![]() |
টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : অদম্য তরুণ বাহার উদ্দিন রায়হান। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতকোত্তর পাশ করেছেন। কখনো কল্পনাই করতে পারেননি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তাঁর হাতে নিয়োগপত্র তুলে দিবেন।
প্রতিমন্ত্রী আইসিটি বিভাগের এনহান্সিং ডিজিটাল গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ইকোনমি প্রকল্পের সকল প্রশিক্ষণে সমন্বয় করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস (পিএমআইএস) এর ‘প্রশিক্ষণ সমন্বয়ক’ পদে তার চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন।
আইসিটি টাওয়ারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর সম্মেলন কক্ষে যখন নিয়োগপত্রটি কক্সবাজারের চকরিয়ার লক্কারচরের ২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বাহার উদ্দিনের হাতে তুলে দেওয়া হয় তখন আবেগে ভারাক্রান্ত পরিবেশ তৈরি হয় । রায়হান এখন নিশ্চিন্ত, এখন মাকে নিয়ে একসাথে থাকতে পারবে।
২০০৪ সালের ৩০ অক্টোবর বাহার উদ্দিন যখন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র তখন বাড়ির পাশে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে বসানো ট্রান্সফরমারে একটি ছোট্ট পাখি ঢুকে পড়ে। সেই পাখি দেখতে গিয়ে বৈদ্যুতিক তারে হাত দিতেই ঝলসে যায় তাঁর দুই হাত। সেই থেকে তাঁর এক হাত নেই, আরেক হাত আছে কনুই পর্যন্ত।
মুখে কলম আটকে কনুইয়ের সাহায্যে পরীক্ষা দিয়ে এসএসসি, এইচএসসি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর পাস করেছেন।
বাহার মোটর সাইকেল চালাতে পারে। মুখে কলম আটকে কনুইয়ের সাহায্যে কম্পিউটারে টাইপ করতে পারে। কিন্তু চাকুরি দেওয়ার জন্য যারা যোগাযোগ করেছে তারা চাকরি দেয়ার আস্থা পায়নি শুধু দুই হাত নেই বলে। তাদের একটাই ধারণা হাতের সাহায্য ছাড়া চাকরি করা সম্ভব না। কিন্তু আজ চাকুরি পেয়ে অশ্রুভরা নয়নে কৃতজ্ঞতা জানান প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের প্রতি।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে কোনো অস্ত্র ছাড়াই বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ যেমন যুদ্ধে জিতেছেন তেমনি এক অদম্য যোদ্ধার নাম বাহার। ইচ্ছাশক্তি প্রবল থাকলে কোনো প্রতিকূলতাই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। বাহার উদ্দিন আমাদের সামনে উজ্জ্বলতম একটি দৃষ্টান্ত। দুই হাত নেই অথচ মুখে কলম আটকে খাতায় লিখে পরীক্ষা দিয়ে স্নাতকোত্তর পাস করেছে, অর্জন করেছে দক্ষতা।
তিনি বলেন, আমরা যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই, সে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে উদ্ভাবনী, বুদ্ধিদীপ্ত, সাহসী, সংগ্রামী। কোন বাধায় নিজেরা দুর্বল হবে না এবং শারীরিক কোন বাধায় তাদের জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারবে না।
তিনি আরো বলেন, ইডিজিই প্রকল্প হতে যে ১ লক্ষ তরুণকে অগ্রসরমান প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে বাহার তাদের জন্য প্রেরণার উৎস। এটা সম্ভব হয়েছে তাঁর মধ্যে থাকা প্রবল ইচ্ছাশক্তি এবং অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলার মানসিকতার কারণে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক রনজিৎ কুমার, আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ, ইডিজিই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মুহম্মদ মেহেদী হাসান, পলিসি অ্যাডভাইজার আব্দুল বারী, কম্পোনেন্ট টিম লিডার ড. মাহফুজুর ইসলাম শামীমসহ আইসিটি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।