’কান্ট্রি লেভেল ডোমেইন বিক্রির সুযোগ বাড়ানো উচিত’

ওয়েব হোস্টিং নিয়ে দেশের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই এক সময়ে দেশের বাইরের হোস্টিং প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করে নিজেদের ওয়েবসাইট তৈরি করতেন। দেশের বাইরের সার্ভিস নেয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মুদ্রায় লেনদেন থেকে শুরু করে নানা ধরনের বিষয়েও ছিল জটিলতা। তবে এ খাতে দেশিয় নানা প্রতিষ্ঠান সক্রিয় ভাবে কাজ করছে এবং দেশিয় মুদ্রায় এসব সেবাও নিতে পারছেন অনেকেই। ওয়েব হোস্টিং ও ডোমেইন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছেন এক্সন হোস্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মো. মাছুমুল হক। নিজের উদ্যোগ ও ডোমেইন, হোস্টিংয়ের বিষয়ে কথা বলেছেন টেকশহর ডটকমের নিয়মিত আয়োজন ‘টেক ভেঞ্চারস টক’-এ।

টেকশহর: আপনার শুরুর গল্পটা শুনতে চাই?

মো. মাছুমুল হক: এটার একটা মজার গল্প আছে। আমি একবার ২০০৯ সালে নিঝুম দ্বীপে ঘুরতে যাই। ‘নিঝুম দ্বীপ’ নামটি আমার খুবই পছন্দ হয় এবং আমি তখন ভাবি এ নামে একটি ডোমেইন কিনে ফেলি। তবে সে সময়ে আমার আসলে আন্তর্জাতিক মুদ্রায় কেনার কোন পদ্ধতি ছিল না। তাই আমার এক বিদেশী বন্ধুর সহায়তায় সে ডোমেইনটি কিনি। সে সময়েই আমার ২-৩ জন পরিচিত সেই ডোমেইনের কথা শুনে তাদের জন্যও ডোমেইন কিনে দেয়ার কথা বলে এবং আমি তাদের সে ডোমেইনগুলো সেই বিদেশী বন্ধুর সহায়তায় কিনে দেই। সেই থেকেই শুরুটা। ২০১২ সালে আমরা সে উদ্যোগকে লিমিটেড কোম্পানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করি। সেই শুরু থেকে আমরা এখন পর্যন্ত প্রায় ২১ হাজার বেশি গ্রাহক আমাদের কাছ থেকে সার্ভিস নিয়েছেন।

Techshohor Youtube

টেকশহর: ২০১২ সালে কোম্পানী হিসেবে শুরুর সময়ে কিভাবে আরেক সহ-প্রতিষ্ঠাতাকে খুঁজে পেলেন?

মো. মাছুমুল হক: এটাও আসলে বেশ মজার ঘটনা। আমার সহ-প্রতিষ্ঠাতা সালেহ আহমেদ। তার সঙ্গে আমার অনলাইনে পরিচয়। অনলাইনে সে সময়ে বেশ কিছু প্রযুক্তি ব্লগ ছিল যেখানে নানা বিষয়ে আলোচনা হতো। সেখানেই সালেহ আহমেদের সঙ্গে আমার পরিচয়। তখন সালেহ নিজেও ডোমেইন ও হোস্টিং সার্ভিস দিত। আমরা দুজনেই একই ধরনের  সার্ভিসই দিতাম। তখন আমরা নিজেরা আলোচনা করে ২০১২ সালে পার্পল আইটি লিমিটেড নামে যৌথ ভাবে একটি কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করি। এবং এখন পর্যন্ত আমাদের মাধ্যমে প্রায় ৩০ হাজার ডোমেইন ম্যানেজ করছি। অর্থাৎ এ পরিমান ডোমেইন আমাদের মাধ্যমে কিনেছে বা ব্যবহার করছে।  

টেকশহর: ডোমেইন এবং হোস্টিং বিষয়ে কিছু বলুন যা আমাদের পাঠকরা সহজে বুঝতে পারে।

মো. মাছুমুল হক: ডোমেইন হচ্ছে একটি ঠিকানা বা নাম। আর হোস্টিং হচ্ছে আমাদের তথ্যগুলো যেখানে রাখতে হয় সেটাকে বলি। ওয়েবসাইটে যেসব তথ্য থাকবে সেগুলো কোন সার্ভারে রাখতে হয়। তো, একটি ওয়েবসাইটের জন্য একটি সার্ভার কেনা বা ব্যবহার করা অনেক ব্যয়বহুল। এ খরচটি কমানোর জন্য আমরা একটি সার্ভারকে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাবে ভাগ করে শেয়ার্ড হোস্টিং আকারে গ্রাহকদের জন্য বিক্রি করি। সেটিকেই মূলত হোস্টিং হিসেবে বলা হয়।

টেকশহর: আপনাদের এ সার্ভিসের ক্ষেত্রে পেমেন্টের বিষয়টি কিভাবে সমাধান করছেন?

মো. মাছুমুল হক: আসলে আমাদের সার্ভিস বলেন আর ই-কমার্স বলেন এ ধরনের সার্ভিসগুলো সহজে নেয়ার ব্যবহার অনেক সহজ হয়েছে মোবাইল পেমেন্ট সার্ভিস শুরু হওয়ার পরে। দেখা গেছে আমাদের মূল পেমেন্টের সবচেয়ে বড় অংশই মোবাইল পেমেন্টের মাধ্যমে হয়। যদিও আমাদের আন্তর্জাতিক পেমেন্ট নেয়ার পদ্ধতি যেমন আছে তেমনি অনলাইন পেমেন্ট নেয়ারও নানা পদ্ধতি আছে। তবে মানুষ সবচেয়ে বেশি আগ্রহী মোবাইল পেমেন্ট পদ্ধতিতে। আমরা গ্রাহকদের জন্য সব ধরনের পেমেন্ট পদ্ধতিই রেখেছি যাতে গ্রাহকদের ডোমেইন কিংবা হোস্টিং কেনার বিষয়টি সহজ হয়।

টেকশহর: কান্ট্রি লেভেল ডোমেইন বা বাংলাদেশের ডট কম ডট বিডি, ডট বিডি ডোমেইন বিক্রি বাড়ানোর ক্ষেত্রে কি করা যায়?

মো. মাছুমুল হক: এ ধরনের কান্ট্রি লেভেল ডোমেইন সবার জন্য সহজ করতে পারলে কিন্তু বড় ব্যবসা সম্ভব তেমনি এর ব্যপ্তি ও ব্যবহারও অনেক বাড়বে। দেখা যায় আমাদের দেশে বসেই বিভিন্ন দেশের কান্ট্রি লেভেল ডোমেইন যে কেউ চাইলেই কিনতে পারেন। কিন্তু আমাদের দেশের কান্ট্রি লেভেল ডোমেইন শুধুমাত্র বিটিসিএল নিয়ন্ত্রণ করে এবং সেখান থেকেই কিনতে হয়। এটি ব্যবহার বাড়াতে চাইলে অন্য যারা ডোমেইন বিক্রি করে তাদের কাছেও বিক্রির সুযোগটি বাড়াতে হবে। তবেই এর ব্যবহার বাড়বে।   

[সাক্ষাৎকার নিয়েছেন টেকশহর ডট কমের স্পেশাল করসপনডেন্ট নুরুন্নবী চৌধুরী]

*

*

আরও পড়ুন