কিশোরদের জন্য হরাইজন ওয়ার্ল্ড অ্যাপ উন্মুক্ত করা নিয়ে সমালোচনায় মেটা


টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর: সুশীল সমাজ ও আইনপ্রনেতাদের আপত্তি সত্বেও কিশোর তরুণদের জন্য ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অ্যাপ হরাইজন ওয়ার্ল্ড উন্মুক্ত করে দিচ্ছে মেটা। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা এই অ্যাপটি শিশু-কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। এ নিয়ে তীব্র সমালোচনার মধ্যে রয়েছে ফেসবুক স্বত্বাধিকারী কোম্পানিটি।

গত মঙ্গলবার সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট মেটার পক্ষ থেকে বলা হয়, আগামি কয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রথমবারের মতো কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ বছর বয়সী শিশুরা হরাইজন ওয়ার্ল্ডসের স্বাদ পেতে যাচ্ছে। অ্যাপটি ইতোমধ্যে ১৭ বছর বয়সের বেশি শিশুরা ব্যবহার করতে পারছে। এটি মেটার সিইও মার্ক জুকারবার্গের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ইন্টারনেট লক্ষ্যের প্রতিফলন; যেখানে ব্যবহারকারীরা বাস্তব জগতের মতোই ভার্চুয়াল জগতেও পরস্পরের সাথে সরাসরি দেখা করতে পারবে।

এক ব্লগ পোস্টে মেটার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কিশোর-কিশোরীরা নতুন বিশ্ব উন্মোচন করতে পারবে। অ্যারেনা ক্লাশ এবং জায়ান্ট মিনি প্যাডল গলফের মতো গেমস খেলতে পারবে। শুধু তাই নয় সরাসরি কনসার্ট এবং কৌতুকের অনুষ্ঠান দেখতে পারবে। পুরো বিশ্বের সাথে যোগাযোগের পাশাপাশি তৈরি করতে পারবে নিজস্ব ভার্চুয়াল জগত।’

Techshohor Youtube

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার তৈরির পেছনে শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছেন জাকারবার্গ। শুধু তাই নয় এই ক্ষেত্রে মনোযোগ দিতে ব্যবসার অন্যান্য অংশে গুরুত্ব কমিয়ে দেয়া হয়েছে। শুধুমাত্র গত বছরই রিয়েলিটি ল্যাবস সেগমেন্টে এক হাজার ৬০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে কোম্পানিটি। সেইসাথে বিনিয়োগকারীদেরকে এখান থেকে খুব শিগগিরই মুনাফা প্রত্যাশা না করার বিষয়ে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।

হরাইজন ওয়ার্ল্ড নিয়ে মেটার সাম্প্রতিক পদক্ষেপে বোঝা যাচ্ছে তারা জনসংখ্যার প্রাথমিক গ্রহনকারীদের ধারণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু মেটার এ সংক্রান্ত ঘোষণার পরপরই আইনপ্রনেতারা তীব্র সমালোচনা করছেন কারণ তারা এর আগেই কোম্পানিটিকে পরিকল্পনা বাতিলের অনুরুধ করেছিলেন।

কানেক্টিকাট ডেমোক্রেটিকস সেন.রিচার্ড ব্লুমেন্থল এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘নিজেদের ঝিমিয়ে পড়া প্লাটফর্ম চাঙ্গা করতে তরুন কিশোর-কিশোরীদেরকে হরাইজন ওয়ার্ল্ডে প্রলুদ্ধ করার চেষ্টা করছে মেটা।’ উল্লেখ্য, গত মাসেই জাকারবার্গকে এই অ্যাপটি কিশোরদের কাছে উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা পুনরায় ভেবে দেখার অনুরোধ জানিয়েছিলেন ব্লুমেন্থল।

এর আগে তরুণদের ওপর ইনস্টাগ্রামসহ মেটার আরো কিছু পণ্যের প্রভাব নিয়ে আইনপ্রনেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।
ম্যাসাচুয়েটস ডেমোক্রেটিক এডওয়ার্ড মার্কিং মেটাকে ‘ডিজিটাল বিপর্যয় আমন্ত্রন’ জানাচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে বলেন, ‘শিশু-কিশোরদের সুরক্ষায় ব্যর্থতার ক্ষেত্রে মেটার আগেও ব্যর্থতার রেকর্ড রয়েছে। আমি কোম্পানিটিকে খুব দ্রুত এই নীতি পরিবর্তনের আহ্বান জানাচ্ছি।’

সুশীল সমাজের পক্ষ থেকেও মেটাকে একই ধরনের অনুরোধ করা হয়েছে। গত সপ্তাহে কয়েক ডজন সিভিল সোসাইটি গ্রুপের লেখা এক খোলা চিঠিতে বলা হয়েছে, মেটার ভিআর প্রযুক্তিতে বায়োমেট্রিকসহ অন্যান্য তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া নতুন করে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। শুধু তাই নয় এটি অন্যায় ও প্রতারণামূলক বিপণনের নতুন ধরণ।

এদিকে মেটা বলছে পর্যাপ্ত সুরক্ষাবলয় রেখেই কিশোরদের কাছে হরাইজন ওয়ার্ল্ড উন্মুক্ত করা হবে। ডিফল্ট সেটিংস ব্যবহার করে অন্যান্য ব্যবহারকারীদের কাছে কিশোরদের প্রোফাইল ও কার্যক্রম কম দৃশ্যমান করা হবে। এছাড়া সম্ভাব্য ম্যাচিউর ভার্চুয়াল স্পেসগুলোয় কনটেন্ট রেটিং যুক্ত করা হবে। অভিভাবক এবং নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েই নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাগুলো নেয়া হয়েছে।

মেটার গ্লোবাল অ্যার্ফেয়ার্স বিভাগের প্রেসিডেন্ট নিক ক্লেগ সিএনএনকে জানিয়েছেন, আমার ধারণা কেউ মনে করছে না যে আমাদের দিক থেকে বন্যার গেট খুলে দেয়ার কোন প্রবণতা নেই। সত্যিকার অর্থেই আমরা এমনটি করতে পারি না।’

সিএনএন/আরএপি

*

*

আরও পড়ুন