![]() |
টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : বাংলাদেশে ২৫ বছরের যাত্রা সম্পন্ন করেছে হুয়াওয়ে। প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি ঢাকায় হুয়াওয়ে বাংলাদেশের রজত জয়ন্তী উদযাপন করে।
‘২৫ ইয়ারস অব টুগেদারনেস, জার্নি অব ট্রাস্ট, সাপোর্ট অ্যান্ড এমপাওয়ারিং বাংলাদেশ’- এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন হুয়াওয়ে বাংলাদেশের সিইও ও হুয়াওয়ে সাউথ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্যান জুনফেং।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান এমপি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার, আইসিটি বিভাগ সচিব মোঃ শামসুল আরেফিন, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, এবং চট্টগ্রাম এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন টেলিকম অপারেটরগুলোর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, অন্যান্য খাতের স্টেকহোল্ডার ও সহযোগীগণ।
অনুষ্ঠানে প্যান জুনফেং বলেন, উদীয়মান অর্থনীতি হিসেবে বিকাশের পথে আমরা সবসময় বাংলাদেশের পাশে ছিলাম। বাংলাদেশে আইসিটি ক্ষেত্রে উন্নয়ন, টেলিকম সেক্টরের বিকাশ, কর্মসংস্থান তৈরি, লিঙ্গসমতা নিশ্চিত করা ও আইসিটি ট্যালেন্ট ইকোসিস্টেমের উন্নয়ন ছাড়াও আমরা গত ২৫ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছি। তাদের ওপর আস্থা রাখায় বাংলাদেশের দেশের মানুষের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান প্যান।
স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়ন ও ডিজিটাল রূপান্তরে কাজ করে যাবেন বলেও তিনি জানান।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এম. এ. মান্নান বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার সকল কার্যক্রমের জন্য ঢাকাকে সদর দপ্তর হিসেবে বেছে নেওয়ার জন্য আমি হুয়াওয়েকে বিশেষভাবে অভিনন্দন জানাই। আমি হুয়াওয়ের সাফল্য কামনা করছি।
অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, “স্মার্ট বাংলাদেশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সংযুক্তি। আমরা ইতোমধ্যে বাংলাদেশের শতকরা ৯৮ ভাগ অঞ্চল ফোরজি নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে পেরেছি। আমাদের ডিজিটাল কানেক্টিভিটির ক্ষেত্রে যে রূপান্তরটা হয়েছে এর পেছনে হুয়াওয়ের অবদান নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। আমরা সর্বশেষ ফাইভজি চালু করেছি হুয়াওয়ের সহযোগিতায়।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন বলেন, “ডিজিটাল অবকাঠামো, অর্থনীতি ও সমাজের বিকাশে হুয়াওয়ের অটল প্রতিশ্রুতি আমরা বাংলাদেশের জন্য যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি, তার সাথে সম্পূর্ণভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
বাংলাদেশে হুয়াওয়ের সূচনালগ্ন থেকেই প্রতিষ্ঠানটি এ দেশের টেলিকমিউনিকেশন ক্ষেত্রের উন্নয়নে ভূমিকা রেখে আসছে। ‘ইন বাংলাদেশ, ফর বাংলাদেশ’ এই মূলমন্ত্র দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে হুয়াওয়ে ১৯৯৮ সাল থেকে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও ডিজিটাল রূপান্তরে যথাসম্ভব অবদান রেখে চলেছে। প্রতিষ্ঠানটি গত ২৫ বছর ধরে আইসিটি ও টেলিযোগাযোগ খাতে বিভিন্ন সেবা ও উদ্ভাবনী সমাধান, আইসিটি দক্ষতা উন্নয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ইকোসিস্টেম বিকাশ ও মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে।
টেলিকম খাতের জন্য টুজি, থ্রিজি ও ফোরজি প্রযুক্তি সহজলভ্য করতে ও ফাইভজি প্রযুক্তির অধিগ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে হুয়াওয়ে। ২০১৮ সালে দেশ যখন মাত্র ফোরজি যুগে প্রবেশ করেছে তখন প্রতিষ্ঠানটি ফাইভজি ট্রায়াল সম্পন্ন করে। একই সাথে, প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালে ফাইভজি প্রযুক্তি উন্মোচনের ক্ষেত্রে বিশ্বের অগ্রগামী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে টেলিটককে সহযোগিতা করে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা ২০২৩ -এ প্রতিষ্ঠানটি সর্বাধুনিক ৫.৫জি প্রযুক্তি ও এই খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইউজ কেস (ডিজিটাল রূপান্তর) প্রদর্শন করে। এছাড়া, হুয়াওয়ে ফাইবারের মাধ্যমে ১৫ হাজারেরও বেশি বেইজ ট্রান্সসিভার স্টেশনে (বিটিএস) সংযুক্ত করতে সহযোগিতা করেছে।
বাংলাদেশের আইসিটি কাঠামোর অগ্রগতিতেও হুয়াওয়ে এর প্রযুক্তি দিয়ে বাংলাদেশের সহযোগিতা করেছে। ইনফো-সরকার ২ এবং ইনফো-সরকার ৩ প্রকল্প বাস্তবায়নে হুয়াওয়ে বাংলাদেশের আইসিটি বিভাগকে সহযোগিতা করেছে। এসব প্রকল্পে হুয়াওয়ে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ফাইবার অপ্টিক্যাল কানেকশন ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সহজলভ্য করতে কাজ করেছে। এর ফলে বাংলাদেশের ৪৯৫টি উপজেলা এখন ইন্টারনেটের সাথে কানেক্টেড।
২০১৮ সালে হুয়াওয়ে বাংলাদেশে ‘ডিজিটাল পাওয়ার’ সেবা দেয়া শুরু করে এবং ময়মনসিংহে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ একাধিক বৃহৎ আকারের আইপিপি এবং রুফটপ সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। এখন পর্যন্ত, হুয়াওয়ে এর নিজস্ব সরঞ্জামের মাধ্যমে প্রায় ৩৮০ মিলিয়ন ইউনিট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে করতে সাহায্য করেছে যার ফলে ১৮০ হাজার টন কার্বন নিঃসরণ কমেছে, যা ২৫০ হাজার গাছ লাগানোর সমান।
পরবর্তীতে বাংলাদেশের ডিজিটাল যাত্রাকে আরও ত্বরান্বিত করতে ২০১৯ সালে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে হুয়াওয়ে ক্লাউড। এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে ক্লাউডের সাথে যুক্ত রয়েছে। এই ক্লাউড সেবার মধ্যে রয়েছে ষ্টোরেজ, সফটওয়্যার অ্যাজ এ সার্ভিস (স্যাপ), প্ল্যাটফর্ম অ্যাজ এ সার্ভিস (প্যাস), ইলাষ্টিক ক্লাউড সার্ভার, ইলাষ্টিক আইপি, অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিকগনিশনের মত আধুনিক সব সুবিধা যা বাংলাদেশের সকল ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ডিজিটালাইজেশনের জন্য অনেক গুরুত্বপুর্ণ।
এছাড়া, ফাইন্যান্স, শিক্ষা, গভর্ন্যান্স, স্বাস্থ্য, মিডিয়া, উৎপাদন, পরিবহণ ও অন্যান্য খাতের জন্য সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার ও এআই-নির্ভর ক্লাউড সল্যুশন প্রদান করছে হুয়াওয়ে।
বাংলাদেশের তরুণদের আইসিটি ক্ষেত্রে প্রতিভা বিকাশে গত দশ বছর ধরে সিডস ফর দ্য ফিউচার পরিচালনা করে আসছে হুয়াওয়ে, এর পাশাপাশি আইসিটি বাস, উইমেন ইন টেক, আইসিটি স্কিলস কম্পিটিশন পরিচালনা করে আসছে হুয়াওয়ে। এসব প্রোগ্রামের মাধ্যমে তরুণদের আইসিটি সম্পর্কে ব্যবহারিক জ্ঞান বৃদ্ধি পাচ্ছে যা বাংলাদেশে একটি দক্ষ আইসিটি ট্যালেন্ট ইকোসিষ্টেম গড়ে উঠতে সাহায্য করছে।
এই পর্যন্ত প্রায় এক লক্ষেরও বেশি শিক্ষার্থী এইসব প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে নিজেদের দক্ষতা অর্জন করেছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশে বুয়েট সহ মোট ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইসিটি একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছে। স্টার্টআপদের জন্য তৈরি করেছে হুয়াওয়ে ইনকিউবেটর। যা তাঁদের বিকাশে সাহায্য করছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ লক্ষ্য অর্জনে অন্যতম পার্টনার হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছে হুয়াওয়ে। বর্তমানে স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১ কে সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। হুয়াওয়ে এই লক্ষ্য অর্জনেও প্রযুক্তিক্ষেত্রে বাংলাদেশের নির্ভরযোগ্য পার্টনার হিসেবে পাশে থাকার অঙ্গীকার প্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যে হুয়াওয়ে বাংলাদেশকে সাউথ এশিয়ার হেডকোয়ার্টার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।