![]() |
আল-আমীন দেওয়ান : অডিট আপত্তির ৮২৩ কোটি ৫ লাখ টাকা পাওনা দাবির ইস্যুতে ৫০ কোটি টাকা নিয়ে বিটিআরসিতে গিয়েছিল বাংলালিংক।
কিন্তু অপারেটরটি বিটিআরসির এই পাওনা দাবির বিষয়ে সমাধানের কোনো পথে উঠতে পারেনি। বিটিআরসি প্রথম দফায় তাদের এই টাকা গ্রহণ করেনি।
অডিট আপত্তির ‘৮২৩ কোটি ৫ লাখ টাকা’র হিসাবে বিলম্ব ফি’র অঙ্ক নিয়ে বাংলালিংকের আপত্তি। তারা অডিট আপত্তির মূল টাকাসহ মোট ৪২৭ কোটি টাকা পরিশোধ করতে চায়। যার শুরু হিসেবে গত সপ্তাহে ৫০ কোটি টাকা নিয়ে তারা বিটিআরসিতে গিয়েছিল। এর বাইরে থাকা বিলম্ব ফি নিয়ে বিটিআরসির সঙ্গে আলোচনা করে তার অঙ্ক নির্ধারণে আগ্রহী।
বিটিআরসিরও এ বিষয়ে নমনীয় মনোভাব রয়েছে। বাংলালিংকের এই প্রস্তাবে তাদেরও খুব একটা আপত্তি নেই।
তাহলে গোল বাধলো কোথায় ?
বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার রোববার (৩০ জুলাই) টেকশহর ডটকমকে বলেন, ‘বাংলালিংক পুরো টাকা নয়, ৫০ কোটি টাকা নিয়ে আসছিলো। কিন্তু এই টাকার সঙ্গে কিছু শর্তযুক্ত একটি চিঠিও তারা নিয়ে এসেছে। এখন ওই টাকা নেয়ার অর্থ হলো বিটিআরসি ওই শর্ত মেনে নিলো। অডিটের পরে শর্ত দিয়ে চিঠি দেয়ার কোনো কারণ থাকে না। যে টাকা অডিট ফাইন্ড আউট করেছে সেই টাকা তাদের দিতে হবে।’
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার রোববার (৩০ জুলাই) টেকশহর ডটকমকে বলছেন, ‘এটা অডিট অবজেকশনের টাকা। এতে তাদের লেট ফি যুক্ত করা রয়েছে। শুরু হতেই তারা আমাকে এবং বিটিআরসিকেও জানিয়েছে আসল যে টাকা সে টাকায় তাদের কোনো বিরোধ নেই, টাকাটা দিতে তারা সম্মত আছে।’
‘এখন ৫০ কোটি টাকা নিয়ে তারা বিটিআরসিতে গিয়েছে, ওই মূল টাকা দেয়া শুরু করতে। এখানে তারা যে কথা বলে টাকা দিতে চেয়েছে তারমধ্যে কিন্তু আছে। তারা বলছে, পরে হিসাব-নিকাশ হলে এই টাকা ফেরত নেবে তারা। এটা তো হতে পারে না। কারণ আসল টাকা দিলে সেখানে ফেরতের কোনো প্রশ্ন নেই।’ বলছিলেন মন্ত্রী।
মোস্তাফা জব্বার বলেন ‘বাংলালিংক যেটা নোগেশিয়েট করতে চাচ্ছে, লেট ফি সেটা কমবেশি হতে পারে। এখন লেট ফি নোগোশিয়েট করার আগে আসল টাকা নিয়েই যদি শর্ত দেয়া হয়, সেটা তো বিটিআরসি মানবে না।’
বাংলালিংকের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা শনিবার (২৯ জুলাই) বলছেন, তারা অডিট আপত্তির মূল টাকাসহ মোট ৪২৭ কোটি টাকা পরিশোধ করতে চান। এরমধ্যে এখন ২০০ কোটি টাকা আর বাকি ২২৭ কোটি টাকা তারা কিস্তিতে দেবেন। আর এই প্রক্রিয়া শুরু করতেই তারা ৫০ কোটি টাকা নিয়ে বিটিআরসিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিটিআরসি তাদের ফিরিয়ে দিয়েছে।
বাংলালিংক কর্মকর্তারা বলছেন, তারা কোনো বিরোধ নয় বরং পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতেই বিষয়টি সমাধান করতে চান।
এরআগে চলতি বছরের ২৬ জুন বাংলালিংককে অডিট আপত্তির টাকা পরিশোধে চিঠি দেয় বিটিআরসি। প্রথমে অপারেটরটিকে ১০ দিনের মধ্যে এই টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়। পরে বাংলালিংক আবেদন করে কিছুটা সময় বাড়িয়ে নেয়।
বিটিআরসি ৮২৩ কোটি ৫ লাখ টাকা অডিট আপত্তির দাবি নিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে ২০২৩ সালের ১৮ মে । এরপর ফাইন্যান্স ডিভিশনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করে বাংলালিংকের কাছে টাকা দাবি করে বিটিআরসি।
অডিটের শুরু হতে শেষ :
অডিটর নিয়োগের পর ১ বছর ৯ মাস লেগেছে এই অডিট করা এবং প্রতিবেদন চুড়ান্ত করতে। মেসার্স মসিহ মুহিত হক অ্যান্ড কোং এবং এএনবি সলিউশনস এর জয়েন্ট ভেঞ্চার বাংলালিংকের অডিট করেছে।
অডিটর নিয়োগের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছিলো ২০২১ সালের ২৬ আগস্ট। বিটিআরসির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী এই অডিট শেষ করার কথা ছিলো ২০২২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। এরপর চার দফা সময় বাড়িয়ে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ঠেকে।
বাংলালিংকের এই অডিট করতে মসিহ মুহিত হক এন্ড কোম্পানিকে ৮ কোটি ৭৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে বিটিআরসিকে।
কোম্পানিটি ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর প্রথম ইনসেপশন প্রতিবেদন দেয়, এরপর এটির সংশোধিত প্রতিবেদন আসে ওই বছরের ১৮ অক্টোবর। প্রথম প্রগ্রেস প্রতিবেদন দেয় ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর যার সংশোধিত প্রতিবেদন আসে ২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি।
দ্বিতীয় প্রগ্রেস প্রতিবেদন দেয় ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি, তৃতীয় প্রগ্রেস প্রতিবেদন ২৭ মার্চ, চতুর্থ প্রতিবেদন ২০ জুন, পঞ্চম ২৯ সেপ্টেম্বর। এরপর ড্রাফট রিপোর্ট আসে ৬ অক্টোবর, যার তিনটি সংশোধন প্রতিবেদন দেয়া হয় যথাক্রমে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি, ১০ জানুয়ারি এবং ১৭ জানুয়ারি।
এরপর ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি চুড়ান্ত খসড়া রিপোর্টে চুড়ান্ত মতামতের জন্য বাংলালিংকের কাছে অডিটের বিস্তারিত পাঠানো হয়। বাংলালিংক মতামতের জন্য বাড়তি সময় চায় এবং বাড়তি সময়ের শেষ দিন ১৫ ফেব্রুয়ারি মতামত দাখিল করে। এরপর আরও একটি মতামত দেয় অপারেটরটি। পরে এসব মতামত নিয়ে ১৩ মার্চ অডিট কোম্পানি বিস্তারিত পর্যালোচনা জানায় বিটিআরসিকে। বিটিআরসি অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা সভা শেষে ১১ এপ্রিল অডিটর-বাংলালিংকসহ ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে চুড়ান্ত খসড়া প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা করে।
বিটিআরসি অডিটরের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়, অডিটর-বাংলালিংকসহ ত্রিপক্ষীয় এবং অভ্যন্তরীণ সবমিলে ২৮ টি বৈঠক করেছে।