![]() |
টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট খাতের ব্যবসায় শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে খাতটির সংগঠনটিকেই প্রধান দায়িত্ব নেয়ার আহবান জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত ‘স্মার্ট কানেক্টিভিটি ফর স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহবান জানান তিনি।
টিআরএনবি সভাপতি রাশেদ মেহেদীর সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনায় সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার। স্বাগত বক্তব্য দেন টিআরএনবির সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও ফরেন চেম্বার্স অ্যান্ড কমার্সের নির্বাহী পরিচালক টি আই এম নূরুল কবীর।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘কেনো ইন্টারনেট ব্যবসায়ীর আইএসপিএবির সদস্যপদ না থাকলে সে লাইসেন্স পাবেও না, থাকবেও না-সংগঠনের জন্য এটা একটি অস্ত্র। এটা যদি ট্রেডবডি ব্যবহার না করে তাহলে একটি হাতিয়ার থাকার পরও তা ব্যবহার করা হচ্ছে না।’
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘যদি দেখা যায়, কেউ নিয়মের বাইরে গিয়ে অন্যায়ভাবে ব্যবসা করছে তাহলে তার সদস্যপদ বাতিল করে বিটিআরসিকে জানালে তার লাইসেন্সও শেষ, ব্যবসাও শেষ।’
‘এখানে এ পর্যন্ত কয়টি সদস্যপদ বাতিল করেছেন, একটিও না’ সংগঠনটির নেতাদের প্রতি এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, অবৈধ ব্যবসায়ীরা বৈধ কোনো আইএসপির কাছ থেকেই ব্যান্ডউইথ কিনছে। কারা বৈধ লাইসেন্স নিয়ে লাইসেন্সবিহীন ব্যবসায়ীদের কাছে ব্যান্ডউইথ বিক্রি করছে তা খুঁজে বের করা দরকার।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক আগামী দিনের প্রযুক্তির বিপদ সম্পর্কে এখন থেকেই সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবস্থা এবং ডিজিটাল প্লাটফরম নিশ্চিত না করা গেলে স্মার্ট বাংলাদেশ ব্যুমেরাং হবে।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের বড় চ্যালেঞ্জের নাম হবে ডিজিটাল নিরাপত্তা। স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট মানুষ তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, স্মার্টনেস পোষাকে নয় স্মার্টনেসের জন্য দরকার প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন।
ইন্টারনেটের পাশাপাশি স্মার্ট দুনিয়ায় কনটেন্টের গুরুত্ব তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, এখন আমরা এমন একটি পর্যায়ে আছি, যেভাবে প্রতিদিন অনলাইনে জুয়া বসে, ম্যাসেঞ্জার, হোয়টসআপ ব্যবহার করে হয়রানি করা হয়; সেখানে আমরা একপর্যায়ের অসহায়ত্বের মধ্যে পড়ে গেছি। এটা রোধে ইন্টারনেটে কনটেন্ট ফিল্টারিংয়ের উদ্রোগ আমরা গ্রহণ করেছি।
এই অবস্থাটা আগামীতে আরও ভয়ংঙ্কর হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেটা মোকাবেলা করতে হবে। আমরা যত বেশি স্মার্ট হবো তত বেশি আপদ-বিপদ আসবে।
সেমিনারে বক্তব্য রাখেন বিটিআরসির মহাপরিচালক(সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিল্যান্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ, পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি(অপারেসন্স) হায়দার আলী খান, ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি ইমদাদুল হক, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভুঁইয়া, মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল(অব.) এস এম ফরহাদ, তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির, টিআরএনবির সাবেক সভাপতি ও নগদের হেড অব কমিউনিকেশন জাহিদুল ইসলাম সজল।
শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, বিটিআরসির কাছ থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত সবগুলো সেবাদতা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শর্ত হচ্ছে কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিশ্চিত করা। যদি কোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সেটা না করে তাহলে আইন ও বিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। স্মার্ট কানেকটভিটির জন্য কোয়লিটি অব সার্ভিস সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে রেগুলেটর হিসেবে বিটিআরসির পক্ষ থেকেও সাধারণ গ্রাহক এবং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো যেন সহজে সঠিক সেবা পায় সেজন্যও বিটিআরসি সচেষ্ট। এখন অনেক সেবা অনলাইনে দেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে বিটিআরসি’র পুরো সার্ভিসই ডিজিটার মাধ্যমে করার চেষ্টা চলছে।
তিনি জানান, থানা পর্যায়ের কোন আইএসপি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স নেওয়ার পর সেই থানা ভেঙ্গে নতুন থানা গঠিত হলেও ওই লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান দু’টি থানাতেই ব্যবসা চালাতে পারবে।
ব্রিগেডিয়ার নাসিম পারভেজ বলেন, এক সময় বলা হত ইন্টারনেট সেবার জন্য একক মূল্য নির্ধারণ করা যাবে না। কিন্তু সেবা বাস্তবে সম্ভব হয়েছে। ‘এক দেশ এক রেট’ চালু হয়েছে এবং সেটা সবাই মেনেও নিয়েছে। তাহলে কোন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসার ক্ষেত্রে অন্যান্য বাধাগুলো দূর করা যাবে না। অবশ্যই এসব বাধা দূর করে স্মার্ট ও নিরাপদ কানেকটিভিটি গড়ে তুলতে হবে। কারন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার মূল ভিত্তিই হবে স্মার্ট কানকেটিভিটি।
হায়দার আলী খান বলেন, ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিক্স প্রযুক্তি আসলে বড় বিপদও আসতে পারে। রোবট আপনার ঘরের জানালা ভেঙ্গে মাথার কাছে পিস্তল ঠেকিয়ে সর্বস্ব লুটে নিতে পারবে। ড্রোন রোবট উপর থেকে আপনার উপর গুলি চালানোর মত হামলা করতে পারে। অনলাইনে আপনার ছবি বিকৃত করে আপনাকে ব্ল্যাকমেইল করতে পারে ভারচুয়াল রোবট। অতএব ভবিষ্যতে তথ্যপ্রযুক্তির স্মার্ট উদ্ভাবনের পাশাপাশি স্মার্ট বিপদ সম্পর্কেও সচেতন হতে হবে।
সেমিনারে আশুলিয়া থেকে আসা তিন জন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী বৈধ ব্যবসা করতে গিয়ে অবৈধদের হাতে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হওয়ার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে নাজমুল করিম ভুঁইয়া জানান, চার ক্যাটাগরিতে বৈধ লাইসেন্সধারীদের সংখ্যা ২ হাজার ৮৪৯। কিন্তু লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ব্যবসায়ীর সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। তারা পেশীশক্তির অধিকারী এবং অনেকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। তাদের দাপটে বৈধ ব্যবসায়ীরা এখন অসহায়।
ইমদাদুল হক বলেন, বৈধ ব্যবসায়ীরা সরকারকে নিয়মিত কর দেয়, লাইসেন্স নবায়ন ফি দেয়। কিন্তু অবৈধ ব্যবসায়ীরা কিছুই দেয় না। ফলে অবৈধদের দাপটের কারনে শুধুমাত্র বৈধ ব্যবসায়ীদের অস্তিত্ব হুমকির মুখেই পড়ছে না, বরং সরকারও কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
তিনি জানান, মূলত কেবল টিভির সংযোগের ব্যবসার সঙ্গে যুক্তরাই এখন অবৈধভাবে ইন্টারনেট সংযোগ দিচ্ছে। তিনি বৈধ আইএসপি ব্যবসায়ীদের মধ্যে অ্যাকটিভ শেয়ারিং ব্যবস্থা চালুর জন্য বিটিআরসির প্রতি আহবান জানান।
মূল প্রবন্ধে টিআইএম নূরুল কবীর স্মার্ট সমাজ, সরকার ও সেবার নীতিমালা প্রণয়নের বিষয়ে আলোকপাত করেন। একইসঙ্গে অংশীজনদের নিয়ে বিদ্যমান নীতিমালায় ঘাটতিগুলো খুঁজে বের করার পরামর্শ দেন।
সুমন আহমেদ সাবির বলেন, লক্ষ্য স্থির করে অবকাঠামো তৈরি করেতে হবে । ইন্টারনেটের অপব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় ইন্টারনেটের ওপর প্রতিনিয়িত চাপ বাড়ছে, অনেক তথ্য ও অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে।