![]() |
খুব সহজে, তবে বিস্তারিত উত্তরটি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ডাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জাভেদ ইকবাল
এই লেখার জন্য এসি কে দুই ভাগে ভাগ করছি। জানালায় যেটা লাগায় (window type), আর দেয়ালে যেটা লাগায় (mini split)।
প্রথমটা এক পিস, দ্বিতীয়টা দুই পিস (স্প্লিট)–একটা অংশ থাকে দেয়ালের বাইরে, কম্প্রেসার (নিচে বিস্তারিত) বাইরে থাকে। জানালার এসিতে কল কব্জা সব একই বাক্সে, কিন্তু কম্প্রেসার বাইরের দিকে থাকে, ঘরের দিকে না। কিন্তু দুই ধরনের এসি মূলত একই ভাবে কাজ করে।
এসি কিভাবে কাজ করে?
মেঝে থেকে কাপড় দিয়ে পানি তুলতে দেখেছেন? অথবা মেঝে মোছা দেখেছেন?
মেঝেতে পানি থাকে, একটা কাপড় দিয়ে সেই পানিকে শুষে নেয়া হয়, তারপর সেই কাপড় পিষে/মুচড়ে পানি বের করে ফেলে দেয়া হয়।
এসির জন্য ঘরের গরম হচ্ছে সেই পানি, কাপড় হচ্ছে এক ধরনের কেমিক্যাল, যেটাকে রেফ্রিজারেন্ট বলা হয়।
রেফ্রিজারেন্ট গরমকে শুষে নেয়, তারপর রেফ্রিজারেন্ট কে পিষে/মুচড়ে সেই গরমকে রেফ্রিজারেন্ট থেকে বের করে ফেলে দেয়া হয় ঘরের বাইরে। রেফ্রিজারেন্টকে পেষার/মোচড়ানোর কাজ করে ‘কমপ্রেসার’ নামের একটা যন্ত্র। এটার নামই বলে দেয়, এটা কমপ্রেস করে অর্থাৎ চাপ দেয়। বত্ব, ফ্রিজও ঠিক এই ভাবেই কাজ করে।
রেফ্রিজারেন্ট তরল ও গ্যাস অবস্থায় থাকে এসির ভিন্ন ভিন্ন স্থানে। গরম শুষে নিয়ে সেটা গ্যাস হয়ে যায়, কম্প্রসারে চাপ খেয়ে আবার তরল হয়।
— গ্যাসের চাপ বেড়ে গেলে পাইপ ফেটে যেতে পারে, এটা আমরা সবাই বুঝি।
— পাইপ কোন কারনে বন্ধ/সরু হয়ে গেলে চাপ বাড়তে পারে
— চারপাশে ময়লা জমে অতিরিক্ত গরম হলেও পাইপ ফাটতে পারে।
একই কারনে কম্প্রেসারও ফেটে যেতে পারে। Mini split এর কম্প্রেসার ফাটলে নিচে রাস্তায় মানুষ আহত হতে পারে, সেটা দেয়াল ভেঙ্গে ঘরের ভেতর ঢুকবে না। উইন্ডো টাইপের কম্প্রেসার ফাটলে নিচের মানুষ এবং ঘরের মানুষ আহত হতে পারে, তবে ঘরের ভেতরেও আহত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
Mini split এর ভেতরের অংশে গ্যাসের পাইপ (কয়েল) আছে, তাই সেটা ফাটতে পারে তবে বিস্ফোরণ হবে না।
এই ধরনের কারনে ফেটে যাওয়া বিরল। বাংলাদেশে যে হারে খবর আসে, সেটা রীতিমত আজগুবি পরিমাণে বিরল।
ধাতব পদার্থে তৈরি পাইপ বা কম্প্রেসার ফাটলে কতটুকু ক্ষতি করতে পারে? একটা ইটের দেয়ালে আরেকটা ইট দিয়ে আপনার গায়ের সব জোর দিয়ে আঘাত করলে যতখানি ক্ষতি করা সম্ভব, তার চাইতে অনেক কম, কারন ভাঙ্গা টুকরা গুলির ওজন অনেক কম। তবে ধাতব টুকরা বলে মানুষের শরীরে সরাসরি আঘাত করলে কেটে যেতে পারে, এবং সেটা মারাত্মকও হতে পারে। জানালার কাঁচ ভেঙ্গে ঢোকাও অসম্ভব না।
তবে আবারও বলছি, সেটা দেয়াল ভাঙ্গতে পারবে না।
প্রশ্ন: এসির গ্যাসে কি আগুন লাগতে পারে?
উত্তর: পারার কথা না। সাধারণ রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস মানুষকে দম বন্ধ করে মেরে ফেলতে পারে, কিন্তু চুলার গ্যাসের মত এটাতে আগুন ধরে না। কিন্তু এখানে একটা “কিন্তু” আছে।
R-22a নামে একটা রেফ্রিজারেন্ট আছে, যেটায় LPG আর বিউটেন (সিগারেট লাইটারের গ্যাস) মেশানো থাকে। এটায় আগুন খুব ভালভাবেই ধরতে পারে।
বাংলাদেশে R-22a বিক্রি হয় কি না খুঁজে পেলাম না।
R-22a যদি লিক করতে থাকে, তাহলে ইলেকট্রিকাল শর্ট সার্কিট বা অন্য কোন কারনে সেটায় আগুন ধরতে পারে। ফলে কম্প্রেসার বা পাইপে গ্যাসের চাপ বেড়ে গিয়ে বিস্ফোরিত হতে পারে, কিন্তু সেটার ফলাফল কী হবে, উপরে বলেছি।
তাহলে “এসির বিস্ফোরণ” শিরোনামে ইটের দেয়াল ভাঙ্গা সহ যেসব ফটো দেখা যাচ্ছে, সেগুলির ঘটনা কী?
এগুলি অন্য কোন গ্যাসের, বা অন্য কিছুর বিস্ফোরণ। R-22a যদিও ঐভাবে বিস্ফোরিত হতে পারে, বহুতলা ভবনের বিশাল এসি না হলে, বাসার বা দোকানের সাধারণ একটা এসিতে এত বেশি গ্যাস থাকে না।
৩ বছর আগে নারায়ণগঞ্জে এক মসজিদে বিস্ফোরণের পরে এসি’র কথা বলা হয়েছিল, পরে দেখা গেল রান্নার গ্যাসের লাইন।
রান্নার গ্যাস (মিথেন) বাতাসের চাইতে হালকা।
মাটির নিচে গ্যাসের লাইনে লিক থাকলে সেই গ্যাস সরাসরি কোন লাইন না থাকলেও মাটির ফাঁকফোকর দিয়ে আজব স্থানে গিয়ে জমা হতে পারে। যেমন গ্যাসের লাইনে লিক, একই সাথে পাশে সুয়ারেজ (পয়নিষ্কাশন) লাইনে লিক থাকলে গ্যাসে সেই পাইপ দিয়ে গিয়ে গিয়ে টয়লেট দিয়ে বাসার ভেতরে ঢুকে যেতে পারে। সেই অবস্থায় কেউ বাথরুমে সিগারেট ধরালে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এমনকি লাইটের সুইচ অন করার সময়েও বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
সারমর্ম: এসিতে আগুন ধরতে পারে, সেই কারনে বা অন্য কোন কারণেও এসিতে বিস্ফোরণ হতে পারে। তবে সেই বিস্ফোরণ জানলার কাঁচ ভাঙ্গা বা মানুষকে আঘাত করে কেটে ফেলার চাইতে বেশি কিছু করার ক্ষমতা রাখে না।
এসি পরিষ্কার রাখুন, নিয়মিত সার্ভিসিং করান, পয়সা বাঁচানোর জন্য বড় ঘরে ছোট এসি ব্যবহার না করে সঠিক মাপের এসি নিশ্চিন্তে ব্যবহার করুন।