![]() |
টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : চীনা কোম্পানি বাইটডান্সের মালিকানাধিন জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটক বর্তমানে চরম চ্যালেঞ্জের সময় অতিক্রম করছে। বিশ্বের অনেক দেশই কোম্পানিটির বিরুদ্ধে খড়ঙগহস্ত হয়ে উঠেছে, সরকারের দেয়া ফোনগুলোয় টিকটক অ্যাপ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসব দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র আবার একধাপ এগিয়ে। সম্প্রতি টিকটককে হুমকি দিয়ে দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে কোম্পানিটি যদি চীনের মালিকানাতে থেকে যায় তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে পুরোপুরি নিষিদ্ধ হবে।
টিকটকের বিরুদ্ধে কি কি নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে
শর্ট ভিডিও তৈরি ও শেয়ার করার প্লাটফর্ম টিকটক চালু হয় ২০১৬ সালে । বর্তমানে এটি বিশ্বে জনপ্রিয় ইন্টারনেট সেবার তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে। মাসে প্লাটফর্মটির সক্রিয় ব্যবহারকারীরর সংখ্যা এক বিলিয়ন। কিন্তু চীন সরকারের কাছে ব্যবহারকারীরর তথ্য পাচার ও নিরাপত্তা লঙ্ঘনের অভিযোগে অনেক দেশই সরকারি ডিভাইসে অ্যাপটি নিষিদ্ধ করেছে। এসব দেশের তালিকায় কানাডা, বেলজিয়াম,ডেনমার্ক, নিউজিল্যান্ড, তাইওয়ান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে। ইউরোপিয় ইউনিয়নের (ইইউ) পক্ষ থেকেও তাদের কর্মীদেরকে সংস্থার ইস্যু করা ডিভাইস থেকে টিকটকের অ্যাপ ডিলিট করে দেয়ার নিদের্শ দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় কর্মীদের ব্যক্তিগত ডিভাইসে যদি অফিসিয়াল অ্যাপ ইনস্টল করা থাকে সেখানেও টিকটক ব্যবহার করা যাবে না বলে জানিয়েছে ইইউ।
নিরাপত্তাজনিত শঙ্কা থেকে ভারতে অনেক আগে থেকেই টিকটক নিষিদ্ধ। তরুনদের ‘বিপথগামী’ হওয়া থেকে রক্ষা করতে আফগানিস্তানও এটি নিষিদ্ধ করেছে।
টিকটককে নিরাপত্তার ঝুঁকি হিসেবে দেখা হচ্ছে কেন
ফেসবুক,ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহারকারীদের যে ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে টিকটকও একইধরনের তথ্য নিয়ে থাকে। এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছে ব্যবহারকারীরর নাম, বয়স, ফোন নম্বর,ইমেইল এড্রেস ও ছবি।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের পরিচালক ক্রিস ওয়ারি ২০১৭ সালে প্রণীত ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স ল’র বিষয়টি উল্লেখ করে বলেছেন, এখানে বলা হয়েছে কোম্পানিগুলোকে সরকার যা চায় সে অনুযায়ি তথ্য দেখাতে হবে অথবা চীনা সরকারের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে হবে।’
টিকটকের একটি টুল রয়েছে যা দেখার জন্য ব্যবহারকারীদেরকে কিছু ভিডিও সুপারিশ করে। এটি ‘ফর ইউ’ ফিড নামে পরিচিত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ফেসবুক অথবা ইউটিউবের এ ধরনের সেবার তুলনায় এটি অনেক ভালো।
ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের ইনফরমেশন সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের ডা মারিয়ম মেহরনেজাদ বলেছেন, ‘টিকটক ব্যবহারকারীদের কনটেন্ট দেখানোর ক্ষেত্রে আরো জটিল মডেল রয়েছে। যার ফলে সহজেই অপতথ্য ছড়ানো যায়। এসব তথ্য কে ছড়িয়েছে তা খুঁজে বের করাও কঠিন।
চীনের আরো কোন কোন প্রযুক্তি কোম্পানি নিশানায় রয়েছে
হুয়াওয়ে, জেডটিই এবং হায়েত্রার মতো ফাইভজি প্রযুক্তিতে বিশেষজ্ঞ চীনা কোম্পানিগুলোকে নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম ইনস্টল করা থেকে নিষিদ্ধ করেছে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান , ভারত ও কানাডা। অন্যদিকে ২০২৭ সালের মধ্যে ফাইভজি নেটওয়ার্ক থেকে হুয়াওয়ের তৈরি সব সরঞ্জাম সরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার।
যুক্তরাষ্ট্র ও নেদারল্যান্ডস সরকার চীনে সেমিকন্ডাক্টর রফতানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এসব দেশ চীনের সুপারকম্পিউটিং ও এআই প্রযুক্তির উন্নয়ন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে। এছাড়া সংবেদনশীল অঞ্চলগুলো থেকে চীনের নির্মিত নিরাপত্তা ক্যামেরা সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া সরকার।
নিষেধাজ্ঞার অন্তরালে কি
বিভিন্ন দেশের আশঙ্কা চীনা কোম্পানিগুলোর সরবরাহ করা ফাইভজি সরঞ্জামগুলো মূলত বেইজিং সরকারের কাছে তথ্য পাচারের হাতিয়ার। এমনকি সিকিউরিটি ক্যামেরা নির্াতা বিশ্বের বৃহত্তম কোম্পানি চীন ভিত্তিক হিকভিশনও চীন সরকারের হয়ে কাজ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অধ্যাপক অ্যান্ডারসন বলেছেন, ‘কেন তারা এই ব্যাকডোর অ্যাকসেস রাখবে না । পশ্চিমা দেশগুলো যখন বিশ্বজুড়ে টেলিফোন নেটওয়ার্ক তৈরি করে তখন থেকেই হুবছর ধরে এ কাজ করে আসছে।
তবে চীনা কোম্পানিগুলো যে গুপ্তচরবৃত্তি করছে এমন কোন শক্তপোক্ত প্রমান পাওয়া যায় নি বলে জানিয়েছেন ইন্টারনেট সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠান ইএসইটির বৈশ্বিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জ্যাক মোর। তিনি বলেছেন, ‘হুয়াওয়ের ও টিকটকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এতো বড় হয়েছে যে তারা বিপুল পরিমান তথ্য হ্যাক করতে পারবে ও জাতীয় নিরাপত্তা লঙ্ঘন করবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। ফলে পরবর্তীতে নয় এখনই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
বর্তমান পরিস্থিতি চীন কিভাবে দেখছে
টিকটক ও অন্যান্য প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে দেয়া নিষেধাজ্ঞাকে ‘রাজনৈতিক নাটক’ হিসেবে উল্লেখ করেছে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়। মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অন্যান্য দেশের কোম্পানিগুলোকে নিষ্পেশন করতে জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগকে ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মতো টিকটক ব্যবহারকারীদের খুব বেশি তথ্য নেয় না।
অবশ্য ২০২২ সালে কোম্পানিটি স্বীকার করে ইউরোপে সংগ্রহ করা ব্যবহারকারীদের তথ্য পেতে পারে তারা। তবে এ ধরনের তথ্য ইউরোপেই রাখার বিষয়ে কাজ করছে তারা। আর আমেরিকার নাগরিকদের তথ্য বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সার্ভারে প্রক্রিয়াকরন করা হয়। এগুলো চীন পর্যন্ত আসে না।
আরএপি
আরও পড়ুন