চ্যাটজিপিটি: শিক্ষার্থীদের জন্য ইতিবাচক না নেতিবাচক ?

টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর: চ্যাটজিপিটির মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত প্রযুক্তি (এআই) এখন স্কুলের শিক্ষার্থীদের হাতেও পৌঁছে গিয়েছে। শিক্ষার ওপর এর একটি প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করছেন শিক্ষকরা। শিক্ষকদের মধ্যে অনেকে মনে করেন এই প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদর জন্য নিষিদ্ধ করা উচিত। আবার কারো মতে জটিল চিন্তা ও সৃজনশীলতার দিক বিবেচনা করে একে শিক্ষার অংশ করে নেয়া উচিত।

শিক্ষার্থীরা চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে তাদের অ্যাসাইনমেন্টের কাজ করবে এমন শঙ্কা এখন পর্যন্ত মাধ্যমিক পরবর্তী স্তর পর্যন্ত সীমিত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এআই গবেষণাধর্মী কোম্পানি ওপেনএআইয়ের তৈরি চ্যাটজিপিটি মানুষের মতো প্রতিক্রিয়া করে খুব দ্রুত যে কোন বিষয়ে উত্তর দিতে পারে। প্রাইমারি ও হাইস্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের এ প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে আবার শ্রেণীকক্ষে এই প্রযুক্তি নিয়ে আসার পক্ষে।

তথ্য ও নানারকম টুলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সমৃদ্ধ করতে হবে

Techshohor Youtube

কানাডার হাইস্কুল শিক্ষক জেমি মিশেল বলেছেন, যে কোন প্রযুক্তির আবির্ভাব হওয়ার পর তা নিয়ে নানা রকম কথা হয়। শিক্ষাগত প্রযুক্তি টুলগুলোর ক্ষেত্রেও এমনটা দেখা যায়। মিশেল জানেন নির্দিষ্ট কিছু ক্লাসে ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে হয়। এদিক থেকে বিচার করলে তিনি বিশ্বাস করেন চ্যাটজিপিটিও কিছু সীমাবদ্ধতার মধ্যে একটি চমকপ্রদ উদ্ভাবন হবে। বিষয়টি নিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে এভাবেই কথা বলেছেন।

সবজায়গাতেই এখন চ্যাটজিপিটি, তাই শিক্ষার্থীদেরকে বিষয়টি বোঝাতে হবে
কানাডার শিক্ষক মিশেল এআই বটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে ক্যালকুলাস সমাধান করতে দিয়েছিলেন। সেখান থেকে পাওয়া উত্তর তিনি শিক্ষার্থীদেরকে পুনঃমূল্যায়ন করতে বলেন। মিশেল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ক্যালকুলাসের প্রথমধাপটি খুব চমৎকারভাবে শেষ করে এআই টুলটি। কিন্তু কয়েকধাপ অতিক্রমের পর এটি রীতিমতো পাগলের মতো আচরন করতে থাকে। ক্যালকুলাসের ভুল সমাধান করে। ’
তিনি আরো বলেন, ক্যালকুলাস বোঝে না এমন ব্যাক্তিদের বোকা বানানোর জন্য এ টুলটি যথেষ্ট। আমার শিক্ষার্থীরা বিষয়টি খুব ভালোভাবে জানার কারণে তারা চ্যাটজিপিটির ভুল ধরে ফেলেছে।
কোন শিক্ষার্থী যদি চ্যাটজিপিটি থেকে অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করে তাহলে এটি হবে কথোপকথন।
মিশেল তার শিক্ষার্থীদের সাথে চ্যাটজিপিটি বটটির ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। কখন এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে কখন যাবে না। তবে তিনি বিশ্বাস করেন যে চ্যাপজিপিটির ব্যবহার নিষিদ্ধ করলে তা কার্যকর হবে।

তিনি আরো বলেছেন, ‘প্রযুক্তি নিরলসভাবে এগিয়ে যাবে। আমরা যদি সঠিক প্রযুক্তি দিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে সজ্জিত না করি (কখন, কোথায়, কিভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে সে সম্পর্কে না বোঝাই) তাহলে আমরা তাদের একটি বড় ক্ষতি করছি।’

শেখার প্রেরণা কোথায়?

লেখক ও শিক্ষাবিদ মিন্ডি বিংহ্যাম তার নয় বছর বয়সী নাতির কাছে সর্বপ্রথম চ্যাটজিপিটির কথা শুনেন। পরবর্তীতে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেন।

বিংহ্যাম বলেছেন, ‘ছোট শিশুদের জন্য এটি পুরো বিশ্ব। তারা যখন এর ক্ষমতা বোঝতে পারবে তখন তাদের মধ্যে শিক্ষা গ্রহনের আগ্রহ কমে আসবে। মেশিন যেখানে সব কিছু প্রস্তুত করে রাখবে সেখানে কেন তারা কষ্ট করে শিখতে যাবে?’

চ্যাটজিপিটি অতিসম্প্রতি আবির্ভুত হয়েছে। অনেক শিক্ষাবিদই এটি সম্পর্কে কিছুই জানে না। মৌলিক জ্ঞান সম্পর্কে এখন পর্যন্ত শক্ত ভিত্তি তৈরি হয় নি প্রযুক্তি নির্ভরশীল এমন শিক্ষার্থীদের নিয়ে আশঙ্কা করছেন বিংহ্যামের মতো শিক্ষাবিদরা।
বিংহ্যাম মনে করেন ডিজিটাল টুলগুলো শিক্ষার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকায় থাকতে পারে; কখনো এর বিকল্প হতে পারে না। তিনি মনে করেন প্রাথমিক স্কুলগুলোয় এই প্রযুক্তি নিষিদ্ধ করা উচিত।

সিবিসি/আরএপি

*

*