![]() |
মজিলা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মার্ক সারমেন। সিটিও সম্মেলনে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশে আসেন এ ইন্টারনেট অ্যাক্টিভিস্ট। বিনামূল্যে সফটওয়্যার আন্দোলনের পথিকৃৎ কথা বলেছেন ফায়ারফক্স এবং মজিলা স্মার্টফোন নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফখরুদ্দিন মেহেদী।
উন্মুক্ত বিশ্বপ্রেমে বিশ্বাসী মানুষ মার্ক সারমেন মুক্ত সফটওয়্যারের পাশাপাশি উন্মুক্ত ওয়েব গড়ে তুলতে কাজ করছেন দীর্ঘ দিন থেকে। হিস্ট্রি অব কমিউনিটি মিডিয়া বিষয়ে স্নাতক সারমেন বর্তমানে কানাডায় বসবাস করেন। ২০০৯ সালে তিনি এফওএসডিইএম ইভেন্টের প্রধান বক্তা ছিলেন।
সম্প্রতি শেষ হওয়া সিটিও সম্মেলনে ‘দ্যা রোল অব স্কিল ইন আনলিকিং দ্যা অপর্চুনিটি অব দ্যা মোবাইল মার্কেট’ নিয়ে বক্তব্য দেন। তার বক্তব্যে তিনি উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে স্মার্টফোনের ব্যবহার ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেন।
টেকশহরডটকমের সঙ্গে আলাপকালে এ প্রযুক্তিবিদ বাংলাদেশের প্রযুক্তি অগ্রযাত্রাসহ মজিলা ফাউন্ডেশেনের কার্যক্রমসহ বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন।
টেক শহর : বাংলাদেশের প্রযুক্তি বাজার সম্পর্কে বলুন।
মার্ক সারমেন : বাংলাদেশ প্রযুক্তিতে উন্নত দেশগুলোর মতো এগোচ্ছে। বিশেষ করে এখানকার মানুষ প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেদের যেভাবে অভ্যস্ত করে নিয়েছে, তা সত্যি প্রসংশনীয়।
এখানে প্রাযুক্তিক শিক্ষা কার্যক্রম, প্রশিক্ষণ বাড়ছে। মানুষ প্রযুক্তিমুখী হয়ে উঠছে। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী এখানকার বাজারকে একটি সম্ভবনাময় বাজার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
টেক শহর : বাংলাদেশ নিয়ে মজিলার কি পরিকল্পনা করছে?
মার্ক সারমেন : মজিলা ফাউন্ডেশনের অংশ হিসাবে এখানে অনেক দিন থেকে কাজ করছে স্থানীয় মজিলা কমিউনিটি। এ কমিউনিটির সদস্যরা বেশ ভালোভাবে কাজ করছেন। লোকালাইজেশন বিষয়ক কাজে অন্য দেশের চেয়ে বেশ এগিয়েছে তারা।
মজিলা অনেকদিন ধরে এ দেশে ফায়ারফক্স অপারেটিং সিস্টেমের স্মার্টফোন আনার কাজ করছে। স্থানীয় কমিউনিটির কার্যক্রমের অগ্রগতি এ ক্ষেত্রে বেশ কাজে দিচ্ছে। খুব তাড়াতাড়ি মজিলা ফোন বাংলাদেশ উন্মুক্ত করা হবে।
তা ছাড়া বাংলাদেশি গ্রাহকদের জন্য গুগলের অ্যান্ড্রয়েড এবং অ্যাপলের আইওএস এর মতো মজিলার ফায়ারফক্স অপারেটিং সিস্টেম আনারও কার্যক্রম চলছে।
টেক শহর : এ দেশের বাজারে অন্যান্য কোম্পানির অপারেটিং সিস্টেম বিশেষ করে অ্যান্ড্রয়েডের একাধিপত্য বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে ফায়ারফক্স অপারেটিং সিস্টেম কি গ্রহণযোগ্য হবে?
মার্ক সারমেন : বাংলাদেশের বাজারে আমাদের শুন্য থেকেই শুরু করতে হবে। ২০০৩ সালে যখন আমরা যাত্রা শুরু করি তখন মাইক্রোসফট পুরো বাজারের ৯৮ শতাংশ দখল করে ছিল। কিন্তু মাত্র পাঁচ বছরে অর্থ্যাৎ ২০০৮ সালে মজিলা ২৫ শতাংশ বাজার দখল করতে সক্ষম হয়। মানুষ সবসময় নতুন উদ্ভাবনকে স্বাগত জানায়। অভ্যস্ততা না থাকলে সে বিভিন্ন রকম প্রচেষ্টায় সেটা রপ্ত করে। বাংলাদেশের মানুষ প্রযুক্তির সাথে এমনভাবে জড়িত হয়েছে যে তারাও নতুন কোনো কিছুকে সহজে স্বাগত জানাবে।
আমরা যদি কয়েক বছর পেছনে তাকাই তাহলে দেখা যাবে তখন এখানে মানুষ শুধু কথা বলার জন্য মোবাইল ব্যবহার করতো। এরপর ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় এমন ফোনে অভ্যস্ত হয়েছে। সর্বশেষ স্মার্টফোনে বাজারে আসার পর এটাকে খুব ভালোভাবে গ্রহণ করছে।
বর্তমান সময়ে স্মার্টফোন গ্রহণের তালিকায় বাংলাদেশ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলো তুলনায় অনেক এগিয়ে।
আমরা এখানকার সব শ্রেণীর গ্রাহকের কাছে পৌঁছুতে চাই। আর এ লক্ষ্যে আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে বাংলা কি বোর্ড যুক্ত অপারেটিং সিষ্টেম তৈরি করা। মজিলার নতুন অপারেটিং সিস্টেমে বাংলা হবে সবার জন্য চমক।
এ দেশের স্মার্টফোনের বাজারে অ্যান্ড্রয়েডই এগিয়ে। তাই অন্য সবার সামান সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে অপারেটিং সিস্টেমকে জনপ্রিয় করতে আমাদের একশ জনের একটি দল কাজ করছে।
টেক শহর : অন্যান্য কোম্পানির ফোনের তুলনায় ফায়ারফক্স ফোন এ দেশের বাজারে নতুন হবে। গ্রাহকরা কেন এ ফোন কিনবে?
মার্ক সারমেন : ফোন কেনার ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে দুটি বিষয় কাজ করে। একটি হলো পছন্দ আর দ্বিতীয়টি দাম। বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একটি বড় অংশ এখনও স্মার্টফোন ব্যবহার করছে না। এর কারণ হচ্ছে দামের সঙ্গে তাদের সামর্থ্য মিলছে না। বিশেষ করে ছাত্রদের একটা বড় অংশ স্মার্টফোন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
স্মার্টফোনের বাজার দখল করতে মজিলার প্রথাম টার্গেট হচ্ছে কমমূল্যে বিক্রি। ইতোমধ্যে ভারতে ৩৩ ডলারে স্মার্টফোন ছাড়া হয়েছে। যা সকলের নাগালের ভেতরে।
তা ছাড়া লোকাল ভাষায় লোকাল কনটেন্ট মানুষকে আকৃষ্ট করে বেশি। কেননা এটি সকল শ্রেণীর গ্রাহককে সুবিধা দিতে পারে। তাই বাংলায় কনটেন্ট তৈরির মাধ্যমেই আমরা এ দেশের বাজার ধরতে চাই।
টেক শহর : বাংলাদেশে প্রযুক্তি শিক্ষায় মজিলার কোনো উদ্যোগ আছে কি?
মার্ক সারমেন : মজিলার উদ্যোগে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে ওয়েব তৈরি, বেসিক, ডিজিটাল ক্রিয়েটিভিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মজিলার সেচ্ছাসেবকরা এ প্রশিক্ষণগুলো দিয়ে থাকে। তবে এগুলো সমন্বয় করা হয় মজিলা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। এসব কর্মশালা দুই ঘন্টা থেকে দু’দিন ব্যাপী হচ্ছে।
টেক শহর : ইন্টারনেট ব্যবহারে বাংলাদেশের অবস্থা কেমন?
মার্ক সারমেন : ১৯৯৮ সালে বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহার করত মাত্র ১৩ মিলিয়ন মানুষ। ২০১৩ সালে এ হিসেব দাড়িয়েছে ২.৪ বিলিয়নে। আমরা ধারনা করছি ২০২৫ সালের মধ্যে এ সংখ্যা ৬ বিলিয়নে গিয়ে দাঁড়াবে। সেই হিসেব বাংলাদেশ ইন্টারন্টে ব্যবহারে ভালোই এগিয়েছে। ১৬০ মিলিয়ন মানুসের দেশে ৪০ মিলিয়ন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সত্যিই অনেক বড় অর্জন।
টেক শহর : আগামী পাঁচ বছর পরে প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ কোথায় থাকবে বলে আপনি মনে করেন।
মার্ক সারমেন : আমি যখন ৮ বছর আগে বাংলাদেশ প্রথম আসি তখন এটি আর ১০টি উন্নয়নশীল দেশের মতোই ছিল। মানুষ তখন সবে মোবাইল ফোনে অভ্যস্ত হওয়া শুরু করেছে। সেভাবে প্রসার ঘটেনি। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে এটার প্রযুক্তিতে বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে। এখন সবার হাতে মোবাইল ফোন।
এমনকি কম্পিউটার প্রযুক্তির সাথেও এদেশ খুব ভালো অভ্যস্থ হচ্ছে। ই-কমার্স, ক্লাউড প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইন্টারনেট বিজনেসে সমৃদ্ধ হচ্ছে। এতে দেশের ডিজিটাল ইকোনমিক অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে।
এ অবকাঠামো তৈরিতে এম-কমার্সের ভূমিকাও অনেক। এর মাধ্যমে দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলেও মানুষ ব্যবসা করতে পারছে। কেননা একটা মোবাইলই এ ব্যবসার পুঁজি। এটা বাংলাদেশের জন্য বড় সুযোগও বটে। বাংলায় মোবাইল অ্যাপস তৈরি করে এটাকে আরও বড় পরিসরে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করতে পারে।
আমি মনে করি আগামী পাঁচ বছরে এ কাঠামো দেশের অর্থনৈতিক চিত্র বদলে দিবে। দারিদ্রতা থাকবে না। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন সত্যি হবে।