প্লাস্টিক বর্জ্য জীবাশ্ম জ্বালানীর উৎস হতে পারে কি?

টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর: বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ৪০০ মিলিয়ন টনের বেশি প্লাস্টিক উৎপাদিত হচ্ছে। এসব প্লাস্টিকের ৮৫ শতাংশই ভাগাড়ে ফেলা হয় অথবা যত্র-তত্র ফেলে রাখা হয় যেখানে প্লাস্টিকগুলো বছরের পর বছর রয়ে যায়। প্লাস্টিকগুলো যে ভয়াবহ ক্ষতিকর তা জেনেই আমরা এ ধরনের কাজ করে থাকি।

আশার কথা হলো বিজ্ঞানীরা বলছেন, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এই প্লাস্টিকের মধ্যেই দামি সম্পদ লুকিয়ে রয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজের এনার্জি অ্যান্ড সাসটেইনাবিলিটি বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর রেইসনার বলেছেন, ‘প্লাস্টিক মূলত জীবাশ্ম জ্বালানীর আরেকটি রূপ। এটি জ্বালানী ও রাসায়নিক সংমিশ্রনে ভরপুর; যা আমরা উন্মোচন করতে চাই।’

রাসায়নিকের এই সুবিশাল ভান্ডার উন্মোচন করার সর্বোত্তম উপায় অনুসন্ধানে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে। প্লাস্টিক শিল্প কেমিকেল রিসাইক্লিংয়ের ওপর জোর দিচ্ছে। এখানে এডিডিভগুলো প্লাস্টিক বর্জ্যের রাসায়নিক কাঠামো পরিবর্তনে ব্যবহৃত হয়। এভাবে প্লাস্টিক বর্জ্যকে এমন একটি পদার্থে পরিণত করে যা অন্য কোন পণ্য তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা যায়। পেট্রোল ও ডিজেলের মতো জ্বালানী তৈরির জন্যই মূলত এ ধরনের কাঁচামাল বেশি ব্যবহৃত হয়।

Techshohor Youtube

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন আমরা প্লাস্টিক দূষণের সংকট সমাধানের জন্য শুধুমাত্র প্লাস্টিক থেকে জ্বালানী তৈরির প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভরশীল হতে পারি না। এক্ষেত্রে নতুন সৌর-বিদ্যুত ব্যবস্থা একটি সমাধান হতে পারে।

অধ্যাপক রেইসনার ও তার দল এমন একটি প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেছেন যা একটি নয় দুটি বর্জ্য স্রোত তৈরি করতে পারে। পুরোপুরি সূর্য্যের আলোকে কাজে লাগিয়ে একই সময়ে প্লাস্টিক ও কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপাদন করে। পরবর্তীতে প্রযুক্তির সহায়তায় কার্বন ডাই অক্সাইড ও প্লাস্টিককে সিঙ্গাসে রূপান্তরিত করা হয়। হাইড্রোজেনের মতো টেকসই জ্বালানীর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এই সিঙ্গাস। এছাড়াও এটি দিয়ে প্রসাধনী শিল্পে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা গাইকোলিক এসিডও তৈরি করে।

অন্যান্য সৌরচালিত প্রযুক্তিগুলো প্লাস্টিক দূষণ ও কার্বডাই অক্সাইড রূপান্তর মোকাবিলা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু এই প্রথমবারের মতো এগুলো একটি একক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্মিলিত হচ্ছে।

সারা বিশ্বের গবেষকরা অপ্রয়োজনীয় প্লাস্টিকগুলোকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে কাজ করছেন। প্লাস্টিক ভেঙ্গে ফেলার পর এর উপাদানগুলিকে ডিটারজেন্ট, লুব্রিকেন্টস, রং, দ্রাবকসহ বায়োমেডিকেলে ব্যবহারের জন্য বায়োডিগ্রেডেবল যৌগ হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব পোর্টসমাউথের অধ্যাপক ভিক্টোরিয়া বেমার প্লাস্টিক ভেঙ্গে ফেলতে পারে এমন এনজাইম আবিষ্কার করেছেন। তিনি বলেছেন ইতোমধ্যে সেখানে এনজাইমগুলির পলিমার ভেঙ্গে ফেলার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। আমরা এই এনজাইমগুলিকে আরো দ্রুতগতির বা স্থিতিশীল করার জন্য এর গঠন খুব সামান্য পরিবর্তন করতে পারি।’

মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে অধ্যাপক বেমার ও তার দল সব ধরনের  পলিথিন টেরিফালেটকে (পিইটি) বিনির্মান করতে পারে এমন এনজাইম আবিষ্কার করেছেন। কেমিকেল রিসাইক্লিংয়ের মতো একই উপায়ে এসব এনজাইম প্লাস্টিক ভেঙ্গে দেয়। কারণ এগুলো প্রকৃতিতে পাওয়া এনজাইমের অনুরূপ। কেমিকেল রিসাইক্লিংয়ের ক্ষেত্রে রাসায়নিক ব্যবহার করা হলেও পোর্টসমাউথ ইউনিভার্সিটির দল পানিও ব্যবহার করতে পারে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন; ফলে এখানে অন্যান্য প্রক্রিয়ার তুলনায় জ্বালানী কম ব্যবহৃত হয়।

ড. বেমার ও তার দল আশা করছেন তাদের এই কাজ প্লাস্টিকভিত্তিক পোশাক শিল্পের জন্য একটি টেকসই বৃত্তাকার অর্থনীতি সৃষ্টি করবে। উল্লেখ্য, পিইটি থেকে উৎপাদিত পলেস্টার বিশ্বে সর্বাধিক ব্যবহৃত পোশাকের তন্তু। তবে এই এনজাইম ব্যবহার করে সিনথেটিক ফেব্রিক রিসাইক্লিং করা সহজ নয়।

প্লাস্টিক বর্জ্য কমানোর জন্য রিসাইক্লিংয়ের ওপরই নির্ভর করা হয়। কারণ দিনে দিনে প্লাস্টিকের উৎপাদন বাড়ছেই। ২০৬০ সালের মধ্যে তা তিনগুণ বাড়বে। ক্যামব্রিজের রেইসনারের দল যে পদক্ষেপ নিচ্ছেন তা ‘একেবারেই প্রাথমিক’। তবে আরো বেশি পণ্য রিসাইক্লিংয়ের জন্য আগামি পাঁচ বছরে সিস্টেমটি আরো উন্নত করার পরিকল্পনা রয়েছে। আশা করা হচ্ছে এই কৌশলটি একসময় পুরোপুরি সৌর বিদ্যুৎচালিত রিসাইক্লিং প্লান্ট তৈরিতে ব্যবহৃত হবে।

বিবিসি/আরএপি

*

*

আরও পড়ুন