি প্রতি মেগাহাটর্জ স্পেকট্রাম ৬ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলারেই কিনেছিল। সেই সময় (৩১ মার্চ ২০২২) ডলার রেট ছিল ৮৬ দশমিক ১৪ টাকা আর এখন (২৬ আগস্ট ২০২৩) ১০৯ দশমিক ১৯ টাকা। টাকার হিসাবে তা প্রতি ডলারে ২৩ টাকারও বেশি।