![]() |
টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : সকালে ঘুম থেকে উঠার পর থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত নানা প্রয়োজন এবং অপ্রয়োজনে আমাদের হাতে থাকে একটি ডিভাইস যা হচ্ছে মোবাইল ফোন।
মোবাইল ফোনের ব্যবহার আমাদের জীবনকে করে দিয়েছে সহজ থেকে সহজতর ।
আগের দিনে মানুষ ছোট আকারের বাটন মোবাইল ফোন ব্যবহার করতো। এসব ফোন দিয়ে কথা বলা, বার্তা পাঠানো এসব সাধারন কাজ করা যেতো।
কিন্তু বর্তমানের স্মার্টফোনগুলো আমাদের জীবন বদলে দিয়েছে। বর্তমানে স্মার্টফোন ডিভাইসগুলো শক্তিশালী কম্পিউটারেরর মতো করেই কাজ করে। যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে এই মোবাইল ফোন।
তবে অতি প্রয়োজনীয় এই মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার কিন্তু আমাদের জীবনকে তিক্ত করে তুলতে পারে। তাই মোবাইল ফোনের সীমিত ও প্রয়োজনেই ব্যবহার করতে হবে।
মোবাইল ফোন ছাড়া আমরা বর্তমানে একটি দিন কল্পনা করতে পারি না। দৈনন্দিন জীবনের অনেক ছোটখাট অথবা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আমরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে পারি। তবে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিল্পব ঘটে গিয়েছে। হাতে থাকা স্মার্টফোনের মাধ্যমে আমরা পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে থাকা কারো সাথে কথা বলতে পারি ,তাকে দেখতে পারি।
মোবাইল ফোন ব্যবহার করে ছোটখাট সুবিধার মধ্যে অন্যতম চটজলদি সময় দেখতে পাওয়া। আগে যখন মোবাইল ফোন ছিলো না তখন ঘড়ি ছাড়া সময় জানা অসম্ভব ছিলো। কিন্তু এখন হাতে থাকা ফোনের স্ক্রিনে তাকালেই জেনে যাই তখন কয়টা বাজে। এছাড়া মোবাইল ফোনে অ্যালার্ম সেট করতে পারি, এতে থাকা ক্যালকুলেটরে হিসাব কষতে পারি। কল ও মেসেজিংয়ের মাধ্যমে একে অন্যের সাথে সহজেই যোগাযোগ করা যায়।
বর্তমান যুগে মোবাইল ফোনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো ইন্টারনেটের ব্যবহার। ইন্টারনেটের কারণেই আমরা মোবাইলে ভিডিও চ্যাট ফিচার ব্যবহার করতে পারি। এছাড়া মোবাইল ফোনে এফএম দেওয়ার কারণে আমাদের রেডিও শোনার জন্য আলাদাভাবে ডিভাইস কিনতে হয় না। ফলে মোবাইল ফোনে আমরা সহজেই এফএমের যেকোন অনুষ্ঠান শুনতে পারি।
মোবাইল ফোনের আরেকটি বড় সুবিধা হলো ছবি তোলা। আগে ছবি তোলার জন্য সবাই ক্যামেরার প্রয়োজনবোধ করলেও এখন আর অভাব বোধ করে না। কারণ হাতে থাকা মোবাইল ফোনেই ভালো রেজ্যুলেশনের চমৎকার সব ছবি উঠানো যায়।
এছাড়া আগে কাগজ-কলম ছাড়া লেখার মাধ্যম কম্পিউটার হলেও এখন লেখালেখির কাজগুলোও মোবাইলে সারা যায়। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কোন তথ্য বা কথার রেকর্ডিং করা যায়।
মোবাইল ফোনের আসক্তি নিয়ন্ত্রনে কার্যকরি উপায়: যে কোন জিনিসই অতিরিক্ত ভালো নয়। এই যে আমাদের অতি প্রয়োজনীয় মোবাইল ফোন-এটির অতিরিক্ত ব্যবহারও মঙ্গল বয়ে আনে না। খোদ মোবাইল ফোনের উদ্ভাবক মার্টিন কুপারই ডিভাইসটি ব্যবহার কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন। ৯৩ বছর বয়সী মার্টিন কুপার সম্প্রতি বিবিসির ব্রেকফাস্ট অনুষ্ঠানে এক আলোচনায় বলেছেন, মোবাইল ফোনের ব্যবহার কমিয়ে জীবন উপভোগ করা উচিত। তিনি জানিয়েছেন, নিজে মোট সময়ের ‘পাঁচ শতাশেরও’ কম মোবাইল ফোনে ব্যবহার করেন।
মোবাইল ফোন আমাদের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সময় অপচয় করছে। কাছে থাকা ও পাশে থাকা মানুষের সাথেও দূরত্ব সৃষ্টি করছে। রাত জেগে মোবাইল দেখার কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে; স্মৃতিশক্তি কমে যাচ্ছে। কারো কারো কাছে মোবাইল ফোন রীতিমতো আসক্তিতে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে তরুন প্রজন্মের মধ্যে মোবাইল আসক্তি প্রবল। মোবাইল ফোন আসক্তির সাথে ডিপ্রেশনের ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র খোঁজে পাওয়া গিয়েছে। কিশোরদের সংঘবদ্ধ চক্রগুলো মোবাইল ফোন ব্যবহার করে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। বর্তমানে শিশুদের মা-বাবারা মোবাইল ফোন তুলে দিচ্ছেন । এতে করে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে মোবাইল ফোনের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার খুবই প্রয়োজনীয়।
এই মোবাইল ফোন ব্যবহারের আসক্তি নিয়ন্ত্রনেও রয়েছে কিছু কৌশল। নিচে এমনই কিছু কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ
মোবাইল ফোনের আসক্তি দূর করতে সবার প্রথমে নিজের মনকে ঠিক করতে হবে। অর্থাৎ প্রয়োজন ছাড়া ফোন ব্যবহার করা হবে না এমন অটল সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে হবে। কারণ নিজের মনকে নিয়ন্ত্রন না করলে মোবাইল আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না।
মোবাইল ব্যবহার কমাতে কোনভাবেই নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারছেন না? মোটামুটি সব সমস্যার জন্য যেমন অ্যাপস রয়েছে এখানেও তাই। ডিভাইসে আমরা কতোটা সময় কাটাবো তা সীমাবদ্ধ করে দেয়ার জন্য চমৎকার কিছু অ্যাপস রয়েছে। এই অ্যাপসগুলো মোবাইলে ইনন্সটল করে নিলে মোবাইল ব্যবহার অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। এ ধরনের কয়েকটি অ্যাপস হলো-
স্পেস অ্যাপস টি ইনন্সটল করে কতসময় ডিভাইস বা মোবাইল ব্যবহার করতে চান তার একটি লক্ষ্য নির্ধারন করতে হবে। এরপর নিজের অভ্যাসটি পরিচালনা করতে দৈনন্দিন অগ্রগ্রগতি ট্র্যাক করা যায়।
বিভ্রান্তিকর অ্যাপগুলো লক করতে ফ্লিপড অ্যাপ খুবই কার্যকরি। মোবাইল ফোন ব্যবহারের অভ্যাস কমিয়ে আনতে ফ্লিপড খুবই শক্তিশালী একটি অ্যাপ। অ্যাপটি ইনন্সটল করার পর টাইমার সেট করে দিলেই হয়। যেমন-আপনি এখন ৪০ মিনিট পড়াশোনা করতে চাচ্ছেন। এক্ষেত্রে ৪০ মিনিট স্টপওয়াচ টাইমার সেট করলেই হলো। স্পটওয়াচ শুরু হওয়ার পর থেকেই ফ্লিপড টাইমার সময় গননা শুরু করবে। শিক্ষার্থীদের জন্য এই অ্যাপটি খুব উপকারী।
স্টে ফ্রি অ্যাপ ব্যবহার করে বিভিন্ন অ্যাপ ও ওয়েবসাইট বøক করা যায়। অ্যাপসটি মোবাইলের স্ক্রিনে ডিভাইসটি কতো সময় ধরে ব্যবহার করা হচ্ছে তা দেখায়। একে মূলত স্ক্রিন টাইম ট্র্যাকার ও লিমিট অ্যাপ উইজেস বলা হয়।
ফোনের সেটিস পরিবর্তন করে খুব সহজেই এর ব্যবহার কমিয়ে আনা যায়। সেটিস পরিবর্তনের কিছু কৌশল হচ্ছে-
-নোটিফিকেশন আসা বন্ধ করা
-মোবাইলের স্ক্রিনের ও সাদা-কালো করে রাখা
-হোম স্ক্রিন থেকে বিভ্রান্তিকর অ্যাপসগুলো সরিয়ে ফেলা
-তুলনামূলক অনেক বড় ও কঠিন পাসওয়ার্ড ব্যবহার
-এয়ারপ্লেন মোড ব্যবহার করা
-ডু নট ডিসটার্ব মোড চালু
মোবাইল ফোন থেকে অপ্রয়োজনীয় সব নোটিফিকেশন (শব্দ, ব্যানার, ভাইব্রেশন) বাদ দিতে হবে। কারণ মোবাইলে নোটিফিকেশনের কোন শব্দ শুনতে পেেেলই আমরা ফোন হাতে নেয়ার পর দেখা যায় নির্দিষ্ট নোটিফিকেশন দেখা হয়ে গেলেও স্ক্রল করতেই থাকি। এভাবে নিজের অজান্তেই দীর্ঘসময় মোবাইল দেখা হয়ে যায়। তাই যেসব অ্যাপের নোটিফিকেশন প্রয়োজন নেই সেগুলো অফ করে রাখতে হবে।
মোবাইল ফোন কতক্ষন ব্যবহার করা হবে তার একটি সময় নির্ধারন করলে আসক্তি অনেকটাই দূর করা সম্ভব হয়। কোন অ্যাপ কতক্ষণ ব্যবহার করা যায় তার সময় নির্ধারন করে রাখতে । প্রয়োজনে মোবাইল ফোনের স্ক্রিন চালুর টাইম নির্দিষ্ট করে নেয়া যায়।
মুঠোফোনে আসক্তি কমাতে কাজ ও ঘুমের সময় ফোনটি দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। কাজ করার সময় মোবাইল ফোন সাইলেন্ট করে রাখা যায় অথবা নাগাল থেকে দূরে রাখলে ফোনের ব্যবহার কমে আসে। শয়নকক্ষে ফোন চার্জ দেয়াও বন্ধ করতে হবে। এছাড়া বাইরে হাটতে গেলেও আমরা ফোনটি বাসায় রেখে যেতে পারি। এক্ষেত্রে ব্যবহার কমবে।
অনেকেই মোবাইল ফোন দীর্ঘ সময় ব্যবহার করতে ফোনটি চার্জ দেয়া অবস্থাতেই চালাতে থাকে। মনে রাখতে হবে এভাবে মোবাইল ব্যবহার করলে তা ডিভাইসের জন্য ক্ষতিকর। কারণ তখন ব্যাটারি অনেক গরম হয়ে যায়। উচ্চ তাপমাত্রা ব্যাটারির প্রধান শত্রæ। তাই চার্জ থাকা অবস্থায় ফোন কোনভাবেই ব্যবহার করা যাবে না এ বিষয়ে মন স্থির রাখতে হবে।
মোবাইল ফোন ব্যবহার কমানোর একটি মজার কিন্তু কার্যকরী উপায় হচ্ছে ফোনের মাঝ বরাবর একটি হেয়ারব্যান্ড জড়িয়ে রাখা। ব্যান্ডটি মোবাইল ফোনের মাঝখানে রাখলে কল আসলে রিসিভ করা যাবে কিন্তু ফোনের অন্যান্য ব্যবহার বেশ কঠিন হবে। এমনকি এ অবস্থায় সাধারন টেক্সট ম্যাসেজও লেখা যাবে না।
মোবাইল আসক্তি যাদের রয়েছে তারা গড়ে কমপক্ষে ছয়ঘন্টা ফোন দেখার পেছনে ব্যয় করে। অথচ এই সময় অনেক কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যেতো। তাই নিজের ভালোর জন্যই মোবাইল আসক্তি কমিয়ে আনতে হবে। এক্ষেত্রে মোবাইল আসক্তি কমাতে নিজের মনকে কঠোর করতে হবে ও লক্ষ্যে অবিচল থাকতে হবে। তাহলেই ধীরে ধীরে মোবাইল আসক্তি কমে আসবে।