![]() |
সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে শিক্ষার্থী থাকাকালীন সময়েই ফ্রিল্যান্সিং কাজে যুক্ত হয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। প্রতিনিয়তই গ্রাহকদের কাজে লাগে এমন একটি সলিউশন তৈরি করে যাত্রা শুরুর পর থেকে এখনো নিয়মিত গ্রাহকদের নানা ধরনের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এ জন্য তৈরি করেছেন একটি প্ল্যাটফর্ম। নিজের প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং আইডিয়া কাজে লাগিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন হ্যান্ডিমামা’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ পরান। নিজের উদ্যোগ, সমস্যা সমাধানে প্রযুক্তির সহায়তা, গ্রাহকদের আরো উন্নত সেবা প্রদানের নানা বিষয়ে কথা বলেছেন টেকশহর ডটকমের নিয়মিত আয়োজন ‘টেক ভেঞ্চারস টক’-এ।
টেকশহর: ক্যারিয়ারে যুক্ত হলেন কিভাবে?
শাহ পরান: আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে সফটওয়্যার প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশোনাকালীন সময়েই কাজে যুক্ত হই। সে সময়ে একটা সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানেও কাজ করি। সময়টা ছিল ২০১২ সাল। এক বছর সে সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান কাজ করে আমি আর আমার এক বন্ধু মিলে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করি। শুরুর দিকে আমি মূলত আমার বন্ধুর জন্য কনটেন্ট রাইটিং, এসইও, ওয়েবসাইট তৈরি করার কাজ করতাম। সেভাবেই আসলে শুরুটা।
টেকশহর: উদ্যোক্তা জীবনের শুরুটা কখন?
শাহ পরান: ২০১২-১৩ সালে নিজের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বেশ কিছু বিষয় শিখেছি। কনটেন্ট রাইটিং, কনটেন্ট মার্কেটিং, এসইও থেকে শুরু করে নানা ধরনের কাজ করায় এ বিষয়গুলোকে শেখার একটা বড় জায়গা ছিল। সে সময়ে আমরা ব্লগও তৈরি করতাম। সে সময়েই যখন কাজ বাড়ছিল তখন আমি আর আমার বন্ধু মিলে ২০১৪ সালে একটি প্রতিষ্ঠান শুরু করি। তবে সে সময়ে স্কিল থাকলেও ব্যবসা নিয়ে অভিজ্ঞতা না থাকায় আমাদের শুরুর সে প্রতিষ্ঠানটি মাত্র ৬ মাসের মাথায় বন্ধ হয়ে যায়। আরেকটা বিষয় ছিল, অভিজ্ঞতা না থাকায় আমরা শুরু থেকেই অফিস সাজানো, অনেক বেশি লোকবল নিয়োগ দেয়াসহ বেশ কিছু কাজ করায় আমরা কিছুটা সমস্যায় পড়েছি।
টেকশহর: হ্যান্ডিমামা’র বিষয়টি কিভাবে এলো?
শাহ পরান: আমরা যখন নিজেদের প্রথম প্রতিষ্ঠান শুরু করি তখনই প্রথম আমাদের হ্যান্ডিমামা’র (https://handymama.co) বিষয়টি মাথায় আসে। হ্যান্ডিমামা যেসব বিষয় নিয়ে কাজ করে সেগুলো উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই আছে। ভাবলাম সে সমস্যাগুলো যদি সমাধান করা যায় তাহলে সেটিই একটি উদ্যোগ হতে পারে। আমাদের প্রথম প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর আমি কিছুটা বিরতি নিয়ে ২০১৪ সালের শেষের দিকে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির ফাউন্ডার্স ইন্সটিটিউটের একটি আয়োজনের খবর নিয়ে আমি সেখানে যাই এবং পরীক্ষা দেয়ার পর আমি টিকে যাই। তারপর নির্দিষ্ট একটি ফি দিয়ে আমি সে প্রোগ্রামে যুক্ত হই। এ উদ্যোগটাতে মূলত উদ্যোগের আইডিয়া থেকে শুরু করে বাস্তবায়নের বিষয়গুলো প্রশিক্ষণ আকারে শেখানো হয় যার ফলেই আমি খুব আগ্রহ নিয়েই ফাউন্ডার্স ইন্সটিটিউটের সে উদ্যোগে যুক্ত হই। আর হ্যান্ডিমামা মূলত যে ধরনের সেবা দেয় সেগুলো আমাদের প্রতিনিয়তই লাগে। যেমন: বিদ্যুৎ মিস্ত্রি, প্লামবার, বাসা বদলানোর জন্য দক্ষ লোক, বাসা রং করা, এসি ঠিক করার ইত্যাদি কাজগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ লোকবল এক জায়গায় পাওয়ার সুবিধাটিই নিয়ে শুরু হয় হ্যান্ডিমামা। বছরের নানা সময়ে যেমন অনেকেরই এ ধরনের কাজগুলো করতে হয় তেমনি যারা এসব কাজ করেন তাদের একটি সংযোগের জায়গা তৈরির মাধ্যমে গ্রাহকরা যেমন সেবা পাবে তেমনি আমাদেরও এটা উদ্যোগ দাড়িয়ে যাবে।
টেকশহর: আপনার এ উদ্যোগটির সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তির সংযোগটা কিভাবে করলেন বা ভাবলেন?
শাহ পরান: আমরা যেহেতু একটা সমস্যা সমধানের জন্য কাজ শুরু করে তেমনি সঠিক সময়ে সঠিক সার্ভিসটি পেতে যার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে সে মানুষটিকে যুক্ত করতেই আমরা হ্যান্ডিমামা নামের প্ল্যাটফর্ম শুরু করি। মূলত আমরা পুরো ঢাকা শহরে সার্ভিস দেয় এমন মানুষদের ডেটাবেস আমাদের ওয়েবসাইটে যুক্ত করি এবং আমাদের ওয়েবসাইটে থাকা নির্দিষ্ট ই-মেইল বা ফোন করে গ্রাহক নিজের প্রয়োজনীয় সেবা নেয়ার মানুষটিকে খুঁজে নেবে। পাশাপাশি আমরা সংযোগ তৈরি করে দিয়ে সে সার্ভিসটি যাতে গ্রাহক সঠিক ভাবে পায় সেটিও নিশ্চিত করবো, এটাই ছিল আমাদের চিন্তা। আর এ কাজটি আসলে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা ছাড়া করা সম্ভব না। কারণ, আমাদের যদি এমন সার্ভিস নেয়ার গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে অনেক হয়ে যায় তাহলে তো তথ্যপ্রযুক্তি হচ্ছে সহজ সমাধান কাজগুলো পরিচালনার জন্য।
টেকশহর: যাত্রা শুরুর পর প্রায় ৭ বছর চলছে। এখন পর্যন্ত আপনাদের অভিজ্ঞতা কেমন?
শাহ পরান: যাত্রা শুরুর পর ২০১৫-২০১৬ সালে আসলে আমরা সচেতনতার একটা বিষয় নিয়ে কাজ করেছি। এ সময়টা আমাদের যারা সার্ভিস দেয় তাদের বোঝাতে যেমন সময় লেগেছে তেমনি গ্রাহকরাও এ প্ল্যাটফর্মের আওতায় সার্ভিস নেয়ার বিষয়টি নিয়ে অভ্যস্থ হয়েছে। শুরুর সময়টায় আমরা এক-দুই বছরে যত গ্রাহকদের সার্ভিস দিয়েছি সেটি এখন এক মাসেই দিচ্ছি। সে তুলনায় গ্রাহকদের চাহিদা এবং আমাদের সার্ভিস দেয়ার কাজের পরিমান অনেক বেড়েছে।
[সাক্ষাৎকার নিয়েছেন টেকশহর ডট কমের স্পেশাল করসপনডেন্ট নুরুন্নবী চৌধুরী]