আশুলিয়ার বাঁশবাড়ীতে ডিজিটাল শিক্ষা কার্যক্রম পরিদর্শন করেন মোস্তাফা জব্বার

টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বুধবার আশুলিয়া থানার বাঁশবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ডিজিটাল শিক্ষা কার্যক্রম পরিদর্শনকালে করেন।

সুবিধা বঞ্চিত প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরে বিটিআরসি‘র সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের অর্থায়নে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পের অধীন ৬৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পার্বত্য চট্রগ্রামের ২৮টি পাড়া কেন্দ্রে ডিজিটাল যন্ত্রে ডিজিটাল কনটেন্টে পাঠদান কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে।

মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, স্মার্ট মানবসম্পদ তৈরির জন্য ডিজিটাল পাঠদান পদ্ধতি খুবই ফলপ্রসূ পদ্ধতি। ডিজিটাল শিক্ষার মানে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন কিংবা শিক্ষার্থীদের জন্য টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ক্লাশ নয়। শিক্ষার ডিজিটাল কনটেন্ট হচ্ছে ডিজিটাল যন্ত্রে পাঠদানের জন্য প্রচলিত পাঠ্য সূচির মানসম্মত ইন্টার একটিভিটি, ছবি, অডিও, ভিডিও, এ্যানিমেসন, টেক্সট ও অন্যান্য মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট দিয়ে প্রোগ্রামিং করা সফটওয়্যার দিয়ে ডিজিটাল ডিভাইসে শিক্ষার প্রবর্তন করা । উন্নত বিশ্ব বহু আগে থেকেই এই পদ্ধতি অবলম্বনে শিক্ষা প্রদান করে আসছে। বাংলাদেশেও আনন্দ মাল্টিমিডিয়ার উদ্যোগে ১৯৯৯ সাল থেকে সীমিত পরিসরে এই পদ্ধতিতে শিক্ষা প্রদান করে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের অভিযাত্রা শুরু হয়। তিনি ডিজিটাল শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরে শিক্ষাবিদ, প্রযুক্তিবিদ, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সমন্বিত উদ্যোগে কাজ করার আহ্বান জানান।

Techshohor Youtube

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তিগত কারণে ডিজিটাল শিক্ষা শিশুদের জন্য যতটা বোধগম্য হয় প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় তা হয়না। প্রচলিত শিক্ষা ডিজিটাল শিক্ষায় রূপান্তর না হলে কঠিন চ্যালেঞ্জ আমাদেরকে মোকাবিলা করতে হবে। যে শিশুরা পড়তে চায় না তাদের আগ্রহ সৃষ্টিতে ডিজিটাল কনটেন্টে পাঠ প্রদানের ফলপ্রসূ অবদান তুলে ধরে তিনি বলেন, শিশুরা আনন্দের সাথে শিক্ষা গ্রহণ করে।

তিনি বলেন, শিক্ষায় কম্পিউটার ব্যবহার ধারণাটা আমার আবিস্কার নয়। ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে কম্পিউটার ব্যবহার করে পাঠদান করার পদ্ধতিটি আমি দেখি। সেই ধারণাকে বাস্তবায়ন করার বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো আমাদের পাঠ্যবইকে ডিজিটাল উপাত্তে রূপান্তর করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সাল থেকে গত ১৪ বছরে হাটি হাটি পা পা করে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যক্রম ডিজিটালে রূপান্তরে সক্ষম হয়েছি।

জেসমিন আক্তার জুই বলেন, কোয়ালিটির সাথে আপোষ করতে পারি না বলেই দীর্ঘ সময় কনটেন্ট তৈরিতে ব্যয় করতে হয়েছে। প্রতিনিয়তই কনটেন্ট আপডেট করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পাঠ্যসূচির সাথে সামঞ্জস্য রেখে ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি একটি চলমান প্রক্রিয়া। দীর্ঘ প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালে আমরা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত কনটেন্ট তৈরি সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অনুষ্ঠানে টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: রফিকুল ইসলাম. বিজয় ডিজিটালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার জুই, প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আবদুল ওয়াহাব, সাভারের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাজহারুল ইসলাম, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাজমুশ শিহাব, বাঁশবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আলী এবং প্রধান শিক্ষক মোকসেদ আলীসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকরা তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তারা শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের এই কর্মসূচিকে একটি অভাবনীয় উদ্যোগ হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং প্রকল্পটি কেবল ৬৫০টি বিদ্যালয়ে সীমাবদ্ধ না রেখে দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারণে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর সহায়তা প্রত্যাশা করেন। মন্ত্রী তাদেরকে এই বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন ।

প্রকল্পের অধীন ৬৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২৮টি পাড়া কেন্দ্রের ১৯৭৮টি শ্রেণিকক্ষের জন্য ল্যাপটপ, স্মার্ট টিভি, ডিজিটাল কনটেন্ট, আইপিএস এবং সোলার প্যানেল সরবরাহ করা হয়। এছাড়া ১৬জন প্রাথমিক শিক্ষককে দুই দিন ব্যাপী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এর বাইরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) কর্পোরেট সোস্যাল রেসপনসিবিলিটি তহবিল থেকে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চাশটি শ্রেণি কক্ষ ডিজিটাইজ করার লক্ষ্যে প্রতিটি শ্রেণিকক্ষের জন্য একটি করে মাল্টিমিডিয়া এনড্রয়েড টিভি একটি করে ট্যাব, ডিজিটাল কন্টেন্ট প্রদান করা হয়।

*

*

আরও পড়ুন