বন্ধ সিটিসেলের দেনা বাড়ছে, আবারও স্পেকট্রাম-লাইসেন্স বাতিলে উদ্যোগ

টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : সিটিসেল বন্ধ প্রায় ছয় বছর, কিন্তু দিনদিন বেড়েই চলেছে কোম্পানিটির কাছে বিটিআরসির পাওনা।

আর ১২৮ কোটি টাকার বেশি পাওনা আদায়ে ২০২২ সালের ২৬ মে বিটিআরসি সিটিসেলকে চিঠি দিলে সিটিসেল বিটিআরসিকে ‘হাইকোর্ট’ দেখিয়ে দিয়েছে।

বিটিআরসি ১২৮ কোটি ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৩২৩ টাকাসহ এখন পর্যন্ত যত পাওনা হয়েছে তা পরিশোধে ১৫ দিনের সময় দিয়ে সিটিসেলকে ওই চিঠি দেয়। সিটিসেল ৯ জুন সেই চিঠির উত্তরে বিটিআরসিকে জানায়, বকেয়ার বিষয়টি উচ্চ-আদালতে বিচারাধীন থাকায় এ বিষয়ে তাদের কোনো মন্তব্য নেই।

Techshohor Youtube

এ অবস্থায় বিটিআরসি প্রথমে প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড বা সিটিসেলের রেডিও কমিউনিকেশন ইকুইপমেন্ট লাইসেন্স ও তরঙ্গ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরপর তাদের টুজি সেলুলার মোবাইল অপারেটর লাইসেন্স বাতিলে কারণ দর্শানো নোটিশ দিতে সরকারের কাছে অনুমোদন চাইবে।

এছাড়া পাওনা টাকা আদায়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার টেকশহর ডটকমকে বলেন, আমরা সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করবো কারণ এটি রাষ্ট্রের পাওনা, এটি কতোদিন ঝুলে থাকতে পারে। আমাদের ন্যায্য দাবি তো ছাড়বো না। বিষয়টি আদালতে মামলায় রয়েছে, মামলা মিমাংসা করেই চূড়ান্তভাবে স্যাটেল করতে হবে।

বিটিআরসির ভাইস-চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র টেকশহর ডটকমকে বলেন, আমরা কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছি। স্পেকট্রাম এবং লাইসেন্স বাতিলে কাজ করা হচ্ছে।

এরআগে ২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে সিটিসেলের লাইসেন্স বাতিলের সকল আয়োজনই সম্পন্ন করে ফেলেছিলো নিয়ন্ত্রণ কমিশন। এমনকি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ হয়ে প্রধানমন্ত্রীর টেবিলও ঘুরে এসেছিল লাইসেন্স বাতিলের ফাইল।

তখন সিটিসেলের লাইসেন্স বাতিলের বিষয়ে বিটিআরসি মূলত পুরোনো বকেয়া পরিশোধ না করা, আদালতের নির্দেশ অনুসারে চলতি দেনা যেমন স্পেকট্রাম এবং লাইসেন্স ফি পরিশোধ না করা এবং লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করার অভিযোগ আনে।

এরপর সিটিসেল আদালতে গেলে বিটিআরসির বন্ধ করা স্পেকট্রাম ফেরত এবং লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের নির্দেশনা দেন আদালত।

এদিকে বকেয়া আদায়ে সিটিসেলের সঙ্গে বিটিআরসির মামলা এখনও চলছে। যেখানে আদালতের রায় অনুযায়ী সিটিসেল বিটিআরসির এই পাওনা পরিশোধ করলে বিটিআরসির দায়ের করা মামলা নিষ্পত্তি হবে বিবেচিত হবে।

২০১৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর আপীল বিভাগের রায়ে, সিটিসিলেকে বিটিআরসির দাবি করা রাজস্ব বা পাওনার দুই তৃতীয়াংশ ওই তারিখ হতে চার সপ্তাহের মধ্যে এবং অবশিষ্ট এক তৃতীয়াংশ পরবর্তী এক মাসের মধ্যে জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়।

একইসঙ্গে আদালত বিটিআরসির দাবি করা পাওনা পুন:বিবেচনার জন্য অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে একটি কমিটি করে দেন । ওই কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ীই অপারেটরটির কাছে এই ১২৮ কোটি ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৩২৩ টাকা পাবে বিটিআরসি।

প্রতিবেদন অনুসারে, লাইসেন্স নবায়নের স্পেকট্রাম ফি’র দুই কিস্তির টাকা বাকি থাকাসহ ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে সব মিলে অপারেটরটির বকেয়া হয় ৩৭২ কোটি ৭২ লাখ ৯৩ হাজার ৭৬৭ টাকা। যার মধ্যে আদালতের রায় অনুযায়ী পরিশোধ করা হয় ২৪৪ কোটি ৬৫ লাখ ৯৫ হাজার ৪৪৪ টাকা।

আর এখন পর্যন্ত ওই পাওনা টাকার সঙ্গে বার্ষিক লাইসেন্স ফি, বার্ষিক স্পেকট্রাম ফি এবং এরসঙ্গে ভ্যাট ও বিলম্ব ফি যোগ হয়ে সিটিসেলের দেনা দিনদিন বেড়েই চলেছে।

১৯৮৯ সালে দেশের প্রথম মোবাইল অপারেটরের লাইসেন্স পেয়ে সিটিসেল ১৯৯৩ সাল থেকে সেবা দিতে শুরু করে। তখন এটি ছিল দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম মোবাইল ফোন অপারেটর।

অপারেটরটির ৪৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ শেয়ারের মালিক সিঙ্গাপুরের টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা কোম্পানি সিংটেল-এর হাতে।

আর সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোর্শেদ খানের প্যাসিফিক মোটর্সের রয়েছে ৩৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ শেয়ার। এছাড়া ১৭ দশমিক ৫১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ফার ইস্ট টেলিকমের হাতে। সেটিও আসলে মোর্শেদ খানেরই আরেকটি কোম্পানি।

প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড বা সিটিসেলের টুজি সেলুলার মোবাইল ফোন অপারেটর লাইসেন্স (নবায়নকৃত) ২০২৬ সালের ১০ নভেম্বর শেষ হবে।

*

*

আরও পড়ুন