রবিকে কতটা নতুন পথে নেবেন নতুন সিইও ?

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন রবির নতুন সিইও রাজীব শেঠি

আল-আমীন দেওয়ান : সিইও হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে রবির মাইক্রোফোন হাতে রাজীব শেঠি সাংবাদিকদের প্রথম যে প্রশ্নের মুখোমুখি হলেন, রবিকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে কীসে গুরুত্ব দেবেন ?

স্মিত হাসি রাজীব শেঠির, অভিজ্ঞতার প্রাচুর্যে তাঁর পক্ষে এটা অনুমেয়ই যে এমন প্রশ্ন হতোই । স্বাভাবিকভাবেই নতুন দায়িত্ব নেয়ার ক্ষেত্রে লক্ষ্যটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

উত্তর দিতে গিয়ে রাজীব আমাদের মনে করিয়ে দিলেন, দেশে তার কোম্পানি ফোরজি সেবায় এগিয়ে আছে। ডেটাকে ভিত্তি করেই তিনি মূল পরিকল্পনা সাজাতে চান। ডিজিটাল সেবাকে তার গুরুত্বে অগ্রাধিকারে রাখতে চান।

Techshohor Youtube

উল্লেখ করলেন, প্রায় সাড়ে ৫ কোটি গ্রাহকের ৫০ দশমিক ৯ শতাংশ গ্রাহক ফোরজি ব্যবহারকারী এবং যার ৬৭ দশমিক ৩ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। আর মোট গ্রাহকের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা সর্বোচ্চ ৭৫ দশমিক ৫ শতাংশ। দেশজুড়ে ফোরজি কাভারেজের দিক হতে ৯৮ দশমিক ২ শতাংশের কাছে তারা পৌঁছেছেন।

বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে রবিকে নিয়ে কার্যকর কোনো কৌশল সাজানো রাজীবের জন্য বরং সহজই। কারণ এখানকার এই খাতের পথঘাটে তিনি আগে হেঁটে গেছেন। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে গ্রামীণফোনের সিইও হিসেবে এসেছিলেন এবং ২ বছরের বেশি সময় অপারেটরটির নেতৃত্ব দিয়েছেন।

আর ২০২২ সালের অক্টোবরে রবিতে যোগ দিয়ে বুধবার অপারেটরটির প্রধান কার্যালয়ে প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন তিনি।

নিজেদের সফলতার তথ্য তুলে ধরে ভবিষ্যত গন্তব্যের কথা জানাচ্ছে রবি

প্রথম প্রশ্নের সঙ্গেই জানতে চেয়েছিলাম, বাজার আপনার পূর্বপরিচিত কিন্তু মাঝখানে অর্ধযুগেরও বেশি সময়। তখন আর এখনকার কী পরিবর্তন চোখে পড়ছে ?

‘ছয় বছর আগে নতুন দায়িত্ব নিয়ে যখন বাংলাদেশ ছেড়ে যাই তখন থ্রিজির সময় ছিলো, মোবাইল অপারেরগুলো সারাদেশে থ্রিজি সম্প্রসারণে কাজ করছিলো। আর এখন সারাদেশ ফোরজি কাভারেজের মধ্যে এসেছে’ বলছিলেন রাজীব শেঠি।

তিনি বলছিলেন, ‘ব্যাপক পবিবর্তন এসেছে মানুষের চাহিদায়। নীতিনির্ধারক হতে শুরু করে সবখানেই এক্সপেক্টেশন বা আশা বেড়েছে। থ্রিজি হতে ফোরজি একদম আলাদা প্রযুক্তি। প্রায় একই গতির সেবা দিতে গিয়ে ৫ বছরের মাথায় অপারেটরগুলোকে আবার ব্যাপক বিনিয়োগ করতে হয়েছে। এই বিনিয়োগকারীদের এর বিপরীতে রিটার্নটা এখন চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।’

ডেটা ব্যবসা, ডিজিটাল সেবা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের প্রসঙ্গ আসতেই বললেন, স্মার্টফোন পেনিট্রেশন বড় চ্যালেঞ্জ । এখানে এখনও টুজি নির্ভরতা বেশি।

এসব সেবা নিয়ে, সাধারণ ব্যবহারকারীদের ফাইভজি ব্যবহার নিয়ে আমরা থাইল্যান্ডের সঙ্গে তুলনা করছিলাম, ওরা পারলে আমরা কেনো পারছি না ?

রবি সিইও বাংলাদেশের সঙ্গে এই তুলনাকে যৌক্তিক বলতে চান না। তিনি বলছেন, ধরেন মিয়ানমার। ওরা শুরুই করেছে থ্রিজি দিয়ে আর বাংলাদেশ সেখানে টুজি হতেই বের হতে পারেনি। প্রত্যেকটি দেশের ইকোসিস্টেম ও প্রেক্ষাপট আলাদা। সেবার চাহিদাও আলাদা। তাই প্রতিটি দেশের জন্য কৌশলও আলাদা হবে।

জানতে চাওয়া হলো নিয়ন্ত্রণ সংস্থা, রেগুলেশন নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। আসলে আমরা বলতে চাইছিলাম, অপারেটরদের মুখে আমরা প্রায়ই শুনি, বাংলাদেশে রেগুলেটর একটু কঠিনই । রাজীবের যেহেতু আগেই বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা আছে…

‘সত্যি বলতে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা টেকনিক্যালি অনেক দক্ষ। কলেবরও বড়। অনেক দেশেই বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ সংস্থার মতো এতো ব্যাপকভাবে কাজ করে না’ বলছিলেন রবির নবনিযুক্ত এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

মানসম্মত সেবার ক্ষেত্রে কোন কাজটি এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন ?

ফাইবারাইজেশন। ফোরজির কাঙ্খিত গতি, নেটওয়ার্কের মান উন্নত করা এমনকি ভবিষ্যতের ফাইভজি নেটওয়ার্কের জন্য ফাইবারাইজেশন যতো বেশি হবে এ খাত ততোটা এগিয়ে থাকবে বলে মত রাজীব শেঠির।

বাজারে প্রতিযোগীদের কেমন দেখছেন ?

এখানে রাজীব গ্রামীফোন বা বাংলালিংক কী করছে তার চেয়ে বেশি নিজের দিকে মনোযোগ দিতে চান। নিজের গ্রাহকদের আরও ভালো সেবা দিতে চান। গ্রাহকদের অবাস্তব কোনো প্রতিশ্রুতি না দিয়ে বাস্তবসম্মত জায়গাটায় উন্নতি ঘটাতে চান। গুরুত্ব দিতে চান গ্রাহকরা কী চায় সেখানে।

রাজীব শেঠির সঙ্গে প্রশ্নোত্তরে ছিলেন রবি চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম

সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিলো, তিনি যখন গ্রামীণফোনের সিইও ছিলেন, তখন দেশে লিস্টেড কোম্পানি হিসেবেই দায়িত্ব সামলেছেন। এবার রবিও লিস্টেড কোম্পানি। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বস্তির জায়গাটা নিশ্চিত করতে পারবেন তিনি ?

রবি সিইও এখানে বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদী লাভের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে চান। তিনি বলছেন, রবিতে বিনিয়োগ করার জন্য বিনিয়োগকারীরা একসময় খুশি হবে।

এ প্রসঙ্গে আলোচনায় আরেকটি প্রসঙ্গ যোগ করেন রবি চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম।

তিনি নিয়ন্ত্রণ সংস্থার বিভিন্ন সিদ্ধান্তকে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক বলছেন। হয়তো বিটিআরসি বা বিএসইসির কোনো সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারীদের উপর প্রভাব ফেলছে। দুই অপারেটর মিলে ২ লাখের বেশি বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজারে রয়েছেন। শেয়ারবাজার হাব অব ক্যাপিটাল। তাই সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী ও গ্রাহক স্বার্থ সামগ্রিকভাবে বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার অনুরোধ তাঁর।

রাজীব শেঠি বলছিলেন, মোবাইল ফোন অপারেটরদের উপর নির্ভর করে দেশের হাজার হাজার কোাটি টাকার ব্যবসা। এমএফএসসহ কতো খাত আমাদের নেটওয়ার্কের উপর চলছে। বিদ্যুতের মতো অপরিহার্যতা তৈরি হয়েছে এখানে। আর এই মহাযজ্ঞ চালাতে নেটওয়ার্ক ঠিক রাখতে বিনিয়োগের পর বিনিয়োগ করে যাচ্ছি আমরা।

আলাপ চলছিলো, রবির বিভিন্ন ডিজিটাল সেবার তথ্য জানাচ্ছিলেন তিনি। বিডিঅ্যাপসে প্রতিমাসে গ্রাহকদের সঙ্গে রবির লেনদেন এখন ৫৮ কোটি টাকা। যেখানে ৫২ শতাংশই হয় মাই রবি ও মাই এয়ারটেল অ্যাপে। তাদের মোট রিচার্জের ৩৮ শতাংশ হয় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। তাই ডিজিটাল যুগের পরববর্তী ধাপে পৌঁছাতে তারা একদম তৈরি।

রবি সিইও বলছিলেন, যাই বলা হোক না কেনো, মূল জায়গাটা হলো গ্রাহককে ভালো সেবা দেয়া।

অনুষ্ঠানে জানলাম, তিনি বাংলা ভাষাটা ভালো বোঝেন। তার প্রমাণও অবশ্য দিয়েছেন, বাংলায় করা বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে। আশাকরি এখানকার গ্রাহকদের চাওয়াটাও তিনি ভালো বুঝবেন।

*

*

আরও পড়ুন