পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নথি সমস্যা সমাধানে এআই ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ'২৩ শুরু

টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : নথি সমস্যায় পড়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দেশ বিদেশের হাজারো নথির সমস্যা সমাধানের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং এটুআই এর যৌথ আয়োজনে রোববার ১৯ মার্চ,সেগুনবাগিচায় মন্ত্রণালয়ে এআই ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ’২৩ উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন।

এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন, আইসিটি সচিব মোঃ সামসুল আরেফিন, মেট্রোনিকের সাবেক চেয়ারম্যান ও সিইও ওমর ইশরাক এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশ-এর আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার। এছাড়াও মন্ত্রণালয় প্রাঙ্গনে একটি ইনোভেশন কর্নার উদ্বোধন করা হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দেশের মিশনের হাজার হাজার নথি থেকে ম্যানুয়ালি পড়া এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া একটি সময়সাপেক্ষ এবং দুঃসাধ্য কাজ। এই নথিগুলোর বিপুল পরিমাণ ডাটা থেকে দক্ষতার সাথে এবং সঠিকভাবে প্রাসঙ্গিক তথ্য বের করা একটি চ্যালেঞ্জ। এই ম্যানুয়াল পদ্ধতিটি ত্রুটি এবং অসঙ্গতি প্রবণ, যা তথ্যের ভুল ব্যাখ্যা দিতে পারে এবং বিদেশী নীতির সিদ্ধান্তগুলো প্রভাবিত করতে পারে। তাই এই চ্যালেঞ্জ আয়োজন করা হলো।

Techshohor Youtube

এই প্রতিযোগিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ঠিকানা – www.challenge.gov.bd . উদ্ভাবনী আইডিয়া জমা দেওয়ার শেষ সময় আগামী ১৯ এপ্রিল ২০২৩।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইনোভেশন ল্যাব এবং প্রস্তাবিত শেখ হাসিনা নিউরাল নেটওয়ার্ক কেন্দ্রিক অগ্রযাত্রার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করে বলেন, ভবিষ্যৎ নীতি নির্ধারণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডাটাভিত্তিক বিশ্লেষণী ব্যবস্থা এবং ডাটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন সিস্টেমের প্রয়োজনীয়তা বাড়বে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ডাটাভিত্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে যে কোন সংকট যেমন কোভিড কিংবা রাশিয়া-ইউক্রেনের মত সংঘাতে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে সদ্য স্থাপিত নিউরাল নেটওয়ার্কটি প্রয়োজনীয় ধারণা দিতে সক্ষম হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, সরকারের বাস্তবসম্মত উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশ এখন একটি ভাইব্রেন্ট ইকোনমি এবং অসীম সম্ভাবনার দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। তিনি মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত অর্থনৈতিক কূটনীতিভিত্তিক কার্যক্রমের কথা উল্লেখ বলেন যে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য প্রবাসীদের নিকট আরও ভাল পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র সচিব রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে জনসেবা প্রদানের লক্ষ্যে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের উপর জোর দেন।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মোঃ সামসুল আরেফিন বলেন, কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ডাটাভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করতে পারলে ভবিষ্যতে কূটনৈতিক ডাটা বিশ্লেষণে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং এটুআই-এর মধ্যে এই যৌথ উদ্যোগের প্রশংসা করে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউএনডিপি বাংলাদেশ-এর আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বলেন, ‘এই অংশীদারিত্ব একটি দুর্দান্ত উদাহরণ, আমরা কীভাবে উদ্ভাবনের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সমস্যা সমাধান করতে একসাথে কাজ করতে পারি।’

এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী বলেন, ‘এআই ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ ২০২৩’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দেশের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এবিষয়ে উদ্ভাবনের সাথে থাকার সুযোগ পাবেন।

উল্লেখ্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় বাস্তবায়নাধীন ও ইউএনডিপি’র সহায়তায় পরিচালিত এসপায়ার টু ইনোভেট-এটুআই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিভিন্ন উদ্ভাবনী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

বিভিন্ন মিশনের নথি থেকে মূল তথ্য বের করা এবং বিশ্লেষণ করার জন্য একটি স্বয়ংক্রিয় সমাধান এনে দেবে, যা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জ্ঞাত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে দক্ষতা, নির্ভুলতা এবং মাপযোগ্যতা উন্নত করতে পারবে।

এসমস্যার উদ্ভাবনী সমাধানের খোঁজে ‘এআই ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ ২০২৩’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উদ্ভাবিত পদ্ধতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী কাস্টমাইজড সমাধান তৈরি করে দেবে। নিউরাল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রচুর পরিমাণে অসংগঠিত ডাটা থেকে সময়োপযোগী এবং সঠিক তথ্য প্রদান করে জ্ঞাত সিদ্ধান্ত গ্রহণকে সমর্থন করবে।

অনুষ্ঠানে ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ-এর প্রক্রিয়া সম্পর্কে উপস্থাপনা প্রদান করেন এটুআই ইনোভেশন ফান্ড এক্সপার্ট নাঈম আশরাফী এবং কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক (এএনএন) এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্ভাব্য সুবিধাগুলোর উপর উপস্থাপনা প্রদান করেন এটুআই-এর একশপের টেকনোলোজি প্রধান সোহেল রানা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (আইসিটি) ড. সৈয়দ মুনতাসির মামুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের অন্যান্যদের মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও এটুআই-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এবং গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিদেশে অবস্থিত ৮১টি বাংলাদেশ দূতাবাস অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।

*

*

আরও পড়ুন