জেনে নিই সিম রিপ্লেসমেন্ট করার নিয়ম এবং পরিহার করি অহেতুক ঝামেলা

টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : সিম রিপ্লেসমেন্ট নিয়ে সবাই কম বেশি ঝামেলায় থাকেন। মোটের উপরে আমাদের অনেকেরই জানা নেই আসলে সিম কিভাবে রিপ্লেস করতে হয় বা সিম রিপ্লেসমেন্ট করার নিয়মগুলো কি কি? বিভিন্ন কারণেই আমাদের সিম রিপ্লেসমেন্টের প্রয়োজন হয়। 

তবে সিম রিপ্লেসিং সম্পর্কে জানা না থাকায় অনেকেই নানা সমস্যায় পড়ে যান। তবে সিম রিপ্লেসমেন্টের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব কিছু দুর্দান্ত সুবিধা। যেমন- শুধুমাত্র সিম পরিবর্তনের মাধ্যমেই গ্রাহকের ইন্টারনেটের গতি আগের তুলনায় (যদি পুরোনো সংস্করণের সিম থাকে) দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে। 

আগের চাইতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে প্রিয় মানুষটির সঙ্গে কথা বলা থেকে শুরু করে পাওয়া যাবে অন্যান্য সুবিধা। আর কথা বলার সময় যেসব ভোগান্তি পোহাতে হতো যেমন নেটওয়ার্কিংয়ের অসুবিধা, ফোন কলের সময় নেটওয়ার্ক বার বার কেটে যাওয়া। বিশেষ করে যারা এখনো সেই পুরোনো সময়ের 2G এবং 3G সিম ব্যবহার করছেন তাদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়।  

Techshohor Youtube

আবার কেউ কেউ তো নতুন ফোন কিনলেও বাড়তি ঝামেলার কথা ভেবে সেই পুরনো সিমই ব‍্যবহার করেন। ফলে ফোনেও বারবার 4G সিম রিপ্লেসমেন্টের মেসেজ আসতে থাকে এবং অ্যালার্ট দিতে থাকে। 

ফলশ্রুতিতে যা হবার তাই হয়! ম‍্যারাথনের গতিতে দৌড়ালেও গ্রাহকের সিম পুরোনো থাকায় যেমন সমস্যা হয় তেমনি নতুন অনেক সুবিধা পান না গ্রাহক। এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পড়ে ফেলুন এ লেখাটি আর করে সহজে করুন সিম রিপ্লেসমেন্ট। 

সিম রিপ্লেসমেন্ট কি?

সিম রিপ্লেসমেন্ট মূলত একটি প্রক্রিয়া যার মাধ‍্যমে আপনি আপনার বর্তমান সিম কার্ডকে আপডেট বা হালনাগাদ করে নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে রিনিউ করতে পারবেন। অর্থাৎ ধরুন আপনার আগে এনালগ ফোন ছিল আর বহু আগে কেনা একটা পরিচিত সিম রয়েছে। এখন আপনি নতুন ফোন কিনে দেখলেন যে আগের সিমটা আর ব‍্যবহার করা যাবে না। আর এই সমস‍্যার সমাধানই হচ্ছে সিম রিপ্লেসমেন্ট যেখানে আপনি পুরনো সিম বদলে একদম হুবহু একই মোবাইল নম্বরের আরেকটু আপডেটেড সিম কার্ড ব‍্যবহার করতে পারবেন।

সিম রিপ্লেসমেন্ট করার সুবিধা এবং অসুবিধা

সিম রিপ্লেসমেন্টের রয়েছে বেশ কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা। সুবিধাগুলোর মধ্যে রয়েছে:

সুবিধাসমূহ 

  • সিম রিপ্লেসমেন্ট এর মাধ‍্যমে আপনি 4G, 5G সেবাসমূহ উপভোগ করতে পারবেন
  • ইন্টারনেটের গতি হবে দুর্দান্ত 
  • নেটওয়ার্কের কোন ঝামেলা বা অসুবিধা হবে না
  • আপনাকে আপনার পুরনো সেইভ করা নাম্বার খোঁজার জন‍্যে অসুবিধায় পরতে হবে না
  • আপনি সম্পূর্ণ নতুন একটি ডুপ্লিকেট কপি পেয়ে যাচ্ছেন 
  • অনেক সিম কোম্পানি রিপ্লেসমেন্টের জন‍্যে বিভিন্ন ধরনের অফার দিয়ে থাকে, ফলে আপনি বিভিন্ন ইন্টারনেট প‍্যাকেজসহ বিভিন্ন ধরনের বাড়তি সেবা উপভোগ করতে পারবেন।

অসুবিধাসমূহ 

সিম যদি নিজের নামে যদি নিবন্ধিত করা না থাকে, তাহলে সমস্যায় পড়তে হতে পারে সিম রিপ্লেসমেন্টের ক্ষেত্রে। কেননা বেশিরভাগ সিমই আজকাল বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন করা হয়ে থাকে। ফলে গ্রাহকের নামে নিবন্ধিত না হলে বাড়তি খরচ তো আছেই তার সঙ্গে ওই ব‍্যক্তিকে গ্রাহকসেবা কেন্দ্রে (কাস্টমার কেয়ার) নিয়ে গিয়ে নিজের হাতের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে পুনরায় সিমটিকে গ্রাহকের নামে ট্রান্সফার করতে হয়। 

সিম রিপ্লেসমেন্ট করার কেন করবেন?  

সিম রিপ্লেসমেন্ট পুরোটাই গ্রাহকের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। তবে যদি পুরনো সিমটি একেবারেই অকেজো হয়ে থাকে, তাহলে সিম রিপ্লেসমেন্ট করে নেওয়াই সবচেয়ে ভালো। তাছাড়া হারিয়ে যাওয়া বা চুরি হওয়া ফোনে ব‍্যবহৃত সিম পুনরুদ্ধার করতেও রিপ্লেসমেন্ট একটি অন‍্যতম উপায়।  

সিম রিপ্লেসমেন্ট করতে কি কি লাগে এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সমূহ?

সিম রিপ্লেসমেন্ট করার নিয়ম খুবই সাধারণ এবং অল্প কিছু টাকা খরচেই এটি করা সম্ভব। রিপ্লেসমেন্টের জন‍্যে লাগবে- 

  • পুরনো/ হারিয়ে যাওয়া/ নষ্ট সিমের নাম্বার 
  • NID কার্ড বা NID এর ফটোকপি 
  • যার নামে সিমটি বায়োমেট্রিক করেছিলেন উক্ত ব‍্যক্তিকে অবশ‍্যই কাস্টমার পয়েন্টে উপস্থিত থাকতে হবে।

সিমের মালিকানা পরিবর্তন করতে কি কি লাগে? 

সিম রিপ্লেসমেন্ট করতে যা যা লাগে এখানেও সেসব জিনিসই লাগবে সিমের মালিকানা পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে। তবে এখানে উক্ত ব‍্যক্তির হাতের ছাপ দিয়ে সিমের একটি পিন কোড বের করতে হবে এবং কাস্টমার কেয়ারে থাকা কর্মীর মাধ‍্যমে সিমের পুরনো মালিকানা সম্পূর্ণভাবে বাতিল করতে হবে। পুনরায় নিজের নামে সিমটিকে নিবন্ধন এবং বায়োমেট্রিক করে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে খরচ পরবে ২০০টাকা থেকে ২৫০ টাকা কিংবা কিছু কম বেশি হতে পারে।

বিভিন্ন ফোন অপারেটরের সিম রিপ্লেসমেন্ট করার নিয়ম

এবার বিভিন্ন সিম অপারেটর যেমন গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক, টেলিটকের সিম রিপ্লেসমেন্টের খরচ, কোথায়, কিভাবে করতে হবে সে সম্পর্কেও জেনে নেওয়া যাক।  

রবি সিম রিপ্লেসমেন্ট করার নিয়ম

  • প্রথমে আপনাকে রবি’র গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে (কাস্টমার কেয়ার) যেতে হবে। তবে তার আগে নিকটস্থ কোন সিম বিক্রির দোকানে যাবেন শুধু এইটুকু নিশ্চিত হতে যে আপনার সিমটি পরিবর্তনের যোগ‍্য কি না। যদি সিমটি অকেজো হয়ে থাকে তাহলেও আপনি ওই সিমের একটি প্রতিলিপি বা কপি কাস্টমার কেয়ার পয়েন্ট থেকে তুলতে পারবেন। 
  • এছাড়াও রবি ডোরস্টেপের মাধ‍্যমে আপনি তাদের ডেলিভারি সুবিধার সাহায্যে সিমটি রিপ্লেস করতে পারবেন। তবে তার জন‍্যে আপনাকে রবির নিজস্ব ওয়েবসাইটে একটি একাউন্ট খুলতে হবে। একাউন্ট খুলতে রবির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটটি আপনার ব্রাউজারে ওপেন করুন এরপর তাদের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী একটি একাউন্ট খুলে নিন। 
  • একাউন্ড খোলা হয়ে গেলে সেখানে বিভিন্ন ধরণের অফারের মধ‍্যে সিম রিপ্লেসমেন্ট অপশনটিও দেখতে পাবেন। এবার যাবতীয় তথ‍্য দিয়ে ঘরে বসেই করে সেরে ফেলুন সিম প্রতিস্থাপনের কাজটি। 
  • সিম রিপ্লেস করতে আপনার খরচ পরবে ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা এবং ডেলিভারী চার্জ ৫০ টাকা।

বাংলালিংক সিম রিপ্লেসমেন্ট করার নিয়ম

  • আপনি যদি বাংলালিংক-এর গ্রাহক হয়ে থাকেন তাহলে শুরুতে আপনাকে কনফার্ম হতে হবে আপনার সিমটি প্রতিস্থাপনের যোগ‍্য কিনা। এর জন‍্যে আপনাকে ডায়াল করতে হবে *৫০০০*৪০#। এর মাধ‍্যমে আপনি জেনে নিতে পারবেন আপনার সিমটি বিনামূল্যে প্রতিস্থাপনের যোগ‍্য কিনা। মাসের একটি নির্দিষ্ট সময়ে বাংলালিংক এই ধরনের সেবা প্রদান করে থাকেন। অথবা ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে টাইপ করুন free4G এরপর সেটি ২৫০০ নাম্বারে পাঠিয়ে দিন। যদি যোগ‍্য হয় তাহলে আপনাকে একটি ফিরতি মেসেজের মাধ‍্যমে গ্রাহক জানতে পারবেন।
  • আর না হলে বাংলালিংকের কাস্টমার কেয়ারে কিংবা বায়োমেট্রিক রিটেইলার পয়েন্টে যোগাযোগ করতে হবে। 

বাংলালিংক এর ক্ষেত্রেও সেই একই পদ্ধতি এবং একই কাগজপত্র নিয়ে কাজ করতে হবে। আর যদি জানতে চান বাংলালিংক সিম রিপ্লেসমেন্টে কত টাকা লাগবে। তবে বলে রাখা ভালো এরজন‍্যেও খরচ পড়বে ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা। আরও বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন MyBL App টিতে।

গ্রামীণফোন সিম রিপ্লেসমেন্ট করার নিয়ম

আপনি যদি গ্রামীণফোনের গ্রাহক হয়ে থাকেন তাহলে কি করবেন? অবশ‍্যই নিচে দেয়া নির্দেশনা গুলো মেনে কাজ করবেন। 

  • এখান ও আপনাকে কাস্টমার কেয়ার বা নিকটস্থ ফ্লেক্সিলোডের দোকানে গিয়ে আপনার সিমটি রিপ্লেস করতে হবে। 
  • তবে বিনামূল্যে বা অফারে প্রতিস্থাপনের জন‍্যে তথ‍্য পেতে ডায়াল করুন *৪৫৮*৪৪* এরপর আপনার ফোন নম্বরটি দিয়ে # চাপুন। ফিরতি মেসেজেই জেনে যাবেন আপনার সিমটি গ্রামীণের বিশেষ অফারে প্রতিস্থাপনের যোগ‍্য কি না। 

গ্রামীণফোন সিম রিপ্লেসমেন্টে করতে ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা খরচ লাগবে। তবে জিপি সিম প্রায়ই প্রতিমাসেই একটি নির্দিষ্ট সময়ে ফ্রি’তে সিম পরিবর্তনের সেবা দিয়ে থাকে তাই আপনাকে এখানে বাড়তি খরচ নিয়েও ভাবতে হবে না।  

টেলিটক সিম রিপ্লেসমেন্ট করার নিয়ম 

টেলিটকের গ্রাহকদেরও সিম প্রতিস্থাপনের জন‍্যে যেতে হবে টেলিটকের কাস্টমার কেয়ার পয়েন্টে। সেখানে গিয়ে আপনার NID টেলিটকের গ্রাহকদেরও সিম প্রতিস্থাপনের জন‍্যে যেতে হবে টেলিটকের কাস্টমার কেয়ার পয়েন্টে। সেখানে গিয়ে গ্রাহকের NID এর ফটোকপিসহ আরও যাবতীয় তথ‍্য প্রদান করে সিমটি প্রতিস্থাপিত করতে হবে। আর এখানে সর্বমোট খরচ লাগবে ১৫০ টাকা। আরও তথ‍্য জানতে ভিজিট করুন টেলিটকের অফিশিয়াল পেইজটিতে : টেলিটক সিম রিপ্লেসমেন্ট। এখানে আপনি টেলিটকের সিম রিপ্লেসমেন্ট বিভিন্ন তথ‍্য সম্পর্কে ও জানতে পারবেন।

এয়ারটেল সিম রিপ্লেসমেন্টের নিয়ম 

রবির মতো এয়ারটেলেও অপারেটর ডোর স্টেপ সার্ভিসের সেবাটি চালু আছে। চাইলে এখান থেকেও ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা খরচে সিম প্রতিস্থাপনের সেবাটি গ্রহণ করা যাবে। এছাড়াও নিকটস্থ কাস্টমার কেয়ার বা সিম বিক্রির দোকানেও একই ধরনের সেবা দেওয়া হয়ে থাকে। এয়ারটেলের সিম প্রতিস্থাপন সম্পর্কিত বিভিন্ন অফার সম্পর্কে তথ‍্য পেতে ভিজিট করতে পারেন তাদের এই ওয়েব এড্রেসটিতে : এয়ারটেল সিম রিপ্লেসমেন্ট। এখানে আপনার খুঁটিনাটি বিস্তারিত যা কিছু জানার সবকিছু সম্পর্কে একবারেই তথ‍্য পেয়ে যাবেন। 

তবে এয়ারটেল সিমের আরও একটি বড় সুবিধা হচ্ছে এর মাধ‍্যমে আপনি আপনার 2G কিংবা 3G সিম দিয়েই 4G ব‍্যবহারকারীদের অফার ব‍্যবহার করে ইন্টারনেট প‍্যাকেজ উপভোগ করতে পারবেন খুব সহজেই। তাই আর দেরি না করে রিপ্লেস করে ফেলুন আপনার পুরনো সিম এবং উপভোগ করুন আগের চাইতেও আরও ভালো এবং দুর্বার গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট স্পীড। 

সিম রিপ্লেসমেন্ট কাজটি যতটা কঠিন বা ঝামেলার বলে মনে হয় আসলে কিন্তু এটি খুব একটা ঝামেলার নয়। বরং রিপ্লেসমেন্ট নিয়ে আপনি যত বেশি দেরি করবেন ততই বেশি ঝামেলায় জড়িয়ে যাবেন। যদি আপনি মনে করেন আপনার সিমের রিপ্লেসমেন্ট জরুরি, দ্রুতই করে ফেলুন। 

*

*

আরও পড়ুন