![]() |
টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর: নেচার, সায়েন্স, এলসভিয়েরের মতো শীর্ষস্থানীয় সায়েন্টিফিক জার্নালগুলো আলোচিত চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এসব জার্নাল সহ-লেখক (কো-অথর) হিসেবে চ্যাটজিপিটি ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালিত চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে ত্রুটিপূর্ণ একাডেমিক সাহিত্য এবং মনগড়া গবেষণা প্রতিবেদন লেখা হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই এ পদেক্ষপ গ্রহন করছে এসব জার্নালের কর্তৃপক্ষ।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের আবিষ্কার চ্যাটজিপিটি। গত বছরের নভেম্বরে সবার জন্য চ্যাটবটটি উন্মুক্ত করে দেয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই ১০ লাখ ব্যবহারকারি এতে নিবন্ধন করেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে পরিচালিত এই চ্যাটবটটি মানুষের মতো করেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। শুধু তাই নয় ব্যবহারকারির নির্দেশনা অনুযায়ি যে কোন বিষয়ে প্রতিবেদন, কবিতা, গল্প লিখতে পারে। স্ক্রিপ্ট ও অভিযোগপত্রও লিখতে পারে এই চ্যাটবট।
আর্টিকেল লেখায় চ্যাটজিপিটির ব্যবহার আইনসম্মত করার পর বেশ কিছু গবেষণা প্রতিবেদনে এই সফটওয়্যারটিকে সহ-লেখক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। চ্যাটজিটিপির এই হঠাৎ উত্থানে প্রকাশকদের মধ্যে উদ্বেগজনক প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকিগুলো সতর্ক হয়ে উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় জার্নাল সায়েন্স এর সম্পাদক হোল্ডেন থর্প সম্প্রতি সম্পাদকীয় নীতিমালা হালনাগাদ করেছেন। পরিবর্তিত নীতিমালায় চ্যাটজিপিটি থেকে টেক্সট ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। পাশাপাশি এখানে আরো উল্লেখ করা হয় চ্যাটজিপিটিকে কোনভাবেই লেখক হিসেবে উল্লেখ করা যাবে না।
এ প্রসঙ্গে সায়েন্সের সম্পাদক থর্প বলেছেন, ‘চারপাশে যে আলোড়ন উঠেছে সে পরিপ্রেক্ষিতে একটি বিষয় পরিস্কার করে বলা প্রয়োজন আমরা চ্যাটজিপিটিকে কোনভাবেই লেখক হিসেবে অনুমোদন দিব না বা এর কোন টেক্সটও প্রতিবেদনে ব্যবহার করা যাবে না।’
খ্যাতনামা সায়েন্টেফিক জার্নালগুলোয় লেখককে তাদের কাজের জন্য দায়বদ্ধ এমন একটি ফর্মে স্বাক্ষর করতে হয়। চ্যাটজিপিটি যতদিন পর্যন্ত এ ধরনের কাজ করতে সক্ষম হবে না ততদিন এ সফটওয়্যারটিকে লেখক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন থর্প। তিনি মনে করেন চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে কোন গবেষণাপত্র লিখলে তা অবশ্যই ত্রুটিপূর্ণ হবে। কারণ এই চ্যাটবটটিও অনেক ভুল করে। থর্প বলেছেন , সাহিত্যের রিভিউ অথবা গবেষণার সারসংক্ষেপ লেখার জন্য বিজ্ঞানিরা যদি এই প্রোগ্রামের ওপর নির্ভর করে তাহলে কাজের সঠিক প্রেক্ষাপট হারিয়ে যেতে পারে।
অন্যান্য প্রকাশকরাও তাদের নিতিমালায় একইধরনের পরিবর্তন এনেছে। প্রায় তিন হাজার জার্নাল প্রকাশকারি সাময়িকি নেচার গত মঙ্গলবার তাদের নীতিমালা পরিবর্তন করেছে। পরিবর্তিত নিতিমালায় বলা হয়েছে চ্যাজিপিটিকে লেখক হিসেবে উল্লেখ করা যাবে না। তবে নেচার এই সফটওয়্যারটিকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে নি। এর লেখকরা গবেষণাপত্র লিখতে সফটওয়্যারটির সাহায্য নিতে পারবেন।
নেচারের প্রধান সম্পাদক ম্যাগডালেনা স্কিপার বলেছেন, চ্যাটজিপিটি ও এ ধরনের এআই টুলগুলো বিজ্ঞানের জন্য উপকারি হতে পারে। বিশেষ করে অ-নেটিভ ইংরেজিভাষিরা এআই প্রোগ্রাম ব্যবহার করে তাদের গবেষণাপত্রের ভাষাকে আরো সাবলিল করে তুলতে পারবেন।’
নীতিমালায় পরিবর্তন এনেছে সেল ও ল্যানচ্যাটের মতো জার্নাল প্রকাশকারি এলসভিয়ের। অবশ্য গবেষণা প্রবন্ধের পাঠযোগ্যতা ও ভাষার উন্নয়নে তারা চ্যাটজিপিটি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। আরেক সায়েন্টিফিক জার্নাল ইলাইফও চ্যাটজিপিটিকে লেখক হিসেবে উল্লেখের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
বিজ্ঞান বিষয়ক নিবন্ধ প্রকাশকারিদের এ ধরনের পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক স্যান্ড্রা ওয়াচার বলেছেন, ‘প্রকাশকদের এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করতে দেখে খুব ভালো লাগছে।
চ্যাটজিপিটির বিষয়গুলো যদি একেবারে সঠিক হিসেবে ধরে নিয়ে দ্বিতীয়বার চেক করা না হয় তাহলে বিষয়টি খুবই সমস্যাযুক্ত হবে। এটি ভুল তথ্য ও জাঙ্ক বিজ্ঞানের দিকে নিয়ে যেতে পারে। আমি মনে করি শিক্ষা, শিল্প ও সাংবাদিকতার মতো ক্ষেত্রগুলোতেও একইধরনের পদক্ষেপ নেয়া উচিত। কারন এসব ক্ষেত্রও একইধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে।’
গার্ডিয়ান/আরএপি