বাংলাদেশে অনলাইনে ই পাসপোর্ট আবেদন, খরচ এবং যাচাই করার সহজ ও সঠিক নিয়ম

ই-পাসপোর্ট কি?

ই-পাসপোর্ট হলো এমবেডেড ইলেকট্রনিক  মাইক্রোপ্রসেসর চিপ সমৃদ্ধ পাসপোর্ট যাতে অ্যান্টেনা বসানো থাকে। যেখানে থাকে পাসপোর্টধারী ব্যক্তির ছবি, আঙ্গুলের ছাপ, আইরিশসহ ব্যক্তিগত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। এই পাসপোর্টকে ডিজিটাল বা বায়োমেট্রিক পাসপোর্টও বলা হয়ে থাকে। দেখতে মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের মত হলেও ই-পাসপোর্টে পাসপোর্টধারী ব্যক্তির  পরিচয় সংবলিত দুইটি পাতার পরিবর্তে পলিমারের তৈরি কার্ড থাকবে। ই-পাসপোর্টে স্মার্ট কার্ড প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাইক্রোপ্রসেসর চিপ এবং অ্যান্টেনা বসানো হয়।

মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ও ই-পাসপোর্টের মধ্যে পার্থক্য 

মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ও ই পাসপোর্টের মধ্যে মুল পার্থক্য হলো,  প্রথমটিতে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা যাচাই বাছাই করে সিল প্রদান করেন আর ই-পাসপোর্টবাহী ব্যক্তি যান্ত্রিক পদ্ধতিতে নিজেই ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে পারবেন। পরবর্তীতে ইমিগ্রেশন অফিসারের মাধ্যমে আসা বা যাওয়ার সিল গ্রহন করতে হবে।

ই-পাসপোর্ট কেন করবেন? এবং ই-পাসপোর্টের সুবিধাগুলো কি কি? 

ই-পাসপোর্ট ব্যবহারকারীরা ই-গেটের মাধমে খুব দ্রুত ও সহজে যাতায়াত করতে পারবেন। যার ফলে লাইনে দাঁড়িয়ে  ভিসা চেক করাতে হবে না ফলে দ্রুত সময়ে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা যায়। ই-গেটের নির্ধারিত স্থানে পাসপোর্ট রেখে দাঁড়ালে ক্যামেরা ছবি নিয়ে রাখবে, থাকবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাইয়ের উপায়। সব ঠিক থাকলে তাকে ইমিগ্রেশন পেরোবার অনুমতি দেয়া হয়, কোন বিষয়ে গরমিল থাকলে সতর্কতামূলক লালবাতি জ্বলে উঠবে। কারও বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকলে, সঙ্গে সঙ্গে তা জেনে যাবে কর্তৃপক্ষ। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইসিএও) এর পরিচালনাধীন থাকায় ইন্টারপোল, বিমান ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সহজেই এসব তথ্য যাচাই করতে পারে।  ৩৮টি নিরাপত্তা সমৃদ্ধ ই-পাসপোর্ট নকল করা প্রায় অসম্ভব।

Techshohor Youtube

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট চালু করেছে। ঘরে বসে কারও সাহায্য ছাড়াই ই-পাসপোর্ট করার জন্য অনলাইনে আবেদন করা যায় একটি ফোন বা কম্পিউটারের মাধ্যমে । সেক্ষেত্রে জেনে নিতে হবে নিজের জেলায় ই-পাসপোর্ট সেবা প্রদান করা হচ্ছে কি না ।

ই পাসপোর্ট করার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সমূহ

ই-পাসপোর্ট আবেদন করতে যে সকল গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র দরকার হয় তা সত্যায়িত করা প্রয়োজন নেই। এগুল হলো-

১. অনলাইনে আবেদনের সারসংক্ষেপ

২. আবেদনের কপি

৩. জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ

৪. ঠিকানার প্রমাণপত্র বা ইউটিলিটি বিলের কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)

৫. পূর্ববর্তী পাসপোর্টের ফটোকপি ও অরিজিনাল পাসপোর্ট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)

৬. পিতা ও মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি (অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য আবশ্যক)

৭. পেশাজীবির ক্ষেত্রে পেশাগত সনদের ফটোকপি বা চাকুরীর আইডি কার্ড

৮. নাগরিক সনদ বা চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)

ই পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন করার নিয়ম

অনলাইনে ই-পাসপোর্ট করার জন্য শুরুতে সরকারী ওয়েবসাইট www.epassport.gov.bd তে ভিজিট করে জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন তথ্য অনুসারে আবেদন করতে হবে। এখানে সকল ব্যক্তিগত তথ্য, পিতা-মাতার তথ্য ও আবেদনকারীর ঠিকানা নির্ভুলভাবে লিখতে হবে। অনলাইন আবেদনের সময় কোন সত্যায়িত কাগজ ও ছবি সংযোজন করতে হবে হবে না।

পাসপোর্ট আবেদন ফরম অনলাইনে পূরণের ক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু নিদের্শনাবলী অনুসরণ করতে হবে।

অনলাইন আবেদনের সময়  www.epassport.gov.bd তে প্রবেশের পর এপ্লাই অনলাইন মেন্যুতে ক্লিক করে আঞ্চলিক অফিস ও থানা নির্বাচন করতে হবে। এরপর ইমেইল ভেরিফিকেশন শেষে ব্যক্তিগত তথ্য, পূর্ববর্তী পাসপোর্টের তথ্য,পিতা-মাতার তথ্য, পূর্ণ ঠিকানা ও জরুরী যোগাযোগের ঠিকানা পূরণ করতে হবে। এরপর পাসপোর্ট ডেলিভারীর ধরণ সিলেক্ট করে আবেদন প্রক্রিয়া শেষ করে আবেদনের প্রিন্ট কপি সংগ্রহ করতে হবে।

 পাসপোর্ট আবেদনকারীর বয়স ১৮-২০ বছরের মধ্যে হলে, জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন যে কোন একটি দিয়ে আবেদন করা যাবে। ২০ বছরের বেশি বয়সী হলে অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর প্রদান করতে হবে । এনআইডি বা স্মাট এনআইডি কার্ড না থাকলে জাতীয় পরিচয়পত্রের অনলাইন কপি ডাউনলোড করতে করে পিতা মাতা, স্বামী বা স্ত্রীর নাম জাতীয় পরিচয়পত্র অনুসারে লিখতে হবে। জরুরী প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য পরিবারের বাবা, ভাই বা অন্য কারো নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর দিতে হবে।

ই পাসপোর্ট এর ফি

পাসপোর্টের ফি’র পরিমান এর পৃষ্ঠা সংখ্যা, মেয়াদ ও ডেলিভারীর ধরণ অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। সর্বনিম্ন ৪০২৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৩,৮০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে একটি ই পাসপোর্ট করাতে । অনলাইন সেবার দোকান থেকে আবেদন করালে বাড়তি ২০০ টাকা খরচ হতে পারে। এছারা পাসপোর্ট অফিসে কোন বাড়তি চার্জ নেই। ই পাসপোর্টের ফি মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ঘরে বসেও প্রদান করা যায় ।

৪৮ পাতার রেগুলার ই-পাসপোর্ট ফি ৫ বছরের জন্য ৪,০২৫ টাকা ও ১০ বছরের জন্য ৫,৭৫০ টাকা

৪৮ পাতার এক্সপ্রেস ই-পাসপোর্ট ফি ৫ বছরের জন্য ৬,৩২৫ টাকা ও ১০ বছরের জন্য ৮,০৫০ টাকা

৪৮ পাতার সুপার এক্সপ্রেস ই-পাসপোর্ট ফি ৫ বছরের জন্য ৮,৬২৫ টাকা ও ১০ বছরের জন্য ১০,৩৫০ টাকা। 

৬৪ পাতার রেগুলার ই-পাসপোর্ট ফি ৫ বছরের জন্য ৬,৩২৫ টাকা ও ১০ বছরের জন্য ৮,০৫০ টাকা

৬৪ পাতার এক্সপ্রেস ই-পাসপোর্ট ফি ৫ বছরের জন্য ৮,৬২৫ টাকা ও ১০ বছরের জন্য ১০,৩৫০ টাকা

৬৪ পাতার সুপার এক্সপ্রেস ই-পাসপোর্ট ফি ৫ বছরের জন্য ১২,০৭৫ টাকা ও ১০ বছরের জন্য ১৩,৮০০ টাকা।  

ই-পাসপোর্ট ফি জমা দিতে করনীয়

ই-পাসপোর্ট ফি জমা দিতে খেয়াল রাখতে হবে-

  • আবেদনকৃত পাসপোর্টের পৃষ্ঠা সংখ্যা ও মেয়াদ উল্লেখ করা
  • আবেদনকৃত পাসপোর্টের ডেলিভারীর ধরন নিশ্চিতকরণ 
  • এনআইডি নাম্বার বা জন্ম নিবন্ধন নাম্বার
  • আবেদন পত্র অনুসারে নাম ও বর্তমান ঠিকানা
  • আবেদনকারীর মোবাইল নাম্বার

অনলাইনে ফি জমা দিতে A Challan ওয়েবসাইটে গিয়ে ই পাসপোর্ট সিলেক্ট করে পাসপোর্টের পৃষ্ঠা সংখ্যা, মেয়াদ ও ডেলিভারি ধরন বাছাই করতে হয়। এসময় স্বয়ংক্রীয়ভাবে যে টাকার পরিমাণ দেখাবে সেখানে OK বাটন ক্লিক করতে হবে। এনআইডি নাম্বার, নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নামাবার লিখতে হবে। এরপর সুবিধামত ব্যাংক বাছাই করে পেমেন্ট করতে হবে। একাউন্টের পাশাপাশি ভিসা কার্ড, মাস্টার কার্ড, অ্যামেক্স কার্ড বা মোবাইল ব্যাংকিং অপশন সিলেক্ট করে পেমেন্ট করা যাবে। পেমেন্ট করে চালানের প্রিন্ট কপি সংগ্রহ করতে হবে। নাম লেখার ক্ষেত্রে অবশ্যই পাসপোর্ট আবেদন ব্যবহৃত নাম হুবহু এন্ট্রি করতে হবে। এই চালানে পাসপোর্ট আবেদনের নামের সাথে বানানে পার্থক্য থাকলে চালান গৃহীত হবে না।

এছাড়া খেয়াল রাখতে হবে, আবেদনের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে আবেদন করলে অবশ্যই সে নম্বর দিতে হবে। আর যাদের বয়স ২০ বছরের কম ও জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তাদের ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন পত্রের সংখ্যাগুলো শুদ্ধভাবে দিতে হবে।

মোবাইল ব্যাংকিং তথা নগদ, রকেট ও বিকাশের মাধ্যমে ই পাসপোর্টের টাকা জমা দেয়া যাবে। সেক্ষেত্রে পাসপোর্ট ফি জমা দেয়ার জন্য, সোনালী ব্যাংক সিলেক্ট করতে হবে। সেইভ বাটনে ক্লিক করলে আবেদনকারীকে সোনালী ব্যাংকের পেমেন্ট গেটওয়েতে নিয়ে যাওয়া হবে। মোবাইল ব্যাংকিং বাটনে ক্লিক করে পেমেন্ট করতে হবে। উদাহরনস্বরুপ, Pay with bKash বাটনে ক্লিক করলে বিকাশের পেমেন্ট অপশন আসবে ও মোবাইল নম্বর চাইবে। বিকাশ নম্বরে এসএমএসের মাধ্যমে একটি ভেরিফিকেশন কোড দেয়া হবে। ভেরিফিকেশন কোড ও বিকাশের পিন দিয়ে পেমেন্ট করতে হবে। সোনালী ব্যাংকের অনলাইন একাউন্ট, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড থেকেও পেমেন্ট  করার সুযোগ আছে।

পেমেন্ট করার সময় খুব সতরকভাবে খেয়াল রাখতে হবে, ইন্টারনেট কানেকশন যেন বিছিন্ন না হয় এবং কম্পিউটার ডিভাইস বা মোবাইল যাতে বন্ধ হয়ে না যায়। অনেক সময় একাউন্টের টাকা কেটে নেওয়ার পরও লেনদেনটি সফল হয়নি বা Transaction Failed এমন মেসেজ দেখাতে পারে। ে সময় ঘাবড়ে না গিয়ে পেইজটি ওপেন রাখতে হবে, কন অবস্থাতেই ক্লোজ করা যাবে না। ওই পেইজের লিংক থেকে চালান নম্বর সংগ্রহ করে পরে চালান ডাউনলোড করতে হবে। সেক্ষেত্রে পেইজের লিংকটি কপি করে নিরাপদে সেইভ করতে হবে। এরপর লিংকের মধ্যে যে নাম্বারটি থাকবে, সেই চালান নাম্বারটি সংগ্রহ করতে হবে। এরপর অনলাইন চালান ভেরিফিকেশন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে লিংকে পাওয়া চালান নম্বরটি দিয়ে চালানটি সার্চ করতে হবে। এখানে প্রথম বক্সে চার ডিজিট ও পরের বক্সে এগারো ডিজিট লিখে ভেরিফাই বাটনে ক্লিক করতে হবে। এখান থেকে প্রাপ্ত চালানটি পিডিএফ ফাইল করে সেইভ বা প্রিন্ট করতে হবে।

অনলাইনে ছাড়াও ব্যাংকিং সময়ের মধ্যে যে কোন সময়, সরাসরি ব্যাংক কাউন্টার থেকেও এ চালানের মাধ্যমে ই পাসপোর্টের টাকা জমা দেবার সুযোগ আছে। এসময় ই পাসপোর্ট আবেদনের সামারি এবং রেজিস্ট্রেশন ফর্ম প্রয়োজন হবে।চালান পরিশোধের পর ব্যাংক অফিসারের থেকে চালান ফরমের প্রিন্ট কপি সংগ্রহ করে তা ই-পাসপোর্ট ফি-র চালান কপির এনরোলমেন্টের সময় আবেদনের সাথে পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হবে।

পাসপোর্টের টাকা জমা দেওয়ার ব্যাংকঃ

যে সমস্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি অনলাইনের মাধ্যমে পাসপোর্টের টাকা জমা দেয়া যায়ঃ

১. এবি ব্যাংক

২. ব্যাংক এশিয়া

৩. অগ্রণী ব্যাংক

৪. বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক

৫. ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড

৬. ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড

৭. ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড

৮. ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক

৯. ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড

১০. মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেড

১১. এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড 

১২. ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড

১৩. সোনালী ব্যাংক

১৪. সাউথ ইষ্ট ব্যাংক লিমিটেড

১৫. প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড

বিদেশ থেকে ই পাসপোর্ট ফি জমা দেওয়ার নিয়ম

বিদেশে অবস্থানরত বিভিন্ন মিশনেও ই পাসপোর্ট কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরবে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ই পাসপোর্ট আবেদন ও রিনিউ করা যাবে।

অনলাইন এপ্লিকেশন ও পাসপোর্ট ফি জমা দেয়া শেষ হলে আবেদনের সময় পাওয়া বায়োমেট্রিক এনরোলমেন্টের দিন সকল কাগজপত্র নিয়ে পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে। এ যেসকল কাগজপত্র সাথে নেয়া জরুরি। 

১. ই-পাসপোর্টের এপ্লিকেশন ফরম

২. ব্যাংকে জমাকৃত টাকার রিসিট

৩. জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি

৪. বর্তমান ঠিকানার ইউটিলিটি বিলের ফটোকপি

৫. পুরাতন পাসপোর্টের ফটোকপি (যদি থাকে)

৬. কর্মস্থলের অনাপত্তিপত্র (মুল কপি)

৭. কর্মস্থলের পরিচয়পত্রের ফটোকপি (প্রয়োজন হয় না তবে চাকুরীজীবী হলে সাথে রাখা ভালো)

৮. পুরাতন পাসপোর্টে অবিবাহিত বর্তমানে বিবাহিত হলে ম্যারেজ সার্টিফিকেট এবং কাবিননামার ফটোকপি দুইটাই জমা দিতে হবে।

এ সকল কাগজপত্র নিয়মানুযায়ী নেয়া হলে, সব এক সেট করে পাসপোর্ট অফিসের লাইনে দাঁড়াতে হবে এবং সিরিয়াল নম্বর নিয়ে নির্দিষ্ট রুমে চলে যেতে হবে। সেখানে কর্তব্যরত অফিসার এপ্লিকেশন ফর্মের সাথে পুরাতন পাসপোর্টের (যদি থাকে) এবং এনআইডি কার্ডের তথ্য মিলিয়ে নিবেন।

সকল কিছু ঠিক থাকলে বায়োমেট্রিকের জন্য রুম নম্বর লিখে দিয়ে নির্দিষ্ট রুমে পাঠানো হবে। সেখানে সকল কাগজের স্ক্যান কপি, আবেদনকারীর  ছবি, আঙ্গুলের ছাপ, আইরিশ ইত্যাদি নিয়ে ডেলিভারি স্লিপ প্রিন্ট করে দেয়া হবে। সেই স্লিপ নিখুঁতভাবে দেখতে হয় কারন এই স্লিপে যা লিখা থাকবে পাসপোর্টেও তা প্রিন্ট হবে। যদি কোন ভুল চোখে পরে তাহলে বায়োমেট্রিক এনরোলমেন্ট অফিসারকে অবহিত করে তাৎক্ষণিকভাবে সংশোধন করে নিতে হবে। সেখান থেকে পাওয়া ডেলিভারি স্লিপ যত্ন সহযোগে সংরক্ষন করতে হবে।

ই পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন

ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন এক জায়গায় কিংবা দুই জায়গায় হতে পারে। বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা এক দেয়া থাকলে শুধুমাত্র এক জায়গাতেই ভেরিফিকেশন হবে। যদি বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা আলাদা হয়, সেক্ষেত্রে দুই জায়গাতেই ভেরিফিকেশন করা হবে এবং দুজন পুলিশ অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। সাধারণত, স্থায়ী ঠিকানার ক্লিায়ারেন্স পেলে তারপর বর্তমান ঠিকানায় ভেরিফিকেশন করার জন্য আরেকজন অফিসারের কাছে অর্ডার দেয়া হয়।

স্থায়ী ঠিকানায় পুলিশ ভেরিফাই করতে গেলে সাধারণত নাগরিক সনদ পত্র বা চেয়ারম্যান প্রত্যয়ন পত্র এবং ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি দিতে হয়।পুলিশ আসার সময় আবেদনকারী নিজে সে স্থানে অবস্থান করতে না পারলে পরিচিত কারো কাছে এই ডকুমেন্টসগুলো পাঠিয়ে দিতে হবে।

বর্তমান ঠিকানায় পুলিশ আসার পরেও এ জাতীয় কাগজপত্র চাইবে। শহরে থাকলে চেয়ারম্যান সনদের জায়গার কাউন্সিলর থেকে প্রাপ্ত নাগরিক সনদ পত্র দরকার হতে পারে। শিক্ষার্থী হয়ে থাকলে স্টুডেন্ট আইডি কার্ডের মূল কপি দেখানোর প্রয়োজন হতে পারে।

পুলিশ ভেরিফিকেশন নেগেটিভ আসার কারন

ই-পাসপোর্ট করার সময় পুলিশ ভেরিফিকেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাসপোর্ট পেয়ে গেলে বিদেশে চলে যেতে আর খুব একটা বাধা থাকে না। সেক্ষেত্রে কোন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী, মামলা চলমান অবস্থায় কিংবা অন্য কোন অপরাধে জড়িত কোন নাগরিক যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। অনেক সময় পুলিশ ভেরিফিকেশনে আবেদনকারীকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দেয়া হয় না, এর কারন-

১. আবেদনকারী কোন ফৌজদারী, রাজনৈতিক বা অন্য কোন মামলায় অভিযুক্ত, গ্রেফতার, দন্ডিত, বা নজরবন্দি অবস্থায় থাকা,

২. আবেদনকারীর কোন মামলায় সাজাপ্রাপ্তির রেকর্ড থাকা,

৩. কোন দেশদ্রোহী ও নাশকতামূলক কর্মকান্ডে জড়িত থাকা,

৪. ই-পাসপোর্ট আবেদনকারীর চারিত্রিক ও সামাজিক অবস্থান সন্দেহজনক হওয়া,

এ ধরনের কোন কর্মকান্ডে জড়িত না থাকলে পুলিশ ভেরিফিকেশনের ক্লিয়ারেন্স রিপোর্ট চলে আসবে এবং পাসপোর্ট পাওয়া সহজ হবে। ই পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশনে সাধারণত এক জায়গায় করলে সাত থেকে দশ দিন সময় প্রয়োজন হয়। তবে বর্তমান ও স্থায়ী দুই ঠিকানাতে করতে পনেরো থেকে বিশ দিন সময় প্রয়োজন হবে। পরবর্তীতে ই পাসপোর্ট স্ট্যাটাস চেক করলে দেখা যাবে পেন্ডিং ফর ফাইনাল এপ্রুভাল। নির্দিষ্ট সময় পরে ই পাসপোর্ট প্রিন্ট হয়ে আঞ্চলিক অফিসে আসে, তখন সেখান থেকে মেইল কিংবা মেসেজ করা হয় সেটি সংগ্রহ করার জন্য। 

অনলাইনে ই পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম ই-পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম

ই-পাসপোর্ট আবেদনের পর সেটি কোন পর্যায়ে আছে তা অনলাইনে জানার সুযোগ আছে যা বেশ সহজ। এটি জানার জন্য অনলাইন রেজিস্ট্রেশন আইডি বা আপ্লিকেশন আইডি প্রয়োজন হবে। ই পাসপোর্ট আবেদনের পর, অনলাইন সামারী পেইজ থেকে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন আইডি বা আপ্লিকেশন আইডি পাওয়া যায়। রেজিস্ট্রেশন ফর্ম থেকেও জানা যায় এই আইডি। সেই সাথে দরকার হবে পাসপোর্ট আবেদনে দেয়া জন্ম তারিখ।

পাসপোর্ট চেক করার জন্য আপনার মোবাইল বা কম্পিউটারের Google Chrome ব্রাউজার থেকে ভিজিট করতে হবে www.epassport.gov.bd সাইটে। চেক স্ট্যাটাস মেন্যুতে ক্লিক করে, Online Registration ID অথবা Application ID এবং জন্ম তারিখ লিখতে হবে। এরপর, I am human লেখার পাশে টিক দিয়ে Check বাটনে ক্লিক করে পাসপোর্ট চেক করতে হবে।

তাছাড়া এই পেইজের নিচের দিকে পাসপোর্ট চেক করার অপশন রাখা হয়েছে। এখান থেকেও পাসপোর্ট চেক করা যাবে। 

ই-পাসপোর্ট ডেলিভারি

ই পাসপোর্টের ডেলিভারি স্লিপে ডেলিভারি দেয়ার তারিখ দেয়া থাকবে। এছাড়া সকল তথ্য মেইলে চলে আসবে। নির্দিষ্ট তারিখে পাসপোর্ট অফিসে ডেলিভারি স্লিপ নিয়ে উপস্থিত হতে হবে । যদি পুরাতন পাসপোর্ট থেকে থাকে সেগুলো এবং এন আইডি কার্ড সাথে রাখতে হবে। পাসপোর্ট অফিসের নির্দিষ্ট কাউন্টারে ডেলিভারি স্লিপ জমা দেয়ার পর একটি টোকেন দেয়া হবে। সেই টোকান অনুযায়ী ডেকে পুনরায় আবেদনকারীর ফিংগার প্রিন্ট নিয়ে তাকে নতুন পাসপোর্ট ডেলিভারি দেয়া হবে।

ই-পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন বাতিল করার নিয়ম

অনলাইনে ই-পাসপোর্টের আবেদন করা হলে, নিজে থেকে আবেদন বাতিল করার কোন সুযোগ নেই। আবেদন বাতিলের জন্য জেলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালকের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করে তাদের নির্দেশনা মোতাবেক বাতিল করতে হবে।

ই-পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম

মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে তা রিনিউ করার সময় ই-পাসপোর্ট এ রুপান্তর করা যায়। এজন্য রিনিউ করার কোন আবেদন করতে হবেনা, নতুনভাবে ই-পাসপোর্টের আবেদন করতে হবে। আবেদনের ক্ষেত্রে আইডি ডকুমেন্টস অপশন থেকে শুধু মাত্র পূর্ববর্তী এমআরপি পাসপোর্টের তথ্য দিতে হবে।

এমআরপি পাসপোর্ট থেকে ই-পাসপোর্টে রিনিউ করার বড় সুবিধা হলো, তথ্য পরিবর্তন। পূর্ববর্তী পাসপোর্টে কোন তথ্যের ভুল থাকলে সহজেই বর্তমান জাতীয় পরিচয়পত্র অনুসারে সঠিক তথ্য ই-পাসপোর্টে অর্ন্তভুক্ত করা যায়।

বাচ্চাদের পাসপোর্ট করার নিয়ম

বাংলাদেশ পাসপোর্ট নীতি অনুযায়ী, ৬ থেকে ২০ বছরের নাগরিকদের পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধনের পাশাপাশি বাবা ও মায়ের প্রত্যেকের জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি দিতে হবে। বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের নামে সামান্য ভুল থাকলে তা আগেই সংশোধন করে নিতে হবে।

আবেদনপত্র জমা দেয়ার সময় ছয় বছরের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রে, ল্যাবে প্রিন্ট করা থ্রি-আর সাইজের ধূসর ব্যাকগ্রাউন্ডের এক কপি ছবি পাসপোর্ট অফিসে নিয়ে যেতে হবে,  শিশুর বয়স ছয় বছরের বেশি হলে ছবির দরকার নেই। ১৮ বছরের নিচে যে কোনো বয়সের শিশুর জন্য শুধুমাত্র পাঁচ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতার পাসপোর্ট নির্বাচন করার সুযোগ আছে।

প্রয়োজনীয় কাগজসহ আবেদনপত্রটি জমার জন্য চলে যেতে হবে নিকটস্থ থানার আওতাধীন পাসপোর্ট অফিসে। এ সময় অবশই  জন্ম নিবন্ধন সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্রগুলোর সঙ্গে সেগুলোর মূল কপি রাখতে হবে।ছয় বছরের কম বয়সী শিশুর বয়সীদের বায়োমেট্রিকনেয়া হয় না বিধায়  আবেদনপত্র জমা নিয়েই ই-পাসপোর্ট ডেলিভারি স্লিপ দেয়া হবে। থ্রি-আর ছবিটিকে ই-পাসপোর্টে ব্যবহার করা হয়।

*

*