আইজিডব্লিউ-আইসিএক্সের কাছে বিটিআরসির ২ হাজার কোটি টাকা আটকা

আল-আমীন দেওয়ান : দেশের আইজিডব্লিউ ও আইসিএক্স কোম্পানিগুলোর কাছে দীর্ঘ সময় ধরে বিটিআরসির পাওনা জমে পাহাড়সম হয়েছে।

এখন এই পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২ কোটি টাকার বেশি।

আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদানের ব্যবসা করে থাকে ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) এবং ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) । আইজিডব্লিউর মাধ্যমে আসা কল আইসিএক্স হয়ে মোবাইল ফোন অপারেটর বা ল্যান্ডফোন অপারেটরের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে যায়।

Techshohor Youtube

বিটিআরসি আইজিডব্লিউ লাইসেন্স দিয়েছিলো ৩০টি প্রতিষ্ঠানকে। এরমধ্যে পাওনা আদায় করতে না পেরে ৬ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করে দেয় তারা। এই ৬ টি প্রতিষ্ঠানের কাছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার পাওনা ৬৮১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

বাকি ২২টি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিলম্ব ফি বাবদ বিটিআরসির পাওনা ১৪১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এই প্রতিষ্ঠানগুলো আবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করেছে এই টাকা মওকুফের। আর বিটিসিএলের কাছে পাওনা আছে ১ হাজার ১২০ কোটি ৭ লাখ টাকা।

আইসিএক্স লাইসেন্স দেয়া হয়েছে ২৬টি প্রতিষ্ঠানকে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বিটিআরসির পাওনা ৫৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার টেকশহর ডটকমকে বলেন ‘এই যে বিপুল পরিমান টাকা পাওনা হয়ে গেছে, বিটিআরসি আমাদের সেই পরিমান অবহিত করেনি। যদি বিটিআরসি অবহিত করতো তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য যা করণীয় ছিলো সেটাই আমি করতাম।’

মোস্তাফা জব্বার বলেন ‘আমাদের জন্য কঠিন একটি বিষয় ছিলো মোবাইল অপারেটদের কাছ হতে টাকা আদায় করা, সেখানে আমরা সফল হয়েছি। স্যাটেলাইটের ক্ষেত্রেও একইরকম বিষয় ছিলো, সেখানেও সব পাওনা আদায় করা হয়েছে, এখন কোনো বকেয়া নেই। এখানেও আমরা রাষ্ট্রের পাওনা আদায় করে ছাড়বো।’

তিনি বলেন, ‘এখন আইজিডব্লিউ, আইসিএক্স এবং আইআইজির বিষয়গুলোও আমার নজরে এসেছে। এ বিষয়ে বিটিআরসির সঙ্গে কথা বলবো। যদিও আদায় করা এবং অন্যান্য কাজগুলো করার দায়িত্ব বিটিআরসির কিন্তু মন্ত্রণালয় হিসেবে আমরা চুপ থাকবো না। এটা নিশ্চিত করছি যে, এক্ষেত্রে যতো ধরনের কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার ঠিক তাই নেয়া হবে। কারও ক্ষেত্রে কেনো ছাড় নেই।’

‘আমি অফিসিয়ালি চিঠি দেবো এবং যে যে ব্যবস্থা নেয়ার দরকার আছে তার দিক-নির্দেশনা পর্যন্ত আমরা দেবো’ জানান মন্ত্রী।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার টেকশহর ডটমককে বলেন, ‘পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে বিটিআরসি সবসময়ই সক্রিয়, প্রচেষ্টার কোনো ঘাটতি নেই এবং আমাদের গাফিলতি করারও সুযোগ নেই।’

এই তিন ক্যাটাগরির লাইসেন্সির অনেক প্রতিষ্ঠানের কাছে বিপুল পাওনার মধ্যে ৬৮১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পাওনা না দেয়ায় ৬ আইজিডিব্লিউ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। এখন এসব প্রতিষ্ঠান হতে পাওনা আদায়ে উপায় কী ? এমন জিজ্ঞাসায় বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘লাইসেন্স বাতিল করা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। তাদের টাকা না দিয়ে উপায় নেই। টাকা আদায়ের জন্য একটি ক্রিমিনাল কেইস আরেকটি সার্টিফিকেট কেইস-দুই রকম মামলা করা হচ্ছে।’

পাওনা আদায়ে কী করেছে বিটিআরসি ?

পাওনা আদায়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে একের পর এক সভা করেছে, চিঠি দিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। আলোচনার মাধ্যমে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানকে এককালীন কিছু টাকা দিয়ে বাকি টাকা দুই বছরের মাসিক কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এতে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোকে অঙ্গিকারনামাও দিতে হয়েছে। কোনো কারণে কিস্তির শর্ত না পালন করতে পারলে লাইসেন্স বাতিলের কথা বলা হয়েছে।

শর্তসাপেক্ষে টাকা পরিশোধ করলে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে করা মামলাও প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা বলেছে বিটিআরসি।

এছাড়া লাইসেন্স বাতিল হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে বকেয়া আদায়ে মামলা করা হয়েছে এবং আরও মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। বকেয়া না দেয়ায় কল ব্লকসহ সেবা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানদের বিল না দিতে বলা হয়েছে।

*

*

আরও পড়ুন