অডিটের পাওনা পরিশোধ নিয়ে আপাতত স্বস্তিতে বাংলালিংক

আল-আমীন দেওয়ান : অডিট আপত্তির বিপুল পাওনা দাবি পরিশোধ নিয়ে আপাতত চাপ কাটছে বাংলালিংকের।

অপারেটরটি এই টাকা পরিশোধে বিটিআরসির কাছে যে আর্জি জানিয়েছিল তার অনেকটাই বিবেচনা করছে সরকার।

বাংলালিংকের কাছে এই অডিট ইস্যুতে বিটিআরসির যে পরিমাণ টাকা পাওনা এতে মূল টাকার চেয়ে লেট ফি ও ইন্টারেস্টই বেশি। এখানে অপারেটরটি মূল টাকা পরিশোধ করে লেট ফি ও ইন্টারেস্টের টাকা ছাড় চেয়ে আসছিল।

Techshohor Youtube

আর এ নিয়ে প্রথমে বিরোধ চললেও এখন বিটিআরসি বেশ নমনীয় মনোভাবেই এগুচ্ছে। বিটিআরসি বাংলালিংকের কাছ হতে মূল টাকা নিতে শুরু করেছে। আর লেট ফি ও ইন্টাররেস্টের বিষয়ে আলোচনায় সম্মত হতে পারে।

ডা ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার টেকশহর ডটকমকে বলছেন, ‘বিটিআরসিকে বলা হয়েছে বাংলালিংকের কাছ হতে অডিট আপত্তির পাওনার মূল টাকা গ্রহণ করতে।’

‘বাংলালিংকের আর্জি আমরা যৌক্তিকভাবে যতটুকু সম্ভব বিবেচনা করছি। লেট ফি ও ইন্টাররেস্টের টাকা অংশ পরিশোধ ইস্যুতে তারা আলোচনা করতে পারবে’ বলছিলেন তিনি।

তবে বিটিআরসি এখনও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলালিংককে কিছু জানায়নি।

কার কত পাওনা দাবি ?

অডিট আপত্তিতে বাংলালিংকের কাছে মোট পাওনা দাবি ৮২৩ কোটি ৫ লাখ ৬ হাজার ১৫৫ টাকা। এরমধ্যে বিটিআরসির পাওনা ৮১১ কোটি ৩১ লাখ ৫৬ হাজার ১৭৩ টাকা, এনবিআরের পাওনা ৯ কোটি ১১ লাখ ৫০ হাজার ৩৩০ টাকা এবং যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর বা আরজেএসসির পাওনা ২ কোটি ৬১ লাখ ৯৯ হাজার ৬৫২ টাকা।

যেখানে বিটিআরসির পাওনার মধ্যে মূল পাওনা হলো ৩৮০ কোটি ৫৮ লাখ ৫৭ হাজার ১১২ টাকা । বাকি ৪৩০ কোটি ৭২ লাখ ৯৯ হাজার ২১ টাকা হলো লেট ফি ও ইন্টারেস্ট।

টাকা নেয়া না-নেয়া নিয়ে যা ঘটেছে :

চলতি বছরের ২৬ জুন বাংলালিংককে অডিট আপত্তির টাকা পরিশোধে চিঠি দেয় বিটিআরসি। প্রথমে অপারেটরটিকে ১০ দিনের মধ্যে এই টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়। পরে বাংলালিংক আবেদন করে কিছুটা সময় বাড়িয়ে নেয়।

এরপর বাংলালিংক ২৭ জুলাই ৫০ কোটি টাকা দিতে বিটিআরসিতে গেলে বাংলালিংকের শর্তের কারণে বিটিআরসি তা গ্রহণ করেনি

এরপর ৩ দিনের সময় দিয়ে ৩০ জুলাই বাংলালিংকের কাছে অডিট আপত্তিতে তাদের পুরো পাওনা টাকা চেয়ে চিঠি দেয় বিটিআরসি। এদিন বিকালে বাংলালিংক আবার ৫০ কোটি টাকা নিয়ে যায়।

এবার বাংলালিংকের কোনো শর্ত বিবেচনায় না নিয়ে এই টাকা গ্রহণ করে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি। সেখানে এই টাকা অডিট আপত্তির মধ্যে টুজি লাইসেন্স কেইসে পাওনা দাবির একাংশ হিসেবে নেয়া হয়।

বাংলালিংকের সেই একই আর্জি :

বিটিআরসির প্রথম দফায় পাওনা চাওয়ার চিঠির পর বাংলালিংক যখন ৫০ কোটি টাকা নিয়ে যায় তখন তারা যা বলেছিল, টাকা চেয়ে বিটিআরসির দেয়া সর্বশেষ চিঠির উত্তরেও তাই জানিয়েছে অপারেটরটি।

দুই বারেই বিটিআরসির কাছে বাংলালিংকের বক্তব্য, তারা অডিট আপত্তির মূল টাকাসহ মোট ৪২৭ কোটি ৭৩ লাখ ২৩ হাজার ৮১৯ টাকা ( ৩৮০ কোটি ৫৮ লাখ ৫৭ হাজার ১১২ টাকা মূল এবং ৪৭ কোটি ১৪ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬৭ টাকা অন্যান্য ফি) পরিশোধ করতে চায়।

এরমধ্যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ২০০ কোটি টাকা দেয়া হবে আর বাকি ২২৭ কোটি ৭৩ লাখ ২৩ হাজার ৮১৯ টাকা তারা ২৪টি সমান কিস্তিতে পরিশোধ করবে । তবে তারা এই টাকা দেয়ার ক্ষেত্রে বিটিআরসির কাছে বিলম্ব ফি ছাড়ের দাবি করে যাচ্ছে।

বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট এন্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান টেকশহর ডটকমকে জানান, অডিট আপত্তির ইস্যু নিস্পত্তিতে তারা বিটিআরসির সহযোগিতা পাবেন বলেই আশা করেন।

বাংলালিংকের একাধিক শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, তারা শিগগির দ্বিতীয় দফা আরও ৫০ কিংবা ১০০ কোটি টাকা নিয়ে বিটিআরসিতে যাবেন।

বিটিআরসি অডিট আপত্তির দাবি নিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে ২০২৩ সালের ১৮ মে । এরপর ফাইন্যান্স ডিভিশনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করে বাংলালিংকের কাছে টাকা দাবি করে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি।

*

*

আরও পড়ুন