![]() |
আল-আমীন দেওয়ান : মাত্র কয়েকটি দিন, এই ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মেট্রোরেলের ইতিহাস শুরু।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওইদিন এই ঐতিহাসিক শুরুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন। আর উদ্বোধনের একদিন পরই সাধারণ যাত্রীরা টিকেট কেটে কাঙ্খিত মেট্রোরেলে চড়বেন।
অথচ এখনও এই মেট্রোরেল স্টেশনগুলোতে কার্যকর মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপনে কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি।
মোবাইল ফোন অপারেটররা বলছে, বিপুল লোক সমাগম হতে চলা ইনডোর বিল্ডিং স্টেশনগুলোতে স্বাভাবিক নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করতে ইন-বিল্ডিং সলিউশন প্রয়োজন। কিন্তু তারা তা স্থাপনে কোনো অনুমতি এখনও পাননি ।
আর মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলছে, মোবাইল অপারেটররা এ বিষয়ে স্টেশন নির্মাণের সময়ে বা আরও আগে যোগাযোগ করেনি। এখন স্টেশনের ভেতরে তার-যন্ত্রপাতি এসবে স্থাপনে সৌন্দর্য নষ্ট হবে।
ইতোমধ্যে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন এমটব মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছে যেন, অপারেটররা এমআরটি লাইন-৬ (উত্তর হতে আগারগাঁও) এ নেটওয়ার্ক সলিউশন স্থাপন করতে পারে।
চিঠিতে এমটব লিখেছে, স্টেশনগুলোতে প্রতিদিন বিপুল লোক সমাগম হবে যেখানে ব্যাপক সংখ্যক মোবাইল সংযোগের ব্যবহার হবে। ফলে স্টেশনের ভেতরে এই বাড়তি ডেটা ও ভয়েসের চাহিদা সামাল দিতে সবগুলো অপারেটর একসঙ্গে স্টেশন ভবনের ভেতরে কম্বাইন্ড নেটওয়ার্ক সলিউশন স্থাপন করতে চায়। যা টিকেট কাউন্টার, প্লাটফর্ম, লাউঞ্জ, খাবারের স্টলসহ ট্রেন যাওয়া-আসার সময় হওয়া বেশি লোক সমাগমে স্বাভাবিক নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করবে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, এই নেটওয়ার্ক স্থাপন নিয়ে অপারেটরগুলো এমআরটি লাইন-৬ এর ৯টি স্টেশনে টেকনিক্যাল জরিপ ও সম্ভব্যতা যাচাই করেছে যা তারা মেট্রো কর্তৃপক্ষকে দিয়েছে।
মেট্রো কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে বিটিআরসিও। ওই চিঠিতে লাইন-৬ এ মেট্রোরেল ও স্টেশনগুলোতে মানসম্মত সেবা নিশ্চিতে মোবাইল অপারেটরগুলোর টেকনিক্যাল জরিপ এবং কম্বাইন্ড নেটওয়ার্ক স্থাপনের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করা হয়।
বিটিআরসি বলছে, মেট্রোরেল এবং স্টেশনগুলোতে বিশাল পরিমাণ জনগণের একই সময় ও একত্রে সমাগত হওয়ার কারণে উল্লেখিত স্থানে মোবাইল নেটওয়ার্কের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার আবশ্যকতা রয়েছে।
এমটব মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) এস এম ফরহাদ টেকশহর ডটকমকে বলেন, ‘মেট্রোরেলে মোবাইল নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করতে অপারেটররা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কারিগরি বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা আশা করবো, সরকার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।’
মেট্রোরেল নির্মাণের দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানির (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এমএএন সিদ্দিক টেকশহর ডটকমকে বলেন, ‘স্টেশনগুলোকে দারুণ সুন্দর করে করা হয়েছে। এখন প্রতিটি মোবাইল কোম্পানিকে তার টেনে টেনে, ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে ওখানে কী তাদের পয়েন্ট দেবো ? তাহলে তো পুরো স্টেশনের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে।’
‘আমরা অন্যান্য দেশেও খোঁজ নিয়েছি। মোবাইল কোম্পানিগুলো সবসময়ই এমন করে যে, মেট্রো যখন বানানো হয়ে যায় তারপর তারা এসে বলে আমাদের নেটওয়ার্ক দাও। স্টেশনের ভেতরে স্টেশনের সৌন্দর্য নষ্ট করে আমরা নেটওয়ার্ক বসানোকে নিরুৎসাহিত করছি’ বলছিলেন তিনি।
ডিএমটিসিএল এমডি বলেন, ‘ট্রেনটা ১০০ কিলোমিটার বেগে চলবে। বিদেশে তো ৪০০ কিলোমিটার, সাড়ে ৪০০ কিলোমিটার বেগেও ট্রেন চলে সেখানে কিন্তু নেটওয়ার্কের কোনো সমস্যা হয় না। সেইভাবে নেটওয়ার্কটাকে অপারেটরদের স্থাপন করতে হবে।’
‘অপারেটররা বলছে, ধরেন স্টেশনের এক কিলোমিটারের মধ্যে একটা টাওয়ার আছে। সে টাওয়ার হতে তার এনেএনে স্টেশনের ভেতর ঝুলিয়ে দিতে চাচ্ছে। এখন এতগুলো অপারেটর যদি এমন ঢুকিয়ে দেয়, আবার বলা হচ্ছে কম্বাইন্ডলি দেবো, পরে আবার ভাগ করে করে দূরে নিয়ে যাবো, এগুলো একটা টেম্পোরারি সলিউশন হতে পারে কিন্তু এতে স্টেশনের পুরো সৌন্দর্যটা নষ্ট হয়ে যাবে। স্টেশনের ভেতরে একটা মাকড়াশার জাল তৈরি করবে। আমরা এজন্য এটা এলাউ না করার পক্ষে, ওনাদের নিরুৎসাহিত করছি।’ বলছিলেন এমএএন সিদ্দিক ।
তাহলে নেটওয়ার্ক স্থাপনে বিকল্প ব্যবস্থা কী হবে, এমন জিজ্ঞাসায় ডিএমটিসিএল এমডি বলেন, ‘বিকল্প ব্যবস্থা খুব ইজি। তারা আমাদের স্টেশনের পাশে জায়গায় বা রেলওয়ের যে ট্র্যাক আছে সেখানে বা সরকারি জমি আছে সেখানে বা তার পাশে যেকোনো বিল্ডিংয়ে নেটওয়ার্ক বসিয়ে দেয় তাহলে সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এতে ওনারা সার্ভে করে দেখুক, সেখানে কোনো সহযোগিতা লাগলে আমরা সহযোগিতা করবো।’
উদ্বোধনের পর শুরুতে মেট্রোরেল উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার পথে চলবে। প্রথম সপ্তাহে শুধু সকালে ও বিকালে চলবে। এবপর ধীরে ধীরে বাড়বে চলার সময়। ছয় বগির ট্রেন ছুটবে সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার গতিতে। শুরুতে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত যেতে মেট্রোরেলে সময় লাগবে ২০ মিনিট। পরে পুরোপুরি চালু হলে তা হবে ১৬-১৭ মিনিট।
উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের স্টেশন নয়টি। ভাড়া প্রতি কিলোমিটার ৫ টাকা, সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা।
স্বপ্নের এই মেট্রোরেল নিয়ে নাগরিকদের উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। স্বাভাবিকভাবেই আশাকরা যায় মানুষের ব্যাপক সমাগম হবে।
মোবাইল অপারেটরগুলোর কর্মকর্তা বলছেন, স্টেশনগুলোতে ও মেট্রোরেলে স্বাভাবিকের বেশি ডেটা ব্যবহার করবে মানুষ। উচ্ছ্বসিত মানুষ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করবেন, লাইভ করবেন, ভিডিও কনভারসেশনসহ নানাভাবে ডেটার ব্যবহার ব্যবহার করবেন। আর বিপুল মানুষের এই চাপ সামলাতে অপারেটরগুলোকে দ্রুতগতির নিরবিচ্ছিন্ন সংযোগ নিশ্চিত করতেই হবে।